পারমিতা” পর্ব-৬

0
2163

#পারমিতা
পর্ব ৬
_নীলাভ্র জহির

হলরুমে সব প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছে পারমিতা। সাইমুন খান ও তৌশিক যখন প্রবেশ করলো সেখানে, পারমিতা ওদের উপস্থিতি টের পেয়ে মুহুর্তের মধ্যে গা ঝাড়া দিয়ে বসলো। এমন একটা ভাব করলো যেন ওদেরকে দেখতেই পায় নি। তৌশিক পারমিতাকে দেখে ভয়ানক রেগে গেলো। গত রাতের ব্যাপারটার জন্য রাগ তো আছেই, তার ওপর আজকে কোম্পানিকে রিপ্রেজেন্ট করতে হবে। কাজের ব্যাপারে পারমিতার সাথে কথা বলার সুযোগও হয়নি আজ। পারমিতা ঠিকমতো সবকিছু প্রেজেন্ট করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দিহান তৌশিক।
সাইমুন খান পারমিতার টেবিলের মুখোমুখি চেয়ারে বসলেন। ওনার চেহারা যথারীতি স্বাভাবিক। পারমিতা এক পলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে রাখলো।
সাইমুন খান নিজেই পারমিতাকে জিজ্ঞেস করলেন, হ্যালো ইয়াং লেডি, সবকিছু রেডি? আপনার ভরসায় আজকে অনেক কিছু নির্ভর করছে। যেমন আপনার প্রেজেন্টেশনের ওপরও নির্ভর করে অনেক কিছু।
পারমিতা সাইমুন খানের দিকে তাকালো। ওনার মুখে হাসি। হঠাৎ পারমিতার মনে হলো গত রাতে যে ব্যাপারটা ঘটে গেছে নিশ্চয়ই সাইমুন খান সেসব জানেন না। ওনার যেরকম রাগী স্বভাব, সবকিছু জানলে এত সহজ ভঙ্গীতে পারমিতার সাথে কথা বলতে পারতেন না। কিঞ্চিৎ হলেও তাতে রাগ মেশানো থাকতো। তারমানে সবকিছু কি তৌশিকের খেলা?
পারমিতা গম্ভীর মুখে বসে রইলো। তৌশিক পারমিতাকে বলল, এদিকে আসুন। আপনার সাথে কথা আছে।
হলভর্তি লোকজনের সামনে তৌশিক কিছুই করতে পারবে না। তবুও পারমিতা গেলো না। স্থির হয়ে বসে রইলো। তৌশিক আরও রেগে গেল। পারমিতার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো, এর জবাব আমি দেবো। চিন্তার কিছু নেই। আমার কথা না শোনার ফল আপনি হারে হারে টের পাবেন। শরীরের ২০৬ টা হাড়কে মজবুত করে রাখবেন মিস পারমিতা।

