প্রিয়তমা পর্ব-১৪ ১৫ ১৬

0
2030

#উপন্যাস
#প্রিয়তমা (১৪ ১৫ ১৬তম পর্ব)
লেখা – শারমিন মিশু
লামিয়া বাড়ি ফিরে রুম বন্ধ করে দিয়ে হাত পা ছেড়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। বসে বসে হাঁফাতে লাগলো। কিভাবে যে ওই লোকটাকে পাশ কাটিয়ে বাসায় এসেছে তা শুধু ওই জানে। বারাবর ওই লোকটার ভয়ংকর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কি ভয়ংকর দৃষ্টি!!! চোখ দিয়ে মনে হয় গিলে খাবে এমন অবস্থা!!!! পাশ দিয়ে একটা রিকশা যাচ্ছিলো লামিয়া তড়িঘড়ি কটে ওটাতে উঠে বাসায় এসে উঠছে। জোবায়দা মেয়েকে এইরকম বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে কি হয়েছে জানতে চাইলেন।
লামিয়া কিছু না বলেই রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়েছে। এই মুহূর্তে মা বাবা কারো মুখোমুখি হয়ে কিছু বলার ক্ষমতা ওর নেই।
কিন্তু ওই লোকটা কেন আবার ওর সামনা সামনি হয়েছে এতোদিন পরে। এখন তো লামিয়া অন্য কারো বাঁধনে আবদ্ধ। লোকটা কি জেনে শুনে ফিরে এসেছে নাকি না জেনে। লোকটা কি আমার খারাপ কিছু করবে? নাকি অনুতপ্ত হয়ে এসেছে। না যেভাবে রাস্তায় সামনে এসে দাঁড়িয়েছে মনে হচ্ছে লোকটা কিছু একটা খারাপ করবে। কিন্তু কি???
এই লোকটার সাথে লামিয়ার পরিচয় লামিয়ার বিয়ের আট থেকে নয় মাস আগে থেকে। ঠিক পরিচয় না,,, বলা যায় এই লোকটি লামিয়ার জীবনের অভিশাপ হয়ে আছে। এই লোকটি লামিয়ার জীবনের এক কালো অধ্যায়। সব তো ও ভুলে গেছে ও তাহলে,,,,
লামিয়ার মনে পড়ছে,,,,আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে কলেজ যাওয়ার পথে ঠিক আজকের মত আরিফ লামিয়ার পথ রোধ করে দাঁড়ায়। লামিয়াকে রাস্তা পার হতে দিচ্ছিলো না। লামিয়া অনেক অনুনয় বিনয় করছিলো ওকে ছেড়ে দিতে৷ এই ছেলেটা বেশ কিছুদিন আগে লামিয়ার এক বান্ধবীকে ধর্ষণ করে খুন করেছে। কিন্তু ওর বাবার নাকি অনেক পাওয়ার তাই সেবারে কোন সাজা না পেয়ে মুক্তি পেয়ে গেছে। কোন না কোনভাবে ও লামিয়ার ছবি বা লামিয়াকে দেখেছে। লামিয়া অনেকদিন থেকে লক্ষ্য করেছে এই লোকটা ওকে ফলো করছে। আর আজ সরাসরি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সেদিন লামিয়ার পথ রোধ করে আরিফ লামিঅকে ভালোবাসার কথা জানায়। লামিয়াকে নাকি ওর অনেক ভালো লেগেছে। তাই সরাসরি বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে।
লামিয়া ঠিক আজকের মত ভয়ে সেই জায়গায় স্থীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। নড়ার কোন ক্ষমতা তার ছিলনা। চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলো কেউ আছে কিনা। কাউকে দেখা যায়নি। লামিয়া ওই দিন ওর কাছ থেকে কিভাবে পালিয়ে এসেছিলো তা মনে করলে অন্তরাত্মা আজো কেঁপে উঠে। কিন্তু লোকটা প্রতিদিন ওর পিছু নিত। আজেবাজে নানা ধরনের কথা বলতো। লামিয়া কখনো ওর কথার কোন প্রতুত্যর করতোনা। কারন এইসব ছেলের সাথে কথা বললে বা তর্ক করলে হিতে বিপরীত হতে পারে তাই লামিয়া প্রতিদিন পাশ কাটিয়ে চলে যেত কোন কিছু না বলে।
লামিয়া প্রথমে পরিবারের কাউকে ব্যাপারটা জানাতে চায়নি। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যাপারটা আর ধামাচাপা দেয়ার মত ছিলনা। পথেঘাটে লোকটার উত্ত্যক্ততা বেড়ে গিয়েছিলো। একেবারে ঘর থেকে বের হওয়া মুচকিল হয়ে পড়েছে। বাবা মাকে ব্যাপারটা জানাতেই সোহান সাহেব লাবিবকে দিয়ে লোকটার সম্পর্কে খোঁজ নেয়। খোঁজ নিয়ে লাবিব জানতে পারে আরিফ পাশের এলাকার প্রভাবশালী সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন লোক আতাউর রহমানের বখে যাওয়া একমাত্র ছেলে আরিফুর রহমান ।
একজন খারাপ লোকের যতগুলো বেড হেভিট থাকে এই লোকটার সেই সব ছিল মেয়েদের বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যক্ত করা আরিফের কাজ। বিভিন্ন ভাবে ফুসলিয়ে মেয়েদের যৌন নির্যাতন করতো। নেশা করে রাতভর আরো অনেক খারাপ জিনিসের প্রতি ওর আসক্তি আছে। কিন্তু পাওয়ার থাকা বাবার কারণে অনেক জঘন্য অন্যায় করে ও শাস্তি না পেয়ে বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তবে ছেলেটা যতটা খারাপ বাবা ঠিক ততোটাই ভালো একজন মানুষ। আতাউর রহমান এলাকার মানুষের কাছে সন্মানিত একজন মানুষ। একমাত্র ছেলে বলে অতিরিক্ত ভালোবাসা দিতে গিয়ে শাসন করার অভাবে ছেলেটা বিগড়ে গেছে। মা ছিলনা তাই কেউ সেভাবে শাসন করতে পারেনি। অতিরিক্ত স্বাধীনতা পেয়ে লাগামছাড়া হয়ে গেছে ছেলেটা। যাকে এখন আর শিকলে বেঁধে রাখার কোন উপায় নেই।
