পারমিতা” পর্ব-৭

0
2089

#পারমিতা
পর্ব ৭
_নীলাভ্র জহির

রোদ পারমিতার কাছাকাছি এলে বুঝতে পারলো পারমিতা থরথর করে কাঁপছে। দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছে ও। পারমিতার দিকে তাকিয়ে দেখলো চোখ ও মুখে একটা অন্যরকম ব্যাপার কাজ করছে। রোদ পারমিতার হাত ধরে বলল, আর ইউ ওকে?
– হুম।
– আপনাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে। চলে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ সময় নেবেন?
– না। আমি এখনই বাসায় ফিরতে চাই।
– ওকে। চলুন তাহলে।

রুম থেকে জামাকাপড় নিয়ে হোটেলের লবিতে এসে দাঁড়াল পারমিতা। তখনই অনেক গুলো সাংবাদিক ওকে কাকের মতো ঘিরে ধরল। পারমিতা বলল, আমি এখানে কোনো কথা বলতে চাইনা। যা বলার ওখানেই বলেছি।
তবুও সাংবাদিক রা একটার পর একটা প্রশ্ন করতে লাগল। রোদ উদ্ধার করলো ওকে। পারমিতাকে নিয়ে এসে একটা গাড়িতে উঠলো রোদ। গাড়ির পিছনে ওর জামাকাপড় তুলে দেয়ার সময়ও সাংবাদিক দৌড়ে এসে প্রশ্ন করা শুরু করলো। রোদ দ্রুত পারমিতাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে দরজা আটকে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
হাফ ছেড়ে বাঁচলো পারমিতা। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো ও। পারমিতা বসেছে পেছনের সিটে। গাড়ির চালকের আসনে বসেছে রোদ। খুব সুন্দরভাবে ও গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
পারমিতা প্রায় মিনিট দশেক চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিয়ে চোখ মেললো। বলল, আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম প্রায়, সরি।
– ইটস ওকে। আপনি চাইলে ঘুমাতে পারেন।
– আপনি একা গাড়ি চালাবেন আর আমি ঘুমাবো সেটা কিভাবে..
– তাহলে কি আপনিও আমার সাথে গাড়ি চালাবেন?
হাসলো রোদ। পারমিতা বলল, আমি কি সামনে এসে বসবো?
– আপনার যেটাতে সুবিধা হয়। আমি ড্রাইভারকে ডাকার সুযোগ পাইনি আসলে।
– আমি আপনাকে সমস্যায় ফেলে দিলাম। আচ্ছা শুনুন না, আমার তো এখন আর কোনো ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমি একাই চলে যেতে পারবো। আপনি বরং আমাকে নামিয়ে দিন।
– আমার সাথে পরিচয় হওয়ার পর কোনোভাবে কি মনে হয়েছে একটা মেয়েকে মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিয়ে যাবো?

পারমিতা কি উত্তর দেবে বুঝতে পারলো না। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে রোদ। কিছুদূর এসেই সিগন্যালে গাড়ি থামাতে হলো। রোদ জানতে চাইলো, আপনার বাসা কোথায় বলুন? তাহলে আমার সেদিকে যেতে সুবিধা হবে।
– আমি..

