বর্ষা দুপুর (পর্বঃ১২) হালিমা রহমান

বর্ষা দুপুর (পর্বঃ১২)
হালিমা রহমান

আকাশে খরখরা সূর্য উঠেছে। সূর্যের তাপ দেখে বোঝার উপায় নেই একটু আগে বৃষ্টি হয়েছে।কচুপাতায় জমে থাকা পানিগুলো সূর্যের আলোতে চকচক করছে।মনে হয় যেন মু্ক্তোদানা।কে বলে শুধু শিশির কণাই মুক্তোর মতো ঝলমল করে?কচুপাতায় জমে থাকা পানির বিন্দুও সূর্যের আলোয় দ্যুতি ছড়ায়।
নীরার আজ খুব মন খারাপ।একদম চূড়ান্ত পর্যায়ের খারাপ।নীরা ইদানিং লক্ষ করে, সবাই ওর সাথে খুব ভালো ব্যবহার করে।একটু-আকটু নয়, অনেকটা ভালো ব্যবহারই করে।জয়নব বেগম আগের মতো খিটখিট করে না।সাহানা বেগম আগের মতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা শুনায় না।ইরা মুখে মুখে কথা বলে না।নীরা যা বলে তাই মাথা নিচু করে শুনে।কামরুল সাহেবের কাছে আবদার করলে নিষেধ করে না।অন্যায় আবদার হলেও না।এগুলো প্রথম প্রথম চোখে লাগতো না নীরার।কিন্তু এখন লাগে।এইসব অসামঞ্জস্য আচরণ খুব চোখে পরে।নীরা তলিয়ে দেখলো।তারা এ ধরনের আচরণ করে নীরার বিয়ে ভাঙার পর থেকে।তখন থেকেই নীরার মন খারাপ।তার মানে কী,নীরাকে পরিবারের মানুষেরাও করুণার পাত্র হিসেবে দেখছে?তারা কী এই ঘটনাকে নীরার দূর্বলতা ভাবছে?তাই আগের মতো আচরণ করছে না?হ্যাঁ, ঘটনা এটাই।এসব ভেবেই নীরার মন খারাপ।এগুলো ছাড়াও আরেকটা কান্ড হয়েছে একটু আগে।বৃষ্টি দেখলেই নীরাদের বাড়িতে খিচুড়ি চাপানো হয়।আজো তাই হয়েছে।বেশি করে মুগের ডাল দিয়ে জয়নব বেগম খিচুড়ি বসিয়েছেন।এর সাথে বানাবেন হরেক রকম ভর্তা ও মাছ ভাজা।নীরা দেখলো রুমা বেশ কয়েক পদের ভর্তা বানানোর প্রস্তুতি নিয়েছে কিন্তু টুনির জন্য পারছে না।ভর্তা বানানোর ভার সবসময় রুমার উপরেই পরব।জয়নব বেগম ও সাহানা বেগমের কোমরে সমস্যা।তাই তারা একটানা বসে ভর্তা বানাতে পারে না।তাছাড়া, রুমার হাতের ভর্তা খুব মজা হয়।কিন্তু,আজকে টুনি খুব সমস্যা করছে।টুনিটার বোধহয় শরীর খারাপ।তাই শুধু শুধু মায়ের আঁচল ধরে কখন থেকে খ্যানখ্যান করছে।রুমা বিরক্ত হয়ে পিঠের মধ্যে দিল দুটো কিল।টুনি কাঁদতে কাঁদতে নীরার ওড়নার আঁচলের নিচে লুকালো।
—” আহ,কাকি কী করছো?ওকে মারছো কেন?বেচারির হয়তো শরীর খারাপ।”
—” শরীর খারাপ হইলেই এরকম হাতের নিচে ঘুরতে হইব? ওয় দেখে না ওর মায় কাম করে না?”
—” ও কি বুঝে? দেখি সর, আমি করছি।আমি আজকে ভর্তা বানাই, ওরে তুমি ঘরে নিয়ে যাও।দেখ কী হইছে ওর।”
—” তুমি পারবা না। অনেক পদ,অনেক সময় লাগব।”
—” আরে, পারব।যাও তুমি।”
রুমা কিছুতেই দেবে না।কিন্তু যখন দেখলো নীরা অনেক জোরাজোরি করছে তখন রাজি হলো।টুনিকে নিয়ে পা বাড়ালো ঘরের দিকে।দেখা যাক, মেয়েটার কি হয়েছে।নীরা শিলনোড়া নিয়ে রান্নাঘরের সিড়ির কাছে বসলো।রান্নাঘরের সামনে নারিকেল গাছ কেটে দু-ভাগ করে দেওয়া।এগুলো সিড়ির কাজ করে।কাজে হাত দিল নীরা।কিন্তু আধঘন্টা যাওয়ার পর হাপিয়ে উঠলো সে।আহ! এতো কষ্ট কেন?হাত দুটো একেবারে ব্যাথায় টনটন করছে।নীরা বুঝতে পারেনি এতো কষ্ট হবে।অনভ্যস্ত নীরা অসহায় চোখে বাটির দিকে তাকালো।এখনো প্রায় চার পদের ভর্তা বানানো বাকি।নীরার কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে।কি দরকার ছিল খাল কেটে কুমির আনার!