তৌশিক কথাটা বলে চলে গেল। শিউরে উঠলো পারমিতা। শঙ্কিত বোধ করছে ও। মাথা তুলে সামনে তাকাতেই রোদের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। রোদ নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে। পারমিতার মনের ভয় অনুভব করতে পারলো রোদ। ইশারায় বললো, আমি আছি তো। পারমিতা স্বস্তি বোধ করলো।
পারমিতার যতবারই সাইমুন খানের সাথে চোখাচোখি হচ্ছে কিংবা জরুরি বিষয়ে টুকিটাকি কথা হচ্ছে, ওর ততোবারই মনে হচ্ছে সাইমুন খান এ ব্যাপারে পুরোপুরি নির্দোষ না হলেও ওনার দোষ তুলনামূলক কম। বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পারমিতা একবার সাইমুন খানকে ধীরগলায় বলল, সরি স্যার। গতকাল আপনি আমাকে ডেকেছিলেন, কিন্তু আমি তখন ঘুমিয়ে পড়েছি তাই আর যেতে পারিনি। আশা করি এটা নিয়ে আপনি আর রেগে থাকবেন না।
সাইমুন খান সহজ গলায় বললেন, আমি কখন ডেকেছিলাম? মনে করতে পারছি না তো।
চমকে উঠলো পারমিতা। ওর ধারণা তাহলে কি সত্যি? আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য বলল, আপনি তৌশিক স্যারকে নাকি অনেক রাগ দেখিয়েছেন আমি যাইনি বলে?
– মানে কি এসবের? আমি তৌশিককে রাগ দেখাবো কেন? আর আপনাকে ডাকার হলে আমি নিজেই ডেকে নিতাম, এখানে তৌশিক আসছে কোথা থেকে?
পারমিতা মুহুর্তের জন্য চুপসে গেলো। কোথাও একটা গণ্ডগোল আছে বলে মনে হচ্ছে। একটা নিশ্বাস নিলো পারমিতা। তারপর জিজ্ঞেস করলো, স্যার কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বলুন।
– আপনি আমাকে ডেকেছিলেন এবং তৌশিক সেটা আমাকে ফোন করে জানায়। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাতে আপনি তৌশিককে বলেছেন আমার চাকরি চলে যাবে সাথে তৌশিকেরও। বলেননি স্যার?
সাইমুন খান এবার ভয়ানক রেগে গেলেন, মানে আপনি কি আমার সাথে মশকরা করছেন? এই প্রোগ্রামে এসে? আমি প্রয়োজন হলে নিজেই আপনাকে ডেকে পাঠাতাম। সরাসরি ফোন থাকতে আমি কেনই বা তৌশিকের মাধ্যমে খবর পাঠাবো? ওয়েট, এক মিনিট। আমি কি আপনাকে রুমে ডেকে পাঠিয়েছি?
– জি, রুমে ডেকে পাঠিয়েছেন।
– কি কারণে ডেকেছি তৌশিক কি সেটা বলেছে আপনাকে?
– আপনার বিছানায় সঙ্গী হবার জন্য।
– হোয়াট! অসম্ভব।

সাইমুন খান এত জোরে অসম্ভব কথাটা বললেন যে আশেপাশের অনেকেই ওনার দিকে তাকালেন। মুহুর্তেই মুখে হাসি ফুটিয়ে তিনি পরিস্থিতি সামাল দিলেন। যেন কিছুই হয়নি, এখানে মজা করা হচ্ছিল।
সাইমুন খান খুব ধীরগলায় বললেন, আমি মানুষ হিসেবে হয়তো খুব বেশী ভালো নই, কিন্তু মেয়েমানুষ নিয়ে খেলা করার সময় বা আগ্রহ কোনোটাই আমার নেই। আপনি আমাকে অযথা হ্যারাস করছেন মিস পারমিতা। আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ আনার জন্য আমি আপনার চাকরিটা খেয়ে দিতে পারি।
– চাকরিটা আমি এমনিতেও আর করবো না স্যার। আজকেই আমার চাকরির শেষ দিন। আমি কথাগুলো ফিসফিস করে না বলে জোরে জোরে বলতে পারতাম। তাতে আপনার সম্মানহানি হতো বলে ফিসফিস করে বলছি।
– মানে? কি চাইছেন আপনি? টাকা? প্রমোশন? আমার চরিত্র নিয়ে বাজে কথা কেন তুলছেন?

ঘামতে শুরু করেছেন সাইমুন খান। ওনার চোখে ভীতি ও মুখে ভয়ের ছায়া। ওনাকে এইমুহুর্তে দেখে খুবই নিষ্পাপ মনে হচ্ছে পারমিতার। মনে হচ্ছে তিনি সত্যিই একজন ভালো মানুষ।
পারমিতা বলল, আপনি ভয় পাচ্ছেন কেন? চুরি না করলে চোর ভয় পাওয়ার কথা না।
– দেখুন আপনি আমার ক্ষতি করার জন্য আমার নামে অপবাদ দিচ্ছেন। বলুন আপনি কি চান? কি পেলে আমার নামে এসব কুৎসিত মিথ্যে রটানো বন্ধ করবেন?
– আরে আপনি দেখছি সত্যিই ভয় পেয়ে গেছেন।
– আমার অনেক বছরের ক্যারিয়ার মিস পারমিতা। কখনো কোনো মেয়ে সংক্রান্ত ঝামেলায় আমি জড়াই নি। আমার নামে কোনো স্ক্যান্ডাল কেউই বের করতে পারবে না। আমি সংসার লাইফ পছন্দ না করলেও আমার স্ত্রীকে নিয়ে যথেষ্ট সুখী। মেয়ে মানুষের প্রতি আমার অনীহা আছে। আপনি যা যা বলছেন সেসব অমূলক।
– তাহলে তৌশিক স্যারকে ডাকি? কে মিথ্যে বলছে সেটা প্রমাণ হয়ে যাক।
– হ্যাঁ অবশ্যই৷ কিন্তু এই হলরুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে এসব নিয়ে আমি চুপিচুপি আলোচনা করতে চাই না। আমি চাই মিটিং শেষ করে আমরা তিনজন মিলে বসবো এবং সবকিছু সেখানেই বলবেন। আপনার অভিযোগ পুরোটাই মিথ্যে এটা আমি জোর দিয়ে বলছি।
– ঠিক আছে স্যার। মিটিং শেষ হলেই আমরা এটা নিয়ে কথা বলবো।