এমন সময় ফোন বেজে উঠলো পারমিতার। সামান্তা কল দিয়েছে। পারমিতা রিসিভ করামাত্রই সামান্তা বলল, তুই ঠিক আছিস?
– ‘হ্যা আছি। আমি প্রেজেন্টেশনের পর সব বলে ফেলেছি। বাসায় এসে তোকে সবকিছু বলবো।
– আমি জানি কি কি বলেছিস। আমি টিভিতে দেখেছি।
– টিভিতে দেখেছিস? এরমধ্যেই টিভিতে দেখিয়ে ফেলেছে?
– ‘হ্যা। সব চ্যানেলেই তো দেখাচ্ছে। তৌশিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। কোম্পানির নাম হাইড করে নিউজ করা হচ্ছে। এমনকি সাইমুন খানের নামও কোথাও নেই।
– সব টাকাওয়ালাদের কারবার। আমার স্পিস কি কেটে দেখাচ্ছে না পুরোটাই?
– তোরটা পুরোটাই দেখাচ্ছে। বেশি করে দেখাচ্ছে লাস্টের লাইনটা। যেন সাইমুন খানকে নির্দোষ প্রমাণ করা যায়। বড় বড় কোম্পানির বড় বড় চাল। বুঝলি?
– ‘হ্যা। সেটা আমি জানি। তুই কোথায়?
– আমি প্রীতুলকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছি।
– চিড়িয়াখানায়? বাসায় কখন আসবি? আমি ওকে মিস করছি।
– কিন্তু প্রীতুল তো কোনোভাবেই আজকে যেতে চাচ্ছে না। তোর কথা বলার পরও যেতে চাচ্ছে না।
– যে প্রোগ্রামের জন্য ওকে পাঠানো সে প্রোগ্রামটাই তো নষ্ট হয়ে গেছে।
– হুম। কিন্তু কিছু করার নেই। আমাকে কালকেও থাকতে হবে এখানে। নয়তো প্রীতুলকে সামলানো যাবে না। একটা কাজ কর, তুইও এখানে চলে আয়। আমরা ফুপির বাড়িতে দুটো দিন থাকি। কি বলিস?
– আমি আসবো? কিন্তু আমার তো.. ভালো লাগছে না রে। কোথাও যাওয়ার মতো মুড নেই।
– আরে চলে আয়। ফুপির বাসায় কেউ নেই। ওনার সব মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আর ফুপাও দেশের বাইরে। একা থাকে বাসায়। তুই এখানে আয়, মজা হবে।
– আচ্ছা লোকেশন কোথায়? যাবো কিভাবে?
– আমি তোকে লোকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি।

ফোন রাখার পর পারমিতা রোদকে বলল, আমাকে নামিয়ে দিন। এক জায়গায় যেতে হবে।
– কোথায় যাবেন? আমি আপনাকে রেখে আসি?
– না। আপনাকে ওদিকে কষ্ট করে নিয়ে যেতে চাচ্ছি না। এমনিতেই আপনি আমার জন্য অনেক করেছেন।
– চুপ করুন প্লিজ। আমি আপনার জন্য কিছুই করতে পারি নি। কোথায় যেতে হবে বলুন? সেখানে যাওয়া সম্ভব হলে আমি যাবো।
– মিরপুর যেতে হবে।
– আমি যাচ্ছি।
– অযথা কষ্ট করছেন। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা কখনো শেষ হবে না আমার।

রোদ গাড়ি চাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর জ্যামে আটকে যাচ্ছে গাড়ি। পারমিতা সিটে হেলান দিয়ে চুপ করে বসে আছে। রোদ একটা সুন্দর গান অল্প ভলিউমে ছেড়ে দিয়ে শুনছে। হঠাৎ ওর ফোনে কল এলো। ওপাশের কথাগুলো শুনতে পারেনি পারমিতা তবে কথা শুনে মনে হচ্ছে রোদকে পারমিতার ব্যাপারে কেউ জিজ্ঞাসা করছে। আর সেটা সম্ভবত ওনার প্রেমিকাই হবে। কারণ একটা মেয়ে যে কিনা একটু আগে সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ তুলে এনেছে, তাকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে রোদ। সেটাও সাংবাদিকরা নিশ্চয় ভাইরাল করে দিয়েছে। রোদকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার অধিকার একমাত্র ওর প্রেমিকার ই আছে।

পারমিতা নিজেকে নিয়ে ইতস্তত বোধ করছে। মিছেমিছি ওনার মতো একজন ভালো মানুষকে ঝামেলায় ফেলে দিলো সে। অপরাধবোধ কাজ করছে ওর মাঝে।
পারমিতা বলল, আপনি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
– শিওর।
– আমাকে নামিয়ে দিলে আমি এখান থেকে একটা বাসে উঠে চলে যেতে পারবো।
– আপনি চলে যেতে পারবেন সেটা আমিও জানি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আপনার মানসিক অবস্থা যেমন, সেখানে আপনাকে একা পাঠানোটা আমি যৌক্তিক মনে করছি না।
– আপনি অনেক মহানুভব।
– থ্যাংকস। ফর ইয়োর কমপ্লিমেন্ট। আপনি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিন।
– থ্যাংকস।