—” এই নীরা,কী করছ?”
নিজের নাম শুনে সামনে তাকালো নীরা।তাদের পিচ্ছিল উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে পাশের বাড়ির সুমনা খালা।নীরাদের প্রতিবেশী তিনি।বয়সে বোধহয় সাহানা বেগমের সমান।
—” ভর্তা বানাই, খালা।”
—” কীয়ের কীয়ের ভর্তা?”
—” শুটকির,ডালের,কচুপাতার,কাঠাল বিচির, কালোজিরা আর শুকনা মরিচের।”
সুমনা বেগম সাবধানী পায়ে সিড়ি বেয়ে রান্নাঘরের বারান্দায় বসলেন।নীরার বানিয়ে রাখা শুটকি ও কালোজিরার ভর্তায় আঙুল চালিয়ে মুখে চেখে নিলেন।নীরার বিশ্রি লাগলো ব্যাপারটা।সুমনা খালার হাতটা কি ধোয়া?
—” ভালোই বানাইছোছ নীরা।তোর মায় কই?”
—” রান্নাঘরে।”
সুমনা বেগম চারপাশে একবার আড়চোখে তাকিয়ে নীরার কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললেনঃ” জানোস,কালকে কমলার লগে দেখা হইছে বাজারে।”
—” কমলা কে?”
—” আরে, কমলারে চিনোছ না? চেয়ারম্যানের বউ।ওই হারামজাদা মেহরাবের মা।”
নীরার মনে পড়লো কমলা বানুর কথা।তার না হওয়া শ্বাশুড়ি। না হওয়া শ্বাশুড়ি!কথাটা খুব ভালো লাগলো নীরার কাছে।মনে মনে হাসলো নীরা।কি রকম একটা কথা!
—” বুঝছোস, কালকে দেখা হওয়ার পরে আমার লগে আগায়া আইসা কথা বলা শুরু করছে।আমি আবার আগ বাড়ায়া কথা কই নাই।আগের থেকা শুকায়া গেসে কমলা। শুনলাম, তার ছেলে নাকি এই কয়েকমাস ধইরা আসে না।অবশ্য,আইবই কোন মুখে? তোর লগে যেই অন্যায় করছে,সেই অন্যায়ের আবার মাফ আছে নাকি? ওরা তো এহনো ওইরকম পোলারে ত্যাজ্য করে নাই।তোর খালু হইলে এতোদিনে কবে ত্যাজ্য কইরা দিত।এরম পোলা পেটে ধরাও পাপ।”
নীরা কিছু বলল না।কিইবা বলা যায় এখানে? তবে বুঝতে পারলো এরপর সুমনা বেগম কী বলবে।
—” কথার মাঝে আবার আমারে জিগায় তোর কথা। তুই কেমন আছোস,কোনো বিয়ার ঘর আসে নাকি– এইসব।আমিও এক্কেরে কতগুলি কথা শুনায়া দিছি।মাইয়ার কপালে কলঙ্ক লাগায়া এহন আবার ভালো-মন্দ জিগাও! কেন? কি দরকার তোগো এত? আমগো সোনার মতো মাইয়ার কপালে এই বয়সেই কেমন একটা দাগ লাগায়া দিসে! তোর কি আর ভালো ঘর থেকা সম্বন্ধ আইব?পোলার বাড়ির মানুষজন যহন শুনবো বিয়ার দিন বিয়ার আসরে রাইখা জামাই পালায়া গেসে, তহনি তো উল্টা দিকে হাঁটা ধরব।হেরা কী আর ভালো-মন্দ খোঁজ-খবর নিব?মনে করব মাইয়ার দোষ, তাই পোলায় পলাইছে।আমার তোর লেগা অনেক খারাপ লাগেরে নীরা।কালকেও তোর খালুর লগে আলোচনা করছি কতোক্ষণ……”
নীরার কানে আর কিছু ঢুকলো না।বিয়ে ভাঙার পর থেকেই এসব ভবিষ্যৎ বানী শুনতে হয়।এই কয়েক মাসে এরকম অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী হয়েছে নীরার।তারা নীরার ভবিষ্যৎ ভেবে নিজেরাই বুক চাপড়ায়।নীরা ভেবে পায় না তাদের এতো মাথা ঘামাতে হবে কেন।কই, নীরাতো কষ্ট পায় না! বরং নীরা ভুলে থাকতে চায় সেই প্রত্যাখানের সন্ধ্যা। একটা এলোমেলো সন্ধ্যা। তবে পারে না এসব শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য।এরা খুচিয়ে ঘা করে মনে করিয়ে দেয়।সুমনা বেগম কথা বলেই চললেন।কথায় আনলেন হাজারো উদাহরণ। তার কোন আত্মীয়ের মেয়ের বিয়ে ভেঙেছে, কার আর বিয়েই হলো না,কে বরের প্রত্যাখ্যানের পর গলায় দড়ি দিয়েছে….সব এসব কথা।নীরা মনোযোগ দিতে চাইলো না।কিন্তু, তবুও সবসময় মনোযোগ না দিয়ে পারা যায় না।শত হলেও নীরার কিশোরী আবেগী মন।নীরার কাজ প্রায় শেষের দিকে।এমন সময় জয়নব বেগম এলেন সেখানে।
—” নীরা, শেষ তোর?”