লামিয়ার বাবা আরিফের বাবার সাথে দেখা করে এই ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলে,,, যাতে উনি ছেলেকে সামলায়। বুঝায় যাতে মেয়েদের এইভাবে পথেঘাটে যাতে বিরক্ত না করে। এটা চরম অন্যায়।
কিন্তু আরিফকে এ ব্যাপারে জানালে ও বলে যে লামিয়াকে বিয়ে করতে চায়। লামিয়াকে বিয়ে করতে পারলে ও পুরোপুরি বদলে যাবে,,, সব খারাপ কাজ ছেড়ে দিবে এটাই ওর কথা। তাই বাবাকে বলে কয়ে আরিপ ও বাড়িতে বিয়ের সম্বন্ধ পাঠায়।
আরিফদের বাড়ি থেকে বিয়ের সম্বন্ধ আসলে লামিয়ার পরিবার সরাসরি নিষেধ করে দেয়। বিশেষ করে লামিয়া এতে পুরোপুরি অসম্মতি জানায়। এসব বেদ্বীন আর ব্যভীচারী লোককে বিয়ে করার চেয়ে সারাজীবন অবিবাহিত থাকা উত্তম। তারপরও ওই লোককে বিয়ে করবে না ওর এক কথা । জেনেশুনে নিজেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়াটা কোনভাবেই ঠিক নয়। লোকটা একটা ব্যভিচারি। বহু মেয়ের জীবন ওর হাতে ধ্বংস হয়েছে। মেয়েদের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন পর্যন্ত করেছে লোকটা লাবিব খবর নিয়ে জানতে পেরেছে।
আর ইসলাম ব্যভিচারী নারী পুরুষকে বিয়ে করার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আল কুরআনের সূরা নূরের ৩নং আয়াতে আছে,,,,
নিঃসন্দেহে ব্যভিচারীনি নারী কেবল ব্যভিচারী পুরুষ কিংবা কোন মুশরিককে বিয়ে করবে। আবার ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারীনি কিংবা কোনো মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করবে। কোন মুসলিম মুমিন,, মুমিনাদের ওদের বিয়ে করা পুরোপুরি হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
কোরআনের এই মহামূল্যবান আয়াতের ব্যাখ্যাটা লামিয়া জানে বলে এই বিয়ের সম্বন্ধটাকে পুরোপুরি নিষেধ করে দিয়েছে।
আরিফের বাবা লামিয়ার বাবাকে অনেক রিকুয়েস্ট করেছে এই সম্বন্ধটাকে পাকাপোক্ত করার জন্য। লামিয়ার বাবার এক কথা মেয়ে যখন নিষেধ করেছে আমি এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে পারবোনা। কেননা বিয়ের ব্যাপারে ছেলেমেয়ের মতামত নেয়ার জন্য ইসলাম বলে দিয়েছে। বিয়েতে ছেলে মেয়ের মতামতের পুর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।তাই তিনি জোর করে মেয়ের উপর নিজের মতামত চাপিয়ে দিতে চান না।
তারপর অনেকদিন এভাবে কেটে গেলো। এ ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছিলো। এর পর
থেকে প্রয়োজন ছাড়া লামিয়া ঘর থেকে বেরুতোনা। নিজেকে একেবারে গৃহবন্দী করে ফেলেছে বলতে গেলে । যদি খুব বেশি দরকার হতো তখন বাবা বা ভাইকে নিয়ে বেরুতো। কারণ ওই লোকটা লামিয়াকে হুমকি দিয়েছিলো,,, যে লামিয়াকে ও দেখে ছাড়বে। কি করে অন্য জায়গায় লামিয়া বিয়ে করে এটা ও দেখে নিবে।
এরপর শুনা গেলো লোকটাকে নাকি বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ওর বাবাই ওকে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছে। অতিরিক্ত ড্রাগ নেয়ার কারনে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আর লামিয়ার পরিবার ও যেন এক বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায়। লামিয়া তো স্বাধীনভাবে চলার ক্ষমতাটাই হারিয়ে ফেলছিলো।
তারপর আনাাসের বাসা থেকে সম্বন্ধ আসা বিয়ে হওয়া একে একে সব হয়ে গেলো । আর লামিয়া ও চলে গেছে ঢাকাতে।
কিন্তু কখনোই কল্পনা করেনি এই লোকটি আবার ফিরে আসবে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ভয় নিয়ে। আর লামিয়া ও এ ব্যাপারটাকে পুরোপুরি ভুলে গেছে। আজ আবার লোকটা সামনে এসে সেইসব কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। লামিয়া ঠুকরে কেঁদে উঠলো। আল্লাহ!!! তুমি আমাকে রক্ষা করো এই জানোয়ারটার হাত থেকে। কেন তুমি আবার সেই অমানুষকে আমার সামনাসামনি করেছো???? রক্ষা করো আমার সংসারটাকে। কখনো তোমার উপর বিশ্বাস হারাইনি। আজো তোমার কাছে আশ্রয় চাইছি এই মুসিবত থেকে। তুমি আমার রক্ষাকারী।
লামিয়ার এক মুহুর্তে মনে হলো ও ফিরে যাবে ঢাকাতে। কোন প্রয়োজন নেই পরীক্ষা দেয়ার। এই পরীক্ষার জন্য যদি কোন অঘটন ঘটে যায় তাহলে আনাসকে কি জবাব দিবে লামিয়া???