পারমিতা দ্রুতপদে সেখান থেকে সরে এলো। রোদ এক গ্লাস কোমল পানীয় এনে বলল, প্লিজ।
– থ্যাংকস।
– লাল হয়ে আছেন কেন?
– একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।
– কি?
– সাইমুন খান বলছেন ওনার মেয়ে সংক্রান্ত কোনো আগ্রহ নেই। আমার অভিযোগ নাকি মিথ্যে। তারমানে কী তৌশিক খান নিজেই আমাকে ব্যবহার করতে চাইছিল সাইমুন খানের কথা বলে?
– আপনি শিওর?
– আমি সাইমুন স্যারের সাথে কথা বলেছি। উনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। উনি বললেন মিটিং শেষ হলে আমাদেরকে নিয়ে বসবেন। আমি মিথ্যা বলছি নাকি তৌশিক বলছে সেসব যাচাই করবেন।
– তাহলে আজকের প্রেজেন্টেশনের পর আপনার অভিযোগ গুলো তুলে ধরবেন না?
– বুঝতে পারছি না। কি করবো আপনি বলুন?

রোদ কয়েক মিনিট চুপ করে ভাবলো। হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা একটা কথা। তৌশিক কি নিজে আপনাকে স্যারের রুমে নিয়ে যেতে চেয়েছিল নাকি আপনাকে বলেছিল স্যারের রুমে যান?
– উনি আমাকে ফোন করে বলেছিল সেজেগুজে স্যারের রুমে যান।
– স্যারের রুম নাম্বার জানতেন আপনি?
– ‘হ্যা। দুইশো নয় নাম্বার রুম।
– দুইশো নয় নাম্বার রুম শিওর? আপনি কিভাবে জানলেন?
– তৌশিক কথায় কথায় আমাকে বলেছিল দুইশো নয় নাম্বার রুমে স্যার থাকবেন আর আট নাম্বার রুমে আমি। যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে ডাকতে পারেন।
– এখন একটা কাজ করতে হবে। সাইমুন স্যার আসলেই দুইশো নয় নাম্বার রুমে থাকতেন কিনা সেটা জেনে নিতে হবে।

পারমিতা রোদের দিকে প্রশ্নভরা চোখে তাকিয়ে রইলো। এই ব্যাপারটা ওর মাথায় আসেনি। ও নিজে যখন সাইমুন স্যারকে দুইশো নয় নাম্বার রুমে ঢুকতে দেখেনি তারমানে ওই রুমটা স্যারের নাও হতে পারে। হয়তো ওটা তৌশিকেরই রুম ছিল। স্যারের নাম করে ডেকে নিয়ে তৌশিক নিজেই.. শিউরে উঠলো পারমিতা। ওর সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। তৌশিক যখন দেখলো কোনোভাবেই স্যারের কথা বলে ওকে রুমে নেয়া যাচ্ছে না, তখন সরাসরি ওকে প্রস্তাব দিয়ে দিলো। এটাই হতে পারে আসল কারণ। কিন্তু এর জন্য আগে জানতে হবে দুইশো নয় নাম্বার রুমে কে থাকতো?