নীরা হাফ ছেড়ে বাঁচলো।বাড়ির লোকের সামনে এসব শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে বিয়ে নামক জুজুবুড়ির ভয় দেখায় না।তারা মানসিকভাবে আক্রমণ করে নীরা যখন একা থাকে তখন।
—” হ্যাঁ, আম্মা শেষ।”
—” তাইলে হাত ধুইয়া ঘরে যা।ভালোমতো ধুইছ,নাহয় জ্বলবো। ”
জয়নব বেগম পাত্তাও দিলেন না সুমনা বেগমকে।এই মহিলাকে তিনি দেখতে পারেন না।সবসময় বেশি কথা বলে আর মানুষের সংসারে নাক গলায়।এ ধরনের মানুষকে বেশি পাত্তা দিতে নেই।এরা সুযোগ পেলেই মাথায় চড়ে বসে।জয়নব বেগম যদি জানতেন তিনি এখানে,তবে আরো আগে আসতেন।মেয়েটার মাথায় কী কী ঢুকিয়ে দিয়েছে আল্লাহ মালুম।
নীরা উঠে যাওয়ার পিছন দিয়ে সুমনা বেগমও উঠে গেলেন।নীরার মনটা খারাপ তখন থেকেই।তাকে কি সবসময়ই এমনসব কথা শুনতে হবে? কত ভালো লাগে এসব কথা?যারা এসব কথা বলে তাদেরকে ঘাড় ধরে কবিগুরুর অপরিচিতা গল্পটা পড়াতে ইচ্ছে করে নীরার।পড়ানোর পর গলা টিপে ধরে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করেঃ” কল্যানীর বিয়েও তো ভেঙে গেছে।ওর জীবন কি নষ্ট হয়ে গেছে? আমার বিষয়ে এতো কথা বলতে হবে কেন আপনাদের?আমার পরিবারের মানুষ কি মরে গেছে?”এরকম দু-তিনটে কঠিন কঠিন কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে করে নীরার।তবে, পারে না।নীরা তথাকথিত ভদ্র মেয়ে।এরা প্রতিবাদ করতে জানে না।দিনভরে শুধু শুনতেই জানে।গলায় ছুরি ধরলেও এরা কিছু বলে না।ইশ! যদি বেয়াদবের তকমা লাগিয়ে দেয় গায়ে।

***

দুপুরে খাওয়ার পর নীরার ঘরে বসে সবাই লুডু খেলছিল।সবাই বলতে তওসিফ, কুসুম,ইরা, তোহা ও নীরা।ইরা খেলছে না শুধু দেখছে।ভাত খাওয়ার পর ঘুমানোর জন্য বিছানায় গেলেও ঘুম আসেনি কারো।বাইরে অত্যধিক গরম।টিনের চাল ছুঁয়ে ছুঁয়ে সূর্যের তাপ ঘরে ঢুকছে।তাই কেউ ঘুমাতে পারেনি।পরে তওসিফের বুদ্ধিতেই লুডুর আসর বসেছে।খেলা প্রায় জমে এসেছে, এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে ইশরাক।ধপ করে বসে পরে তওসিফের পাশে।
—” তওসিফ তোর ফোন দিয়ে রিমার ফোনে একটা কল দে তো।”
—” কেন কী হইছে?”
—” আরে আমি ফোন দিলাম, শুধু বন্ধ বলছে।ওকে না পেয়ে আমার ভায়রার ফোনে কল দিলাম কতদূর আছে তা জানার জন্য।ওই ব্যাটা কি বলে শুনবি? বলে কি না ও নাকি রিমার সাথে বাসে উঠে নাই।”
তওসিফ ফোন কানে ধরেই বললঃ” উঠে নাই মানে? ভাবিরে একা পাঠায় দিসে?”
—” না,একা না। কোন ছেলে নাকি পরিচিত আছে, ওই ছেলের সাথে বাসে পাঠায় দিসে।”
তওসিফ কল দিয়েও রিমার ফোন বন্ধ পেল।সে চিন্তিত স্বরে বললঃ”ভাবির বোন জামাই কি গাধা নাকি? এতো দূরের রাস্তা, কীভাবে অন্য একটা ছেলের সাথে পাঠায়? তার কী হইছে?সে আসবে না কেন?”
