বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর) পর্ব :২৮

বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :২৮

(পর্বটা ছোট হয়েছে ,সরি । গত রাতে ফ্যানের সাথে বাড়ি খেয়ে এক হাতের বেহাল দশা।হাত নাড়াতে পারছিনা । ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন )

প্রেম আর বিচ্ছেদ এর মাঝে সুক্ষ্ম এক তারের সংযোগ।আমরা তখনি কাউকে মিস করি যখন তাদের সাথে বিচ্ছেদ ঘটে।সে মানুষটা আমাদের জীবনে কতটা স্থান জুড়ে ছিল তা অনুভব করি।মনের গহীনে সস্নেহ স্থানে শক্ত ভাবে তাদের উপস্থিতি টের পাই।তখন ভালোলাগা আর ভালোবাসার মধ্যেকার তফাৎ স্বচ্ছ পানির মত চোখে সামনে ঝলমল করে উঠে। মনের আয়নায় সেই মানুষটার প্রতিচ্ছবি ঝলঝল করে কিছু একটা বলে বেড়ায়।
সেহেরের সাথেও তা হচ্ছে আরহামের গরহাজিরা মনের ভেতর খাঁই খাঁই করে পোড়াচ্ছে।প্রতিটি মুহূর্ত বছর সমান মনে হচ্ছে।এক সেকেন্ডের জন্যও আরহাম ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারছেনা । জেগে ঘুমিয়ে শুধু আরহামকে ভেবে যাচ্ছে।ঘণ্টার পর ঘণ্টা আরহামের শার্ট জড়িয়ে কাটাচ্ছে ।খাওয়া দাওয়ায় ভীষণরকম অনিয়ম।নির্ঘুম রাত কাটচ্ছে। আজকাল আরহামের রুমটাও অস্বস্তিকর লাগছে।গুমোট এক অস্থির অনুভূতি।স্মৃতির দেয়াল গুলো যেন নিশ্বাস চেপে ধরেছে।চারদির আরহামের স্মৃতিতে পরিপূর্ন।এই বিছানা ,ড্রেসিং টেবিল,কাবার্ড সবকিছু ।মনের স্বস্তির জন্য সেহের রুম পাল্টেছে।দাদীমাকে বলে তার পুরাতন রুমে ফিরে গেছে।দিনরাত নিজেকে ব্যস্ত রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।দিনটা কোনরকম ব্যস্ততার মাঝে কেটে গেলেও রাতটা ভীষণ দীর্ঘ হয়।অপেক্ষার অপ্রিয় রাত গুলো বুঝি এমনি অস্বস্তিকর হয়?