পারমিতার সত্যিই খুব ঘুম পাচ্ছিল। রোদ ঘুমাতে বলার পর যেন ঘুমটা আরও প্রাণ পেল। কিন্তু রোদকে গাড়ি চালাতে দিয়ে এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাতে ভালো লাগবে না ওর। জোরপূর্বক কিছুক্ষণ কথা চালাতে পারলেও কখন ঘুমে তলিয়ে গেছে নিজেও টের পায়নি।

পারমিতার ঘুম ভাংলো তখন গাড়ি একটা ফাকা রাস্তা ধরে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলেছে। দুই পাশে ডোবা ও বালুর চর। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল পারমিতার। সে কোথায় আছে বুঝতে সময় লাগল। বুক ধক করে উঠলো। বাইরে ভালো করে তাকাতে তাকাতে ওর বুক ধকধক করছিল। মুখ শুকিয়ে গেল।
রোদ লুকিয়ে গ্লাসে ওকে দেখে বলল, ঘুম ভাংলো?
– কোথায় আমি!
– ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক ভয় পাচ্ছেন।
– কোথায় আছি বলুন!
– আরে বেরিবাধ ধরে যাচ্ছি। এইদিক দিয়েই যেতে হবে।
– শিওর?

রাস্তার ধারে একটা দোকানের পাশে গাড়ি থামালো রোদ। গাড়ি থেকে নামলো সে। পারমিতাকেও নামতে বললো। পারমিতা হতবাক মুখে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। রোদ দোকানদারকে জিজ্ঞেস করল, আংকেল এইটা কোন রোড? এটা দিয়ে চিড়িয়াখানা যাওয়া যায়?
– হ্যাঁ এটাই তো। বেরিবাধের সড়ক।
রোদ পারমিতার দিকে তাকালো, ম্যাম এবার বিশ্বাস হলো তো?
পারমিতা স্বস্তি বোধ করলো, হুম। সরি আমি ঘুম থেকে উঠেছি তাই..
– তাই ভেবেছিলেন আমি আপনাকে কিডন্যাপ করে কোথায় না কোথায় নিয়ে যাচ্ছি?
– উহু সেরকম না।
– সেরকম না?
– হ্যাঁ সেরকমই ভয় পেয়েছিলাম।
হেসে ফেললো রোদ। ওর সাবলীল হাসি দেখে হাসি পেলো পারমিতারও। সে কতটা বোকার মতো এই সুন্দর মানুষটাকে অবিশ্বাস করতে শুরু করেছিল সেটা ভাবলে রাগই হচ্ছে। রোদ কী যে ভাবছে..

পারমিতা গাড়ি থেকে নেমে এলো। রোদ দোকান থেকে এক বোতল পানি নিয়ে পারমিতার দিকে এগিয়ে দিলো। মুখ ধুয়ে রোদের পাশে দোকানের বেঞ্চিতে গিয়ে বসলো পারমিতা।
রোদ বলল, নিশ্চয়ই অনেক ক্ষুধা লেগেছে?
– না। আপনার অনেক খিদে লেগেছে তাইনা?
– স্বাভাবিক। কয়টা বাজে দেখেছেন?
– ওহ না। কয়টা বাজে?
– চারটা।
– চারটা! ওহ হো। আপনার আজকের দিনটাই আমি নষ্ট করে দিলাম।
– ইটস ওকে। বারবার নিজেকে নিয়ে এ ধরনের কথা বলা বন্ধ করবেন প্লিজ?