—” সেই হারামজাদার নাকি ডায়রিয়া হয়েছে।তাই আসতে পারে নাই।তুই না আসতে পারলে আমারে ফোন দিয়ে বলবি না?।কালকে থেকে আবার লক ডাউন শুরু।উফ! চিন্তায় আমার মাথা নষ্ট।”
ইশরাককে খুব অসহায় দেখালো।তাকে সামাল দেওয়ার জন্যই কুসুম বললঃ” চিন্তা করো না,ভাইয়া।ভাবি চলে আসবে,ইনশাআল্লাহ। ”
—” চিন্তা না করে কি পারা যায়? আজকাল মেয়েরা ঘরেও নিরাপদ না সেখানে রিমা কতদূরে! তাও আবার একা।সাথে একটা অপরিচিত ছেলে। ঢাকা যেয়ে ওর বোনের স্বামীর নাকটা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে আমার।শালা ভাত খেয়ে বড় হয়নি, বাতাস খেয়ে বড় হয়েছে।বেয়াক্কেল।”
উঠে গেল ইশরাক।সবারই খুব চিন্তা হচ্ছে।এর মাঝে আবার রিমার ফোনটাও বন্ধ।লুডুর আসর ভেঙে গেল।কেউ মনোযোগ দিতে পারছে না খেলায়।তওসিফ চলে গেল,ইরা-তোহা উঠে গেল,কুসুমও পিছন দিয়ে বেড়িয়ে গেল।সে এখন কবরস্থানে যাবে।সবাই ঘুমিয়ে আছে।এখনই সময়।একা ঘরে নীরা আর কী করবে? দরজা আধ ভিজিয়ে বিছানায় শুতে গেল।কোনো কাজ নেই হাতে।রিমার জন্য চিন্তা হচ্ছে খুব।নীরা আবার কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়।আজকেও তার ব্যতিক্রম হলো না।দুচোখে ঘুম জড়িয়ে এলো দ্রতই।
নীরার ঘুমটা সবে গাঢ় হয়েছে।এমন সময় ধপধপ করে ঘরে ঢুকলো কুসুম।দৌড়ে গেল নীরার দিকে।
—” নীরাপু, নীরাপু উঠো।ভাবি আসছে।এই নীরাপু,নীরাপু।”
ঘুম অনেকটাই কেটে গেল নীরার। উঠে বসে গায়ে ওড়না জরিয়ে বললঃ” কখন আসলো।”
—” বাড়িতে ঢুকে নাই এখনো।বড় রাস্তায়। আমি কবরস্থানে দাঁড়িয়ে দেখলাম।”
নীরা ও কুসুম বাড়ির সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেল।ইশরাক আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।রিমা বাড়িতে ঢুকতেই ছুটে গেল নীরা-কুসুম।জড়িয়ে ধরলো রিমাকে।
—” কি খবর তোমার ভাবি?”
কুসুমের প্রশ্নে মুচকি হাসলো রিমা।
—” ভালোই।তোমরা কেমন আছো?”
—” আমাদের কথা পরে হবে।আগে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে যা।আরেকবার যদি বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার চিন্তা করেছিস,মেরে তোর পা ভেঙে দেব।ইশরাক ভাই একেবারে পাগল হয়ে গেছে এই কয়দিনে।”
রিমা আড়চোখে তাকালো ইশরাকের দিকে।মুখে তার এক আকাশ মেঘ জমে আছে।ইশরাক এতোক্ষণে মুখ খুললো।
—” ব্যাগ কই তোমার? পথে কোনো সমস্যা হয়নি তো?”
রিমা মাথা নেড়ে বললঃ” ব্যাগ রেদোয়ান ভাইয়ের কাছে।উনি নিয়ে আসতেছে।ভারী ব্যাগ আমাকে এক মূহুর্তের জন্য বইতে দেননি।”
রিমার কথা শেষ হতেই রেদোয়ান বাড়ি ঢুকলো।পিঠে তার মস্ত ব্যাগ,হাতে রিমার ব্যাগ।রেদোয়ানকে দেখে নীরা- ইশরাক অবাক হলেও কুসুম খুব খুশি হলো।রেদোয়ান ক্লান্ত শরীরে জড়িয়ে ধরলো ইশরাককে।বিনিময়ে ইশরাকও জড়িয়ে ধরলো।
—” কেমন আছেন ইশরাক ভাই? আপনার বিবিকে পুরো রাস্তা পাহারা দিয়ে নিয়ে আসলাম।পথে বোধহয় তার কোনো সমস্যা হয়নি।”
নীরা আড়চোখে তাকালো রেদোয়ানের দিকে।কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে।নীরা তাকিয়ে দেখলো, রেদোয়ানও তার দিকে চেয়ে আছে।নীরা সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো।সবসময়ের মতো এবারেও নীরা বুঝলো না রেদোয়ানের চোখের গভীরতা।মোটা ফ্রেমের চশমায় ঢেকে রাখা চোখদুটোর আকুলতা।।

চলবে…