এই লোকটার আজ যেই রুদ্ররূপ লামিয়া দেখেছে তাতে মনে হলো এই লোক ওকে ছেড়ে দেয়ার নয়।
কিন্তু এই মুহুর্তে পিছু হটা মানে লোকটার ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া। না এভাবে সব সমস্যার সমাধান হবেনা। লামিয়া ধমে যাবেনা। আল্লাহর উপর ভরসা করে ও এগুবে। এমন ভাবে চলতে হবে যাতে ওই লোকটা মনে করে আমার কিছু মনে নেই। লোকটাকে ভয় পেয়েছে এটা লোকটা জানতে পারলে সমস্যা বাড়বে কমবেনা।
লামিয়া নামাজের বিছানায় মহান রবের দরবারে সেজদায় পড়ে মাথানত করে নিজের ইজ্জত আব্রু রক্ষার জন্য একনাগাড়ে চোখের পানি ছেড়ে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে।
সাজানো সংসারটাতে যেন মিথ্যার ফাটল না ধরে রবের কাছে ওর একটাই চাওয়া…..
চলবে……

#উপন্যাস
#প্রিয়তমা (১৫তম পর্ব)
লেখা – শারমিন মিশু
লামিয়ার পরীক্ষা শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আর মাত্র একটা সাবজেক্ট আছে। আনাস আজ এসেছে লামিয়াকে নিয়ে যেতে।
আনাস এসেছে অনেকক্ষণ লামিয়া শুধু একবার এসে দেখা করে ওকে ফ্রেশ হতে বলে বেরিয়ে গেছে। আনাস ফ্রেশ হয়ে শুয়ে আছে। লাবিব এসে খাবার খেতে ডেকে নিয়ে গেছে। খাবার টেবিলে আনাস লক্ষ্য করছে লামিয়া কেমন অন্যমনস্ক হয়ে খাবার সার্ভ করছে। খেয়ে এসে আনাস আবারো শুয়ে পড়েছে। শরীরটা ভীষন ক্লান্ত হয়ে আছে। সকাল সাতটায় রওনা দিয়ে চারটায় এসে পৌঁছেছে। ৫ঘন্টার জার্নি পুরো ৯ঘন্টা করে এসেছে অতিরিক্ত জ্যাম থাকার কারণে। লামিয়া এখনো রুমে আসছেনা। আনাস আসার পর থেকে লক্ষ্য করছে লামিয়া কেমন গা ছাড়া গা ছাড়া ভাব। আনাস এতোদিন পর এসেছে কোথায় ওর মাঝে একটু উচ্ছ্বসিত ভাব থাকার কথা তা না কেমন গম্ভীর হয়ে আছে। বিষন্নাতা ছেয়ে আছে চোখমুখ জুড়ে। মেয়েটা কথা কম বললে ও চেহারার মধ্যে সবসময় একটা হাসি হাসি ভাব লেগে থাকে যেটা আজ পুরো উধাও। আনাস বুঝতে পারছেনা। সব তো ঠিকই ছিলো।
হঠাৎ করে আবার কি হলো ওর?
আচ্ছা আমার কোন কথা বা কাজের দ্বারা কি কষ্ট পেয়েছে নাকি?
না কি অন্য কিছু?
মনে হচ্ছে কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত কি সেই কারণ?
আনাস এসব ভাবতে ভাবতে কখন জানি ঘুমিয়ে পড়েছে। লামিয়া রুমে এসে দেখলো আনাস ঘুমাচ্ছে। লামিয়া আনাসের মাথার পাশে বসে ঘুমন্ত মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সারদিনের ক্লান্তির ছাপ উনার চোখেমুখে ছড়িয়ে আছে। মানুষটা প্রচন্ড ভালোবাসে লামিয়াকে। লামিয়া হয়তো ওর মতো না হলে ও অনেক ভালোবাসে। তবে আনাসের মত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে পারেনা। কিছু কিছু মানুষ আছে চাপা স্বভাবের যারা নিজের ভিতরের আবেগ অনুভূতিগুলোকে সহজে একজনের কাছে প্রকাশ করতে পারে না,,,, লামিয়া তাদের দলেরই একজন।
আল্লাহ এই মানুষটাকে সবসময় এমন রাখবে তো?
কোন মিথ্যাকে বিশ্বাস করে কি সংসারটাকে শেষ করে দিবেনা তো?
কেননা আরিফ নাকি বলেছে লামিয়ার সংসারটাকে টিকে থাকতে দিবেনা সেটা যেভাবেই হোক। লামিয়া সারাক্ষণ এই ভয়ে থাকে না জানি কখন কি করে বসে। আনাস আসার পর থেকে এই ভয়টা আরো বেড়ে গেছে সে যদি আনাসের কোন ক্ষতি করে বসে? যদি লামিয়ার নামে উল্টোপাল্টা কিছু বলে? আনাস যদি সেটাই বিশ্বাস করে বসে?
