ব্রোকেন হার্ট পর্ব-৬

0
1013

#ব্রোকেন_হার্ট
লেখাঃ মান্নাত মিম

|৬|
” মিট মাই ফিয়ন্সে কাপ্রিনা।”

“হাই এভ্রিওয়ান।”

নাইট ক্লাবের বার কাউন্টারে ওয়াইন বিলি করার সময় দূর থেকে দেখতে পেলাম এন্ডারসনকে। সাথে সেদিনের গাড়ি করে আসা মেয়েটা-ও। তাকে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে এন্ডারসন। সেদিকে প্রথমে তাকিয়ে দ্বিতীয়বার তাকানোর ভুল করলাম না আর। এমনিতেই অনুভূতিকে বাঁধনে রাখা দিনকে দিন বড্ড মুশকিল হয়ে পড়ছে আমার জন্য। মনটা-ও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এখন না চাইতেও এন্ডারসনের বারবার মুখোমুখি হওয়া কপালে শনির দশার মতোন। আমার জন্য সেটা ভালো যে নয় তা বেশ করে জানা। তাই তাদের দিকে আর না তাকিয়ে কাজে মন দিলাম। বার কাউন্টারের সামনে চার-পাঁচটা চেয়ারে বসা ছেলেগুলোর সমুখে দণ্ডায়মান হয়ে কাজে নিজের অস্বস্তি হওয়ার পরেও করতে লাগলাম। আজ তিনদিন হলো কাজ করছি। একটু নয় বেশখানিক জড়তা এখনো বিদ্যমান। প্রথমদিন আমার সাথে ক্রিশ্চান থেকে গিয়েছিল, কাজে টুকটাক সাহায্যও করেছিল। পরে থাকতে চাইলেও জোর করে আসতে দেইনি। তার না কি আমাকে নিয়ে খুব চিন্তা হয়। হেসে ছিলাম খুব করে ছেলেটার কথা শুনে। বাবা-র পরে আমার জন্য কারো এমন চিন্তা করা মনকে প্রশান্তি দিয়েছিল। এখানে প্রায় নিত্যনতুন মানুষের সাথে সাক্ষাৎ হচ্ছে। একগুঁয়ে আমি-টা নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে যদিও সময় নিচ্ছি, তবে নিজের গণ্ডি পেরিয়ে এখানে নানান মানুষের মাঝে নতুন আমি-র সাথে পরিচয় হতে পারছি। কত-শত মানুষ, নানান রঙের মানুষ। তবে আজকে অস্বস্তি কাজ করছে ভিতরে ভিতরে। এটা কি সামনে বসা আমাকে ঘুরে ঘুরে তাকিয়ে দেখা ছেলেগুলোর জন্য না কি অদূরে থাকা এন্ডারসনের জন্য; বুঝতে অক্ষম আমি।

সন্ধ্যে হতে রাতের বারোটা পর্যন্ত আমার কাজ। আরো রাত পর্যন্ত চলে যদি-ও। তবে বাড়িতে অসুস্থ মা ও ছোটো ভাই থাকার কারণে সেটা ক্রিশ্চান বারের মালিকের সাথে কথা বলে কমিয়ে এনেছে। বারোটা বাজার এখনো অনেক সময় বাকি বলতে গেলে আরো ঘন্টা দুয়েকের মতো। কাউন্টারের সামনে যারা ছিল তাদের মধ্যে এখনো বাকি আছে তিনজন। সন্ধ্যে থেকে এখন পর্যন্ত একই লোকের অবস্থান আমার কাছে বেশ সন্দেহজনক ঠেকছে। কিন্তু অত ভাবার অবকাশ নেই। একে তো কাজ উপরন্তু কিছুক্ষণ পরেই শুরু হবে এন্ডারসনের পার্টি। এখানে পার্টি দিচ্ছে এন্ডারসন। বন্ধু-বান্ধব সকলেই উপস্থিত। আমাকে অবশ্য সার্ভিংয়ের কাজ দেওয়া হয়নি। ওখানে সার্ভিং করার জন্য পুরোনো লোকদের হায়ার করা হয়েছে। আমি কেবল দূর থেকে দেখছি তাদের পার্টি।

“কতদিন হলো এখানে কাজ করছ তুমি?”