(বি.দ্রঃভুল -ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)

আগের পর্বের লিংকঃ
https://m.facebook.com/groups/bdofficials/permalink/1043872143084948/
আকাশে খরখরা সূর্য উঠেছে। সূর্যের তাপ দেখে বোঝার উপায় নেই একটু আগে বৃষ্টি হয়েছে।কচুপাতায় জমে থাকা পানিগুলো সূর্যের আলোতে চকচক করছে।মনে হয় যেন মু্ক্তোদানা।কে বলে শুধু শিশির কণাই মুক্তোর মতো ঝলমল করে?কচুপাতায় জমে থাকা পানির বিন্দুও সূর্যের আলোয় দ্যুতি ছড়ায়।
নীরার আজ খুব মন খারাপ।একদম চূড়ান্ত পর্যায়ের খারাপ।নীরা ইদানিং লক্ষ করে, সবাই ওর সাথে খুব ভালো ব্যবহার করে।একটু-আকটু নয়, অনেকটা ভালো ব্যবহারই করে।জয়নব বেগম আগের মতো খিটখিট করে না।সাহানা বেগম আগের মতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা শুনায় না।ইরা মুখে মুখে কথা বলে না।নীরা যা বলে তাই মাথা নিচু করে শুনে।কামরুল সাহেবের কাছে আবদার করলে নিষেধ করে না।অন্যায় আবদার হলেও না।এগুলো প্রথম প্রথম চোখে লাগতো না নীরার।কিন্তু এখন লাগে।এইসব অসামঞ্জস্য আচরণ খুব চোখে পরে।নীরা তলিয়ে দেখলো।তারা এ ধরনের আচরণ করে নীরার বিয়ে ভাঙার পর থেকে।তখন থেকেই নীরার মন খারাপ।তার মানে কী,নীরাকে পরিবারের মানুষেরাও করুণার পাত্র হিসেবে দেখছে?তারা কী এই ঘটনাকে নীরার দূর্বলতা ভাবছে?তাই আগের মতো আচরণ করছে না?হ্যাঁ, ঘটনা এটাই।এসব ভেবেই নীরার মন খারাপ।এগুলো ছাড়াও আরেকটা কান্ড হয়েছে একটু আগে।বৃষ্টি দেখলেই নীরাদের বাড়িতে খিচুড়ি চাপানো হয়।আজো তাই হয়েছে।বেশি করে মুগের ডাল দিয়ে জয়নব বেগম খিচুড়ি বসিয়েছেন।এর সাথে বানাবেন হরেক রকম ভর্তা ও মাছ ভাজা।নীরা দেখলো রুমা বেশ কয়েক পদের ভর্তা বানানোর প্রস্তুতি নিয়েছে কিন্তু টুনির জন্য পারছে না।ভর্তা বানানোর ভার সবসময় রুমার উপরেই পরব।জয়নব বেগম ও সাহানা বেগমের কোমরে সমস্যা।তাই তারা একটানা বসে ভর্তা বানাতে পারে না।তাছাড়া, রুমার হাতের ভর্তা খুব মজা হয়।কিন্তু,আজকে টুনি খুব সমস্যা করছে।টুনিটার বোধহয় শরীর খারাপ।তাই শুধু শুধু মায়ের আঁচল ধরে কখন থেকে খ্যানখ্যান করছে।রুমা বিরক্ত হয়ে পিঠের মধ্যে দিল দুটো কিল।টুনি কাঁদতে কাঁদতে নীরার ওড়নার আঁচলের নিচে লুকালো।
—” আহ,কাকি কী করছো?ওকে মারছো কেন?বেচারির হয়তো শরীর খারাপ।”
—” শরীর খারাপ হইলেই এরকম হাতের নিচে ঘুরতে হইব? ওয় দেখে না ওর মায় কাম করে না?”
—” ও কি বুঝে? দেখি সর, আমি করছি।আমি আজকে ভর্তা বানাই, ওরে তুমি ঘরে নিয়ে যাও।দেখ কী হইছে ওর।”
—” তুমি পারবা না। অনেক পদ,অনেক সময় লাগব।”
—” আরে, পারব।যাও তুমি।”
রুমা কিছুতেই দেবে না।কিন্তু যখন দেখলো নীরা অনেক জোরাজোরি করছে তখন রাজি হলো।টুনিকে নিয়ে পা বাড়ালো ঘরের দিকে।দেখা যাক, মেয়েটার কি হয়েছে।নীরা শিলনোড়া নিয়ে রান্নাঘরের সিড়ির কাছে বসলো।রান্নাঘরের সামনে নারিকেল গাছ কেটে দু-ভাগ করে দেওয়া।এগুলো সিড়ির কাজ করে।কাজে হাত দিল নীরা।কিন্তু আধঘন্টা যাওয়ার পর হাপিয়ে উঠলো সে।আহ! এতো কষ্ট কেন?হাত দুটো একেবারে ব্যাথায় টনটন করছে।নীরা বুঝতে পারেনি এতো কষ্ট হবে।অনভ্যস্ত নীরা অসহায় চোখে বাটির দিকে তাকালো।এখনো প্রায় চার পদের ভর্তা বানানো বাকি।নীরার কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে।কি দরকার ছিল খাল কেটে কুমির আনার!