যদিও আনাস সেরকম মন মাইন্ডের না তারপর ও বলা যায়না। মানুষের মন কখন কোন অবস্থায় পাল্টে যায় তা কেউ বলতে পারেনা।
লামিয়া ওই ভয়টার জন্য আনাস আসার পর থেকে স্বাভাবিক হয়ে কথা পর্যন্ত বলতে পারছেনা। মাথায় কারো হাতের স্পর্শে আনাসের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ মেলতেই দেখলো লামিয়া বসে আছে। আনাস আবারো চোখ বন্ধ করে বালিশ থেকে মাথা তুলে লামিয়ার কোলের মাঝে রাখলো।
লামিয়ার হাত ধরে বললো,,, এতোক্ষনে সময় হলো বউটার আমার কাছে আসার?
-না ওই আম্মুকে একটু হেল্প করেছি তো তাই।
-হুম জানি। কেমন আছো?
-এইতো আছি। আপনি কেমন আছেন?
-কোনটা জানতে চাইছো শরীর কেমন আছে নাকি মন কেমন আছে?
-দুটোই।
-শরীর আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। আর মন এতোদিন একটুও ভালো ছিলোনা তবে তোমাকে দেখার পর অটোমেটিক বিন্দাস মুডে চলে এসেছে।
-বাসার সবাই কেমন আছে?
-সবাই ভালো।
-আনাস প্রসঙ্গ পাল্টে বললো,,,,, কি হয়েছে তোমার?
-লামিয়া হঠাৎ এই প্রশ্নে চমকে গিয়ে আমতা আমতা করে বললো,,, ক..ক… কই… কিছুনাতো,,, কি… কি…. হবে আমার? কেন এটা বলছেন?
-আমতা আমতা করছো কেন? আমি তো এমনি বলেছি। তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে চিন্তায় আছো তাই?
-না কিছু হয়নি।
-শরীর খারাপ?
-না
-ওহ
-আপনি একটু রেস্ট নিন সারাদিন জার্নি করে এসেছেন আমি আসছি।
-কোথাও যেতে হবেনা এখন তোমার। আমার রেস্ট হয়ে গেছে। আর তোমাকে দেখার পর ক্লান্তি গুলোও দূর হয়ে গেছে। এখানে বসো গল্প করি তোমার সাথে না বলা কত কথা জমে আছে আমার।
রাতে খাবার পরে ঘুমানোর আগে আনাস বললো,,, এখন একটু কোরআন তেলাওয়াত করো তোমার সেই সুরেলা কন্ঠ কতদিন শুনিনা।
লামিয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে কোরআন হাতে নিলো৷ লামিয়া তেলাওয়াত করছে আর আনাস মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে লামিয়ার কাঁধে মাথা রেখে তা শুনছে। পৃথিবীর সুন্দরতম দৃশ্যগুলোর মধ্যে এটা একটা সুন্দর দৃশ্য।
কিছুক্ষণ পর আনাস বললো,,, একটু চা খাওয়াতে পারবে মাথাটা ভীষন ধরেছে।
-লামিয়া বললো,,, কি চা দিবো?
-আদা আর লেবু দিয়ে রং চা দিয়ো?
লামিয়া চা বানিয়ে নিয়ে আসার পর আনাস একটা প্যাকেট লামিয়ার হাতে দিয়ে বললো,,,, এটা তোমার জন্য।
-কি এটা?
-নিজেই খুলে দেখো।
-লামিয়া অনেকটা আগ্রহ নিয়ে প্যাকেটটা খুললো। খুলে দেখলো গাড়ো সবুজ কালারের হাফ সিল্কের একটা শাড়ী তার সাথে মিলানো ফুল হাতার ব্লাউজ। লামিয়া শাড়ীটা হাতে নিয়ে বললো,,, মাশাআল্লাহ্!!!! দারুন তো!!!
-তোমার পছন্দ হয়েছে?
-অনেক!!!
-আলহামদুলিল্লাহ!!! বাঁচলাম । শাড়ীটা কিনার পর থেকে টেনশনে ছিলাম তোমার পছন্দ হবে কিনা?
-কে কিনেছে? আপনি?
-জী আমি কিনেছি।
-বাব্বাহ আপনার পছন্দ এতো ভালো!!! এরপর থেকে আমার সব আপনি কিনবেন বলে দিলাম!!!
-দিলে তো ধরিয়ে!!!
-লামিয়া হেসে দেয় আনাসের কথায়। তারপর উঠে শাড়ীটা আলমারিতে রাখতে যায়।
আনাস লামিয়ার হাত ধরে বললো,,,, একটা রিকুয়েস্ট করবো?
-হুম বলুন না এমনভাবে বলার কি আছে?
-বলছি যে,,, কিছু মনে না করলে শাড়ীটা এখন একটু পড়বে?? তোমাকে শাড়ীটা পড়লে কেমন লাগে দেখার খুব ইচ্ছে। অনেক শখ করে কিনেছি তো।
-এই কথা!!! এটা রিকুয়েস্ট করার কি আছে। আপনি আমাকে বললেই তো হতো। আমি ভাবলাম কি না কি?
-আর শুনো???
-হুম
-একটুখানি সাজবে,,, মুঠোভর্তী ছুড়ি পড়বে,,, খোঁপায় এই বেলী ফুলের মালাটা পড়বে।
-বেলী ফুল!!!! আপনি জানেন আমার পছন্দের ফুল বেলী??