রোদ দোকান থেকে এক প্যাকেট কেক, ব্রেড ও কলা নিয়ে পারমিতাকে দিলো। বলল, এরচেয়ে ভালো কিছু পাচ্ছি না। আপাতত কষ্ট করে খেয়ে নিন।
– আমি জীবনে এরচেয়ে খারাপ খাবার খেয়েছি। আমার কষ্ট হয়নি।
– খারাপ খাবার খেতে কার কষ্ট হয় না?
– যারা জীবনকে ভালবাসে, বেঁচে থাকতে চায়, খাবারটা যাদের কাছে মুখ্য নয়।
– খাবারটা আমরা বেচে থাকার জন্যই খাই৷
– শুধুমাত্র বেচে থাকা। ভালো থাকার জন্য ভালো খাবার দরকার। বেঁচে থাকতে শুধুমাত্র খাবার পাওয়াটাই যথেষ্ট।

হাসলো রোদ। হাসতে হাসতে বললো, আপনি কথাবার্তায় অনেক দক্ষ।
– সরি, আপনাকে অযথা বিরক্ত করছি।
– প্লিজ আপনি আর এ ধরনের শব্দচয়ন অন্তত আমার সামনে করবেন না। আমি আপনাকে রেস্পেক্ট করি।

চমকে উঠলো পারমিতা। রেস্পেক্ট, মানে সম্মান! ওর রাসিফের কথা মনে পড়ে গেল। এ জীবনে রাসিফের কাছে সম্মানটুকুই কখনো পেলো না পারমিতা। রাসিফ ও তার পরিবার ওকে অপমান করতে করতে ওর জীবনটাই বরবাদ করে দিয়েছে। আজ আবার সেই শব্দ, সম্মান! পারমিতা অবাক দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে রইল।
নাস্তা শেষ করে গাড়িতে এসে উঠলো ওরা। গাড়ি দ্রুত চলতে লাগল। এবার পারমিতা রোদের পাশেই বসেছে। এমন সময় কল এলো রোদের ফোনে। একটা মেয়ের ছবি ভেসে উঠলো স্ক্রিনে। ফোনটা সামনে রাখার কারণে সেখানে সহজেই চোখ গেল পারমিতার। মেয়েটার নাম সেভ করা, ‘লাভ বার্ডস’ নামে। পারমিতা চোখ সরিয়ে নিলো। রোদ ফোন রিসিভ করে বলল, আমি গাড়ি চালাচ্ছি। পরে কল দিবো।
ফোনের ভলিউম বেশ জোরে থাকার কারণে পারমিতা শুনতে পেলো মেয়েটা বলছে, তুমি এখনো ওই মেয়ের সাথে? গাড়িতে করে ওকে নিয়ে যাচ্ছো কোথায় তুমি?
– উফফ থামো না। আমি তোমাকে দশ মিনিট পরে কল দিচ্ছি।

কল কেটে ফোন রাখলো রোদ। পারমিতা বলল, আমি আপনাকে অনেক ঝামেলায় ফেলে দিয়েছি।
– আরে না। একজন মানুষ একজন মানুষের পাশে থাকবে, এটাই কি স্বাভাবিক না? এতে বারবার ঝামেলা, সরি এসব শব্দ আসছে কেন?
– সরি, আর বলবো না।
– আবার সরি?

চুপ করলো পারমিতা। রোদ দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। সম্ভবত ওই মেয়েটাকে ফোন করতে হবে সে কারণেই তারাতাড়ি পৌঁছে দিতে চায়। তবে এবার সত্যিই তারাতাড়ি পৌঁছে গেল ওরা। ফুপির বাসার কাছাকাছি চলে এসেছে ওরা। পারমিতা বলল, আমি এখন একটা রিকশা নিয়ে যেতে পারব। আপনি চলে যান।
– আমি আপনাকে ওনার বাসায় রেখে আসলে কোনো সমস্যা আছে?
– না। সমস্যা নেই।

পারমিতা আর কথা বাড়াল না। সে বুঝে গেছে রোদ ওকে বাসাতেই পৌঁছে দেবে। ফুপির বাসায় পারমিতার সঙ্গে রোদকে দেখে অবাক হলো সামান্তা। পারমিতা বলল, উনি আমাকে নিজে পৌঁছে দিতে এসেছেন।
সামান্তা ওনাকে ধন্যবাদ জানালো। পারমিতা বলল, প্রীতুল কোথায়?
– ঘুমাচ্ছে। জেগে থাকলে এতক্ষণে ছুটে আসতো। ওই রুম আছে, যা।

