বেখায়ালি ভালোবাসা পর্ব-২৬

0
2228

#বেখেয়ালি_ভালোবাসাভালোবাসা
#পর্ব_২৬
#লেখাঃসাবেরা_সুলতানা_রশিদ

বাসার সবাই চৌধুরী সাহেবের সুস্থতার কথা শুনে একে একে সবাই এসে ক্লিনিকে পৌছায় ।
পরিবারের সবার ভিতরে যেন আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করে ।
সৈকতের মনের ভিতর যে ঝড় উঠেছিল আর সেই ঝড়ে তার গোছানো গোটা পৃথিবীটা যে তছনছ করে দিয়েছিল সেটা সৈকত আর মেঘ ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তি জানেনা।
তবে ঝড়টা উঠে বোধহয় ভালই হয়েছিল তাইতো সৈকতের রং বিহীন ধূসর অগোছালো জীবনটা এবার নানা রঙে সুসজ্জিত হল।
সৈকতের মুখে বাবা ডাক শুনে পরিবারের সবাই খুব অবাক হয়ে যায় ।
রোজি আর ঝিনুক মেঘের কাছে এসে মেঘকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কেঁদে ফেলে। রোজি বলেঃ
—আমরা জানি এই অসাধ্য সাধনের পিছনে তোর হাত আছে । তাছাড়া যে এটা কোন ভাবেই সম্ভব হতো না।
—না ভাবি আমি কিছু করিনি। একটা কথা কি জানো, যা হয় ভালোর জন্যই হয় । আর আল্লাহ কখন কি করে সেটা বোঝা বড় দায় ।
—হুম সত্যি বলেছিস। তাইতো তোর মত লক্ষী আর গুনবতী মেয়েকে সৈকতের যোগ্য জীবন সঙ্গি হিসেবে পাঠিয়েছে ।
—ভাবি !!?
—হ্যা বল।
—বাবা এখন পুরোপুরি সুস্থ। ডাক্তাররা অবশ্য বলেছে এখানে আরো দুদিন থেকে যেতে । কিন্তু বাবা এখানে থাকতে একদমই রাজি হচ্ছে না।তাই বাবার জোরাজুরিতে ডাক্তার বাবাকে বাসায় যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
—হ্যা জানি। আসলে বাবা বাড়ির বাইরে কোথাও থাকতে চাইনা । তাই এমন করছে ।
—হ্যা।
মেঘ তাকিয়ে দেখে তিন ছেলে মিলে তাদের বাবাকে ঘিরে ধরে আছে ।
সবার মুখে হাসি । সৈকত বাবার ডান পাশে বসে আছে মাথা নিচু করে । ছোট বাচ্চারা যেমন লজ্জা পেলে মাথা নিচু করে রাখে ঠিক সেভাবে সৈকত বসে আছে তার বাবার ডান হাতটা কোলে নিয়ে ।
এ দৃশ্য দেখে মেঘের মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।
মেঘ বলেঃ
—ভাবি এখন আমি আসি!!?
—কোথায় যাবি তুই??
—এখন আমারতো যাওয়ার জায়গা একটাই।
—আর পাগলামি করিস না মেঘ চল বাড়ি ফিরে চল।
—না ভাবি । এখনো আমার বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় হয় নি।
—কে বলেছে হয়নি!?হয়েছে ,তুই দেখছিস না তোকে ছাড়া আমাদের পরিবারটা একয়দিন কেমন অপূর্ন ছিলাম। তুই না থাকলে বাড়িটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগেরে ।
—আমি জানি ভাবি। তারপরও বলছি এখন আমার ও বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সময় আসেনি।যেদিন সে সময়টা আসবে সেদিন আর তোমাদের কাউকে কিছু বলতে হবে না । আমি নিজেই আসবো।
আমার জীবনের আরোও একটা পরীক্ষা যে এখনো বাকি থেকে গেছে । জানিনা সে পরিক্ষায় আদেও উত্তীর্ণ হতে পারবো কিনা!!?
—তুই পারবি মেঘ। দেখিস তোর সব ইচ্ছা গুলো আস্তে আস্তে পূরণ হবে । জিত তোর হবেই হয় আজ আর নয় কাল।
