বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর) পর্ব :৩৯

বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :৩৯

নতুন এক প্রদীপ্ত দিনের সূচনা।কুয়াশার চাদর কাটিয়ে সোনালী আলোরা উপচে পড়ছে ।দূর দিগন্তে অরূণ মাথা তুলে দাড়িয়েছে।অদূরে ঘাসের উপর শিশির কণা গুলো মুক্তদানার মত চকচক করছে। ভোরের পাখিরা অনেক আগে জেগে গেছে। আদুরে আলতো রোদ গুলো ভাঙা জানালার ফাঁকে হুড় মুড় করে প্রবেশ করছে।পুরো কামড়া এলোমেলো হয়ে আছে। চারদিকে ফুলদানী জানালার কাঁচের ভাঙা অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে।রোদের ঝিলিক আরহামের চোখে পড়তেই আরহাম বিরক্তির সাথে কপাল কুঁচকে নেয়।সেহেরের খোলা চুলে আরো গভীর করে মুখ ডোবায়।এতে বিশেষ লাভ হয় না,রোদের তাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে সেই সাথে আরহামের ঘুমটাও ছুটছে ।সেহেরের চুলের মিষ্টি ঘ্রাণে আরহামের ঘুম কাটে।চুল থেকে মুখ তুলে ঘোলাটে ঘুম ঘুম চোখে সামনের দিকে তাকায়।সেহের বাচ্চাদের মত ঘুমিয়ে আছে।খোলা চুল গুলো কপাল ছুঁয়ে বারে বারে সেহেরের মুখের উপর পড়ছে। নিচের ঠোঁটের কিছুটা অংশ মুখের ভিতরের দিকে। দেখতে ভীষণ কিউট লাগছে । আরহাম আনমনে মুচকি হাসে।আলতো হাতে সেহেরের মুখের উপর পড়ন্ত চুল গুলো সরিয়ে দিলো ।আরহামের স্পর্শে সেহের ঘুমের ঘোরে নড়েচড়ে আরহামের বুকে মুখ গুজল ।আরহাম খুব সাবধানতার সাথে চুলে বিলি কেটে দিতে লাগল ।সেহের আবারো গভীর ঘুমে ডুবে গেল।যেন হাজার বছর নিঘুম রাত কাটিয়ে অবশেষে প্রশান্তির ঘুমে মগ্ন! আরহাম এক নজরে সেহেরের দিকে তাকিয়ে।মনে এক তীব্র ইচ্ছা জাগল । সময়টাকে যদি এখানেই আটকে রাখা যেত? জীবনের প্রতিটা সকাল যদি এমনি মধুময় হতো! জীবনের প্রতিটা বিষাদময় কালো রাতের পর এমন এক সুন্দর সকাল চাই।চোখ মেলেই মোহনীয় মায়াবী চেহারাটার দর্শন চাই! আরহাম একমনে কথা গুলো ভাবল ।