পারমিতা রোদকে বলল, আপনি একটু বসুন। আমি এখনই আসছি।
পারমিতা সামান্তাকে খাবারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে ফ্রিজ থেকে রান্না করা মাংস ও সবজি বের করে দ্রুত গরম করে খেতে দিলো পারমিতা ও রোদকে। একই টেবিলে বসে খাবার খেলো ওরা। খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই প্রীতুলের গলা শোনা গেল। প্রীতুল জানেনা ওর আম্মু এসেছে। ও সামান্তাকেই ‘আন্টি’ বলে ডাকলো। ডাক শুনে পারমিতা বলল, প্রীতুল উঠেছে। আপনি খান, আমি একটু আসি।

পারমিতা প্রীতুলের রুমে গেল। ‘আন্টি’ ডাক শুনে খাবার রেখে ছুটে যাওয়া দেখে রোদ ভাবলো ছেলেটা পারমিতার ভাগ্নে। বেশ অবাক হলো রোদ। মেয়েরা ছোট বাচ্চাদের আসলে একটু বেশিই ভালোবাসে। নয়তো এসেই পারমিতা ছুটে যেত না।
পারমিতা প্রীতুলকে কয়েক মিনিট সময় দিয়ে আবারও ডাইনিংয়ে এলো। রোদের খাওয়া শেষ। ও সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিতে বের হবে এমন সময় ফোন বেজে উঠলো পারমিতার। অফিসের ম্যানেজার জালালুদ্দিন কল দিয়েছেন।
পারমিতা রোদকে বলল, আপনি ভালো থাকবেন।
– আপনিও ভালো থাকবেন। কল রিসিভ করুন। আমি আসি। আবার দেখা হবে আশাকরি।

রোদ বিদায় নিয়ে চলে গেলো। পারমিতা ম্যানেজারকে সব খুলে বলল। উনি বললেন, পারমিতা আপনি আমাকে একবার ফোন করে জানাবেন না? আমি আপনার ভালো চাই সেটা কেন বোঝেন না আপনি? আমাকে সবসময় পর ভেবে আসলেন। আমাকে ফোন করলেই আমি একটা ব্যবস্থা নিতাম। সবকিছু প্রেসের সামনে তুলে ধরে আমাদের কোম্পানির বদনাম রটালেন।
– সরি স্যার। আমি খুবই বিপদে পড়ে.. আমি চাইনি আর কোনো মেয়ের সাথে এমন হোক।
– কিন্তু পারমিতা আপনি আমাকে একবার জানাতে পারতেন।
– সরি স্যার। আমি ভুল করে ফেলেছি?
– আর হয়তো দেখা হবে না আমাদের। আপনি ভুল করেননি। কিন্তু অফিসে একটা বড় গণ্ডগোল হবে সেটা নিশ্চিত। যাইহোক, কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। আমি অবশ্যই কোম্পানির হয়ে কথা বলবো কিন্তু আমি আপনার ভালো চাই। আপনি সেটা কোনোদিনও বুঝলেন না। আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েছি সেটাও আপনি সিন করেন নাই। যাইহোক, পরিস্থিতি কি হয় দেখা যাক। আপনি টেনশন করবেন না।
– ওকে স্যার। আমি আবারও সরি।
– ইটস ওকে। বাই।

ম্যানেজার স্যার কল কেটে দিলেন। পারমিতা ভাবলো, সত্যিই স্যারকে একবার জানাতে পারতো সে। স্যার আসলেই ওর ভালো চায়। সেটা এর আগে অনেকভাবে বুঝিয়েছেন তিনি। পারমিতা হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে ম্যানেজার স্যারের মেসেজ চেক করলো। কিন্তু কনভারসেশনে ঢুকেই হৃদপিণ্ড লাফিয়ে উঠলো ওর। স্যার বেশ কয়েকটা মেসেজ পাঠিয়েছেন। সেইসাথে পাত্রের একটা ছবি। ছবির সাথে লিখেছেন, দেখেন পছন্দ হয় কিনা। আমাকে জানাবেন। বেশ কিছুদিন আগে পাঠানো সেই মেসেজ পারমিতা আগে দেখেনি। দেখলে এতকিছু কীভাবে ঘটতো! পাত্র আর কেউ নয়, স্বয়ং রোদ!

চলবে..

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1358625194519246&id=439669216414853

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here