সামনে থাকা তিনজন ছেলেদের মাঝে একজন বলে ওঠে। অবশ্য ছেলে কেবল দু’জন। তাদের থেকে একটু বয়স্ক পুরুষ একজন। চাহনি বিষাক্ত। ঠোঁট কামড়ে আমার দিকে অশ্লীল নজর ছুঁড়ছে। আমি মনে করেছিলাম, এতক্ষণ থাকা চার-পাঁচটা চেয়ার রিজার্ভ করে রাখা সবগুলোই একদলের লোক। কিন্তু নাহ, টি-শার্ট গায়ে দু’জন বন্ধু। আর নতুন আমদানি হওয়া জ্যাকেট গায়ে অল্প বয়স্ক লোকটা একা। আমি আপাতত একা কাউন্টারে। সাথে দু’জন সহকারী ছিল। তবে তারা ছেলে, যারা এখন এন্ডারসনের পার্টিতে সার্ভ করার দায়িত্বে রত। আমার একা থাকার অপেক্ষায় ছিল বোধহয় দু’জন বন্ধুরা। তাই এখন জিজ্ঞেস করছে বা কথা বলার চান্স খুঁজছে।

“তিনদিন।”

ঝামেলা বাড়ানোর ইচ্ছে নেই। বুঝতে পারছি তাদের আগ বাড়িয়ে কথা বলার প্রয়াসের নামে আমাকে একরাতের জন্য চাওয়া। এজন্য অল্প কথায় তাদের থেকে কেটে পড়াকে উত্তম মনে করেই জবাব দিলাম। অথচ তাদের থামার কোনো নামই দেখছি না।

“তিনদিন! অথচ তোমার কাজের এক্সপেরিয়েন্স দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। দ্রুততার সাথে সার্ভ করছ দেখছি।”

কোনো উত্তর দিলাম না এবার। দেখা গেল উত্তর না দেওয়ার কারণে আমার কর্মরত হাতটাকে খপ করে ধরল দু’জনের মাঝের একজন। পাশে থাকা বয়স্ক লোকটা সেটা দেখে মজা নিয়ে আয়েশে উপভোগ করছেন। কিছুই বলার আগ্রহবোধ করছেন না। উলটো জঘন্য প্রস্তাব রেখে বললেন,

“একা একা মজা না নিয়ে আমাকেও দিয়ো, তাহলে তোমাদের আমি ভারি পেমেন্ট করব।”

বলেই এক চোখ টিপ দিলেন লোকটা। এদিকে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পালাক্রমে তিনজনের মুখ দর্শন করছি। বুঝতে পারছি না কয়েকদিনের মধ্যে কাজটা কোন পর্যায়ে চলে গেল। এখন কী উপায়? আজ বাড়ি সহিসালামত ফিরতে পারব তো? উপরন্তু এই কাজটা যদি ছেড়ে দেই, না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় হবে না দেখছি। একবার মন চেয়েছিল, অদূরে সোফায় গোল হয়ে বসে থাকা আনন্দ-উলাসে মত্ত এন্ডারসনকে ডাক দেই। পরক্ষণেই ভাবনা এলো বিষয়টা তাহলে আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। তার ফিয়ন্সেই বা কী ভাববে? নানাবিধ চিন্তাকুলিত হয়ে আর ডাক দিলাম না। তবে এই নানান রঙের চাকচিক্যময়ের অন্তরালে খেয়াল হলো, আমি একা ভীষণ রকমের একা। কেউ নেই এই বিপদের সময়ে। এমন সময় উদয় হলো, কাউন্টারে হেল্প করা একজন ছেলে নাম রিন। তাকে দেখেও এখনো একইভাবে আমার হাত ধরে রেখেছে ছেলেটা, ছাড়ছে না। সেটা চক্ষুগোচর হলো রিনের। সে ভ্রু কুঁচকে একবার ধরা হাত তো আরেকবার আমার দিকে তাকায়। আমি অসহায় চাহনি নিক্ষেপ করি। ভাবি, এই বুঝি ছেলেটাকে ধমকে আমাকে ছেড়ে দিতে বলবে। রেহায় দিবে এমন অসহনীয় পীড়া হতে। কিন্তু নাহ, সে নিজ কাজের জন্য যেমন এসেছিল, তেমন কার্যসিদ্ধি হওয়ায় ফেরত চলে গেল। আমার আর বিস্মায়াবিষ্ট হওয়ার অবকাশ রইল না। আমার করুণ অবস্থা সামনে থাকা তিনজনের খেয়ালে এলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে তারা।
_____

ছুটির সময় হয়েছে। মাঝে দিয়ে আমার কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে আরকি যারা হাত ধরেছিল বেশখানিক সময় পরে ছেড়েও দিয়েছিল। তবে এখনো যায়নি। আমার তো ভয়ে প্রাণ ত্রাহিত্রাহি! অপরদিকে এন্ডারসনের পার্টি শেষ হয়নি। মনে হয় সারারাত চলবে তাদের এই আয়োজন। কিন্তু আমার মাথা ব্যথা সেটা না, সমুখে দণ্ডায়মান ব্যক্তি তিনটা। মনে হয় আমার অপেক্ষায় তারা অপেক্ষাকৃত। বাইরে পা দেওয়ার পালা কেবল তারপর…!

চলবে…

যারা যারা পড়েন সকলেরই রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here