সেহেরের ঘুম কাটল বেশ বেলা করে।সূর্য্যি মামা তখন সম্পূর্ন উদয় হয়েছে। নিজের আলোর তীর চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে।সেহের পাশ ফিরে অপর দিকে ফিরল ।ঝাপসা চোখে আয়নার সামনে এক পুরুষালি প্রতিবিম্ব দেখে মুচকি হাসল ।বেশ বুঝতে পারল আরহাম দাড়িয়ে।ধীর স্বরে আধো আধো গলায় বলল ,”গুড মর্নিং ”
আরহাম হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে পিছনে ফিরে উত্তর দিলো ,”গুড মর্নিং লাভ, অবশেষে রাজকন্যার ঘুম কাটল তবে? ”
সেহের হাই তুলে মজার স্বরে বলল,”কি আর করার? রাজকুমার তো আর চুমু দিয়ে ঘুম ভাঙাবে না, তাই ঘুমন্ত রাজকন্যাকে নিজের থেকে জাগতে হলো। ”
আরহাম দুষ্টু হেসে বলল,”আহা মিস হয়ে গেল যে ! তাতে কি? তখন হয়নি এখন হবে কি বলো! ”
আরহাম ঠোঁটের দুষ্টু হাসি রেখে এক পা এক পা করে সেহেরের দিকে আসতে লাগল।সেহের বিছানা থেকে বালিশ তুলে আরহামের দিকে ছুঁড়ে বলল,”একদম না।আর এক পা ও সামনে বাড়াবেন নাহ। যেখানে আছেন সেখানেই থামেন ।অনেক বেলা হয়েছে ফ্রেশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে! ঐ দিকে না জানি কি হাল।বাড়ি ফিরতে ভয় করছে সবাই কি বলবে । ”
“তা বাড়ি ছাড়বার আগে ভাবা উঠিত ছিল! ”
সেহের মুখ ভার করে উত্তর দিল ,”আমি কি আর জানতাম আমাকে আবার ঐবাড়িতে ফিরতে হবে,আমি তো ঐপথ কে চিরবিদায় জানিয়ে এসেছিলাম! ”
“আমি জানতাম তোমাকে আবার আমার কাছে ফিরতে হবে,তুমি না মানলে জোর করে নিজের কাছে আটকে রাখতাম! ”
“পারতেন আমাকে আটকাতে? ”
“তোমাকে আমার কাছে রাখার জন্য আমি সবকিছু করতে পারবো ,সব! ”
আরহামের রাশভারী কথা সেহের হেসে উড়িয়ে দিলো।আরহাম বাঁকা হেসে সেহেরের দিকে তাকাল।বলল,”তোমার ঠান্ডা পানিতে এলার্জি ,ওয়াশরুমে গরম পানি রাখা আছে ফ্রেশ হয়ে নেও।”
সেহের মুচকি হাসল।বলল,”বাহ! আপনি তো দেখি সব জানেন।আমার উপর পিএইচডি করে ফেলেছেন দেখছি! ”
” হুম বলতে পারো ।তোমাকে আমি এতোটা চিনি যতটা তুমি নিজেও নিজেকে চিনো না।কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নেও ,না হয় পানি ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
সেহের কাপড় ঘুছিয়ে ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হয়।শান্তি নীড়ের সবার কাছে বিদায় নিয়ে আরহাম সেহের বাড়ির দিকে রওনা হয়েছে।গাড়ি তার নিজ গতিতে চলছে।আরহাম ড্রাইভিং সিটে।সামনের কাঁচ মাড়িয়ে আদুরে রোদ গুলো আরহামের মুখের উপর পরছে।চোখ সানগ্লাসে ঢাকা । হালকা বাদামি দাড়ি গুলো চকচক করছে।সেহের পাশের সিটে হেলান দিয়ে অলস চোখে আরহামের দিকে তাকিয়ে । রোদের হালকা তাপে ঘুম ঘুম ভাব এসে গেছে। চোখ বার বার লেগে আসছে।অনেক কষ্টে কোনরকম মেলে রেখেছে।আদো ঘুমে মাথায় এলোমেলো সব চিন্তাভাবনা ভর করছে।কখনো আরহামের দাড়ি গুলো ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।আবার কখনো আরহামে গালে শক্ত এক চুমুতে লাল করে দিতে ইচ্ছে করছে।আবার খানিক পর এমন উদ্ভট চিন্তাভাবনা করায় আপন মনে বির বির করে নিজেকেই বকছে।সে কি দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে? সেহের নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে। এমন সময় আরহামের কথায় ঘোর কাটে।আরহাম ড্রাইভ করতে করতে বলল,”ঘুমন্ত রাজকন্যা ঘুম কি এখনো কাটেনি? সারারাত ঘুমিয়ে এখনো ঝিমাচ্ছ? ”
“সারারাত ঘুমাতে পারলাম কই? আপনি ঘুমাতে দিয়েছেন? ”
আরহাম দুষ্টু হেসে বলল,”কেন আমি আবার কি করলাম,শুনি ? “”
আরহাম বেশ কিছুক্ষণ উত্তরের আশা করল।কিন্তু উত্তর মিলল না।পিনপতন নীরবতায় ঘাড় ফিরিয়ে দেখে সেহের গভীর ঘুমে তলিয়ে।আরহাম মুচকি হেসে বিরবির করে বলে,”স্লিপিং বিউটি ”

বর্তমান…….

পিনপতন নীরবতা ।সেহের অনুভূতি শূন্য থমথমে চোখে হসপিটালের সিলিং এর দিকে তাকিয়ে । হাতে ক্যানলা লাগানো ।খানিক পূর্বেই জ্ঞান ফিরেছে।স্যালাইনের ফোটার টিপটিপ শব্দটা পুরো রুম জুড়ে বাজছে।আরহাম সেহেরের বাঁ পাশে বসে।চোখে মুখে অস্থির ভাব।ভারাক্রান্ত মুখ ।একজন মহিলা ডক্টর সেহেরের চেকআপ করছে।চেকআপ শেষ হতেই আরহাম অস্থির স্বরে প্রশ্ন করে,”কি হয়েছে? ইস এভরিথিং অকে? ”
“মি. খাঁন ডোন্ট ওয়ারী । স্যি ইজ ফাইন।শরীর ভীষণ উইক তাই সেন্সলেস হয়ে পড়েছে।এসময়ে এমনটা স্বাভাবিক! ”
“এসময় মানে? ”
“স্যি ইজ প্রেগন্যান্ট ।”
“আর ইউ সিউর ডক্টর ? ”
“ইয়েজ , হান্ডেট পার্সেন্ট কনফার্ম হওয়ার জন্য কিছু টেস্ট দিয়েছি করিয়ে নিবেন! ”
ডক্টর চলে গেল। আরহাম হাসি হাসি মুখ নিয়ে সেহেরের কাছে যেয়ে। সেহেরকে জড়িয়ে ধরে বলে,”সেহের আমি কতটা খুশি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।আমাদের বেবি আসছে।তুমি মা হবে ,আমি বাবা হবো! ”
সেহের আরহাম থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।কপাল কুঁচকে বলল,” আমার কাছ থেকে সরুন প্লিজ, দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার! ”
আরহাম সরে গেল। সেহেরের চোখে মুখে স্পষ্টভাবে বিরক্তি ফুটে।প্রেগন্যান্সির কথা শুনে প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছে । ধাক্কাটা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি!

চলবে…❣️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন । ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন😊😊😊।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here