—সে আশাইতো আছি ।
—তুই এখন চলে গেলে বাবাকে কি বলবো?
—কিছু বলতে হবে না। তুমি শুধু বাবাকে এই চিঠিটা দিও মেঘ একটা চিঠি রোজির হাতে দেয় ।
রোজি চিঠিটা হাতে নিয়ে বলে, সৈকত কি জানে তুই চলে যাচ্ছিস তা??
মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে সৈকতের দিকে একবার তাকাই,তারপর বলে না আমি বলিনি।
তুই চলে যাওয়ার পর যদি বলে কেন তোকে আমি যেতে দিলাম তখন কি বলবো?
কিছু বলতে হবে না। কারণ উত্তরটা তার জানা।
ঝিনুক বলে না ভাবি তুমি যেও না। তুমি চলে গেলে আবার কোন না কোন ঝামেলা হবে ।
না ঝিনুক, আর কোন ঝামেলা হবে না।
কিন্তু—-
কোন কিন্তু না ঝিনুক। আমাকে বাধা দিও না। যখন তোমার ভাইয়ার মনে হবে যে আমি তার যোগ্য সেদিন আমি ফিরে আসবো তোমার ভাইয়ের হাত ধরে । যখন তোমার ভাইয়া আমাকে মিস করবে ,যখন আমার ভালবাসার গভীরতা তাকে ছুঁয়ে দিবে তখন আমি আসবো ।
রোজি আর ঝিনুক মেঘ কে আর কিছু বলে না।
বুঝতে পারে মেঘ মনের মধ্যে পুষে রাখা অভিমান থেকেই কথা গুলো বলছে।
মেঘ বিদায় নিয়ে চলে আসে ।
ক্লিনিকের সব ফরমালিটি শেষ করে যখন সবাই বাড়ি ফিরবে তখন চৌধুরী সাহেব বলেঃ
—মেঘ মা কোথায়??তাকে তো দেখছি না?
সৈকত এতক্ষন খেয়াল করেনি যে মেঘ চলে গেছে । বাবার কথা শুনে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে হয়তো বাইরে আছে ।
ঝিনুক তার বাবার কাছে এগিয়ে এসে মেঘের রেখে যাওয়া চিঠিটা দিয়ে বলেঃ
—বাবা ভাবি চলে গেছে । যাওয়ার আগে তোমার জন্য এ চিঠিটা রেখে গেছে।
চৌধুরী সাহেব মুখ গম্ভীর করে কোন কথা না বলে ঝিনুকের হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে ভাজ খুলে পড়ে ।
তারপর মুচকি হেসে বলে মা যে আমার বড্ড অভিমানী ।
মেঘের চলে যাওয়ার কথা শুনে সৈকতের বুকের ভিতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে। যার জন্য এতসব আজ নতুন করে ফিরে পাওয়া আর সেই কিনা—–
চৌধুরি সাহেব চিঠিটা পড়ে সৈকতের দিকে এগিয়ে দেয় ।
সৈকত তার বাবার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে ভাজখুলতেই
“বাবা রাগ করবেন না। আপনি তো জানেন যে আপনার মেয়ের জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা চলছে তাই পরীক্ষা শেষ না করে আগেই পরীক্ষার হল থেকে বের হতে চাই না। আপনি মন খারাপ করবেন না। সময় মত ঔষধ আর খাবার খাবেন। নিজের শরীরের যত্ন নিবেন। আর আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে সফল হতে পারি। ”
সৈকত চিঠিটা পড়ে কোন কথা বলে না। খুব স্বাভাবিক ভাবে আচরণ করে মনে হয় ওর কিছুই হয়নি।
শুধু সৈকত জানে তার বুকের ভিতরটা কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে । এতক্ষনের ভাললাগার আমেজ টা মেঘ চলে যাওয়ায় মুহূর্তে বিষাদময় হয়ে ওঠে সৈকতের কাছে ।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here