-জানি। আর জানি বলেই এনেছি। এখন যাওতো শাড়ীটা পড়ে আসো।
পরের পরীক্ষাটা দিতে যাওয়ার সময় আনাস লামিয়ার সাথে গেলো। এখানে তো আনাস কিছুই চিনেনা তাই ভাবলো লামিয়ার সাথে যাওয়াও হবে ঘুরা ও হবে। লামিয়া বারবার লক্ষ্য করছিলো আরিফকে কোথাও দেখা যায় নাকি। কোনভাবে আনাসের সাথে দেখা হলে কি হবে সেই ভাবনায় লামিয়ার বুকের ভিতর তোলপাড় চলছে। মনে মনে আল্লাহর সাহায্য চাইছে। কিন্তু আজ সে ছিলনা পথের মাঝে। লামিয়ার পরীক্ষার সময় পুরো ৪ঘন্টা আনাস ওখানে বসে অপেক্ষা করছিলো লামিয়ার জন্য।
পরীক্ষার হলে বসেও লামিয়া আল্লাহ আল্লাহ করছে। নিচে আনাস একা আছে লামিয়া না থাকার সুযোগে যদি সে এসে আনাসকে কিছু ভুল বুঝিয়ে টুযিয়ে দেয় তখন কি হবে?
কোনমতে পরীক্ষা শেষ করে বেরিয়ে আসলো।
পরীক্ষা দিয়ে ফিরার পথে আনাস বললো,,,, বাসায় একটু দেরি করে গেলে সমস্যা হবে নাতো??
-লামিয়া সমস্যা নেই বলে মাথা নাড়লো। লামিয়া আনাসকে ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করলো ও স্বাভাবিক আছে কিনা?? কোন কিছু হয়েছে কিনা? কিন্তু আনাসের চেহারায় কোন রকমের বিষন্নতা বা দুশ্চিন্তার ছাপ আছে কিনা৷ না সেরকম তো কিছু বোঝা যাচ্ছেনা।
আনাস এর মাঝে একবার লামিয়াকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,,, কি দেখছো এভাবে?
-না কিছুনা।
-আমার তো মনে হয় কিছু হয়েছে যেভাবে চোরের মত দেখছো?
-আমি চোরের মত দেখতে যাবো কেন?
-সবসময় একটা না একটা কথা বলে আমাকে রাগিয়ে দিতে হবে।
-আনাস মুচকি হেসে বললো আরে দুষ্টুমি করছি,,, রাগ করছো কেন?
-রাগ করবো কেন??
কিছুক্ষণ আশপাশে রিকশা করে ওরা ঘুরাঘুরি করলো। বাসায় ফিরে আসার পর জোবায়েদা বললো,,, কিরে আজ এতো দেরি হলো যে?
-আম্মু উনি একটি আশপাশটা দেখতে চাইছিলেন তাই।
-ওহ আচ্ছা। তোর ভাইয়াকে বলিস কাল জামাইকে আমাদের চারপাশটা ভালো করে ঘুরিয়ে দেখাতে।
-আম্মু উনিতো কাল চলে যেতে চাচ্ছেন।
-সে কি কথা তুই না বললি আরো দুদিন ছুটি আছে।
-আম্মু ছুটি তো আছে কিন্তু উনার নাকি ভালো লাগছেনা তাই।
-বাসায় একা একা বোর হচ্ছে তাই হয়তো এমন বলছে। আচ্ছা আমি জামাইর সাথে কথা বলবো। আর আমি লাবিবকে বলে দিবো কাল যেনো ওকে নিয়ে একটু বাহির থেকে ঘুরে আসে তাহলে ভালো লাগবে।
-আম্মু আসলে আমিও চাচ্ছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যেতে।
-বাব্বাহ!!! বিয়ের পরে মা বাবা,, বাবার বাড়ী সব এতো পর হয়ে গেলো যে চলে যাবি।
-আম্মু ব্যাপারটা আসলে তা না। আমি ভাবলাম অনেকদিন তো হলো উনারা কি বলবে?
-আমি তোকে ভালো করে চিনি মা। ব্যাপারটা মোটেও তা না। সত্যি করে বলবি কি হয়েছে?
-কিছু না তো।
-আমি তোর মা। তোদের সবার মনের খবর আমি একটু হলে ও বুঝি আর আমার কাছেই লুকাচ্ছিস। কি হয়েছে আমাকে বল??
-আম্মু ওই লোকটা আবারো এসেছে?
– মানে?? কোন লোকটা??
-আরিফ,…
-কি বলছিস কি তুই!! আমাকে একটু বল কি হয়েছে?
লামিয়া পুরো ব্যাপারটা বলার পর ওর মা বললো আগে কেন বলিসনি?
-ভেবেছি খুব বেশি সমস্যা হবেনা তাই।
-আচ্ছা আর একটা দিনইতো আল্লাহ আল্লাহ কর।
-হুম।
জোবায়েদা আনাসকে অনেক বলে কয়ে আর একটা দিন থাকার জন্য রাজি করালো।
পরদিন সকালে লাবিব আনাসকে নিয়ে ওদের এলাকাটা ঘুরে দেখতে বেরুলো। কিছুক্ষণ ঘুরার পর ওরা বাড়ির পথ ধরলো। লাবিব বাড়ি থেকে একটু দূরে থাকতে বললো ভাইয়া আমার বাজারে একটু কাজ আছে আপনি কি আমার সাথে যাবেন নাকি বাড়ি ফিরে যাবেন?
-আনাস বললো,,, আপনি যান,,, আমি বাড়ি ফিরে যায়।
-একা একা যেতে পারবেন তো?
-হুম পারবোনা কেন অবশ্যই পারবো।
তারপর লাবিব চলে যেতেই আনাস বাড়ির পথ ধরলো।
আনাসকে রুমের দিকে যেতে দেখেই লামিয়া ওর পিছু পিছু রুমে আসলো। আনাস শার্টটা খুলে লামিয়ার হাতে দিলো। লামিয়া বললো,,, ঘুরাফেরা কেমন হলো?
-হুম ভালো। এক গ্লাস পানি দিবে?