আজ এক সপ্তাহ আরহাম কানাডায় গিয়েছে।এই এক সাপ্তাহে হাতে গুনা দুইতিন দিন আরহাম সেহেরের খোঁজ নিয়েছে।তবুও যেন দায়ের পড়ে।আরহামের সাথে কথা বলার সময় বারবার সেহেরের গলার স্বর ভারী হয়ে এসেছে ।চোখ জোড়া বিচ্ছেদ যন্ত্রণায় ভরে এসেছে।তা কি আরহাম টের পেয়েছে? হয়তো পেয়েছে! হয়তো বা নাহ। গত দুদিন আরহামের সাথে সেহেরের কথা হয়নি।সেহেরও জেদ করে ফোন দেয়নি ।আরহামের সাথে কথা না হলেও দাদীমা থেকে ঠিক খোঁজখবর নিচ্ছে।শুনেছে বেশ ভালো আছে তিনি। মিটিং,কাজে ব্যস্ত থাকায় ঠিকঠাক যোগাযোগ করতে পারছে না।সেহেরও আর কথা বাড়ায় নি।ভারী অভিমানে মুখ ভার করে রেখেছে।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে আগবাড়িয়ে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বেশি দূর টিকল না।গত রাতে কুস্বপ্ন দেখেছে ।তখন থেকে মন কু ডাকছে । আরহামের সাথে কথা বলতে ভীষণতর মন চাইছে ।ভোর সকালে ঘুম ভেঙেছে ।কুয়াশার চাদর কাটিয়ে এক ফালি আদুরে রোদ বারান্দার রেলিং মাড়িয়ে মেঝেতে উপচে পড়ছে।হাতে ধোঁয়া উড়া কফির কাপ নিয়ে সেহের বারান্দায় দাড়িয়ে।কানে ফোনটা টিংটিং রিং করছে।দুবার বাজতেই তৃতীয় বারের বেলায় ফোন ধরে।সেহের ‘হ্যালো ‘ বলার পূর্বে অপর পাশ থেকে কমল মেয়েলী স্বর ভেসে আসে।সেহের খানিকক্ষণ স্থির হয়ে থাকে।ঘোর কাটিয়ে শক্ত গলায় বলে,”আপনি কে? আরহাম কোথায়? উনার কাছে দিন! ”
অপর পাশের মেয়েটি মিষ্টি স্বরে বলল,”জি আমি মিহি ,আরহামের ফ্রেন্ড।আরহাম ঘুমাচ্ছে।ঘুম কাটলে আপনার ফোনের কথা জানাবো ।আপনি কে? ”
সেহের মেয়েটার কথায় ভ্রুক্ষেপ করল না।হাতের ঘড়ির দিক চোখ বুলালো।সকাল সাতটা।বাংলাদেশের সাথে কানাডার সময়ের দশ ঘন্টা ব্যবধান।বাংলাদেশ থেকে দশ ঘণ্টা পিছিয়ে । তার মানে কানাডায় এখন রাত নয়টা।আরহাম এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে? আর এই মিহি মেয়েটাই বা কে? কই এর আগে কোন দিন মিহি নামক কোন ফ্রেন্ডের কথা তো আরহামের মুখে শুনেনি।ফোনের অপর পাশে মিহির ডাকে সেহেরের ঘোর কাটে।অপর পাশ থেকে মিহি বলে,”এক্সকিউজ মি! আপনি কে? ”
সেহের থমথমে আওয়াজে বলল,”সেহের ,উনার ওয়াইফ ”
মিহিকে দ্বিতীয় কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কাটল।সকাল পেড়িয়ে দুপুর ,দিন পেড়িয়ে রাতে পৌঁছায় আরহামের নাম্বার থেকে কোন ফোন আসলো না।আরো এক অপ্রিয় অপেক্ষার রাত কাটল।সেহের রাগ অভিমানে নিজেকে গুছিয়ে নিলো।মনে মনে অটল সিদ্ধান্ত নিলো আরহামের সাথে আর যোগাযোগ করবে না।মনে এক শক্ত অভিমান জমে। অভিমানটা ঠিক কিসের উপর তা সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। আরহাম ফোন না করায়? নাকি এতো রাতে আরহামের ফোন মিহি নামক মেয়েটার কাছে থাকায়!

ফিরা আইসা দেখবা তুমি
চইলা গেছি জগত ছাড়ি
পাইবা শুধু আমায় স্বপনে
চার বেহারার পালকি কইরা
যখন গেলা সামনে দিয়া
শেষ দেখাও দিলা না আমারে
ফিরা আইসা দেখবা তুমি
চইলা গেছি জগত ছাড়ি
পাইবা শুধু আমায় স্বপনে
তুমি কান্দিয়া ডাকিবা কভু না পাইবা
কান্দিয়া ডাকিবা আমারে
তুমি কান্দিয়া ডাকিবা কভু না পাইবা
কান্দিয়া ডাকিবা আমারে
লাল শাড়ি পরিয়া কন্যা
রক্ত আলতা পায়
আমার চোখের জল মিশাইলা
নিলানা বিদায়

কানে হেডফোন গুজে নদীর পাড়ে দাড়িয়ে শান্ত জলরাশিকে দেখছে।চোখ জোড়া জলে পরিপূর্ণ বুকে শত মণ ভারী কোন পাথর চাপা দিয়ে আছে।তিরতির কষ্টে বুকটা চিনচিন করছে।মন খারাপের দিনগুলোতে স্ফট স্যাড সং গুলো নি: সঙ্গতার সঙ্গী ।কোন এক যোগসূত্রে মনের ক্ষণ গুলোকে কিছুটা হলেও নিস্তার দেয়।আরো আটদিন কেটে গেছে ,আরহামের সাথে সেহেরের পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ।
আজকাল ক্লাস শেষে সেহেরের প্রতিটি বিকেল নদীর পাড়ে কাটে। শীতের প্রবণতা এখন আকাশ চুম্বী।কনকনে শীতে প্রকৃতি ঠকঠক কাঁপছে।সেহেরের গায়ে পাতলা শাল।খোলা কোমড় অবধি চুল গুলো হিম শীতল বাতাসে উড়ছে।এ কয়েক দিনে চেহারার চাকচিক্য কোথাও হারিয়ে গেছে।চোখের নিচে কালি জমেছে।রাত জাগার কারণে হয়তো।ঠোঁট গুলো উষ্কশুষ্ক হয়ে আছে।শীতের এই কঠিনদশা তাকে কাবু করতে পারেনি।বেখেয়ালি ভাবে একাধারে নদীর জলরাশিতে চেয়ে।পেছন থেকে পিয়াল আওয়াজ করে বলল,”সন্ধ্যা নামছে ,বাড়ি ফিরবে না? ”
বেখেয়ালি স্বরে সেহের উত্তর দিলো ,”উহু,আরো কিছুক্ষণ থাকবো,তুমি যাও ।”
পিয়াল নিজের সাথে চলার জন্য সেহেরকে জোর করল।কিন্তু সেহের নাছোড়বান্দা যেতে নারাজ! পরে সেহেরের জেদের কাছে হার মেনে বাড়ির দিকে রওনা হলো।