—” এই নীরা,কী করছ?”
নিজের নাম শুনে সামনে তাকালো নীরা।তাদের পিচ্ছিল উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে পাশের বাড়ির সুমনা খালা।নীরাদের প্রতিবেশী তিনি।বয়সে বোধহয় সাহানা বেগমের সমান।
—” ভর্তা বানাই, খালা।”
—” কীয়ের কীয়ের ভর্তা?”
—” শুটকির,ডালের,কচুপাতার,কাঠাল বিচির, কালোজিরা আর শুকনা মরিচের।”
সুমনা বেগম সাবধানী পায়ে সিড়ি বেয়ে রান্নাঘরের বারান্দায় বসলেন।নীরার বানিয়ে রাখা শুটকি ও কালোজিরার ভর্তায় আঙুল চালিয়ে মুখে চেখে নিলেন।নীরার বিশ্রি লাগলো ব্যাপারটা।সুমনা খালার হাতটা কি ধোয়া?
—” ভালোই বানাইছোছ নীরা।তোর মায় কই?”
—” রান্নাঘরে।”
সুমনা বেগম চারপাশে একবার আড়চোখে তাকিয়ে নীরার কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললেনঃ” জানোস,কালকে কমলার লগে দেখা হইছে বাজারে।”
—” কমলা কে?”
—” আরে, কমলারে চিনোছ না? চেয়ারম্যানের বউ।ওই হারামজাদা মেহরাবের মা।”
নীরার মনে পড়লো কমলা বানুর কথা।তার না হওয়া শ্বাশুড়ি। না হওয়া শ্বাশুড়ি!কথাটা খুব ভালো লাগলো নীরার কাছে।মনে মনে হাসলো নীরা।কি রকম একটা কথা!
—” বুঝছোস, কালকে দেখা হওয়ার পরে আমার লগে আগায়া আইসা কথা বলা শুরু করছে।আমি আবার আগ বাড়ায়া কথা কই নাই।আগের থেকা শুকায়া গেসে কমলা। শুনলাম, তার ছেলে নাকি এই কয়েকমাস ধইরা আসে না।অবশ্য,আইবই কোন মুখে? তোর লগে যেই অন্যায় করছে,সেই অন্যায়ের আবার মাফ আছে নাকি? ওরা তো এহনো ওইরকম পোলারে ত্যাজ্য করে নাই।তোর খালু হইলে এতোদিনে কবে ত্যাজ্য কইরা দিত।এরম পোলা পেটে ধরাও পাপ।”
নীরা কিছু বলল না।কিইবা বলা যায় এখানে? তবে বুঝতে পারলো এরপর সুমনা বেগম কী বলবে।
—” কথার মাঝে আবার আমারে জিগায় তোর কথা। তুই কেমন আছোস,কোনো বিয়ার ঘর আসে নাকি– এইসব।আমিও এক্কেরে কতগুলি কথা শুনায়া দিছি।মাইয়ার কপালে কলঙ্ক লাগায়া এহন আবার ভালো-মন্দ জিগাও! কেন? কি দরকার তোগো এত? আমগো সোনার মতো মাইয়ার কপালে এই বয়সেই কেমন একটা দাগ লাগায়া দিসে! তোর কি আর ভালো ঘর থেকা সম্বন্ধ আইব?পোলার বাড়ির মানুষজন যহন শুনবো বিয়ার দিন বিয়ার আসরে রাইখা জামাই পালায়া গেসে, তহনি তো উল্টা দিকে হাঁটা ধরব।হেরা কী আর ভালো-মন্দ খোঁজ-খবর নিব?মনে করব মাইয়ার দোষ, তাই পোলায় পলাইছে।আমার তোর লেগা অনেক খারাপ লাগেরে নীরা।কালকেও তোর খালুর লগে আলোচনা করছি কতোক্ষণ……”
নীরার কানে আর কিছু ঢুকলো না।বিয়ে ভাঙার পর থেকেই এসব ভবিষ্যৎ বানী শুনতে হয়।এই কয়েক মাসে এরকম অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী হয়েছে নীরার।তারা নীরার ভবিষ্যৎ ভেবে নিজেরাই বুক চাপড়ায়।নীরা ভেবে পায় না তাদের এতো মাথা ঘামাতে হবে কেন।কই, নীরাতো কষ্ট পায় না! বরং নীরা ভুলে থাকতে চায় সেই প্রত্যাখানের সন্ধ্যা। একটা এলোমেলো সন্ধ্যা। তবে পারে না এসব শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য।এরা খুচিয়ে ঘা করে মনে করিয়ে দেয়।সুমনা বেগম কথা বলেই চললেন।কথায় আনলেন হাজারো উদাহরণ। তার কোন আত্মীয়ের মেয়ের বিয়ে ভেঙেছে, কার আর বিয়েই হলো না,কে বরের প্রত্যাখ্যানের পর গলায় দড়ি দিয়েছে….সব এসব কথা।নীরা মনোযোগ দিতে চাইলো না।কিন্তু, তবুও সবসময় মনোযোগ না দিয়ে পারা যায় না।শত হলেও নীরার কিশোরী আবেগী মন।নীরার কাজ প্রায় শেষের দিকে।এমন সময় জয়নব বেগম এলেন সেখানে।
—” নীরা, শেষ তোর?”