লামিয়া টেবিলের উপরের জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে গ্লাসটা আনাসের দিকে এগিয়ে দিলো। আনাস হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নিলো।
লামিয়া আনাসের শার্টটা আলনায় রাখতে গেলে পিছন থেকে আনাস বলে উঠলো,,,, আরিফ কে???
হঠাৎ আনাসের এইরকম প্রশ্নে লামিয়া থমকে যায়।
উনি ওর ব্যাপারে জানলো কি করে?
তাহলে কি যে ভয়টা এতোদিন পাচ্ছিলাম সেটাই কি সত্যি হলো???
চলবে……

#উপন্যাস
#প্রিয়তমা (১৬তম পর্ব)
লেখা – শারমিন মিশু
লামিয়ার মনে হচ্ছে ও এখনি জ্ঞান হারাবে। পুরো শরীর কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। তবুও নিজেকে যথাযথ স্বাভাবিক রেখে আনাসের দিকে তাকিয়ে বললো,,,, উনাকে আপনি কোথায় পেলেন??
-আরে বাড়ি আসার সময় পথে কথা হলো। বলছিলো তোমাদের নাকি আত্মীয় হয়।
-হুম দূরসম্পর্কের আত্মীয় হয়।
-ও আচ্ছা। কিন্তু উনাকে তো মনে হয় বিয়ের সময় দেখিনি।
-উনি দেশের বাহিরে ছিলো তখন। আপনার সাথে কথা হয়েছে নাকি?
-হুম
-কি বলেছে?
-বাব্বাহ!!! ইন কোয়ারি শুরু করেছো দেখছি?
-না না ইন কোয়ারি করবো কেন? আমিতো এমনি বললাম।
-না তেমন কিছু বলেনি। এমনি কুশল বিনিময় করেছি। আর বলেছে তোমাদের নাকি খুব কাছের লোক এই আর কি।
-ও আর কিছু বলেনি?? প্রশ্নটা করেই লামিয়া জিভে কামড় দিলো মনে মনে বললো,,, ইয়া আল্লাহ কি করছি আমি নিজের হাতে বিপদ কেনো ডেকে আনছি।
-আনাস লামিয়ার এরকম অহেতুক প্রশ্নে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,,,, বোকার মত কথা বলছো কেন?? আর কি বলবে??
আর কি হয়েছে তোমার? চোখেমুখে এতো কাঠিন্যতা কেন?
-আমার কি হবে??? আচ্ছা আপনি বসেন আমি আপনার জন্য চা নিয়ে আসছি।
লামিয়া আনাসের সামনে থেকে অনেকটা পালিয়ে আসলো। লামিয়া যেন অনেক বড় বিপদ থেকে বাঁচলো। যে ভয়টা ছিল তেমন কিছু হয়নি। কিন্তু যতদূর জানি লোকটার কাছ থেকে এতো ভালো ব্যবহার আশা করা যায়না। সত্যি কি লোকটা বদলে গেছে?
নাকি যেকোন বড় ঝড় আসার আগে পরিবেশ যেমন শান্ত হয়ে যায় এটা তার পূর্বাভাস নয়তো?
লামিয়ার সারা শরীর কাঁপছে। এই মুহূর্তে আনাসের সামনে থাকা মানে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা তাই ওখান থেকে কেটে পড়লো। এখন উনাকে কিছু বলা যাবেনা। ঢাকায় গিয়ে ধীরে সুস্থে সব কথা জানাতে হবে উনাকে। এভাবে লুকোচুরি করে আর কয়দিন একদিন তো বলতেই হবে । না বলতে বলতে কোনো বড় বিপদ না এসে যায়। উনি নিজে থেকে জানার আগে আমি নিজে জানিয়ে দিলে হয়তো অনেক ভালো হবে। উনি ও হয়তো বুঝতে পারবে। আর এখানে তো আমি কোন দোষ করিনি। আমাকে তো অযথা হয়রানি করা হচ্ছে।
আল্লাহ আর কয়টা দিন আমায় সাহারা দাও। তোমার রহমত আমাকে দান করো।
লামিয়া আজ ফিরে যাচ্ছে নিজের ঘরে। যাওয়ার সময় আজো সে কান্না করেছে। কেন জানি মনের ভিতর কেমন কেমন লাগছে। মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু হবে ওর সাথে। আশ্চর্য ভয়ের মতো তেমন কিছু তো ঘটেনি তারপর আমার এমন লাগছে কেন? লামিয়া ভাবছে। মনটা যেতে সায় দিচ্ছেনা তারপরও যেতে হবে। কেননা এখানে থাকলে চিন্তা আরো বেশি হবে। ওখানে গেলে হয়তো আবার সব আগের মত হয়ে যাবে।
যাওয়ার সময় ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,, আম্মু আমার জন্যই একটু বেশি করে দোয়া করবে। কারণ মা বাবার দোয়া থাকলে সন্তান অনেক সময় খুব বড় বিপদ ও কাটিয়ে উঠতে পারে।
-আমার দোয়া তোর সাথে সর্বদা ছিলো আর থাকবেও। আল্লাহর উপর থেকে বিশ্বাস হারাসনা। আল্লাহ তার বান্দাদের সব বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে। সবসময় আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবি।
গাড়ীতে বসে ও লামিয়া মন খারাপ করে বসে ছিলো। এমন কেন হচ্ছে?
বাসায় আসার পর তো লামিয়ার শাশুড়ি এতদিন পর ছেলের বউকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
তারপর লামিয়ার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বললো,,,কতদিন পর মেয়েটাকে কাছে পেয়েছি। তুই মাকে পেয়ে এই মাকে ভুলেই গেছিস?