রহস্য ঘনীভূত হয়ে আসছে। সমাধানের জন্য ছুটছে ওরা তখনই মিটিং শুরু হয়ে গেলো। এক এক করে বিভিন্ন কোম্পানির চীফ নিজেদের বক্তব্য দিলেন। এরপর শুরু হবে প্রেজেন্টেশন। রুম নাম্বার জেনে না নিয়ে প্রেজেন্টেশনের পরে অভিযোগ তুলে আনার ব্যাপারটার কি হবে? পারমিতা চিন্তায় পড়ে গেল। ওকেই যেহেতু সবকিছু প্রেজেন্ট করতে হবে, এরপর অভিযোগ গুলো স্টেজে দাঁড়িয়ে বলাটা খুবই সহজ ছিল। সবার মনোযোগ ওর দিকেই থাকতো। কিন্তু আগে তো জানতে হবে সাইমুন খান আসলেই দোষী কিনা?
পারমিতা অস্থির হয়ে উঠলো। কি করবে বুঝতে না পেরে রোদকে জানালো এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। রোদ বলল, আমি রিসিপশনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসছি। আমি জেনেই আপনাকে কল দিবো।
পারমিতা বসে রইলো। আরও কয়েকজন চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার বক্তব্য দিবেন। তারপর শুরু হবে প্রেজেন্টেশন। এরমধ্যেই রোদ ওকে একটা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে আশা করা যায়।
রোদের নাম্বার থেকে কল এলো। রিসিভ করলো পারমিতা।
রোদ বলল, রিসিপশন থেকে বলছে দুইশো নয় নাম্বার রুমে তৌশিক খান আছেন।
পারমিতার বুক ধরফর করছে। এখনই সত্যিটা না জেনে সাইমুন খানকে ফাঁসিয়ে দিতে যাচ্ছিল ও। কি বিশ্রী অবস্থাটাই না হতো। যদি সাইমুন খানের সঙ্গে ওর একটা শত্রুতা তৈরি হতো! আসলে সব নষ্টের মূলে আছে এই তৌশিক খান।

একে একে সবার বক্তব্য’র পর শুরু হলো প্রেজেন্টেশন। পারমিতা কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রেজেন্টেশন শেষ করলো। ওর প্রেজেন্টেশন খুবই সুন্দর ও আত্মবিশ্বাসের সাথে দিয়েছে। হাত তালি দিলো সকলেই। প্রেজেন্টেশন শেষ করার পর পারমিতা স্টেজ থেকে নামলো না। উপস্থাপক এখন অন্য একজনকে আসার আমন্ত্রণ জানাবে কিন্তু উনি দেখলো পারমিতা স্টেজে মাইকের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। উনি পারমিতাকে বললেন, ম্যাম, আপনি আরও কিছু বলবেন?
পারমিতার শরীর থরথর করে কাঁপছে। রোদের দিকে তাকালো পারমিতা। রোদ ওকে সাহস জোগালো। পারমিতা একবার তৌশিক খানের দিকে তাকালো। তৌশিক ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। পারমিতা বলল, সম্মানীত অতিথিবৃন্দ, আমার প্রেজেন্টেশন এখনো শেষ হয় নি।

সবাই উৎসুক হয়ে উঠলো। এত চমৎকারভাবে শেষ করার পর, ল্যাপটপ বন্ধ করার পরও শেষ হয়নি! আরও বাকি আছে?
পারমিতা বলল, আমি আমার কোম্পানিকে রিপ্রেজেন্ট করতে এসেছি। আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব কোম্পানির। যদি তারাই আমার নিরাপত্তা হরণ করে আমাকে বিপদে ফেলে দেয় তাহলে সেটাও কি আমার তুলে ধরা উচিত নয়?