নীরা হাফ ছেড়ে বাঁচলো।বাড়ির লোকের সামনে এসব শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে বিয়ে নামক জুজুবুড়ির ভয় দেখায় না।তারা মানসিকভাবে আক্রমণ করে নীরা যখন একা থাকে তখন।
—” হ্যাঁ, আম্মা শেষ।”
—” তাইলে হাত ধুইয়া ঘরে যা।ভালোমতো ধুইছ,নাহয় জ্বলবো। ”
জয়নব বেগম পাত্তাও দিলেন না সুমনা বেগমকে।এই মহিলাকে তিনি দেখতে পারেন না।সবসময় বেশি কথা বলে আর মানুষের সংসারে নাক গলায়।এ ধরনের মানুষকে বেশি পাত্তা দিতে নেই।এরা সুযোগ পেলেই মাথায় চড়ে বসে।জয়নব বেগম যদি জানতেন তিনি এখানে,তবে আরো আগে আসতেন।মেয়েটার মাথায় কী কী ঢুকিয়ে দিয়েছে আল্লাহ মালুম।
নীরা উঠে যাওয়ার পিছন দিয়ে সুমনা বেগমও উঠে গেলেন।নীরার মনটা খারাপ তখন থেকেই।তাকে কি সবসময়ই এমনসব কথা শুনতে হবে? কত ভালো লাগে এসব কথা?যারা এসব কথা বলে তাদেরকে ঘাড় ধরে কবিগুরুর অপরিচিতা গল্পটা পড়াতে ইচ্ছে করে নীরার।পড়ানোর পর গলা টিপে ধরে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করেঃ” কল্যানীর বিয়েও তো ভেঙে গেছে।ওর জীবন কি নষ্ট হয়ে গেছে? আমার বিষয়ে এতো কথা বলতে হবে কেন আপনাদের?আমার পরিবারের মানুষ কি মরে গেছে?”এরকম দু-তিনটে কঠিন কঠিন কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে করে নীরার।তবে, পারে না।নীরা তথাকথিত ভদ্র মেয়ে।এরা প্রতিবাদ করতে জানে না।দিনভরে শুধু শুনতেই জানে।গলায় ছুরি ধরলেও এরা কিছু বলে না।ইশ! যদি বেয়াদবের তকমা লাগিয়ে দেয় গায়ে।

***

দুপুরে খাওয়ার পর নীরার ঘরে বসে সবাই লুডু খেলছিল।সবাই বলতে তওসিফ, কুসুম,ইরা, তোহা ও নীরা।ইরা খেলছে না শুধু দেখছে।ভাত খাওয়ার পর ঘুমানোর জন্য বিছানায় গেলেও ঘুম আসেনি কারো।বাইরে অত্যধিক গরম।টিনের চাল ছুঁয়ে ছুঁয়ে সূর্যের তাপ ঘরে ঢুকছে।তাই কেউ ঘুমাতে পারেনি।পরে তওসিফের বুদ্ধিতেই লুডুর আসর বসেছে।খেলা প্রায় জমে এসেছে, এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে ইশরাক।ধপ করে বসে পরে তওসিফের পাশে।
—” তওসিফ তোর ফোন দিয়ে রিমার ফোনে একটা কল দে তো।”
—” কেন কী হইছে?”
—” আরে আমি ফোন দিলাম, শুধু বন্ধ বলছে।ওকে না পেয়ে আমার ভায়রার ফোনে কল দিলাম কতদূর আছে তা জানার জন্য।ওই ব্যাটা কি বলে শুনবি? বলে কি না ও নাকি রিমার সাথে বাসে উঠে নাই।”
তওসিফ ফোন কানে ধরেই বললঃ” উঠে নাই মানে? ভাবিরে একা পাঠায় দিসে?”
—” না,একা না। কোন ছেলে নাকি পরিচিত আছে, ওই ছেলের সাথে বাসে পাঠায় দিসে।”
তওসিফ কল দিয়েও রিমার ফোন বন্ধ পেল।সে চিন্তিত স্বরে বললঃ”ভাবির বোন জামাই কি গাধা নাকি? এতো দূরের রাস্তা, কীভাবে অন্য একটা ছেলের সাথে পাঠায়? তার কী হইছে?সে আসবে না কেন?”