সেহের গভীর ভাবনায় ডুবে । আরহাম যে সেহেরকে এড়িয়ে চলছে তা সেহের ঠিক বুঝতে পারছে। ইচ্ছে করে আরহাম সেহের থেকে পালাচ্ছে । সেহেরের জীবনের কঠিন সমীকরণ মিলাতে ব্যস্ত ।কিন্তু কোনভাবে কোন সমাধান মিলছে না।বারবার এক কথায় থেমে যাচ্ছে সেহেরকে আদৌ কি আরহামে ভালোবাসতো? নাকি খানিকের মোহ ছিল। যা নেশা কাটতে- ই কেটে গেছে।আরহাম হয়তো এখনো তার প্রথম ভালোবাসাকে ভুলতে পারেনি।
নিজের উপর সেহেরের ভয়ানক রাগ হচ্ছে। কি দরকার ছিল জেনে শুনে মানুষটার প্রেমে পড়ার।কি দরকার ছিল কারো মায়ায় জড়ানোর! এককী জীবনে তো বেশ ভালো- ই চলছিল।এখন বুকভরা কষ্টের বোজা একা বইতে হচ্ছে।
দূর কোথাও মাগরিবের আজানের আওয়াজে সেহের ভাবনা কাটে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার নামছে।কুয়াশায় চারদিক ঘোলাটে হচ্ছে।নদীর পাড়ে খুব একটা লোকজন নেই। দুএকটা ঝালমুড়ি ফুসকা বিক্রেতা ভ্যান নিয়ে বসে। কিভাবে যে এতোটা সময় কেটে গেলো টের পায়নি । সেহের কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।সকালেই গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো।ইদানীং একা চলতে বেশ ভালো লাগে।
ফুটপাথের পথ ধরে হাঁটছে।শীতের তীব্রতা থেকে রেহাই পেতে লোকজন রাস্তায় আগুন জ্বলে উষ্ণতা লুটছে ।খানিক দূরে বৃদ্ধা বুড়িমা শীতের পিঠা বানাচ্ছে।যার মোহ মোহ ঘ্রাণ কুয়াশার ভাজে স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে ।সেহের মিহি হেসে দূর পথ শিশুদের দিকে তাকিয়ে। শীতের দ্রঢ়িমা থেকে বাঁচতে মায়ের আঁচলের নিচে লুকিয়ে।সেহের ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইল।এদের উদ্দেশ্যহীন দুঃখময় জীবন সেহেরের অনিশ্চিত সুখকর জীবন থেকে অনেক সুন্দর।ভাবনা কাটিয়ে নিশ্বাস ফেলে সামনের দিকে পা বাড়াল ।আশেপাশে কোনো রিকশার দেখা মিলছে না।পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিলো। অন্ধকার ফাঁকা পথ ধরে হাঁটছে আচকা অনুভব করলো কেউ তার পিছু নিচ্ছে । এ প্রথম নয় এর আগেও একই অনুভূতি হয়েছে। সেহের ঘাড় ফিরিয়ে দেখে কালো কাপড় পরা দুজন লোক তার পিছু নিয়েছে । সেহের পায়ের গতি বাড়াল ।বড় বড় পা ফেলে সামনের দিকে আগাচ্ছে ।এমন সময় সামনের থেকে এক প্রাইভেট কার অন্ধকার কুয়াশা বেদ করে সেহেরকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে ছিটকে ফেলে।ইটের সাথে বাড়ি খেয়ে মাথা থেকে গল গল রক্ত ঝরছে।সেহের ধীরেধীরে অচেতন হয়ে পড়ছে।চোখ গুলো নিভে আসছে। নিভু নিভু চোখে দূর থেকে সেই লোক গুলোকে ছুটে আসতে দেখল ।
সেহেরকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি কিছুটা দূরে থামল।হুডি পরা এক ব্যক্তি জানালা দিয়ে ঘাড় বের করে পেছনে চাইল । সেহেরের এ দশায় মুচকি হাসল।

চলবে …..❣️

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here