-না আম্মু তেমন কিছুনা। পরীক্ষার জন্যইতো তা নাহলে তো আরো আগেই চলে আসতাম।
-হুম জানি। কিন্তুতুই এতো শুকিয়ে গেছিস কেন?? খাবার টাবার খাসনি নাকি???
-না সেরকম কিছুনা এমনি পরীক্ষা নিয়ে টেনশনে ছিলাম।
-আনাস সোফায় বসে বললো,,, আম্মু কারো বাড়িতে এতোদিন থাকলে খাবার দিবে নাকি? মেহমান থাকে তিনদিন এর পরে আর মেহমান থাকেনা। তাই ওই বাড়িতে ওরা উপোস রেখেছে এতোদিন তোমার বউমাকে?? বলে লামিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
লামিয়া শাশুড়ির দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললো,,, আম্মু এটা রাখেন। আমার আম্মু দিয়েছে?
-রাহেলা ব্যাগ টা খুলে দেখলেন দু তিন রকমের পিঠা বানিয়ে দিয়েছে লামিয়ার মা।
তারপর লামিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,,, উনি অসুস্থ মানুষ এসব ঝামেলা করার কি দরকার ছিলো।
আচ্ছা এখন তুই গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে নে পরে কথা বলবো। অনেকদূর জার্নি করে এসেছিস।
লামিয়া খাবার খেয়ে এসে দেখলো আনাস বসে আছে সোফায়। লামিয়া গিয়ে খাটের একপাশে বসছে। কিছু ভালো লাগছেনা ওর। কাল এসৃয় কোথায় ছিল আজ কোথায়। মা বাবার জন্য মন কেমন করছে।
আনাস সোফা থেকে উঠে এসে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,,,, মন খারাপ?
-হুম
-এখানে থাকতে ইচ্ছে করছেনা?

-বাড়ীতে গিয়ে আবার রেখে আসবো?
-আমি আপনাকে বলেছি আমাকে রেখে আসতে?
-না বলোনি তবে তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে এতোদিন থেকেও তোমার বেড়ানো হয়নি তাই?
-অনেকদিন থেকেছি মায়া ধরে গেছে আবার কবে না কবে যেতে দিবেন তাই মনটা একটু খারাপ লাগছে।
-এমনভাবে বলছো যেন তুমি বিদেশ চলে এসেছো যে আর সহজে ফিরবেনা।
-বিদেশ থেকে কম কি? আপনি কি আমাকে বললেই যেতে দিবেন?
-এটা অবশ্য ঠিক বলেছো তুমি যেতে চাইলেও আমি সহজে এবার তোমাকে যেতে দিবোনা। তুমিবিহীন থাকা আমার জন্য কষ্টকর। তাই এবার একবছরের আগে আর বাবার বাড়ি যাওয়ার নাম মুখে আনবেনা। পারবেনা।
-কিহ…????
-জী।
আনাস এবার লামিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো আগামী একবছর পরে আমরা দুজন নয় তিনজন মিলেই বেড়াতে আসবো।
-আপনি তিনজন পেলেন কোথায়?
-এখনো পাইনি তবে পেয়ে যাবো। কারণ আমি চাই খুব শীঘ্রই সে আমাদের মাঝে আসবে যদি মহান রবের রহমত থাকে আমাদের উপর।
-কে সে???
-বোকা মেয়ে কিচ্ছু বুঝেনা। আরে সে আমাদের সন্তান যে এখনো মহান রবের কাছে আছে।
-লামিয়া লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো। আচ্ছা আপনার কি লজ্জা লাগেনা এভাবে মুখের উপর এসব কথা বলতে।
-আমার কি দোষ তুমি বুঝতে পারোনা বলেই তো আমাকে সব খুলে বলতে হয়। এমন একটা বউ আমার ইশারা ইঙ্গিতে কথা বুঝেনা।
শুনো আমি কিন্তু আর অপেক্ষা করতে পারবোনা। আল্লাহ চাইলে আগামী বছরে আমি আমার সন্তানের মুখে বাবা ডাক শুনতে চাই। আমি চাই সে আমাদের সংসারটাকে পরিপূর্ণ করতে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের কোলজুড়ে আসবে।
– কি শুরু করেছেন কি?? আল্লাহর দোহাই লাগে আপনি চুপ করেন না।
এভাবে মুখের উপর কথা বলা আপনার একটা বদঅভ্যাস। সিচুয়েশান বুঝেন না কিছুনা।
-আল্লাহ এই মেয়েটাকে নিয়ে কি করি?? আরে স্বামী স্ত্রী নিজেদের মাঝে এসব বলতে লজ্জা কি? স্বামী স্ত্রী ভালোবাসা নিয়ে একে অপরের মাঝে ভালোবাসা বাড়ে। সবসময় কুরআন হাদীস বিষয়ে বই পড়ো আর এগুলা জানোনা।
-আপনি চুপ করবেন??? এতো কথা কেমনে বলেন?? মুখ একটু ও ব্যাথা করেনা?
-আমি কি তোমার মতো নাকি? বোমা মারলেও তোমার মুখ দিয়ে কথা বেরোয়না। গোমড়ামুখো কোথাকার!!!
-আমি গোমড়ামুখো???? আমি যখন গোমড়ামুখো তখন আমার কাছে আসার কি দরকার। সরেন এখান থেকে।
-কোথায় সরবো??
-আমার সামনে থেকে?
-আমি তোমার সামনে নয় পিছনে? আর তাছাড়া তুমি আমার প্রয়োজন তোমার কাছ থেকে দূরে থাকি কি করে?
-আমি আপনার প্রয়োজন মানে??