—” সেই হারামজাদার নাকি ডায়রিয়া হয়েছে।তাই আসতে পারে নাই।তুই না আসতে পারলে আমারে ফোন দিয়ে বলবি না?।কালকে থেকে আবার লক ডাউন শুরু।উফ! চিন্তায় আমার মাথা নষ্ট।”
ইশরাককে খুব অসহায় দেখালো।তাকে সামাল দেওয়ার জন্যই কুসুম বললঃ” চিন্তা করো না,ভাইয়া।ভাবি চলে আসবে,ইনশাআল্লাহ। ”
—” চিন্তা না করে কি পারা যায়? আজকাল মেয়েরা ঘরেও নিরাপদ না সেখানে রিমা কতদূরে! তাও আবার একা।সাথে একটা অপরিচিত ছেলে। ঢাকা যেয়ে ওর বোনের স্বামীর নাকটা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে আমার।শালা ভাত খেয়ে বড় হয়নি, বাতাস খেয়ে বড় হয়েছে।বেয়াক্কেল।”
উঠে গেল ইশরাক।সবারই খুব চিন্তা হচ্ছে।এর মাঝে আবার রিমার ফোনটাও বন্ধ।লুডুর আসর ভেঙে গেল।কেউ মনোযোগ দিতে পারছে না খেলায়।তওসিফ চলে গেল,ইরা-তোহা উঠে গেল,কুসুমও পিছন দিয়ে বেড়িয়ে গেল।সে এখন কবরস্থানে যাবে।সবাই ঘুমিয়ে আছে।এখনই সময়।একা ঘরে নীরা আর কী করবে? দরজা আধ ভিজিয়ে বিছানায় শুতে গেল।কোনো কাজ নেই হাতে।রিমার জন্য চিন্তা হচ্ছে খুব।নীরা আবার কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়।আজকেও তার ব্যতিক্রম হলো না।দুচোখে ঘুম জড়িয়ে এলো দ্রতই।
নীরার ঘুমটা সবে গাঢ় হয়েছে।এমন সময় ধপধপ করে ঘরে ঢুকলো কুসুম।দৌড়ে গেল নীরার দিকে।
—” নীরাপু, নীরাপু উঠো।ভাবি আসছে।এই নীরাপু,নীরাপু।”
ঘুম অনেকটাই কেটে গেল নীরার। উঠে বসে গায়ে ওড়না জরিয়ে বললঃ” কখন আসলো।”
—” বাড়িতে ঢুকে নাই এখনো।বড় রাস্তায়। আমি কবরস্থানে দাঁড়িয়ে দেখলাম।”
নীরা ও কুসুম বাড়ির সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেল।ইশরাক আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।রিমা বাড়িতে ঢুকতেই ছুটে গেল নীরা-কুসুম।জড়িয়ে ধরলো রিমাকে।
—” কি খবর তোমার ভাবি?”
কুসুমের প্রশ্নে মুচকি হাসলো রিমা।
—” ভালোই।তোমরা কেমন আছো?”
—” আমাদের কথা পরে হবে।আগে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে যা।আরেকবার যদি বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার চিন্তা করেছিস,মেরে তোর পা ভেঙে দেব।ইশরাক ভাই একেবারে পাগল হয়ে গেছে এই কয়দিনে।”
রিমা আড়চোখে তাকালো ইশরাকের দিকে।মুখে তার এক আকাশ মেঘ জমে আছে।ইশরাক এতোক্ষণে মুখ খুললো।
—” ব্যাগ কই তোমার? পথে কোনো সমস্যা হয়নি তো?”
রিমা মাথা নেড়ে বললঃ” ব্যাগ রেদোয়ান ভাইয়ের কাছে।উনি নিয়ে আসতেছে।ভারী ব্যাগ আমাকে এক মূহুর্তের জন্য বইতে দেননি।”
রিমার কথা শেষ হতেই রেদোয়ান বাড়ি ঢুকলো।পিঠে তার মস্ত ব্যাগ,হাতে রিমার ব্যাগ।রেদোয়ানকে দেখে নীরা- ইশরাক অবাক হলেও কুসুম খুব খুশি হলো।রেদোয়ান ক্লান্ত শরীরে জড়িয়ে ধরলো ইশরাককে।বিনিময়ে ইশরাকও জড়িয়ে ধরলো।
—” কেমন আছেন ইশরাক ভাই? আপনার বিবিকে পুরো রাস্তা পাহারা দিয়ে নিয়ে আসলাম।পথে বোধহয় তার কোনো সমস্যা হয়নি।”
নীরা আড়চোখে তাকালো রেদোয়ানের দিকে।কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে।নীরা তাকিয়ে দেখলো, রেদোয়ানও তার দিকে চেয়ে আছে।নীরা সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো।সবসময়ের মতো এবারেও নীরা বুঝলো না রেদোয়ানের চোখের গভীরতা।মোটা ফ্রেমের চশমায় ঢেকে রাখা চোখদুটোর আকুলতা।।

চলবে…
(বি.দ্রঃভুল -ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)

আগের পর্বের লিংকঃ
https://m.facebook.com/groups/bdofficials/permalink/1043872143084948/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here