গুঞ্জন উঠলো সবার মাঝে। সাইমুন খান ঘামছেন। পারমিতা কি আসলেই ওনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুলে ধরতে চাচ্ছে নাকি? এদিকে তৌশিক খান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে স্টেজের দিকে।

পারমিতা বলল, আমি একজন মেয়ে। আমি কোম্পানির সাধারণ কর্মকর্তা হলেও আমি কোম্পানির পরিবারের একজন সদস্য। আমারও পরিবার আছে। আমার যদি এখানে এসে চরম ক্ষতি হয়, পরিবারের সামনে কিভাবে দাঁড়াবো? আপনাদের বিবেকের কাছে আমি প্রশ্ন করছি।
সাংবাদিক গণ ক্যামেরা খুলে ধরলো। মাইক নিয়ে ছুটে এলো অনেকেই। পারমিতার অভিযোগ শুনতে চায় সকলে।
পারমিতা বলল, আমাকে গত রাতে সাজগোজ করে চীফ এক্সিকিউটিভ স্যারের রুমে যেতে বলা হয়। স্যারের রুম নাম্বার বলা হয়েছে দুইশো নয়। আমি যখন জানতে চাই, কেন আমি সেজেগুজে ওনার রুমে যাবো? আমাকে বলা হয়েছে, স্যারকে খুশি করার জন্য। ওনার মনোরঞ্জন করতে পারলে আমাকে অনেক ওপরের পদে প্রমোশন দেয়া হবে এবং যে আমাকে এই প্রস্তাব দিয়েছে তাকেও আরও উচ্চ পদে আসীন করা হবে। ওনার পকেটে কাড়ি কাড়ি টাকা আসবে সাথে আমারও পকেট ভর্তি হবে। বিনিময়ে আমি যা চাই আমাকে তাই দেয়া হবে। আমাকে আরও বলা হয়, আমাদের অফিসের কয়েকজন মেয়ে নাকি নিয়মিত স্যারকে খুশি করতেন এবং বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তাদেরকে উপহার দেয়া হয়েছে। আমি এই প্রস্তাবে রাজি হইনি। তখন আমাকে চাকরি হারানোর হুমকি দেয়া হয়েছে। সাথে এও বলা হয়েছে, স্যার বুড়ো হয়ে গেছে বলে যদি ওনাকে পছন্দ না হয় তাহলে যেন ওনাকে সঙ্গ দেই। আমাকে এই প্রস্তাব দিয়েছে যিনি, তার নাম তৌশিক খান। আমার ফোনের কল লিস্টে ওনার নাম্বার থেকে বারবার আসা কল এবং একটি টেক্সটও রয়েছে। আপনারা চাইলে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারেন। এবং প্রমাণ হিসেবে একজন রক্ত মাংসের মানুষও রয়েছেন, বারান্দায় যার সামনে তৌশিক খান আমাকে অপদস্ত করেছেন।

গুঞ্জনে ভরে গেল হলরুম। সবাই ছি ছি করতে লাগলেন সাইমুন খান ও তার কোম্পানির বিরুদ্ধে।
পারমিতা বলল, আমি এখন পুরোটাই আপনাদের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। একইসাথে আজ থেকে আমি এই কোম্পানির কোনো প্রতিনিধি নই। আমি চাকরির পদ ছেড়ে দিলাম। এবং ভবিষ্যতে যেন আর কোনো মেয়ে কর্মকর্তাকে এমন হেনস্তার মুখোমুখি হতে না হয়, এ জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করছি। আরেকটা কথা, দুইশো নয় নাম্বার রুমে খোঁজ নিয়ে জানলাম সেখানে সাইমুন খান ছিলেন না। সেখানে ছিলেন তৌশিক খান। কাজেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। পুরোটাই তৌশিক খানের একটা চক্রান্ত।

স্টেজ থেকে নেমে এলো পারমিতা। এতক্ষণ ঘামে ভিজে উঠলেও পারমিতার শেষ কথাটা শোনার পর হাফ ছেড়ে বাঁচলেন সাইমুন খান। তারমানে এখানে সে যে সম্পূর্ণ নির্দোষ সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তার দিকে কেউ আর আঙুল তুলবে না। তিনি নিশ্চিন্ত হলেন।

পারমিতা স্টেজ থেকে নেমে এসে তৌশিক খানের সাথে মুখোমুখি হলো। তৌশিক খান রাগে আগুন হয়ে আছেন। পারমিতার মুখে কাঠিন্য। রোদ ওর পাশে এসে দাঁড়াল, দারুণ বলেছেন পারমিতা। আসুন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করি।

চলবে..

আগের পর্বঃ https://www.facebook.com/439669216414853/posts/1357976371250795/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here