-সরি… সরি… প্রিয়জন?
-কথা ঘুরাবেন না। আপনারা পুরুষরা এমনি মেয়ে মানুষকে যোগ্য সন্মান দিতে জানেন না। আমরা শুধু আপনাদের প্রয়োজন???
-আরে… আরে…. আমি সত্যি দুষ্টুমি করে কথাটা বলেছি তোমাকে রাগানোর জন্য। রাগলে তোমায় কেমন লাগে তা দেখতে। বিশেষ করে তোমার মন ভালো করতে এসব করছি। এখন দেখি তুমি সত্যি সত্যি সিরিয়াস হয়ে গেছো।
তুমি আমার ভালোবাসার মানুষ। তুমি যেভাবেই আছো তাতে আমার কাছে তুমি পৃথিবীর সেরা সুন্দরী রমনী।গোমড়ামুখো হলে ও তুমিতো আমারি মানুষ কি বলো??
-আপনি না….
-কি আমি?
-কিছুনা।
-কিছুনা হলে থাক ঘুম আসছে আমার এখন একটু মাথাটা টিপে দাও।
-(লামিয়া একটু রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
-এভাবে তাকাচ্ছো কেন ভয় লাগছে তো। একটু স্বামি সেবা করো না হলে ভালোবাসা বাড়বে কেমনে।
-হুম এভাবে কথা বলে বলেইতো নিজের অধিকার আদায় করে নিতে পারেন বলে লামিয়া মুচকি হেসে আস্তে আস্তে আনাসের মাথা টিপতে লাগলো।
লামিয়ার শশুর শাশুড়ি দুজনে ওমরা করার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গিয়েছে এক সপ্তাহ আগে। ওমরাহ পালন শেষে ওনারা কয়দিন ওখানে থাকবে উনাদের বড় ছেলের কাছে। উনারা যাওয়ার পর থেকে লামিয়া বাসায় একা হয়ে পড়েছে। আনাস অফিসে চলে যাওয়ার পর রিপা আর লামিয়া বাসায় থাকে শুধু।
সকালে লামিয়া আনাসকে নাস্তা খাইয়ে অফিসে পাঠিয়ে দিয়ে ঘরটা গুছিয়ে নিয়ে রান্না করতে কিচেনে ডুকলো। রিপা ওকে সাহায্য করছে আনাস মা বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে দুপুরে বাসায় এসে লান্চ করে তাই রান্নাটা করার জন্য ওর এতো তাড়াহুড়ো। লামিয়া রান্না করছে এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজ। লামিয়া রিপাকে দরজা খুলতে পাঠালো। রিপা ভিতর থেকে বাহিরে উঁকি দিলো। দরজার বাহিরে কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। রিপা ওখান থেকে জোরে বললো,,, ভাবি বাহিরে তো কাউকে দেখা যাচ্ছেনা।
-লামিয়া বললো,,, তাহলে দরজা খোলার দরকার নেই চলে আয়।
রিপা ভিতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আবারো কলিংবেলে আওয়াজ হলো।
রিপা আবারো দেখলো যে কেউ নেই তাই সে আবার কিচেনে ফিরে এলো। লামিয়া বললো,,, কিরে আবার কে এসেছে?
কাউরে দেখি নাই ।
ঠিক আধাঘন্টা পরে আবারো কলিংবেলর আওয়াজ। রিপা এবার রেগে গেলো কোন হারামি এবার তোর খবর আছে বলেই রিপা গিয়ে এবার না দেখেই দরজা খুলে ফেললো। দরজা খুলে দেখে পাশের বাসার বুয়া দাঁড়িয়ে আছে।
রিপা চেঁচিয়ে বললো,,, ওই আম্নে এতক্ষণ বেল বাজাইাছেন?
-আমি কোন দুঃখে এতক্ষণ বেল বাজামু আমি তো আইলামই মাত্র।
-তো এতক্ষণ কে আছিলো?
-আমি কেমনে কমু?
-কি জন্য আইছেন? আর হাতে কি ওইটা?
-ও এইটা তো একজনে দিছে আনাস ভাইয়ের বউরে দেওনের লাইগা।
লামিয়া রিপার চেঁচামেচি শুনে ও আসছে না দেখে দরজার দিকে গেলো কি হইছে দেখার জন্য। পাশের বাসার বুয়া দেখে ও সামনে এগিয়ে গেলো।
রিপা কি হয়েছে?
ভাবি আপনারে নাকি কে এইটা দিছে বলে একটা এনভেলাপ লামিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।
লামিয়া এনভেলাপটা নেড়েচেড়ে দেখে বললো,,, কি এটা? আর কে দিলো তোকে??
-জানিনা কি। আমারে তো মরিয়মের মাই দিছে।
লামিয়া মরিয়মের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,,, আপনি এটা কই পাইছেন?
-ভাবি আমি আহনের সময় এক লোক এটা দিয়ে বললো,,, আনাস ভাইয়ের বউকে এটা একটু দিয়ে দিবেন।
-আপনি কি লোকটাকে চিনেন?
-আমি কেমনে চিনুম। আমি তো উনারে এর আগে কহনো দেহি নাই।
ওহ আচ্ছা আপনি যান বলে লামিয়া রিপাকে কিচেনের দিকে পাঠিয়ে দরজা লাগিয়ে নিজের রুমের দিকে গেলো। লামিয়া ভাবছে কি হতে পারে এর ভিতরে?
আর আমাকেই বা কেন পাঠাবে?
এখানে আমাকে চিনেই বা কয়জন?
ভাবতে ভাবতে লামিয়া এনভেলাপের উপরের কাগজটা ছিড়লো…….
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here