ভ্যাম্পায়ার_কুইন# পর্বঃ১০

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ১০
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলো। আমি বসে আছি ট্রেনের মধ্যে একটা কেবিনের মধ্যে আমি, জেসি, এনা আর জেসির বয়ফ্রেন্ড হ্যারি। হ্যারি কেনো জেসিকে ফেলে এখানে চলে এসেছিলো সেটা বলেছে। ওর দুই বছরের ছুটির বেশী দিন হয়ে গিয়েছিলো। তাই ওর বাবা লুসেফার কয়েকজন ডেভিলকে দিয়ে ওকে ধরে নিয়ে এসেছিলো এখানে। জেসি আর হ্যারির মধ্যে সব ঠিক ঠাক হয়ে গেছে। অবশ্য হ্যারির সাথে আমার কথা হয়েছিলো। ও জানিয়েছিলো ওর সাথে আমার লড়াই ও সবই ওর অভিনয় ছিলো। শুধু আমার ভিতরে কি শক্তি আছে সেটা দেখতে চেয়েছিলো ও।
।।
।।
আমি ঘুমানোর অভিনয় করে এনার কাধে মাথা দিয়ে ছিলাম এতোক্ষন। কিন্তু এনা আমার মাথা ওর কাধ থেকে নামিয়ে ওর কোলে দিয়ে রাখলো। আমি ভাবতেও পারি নি এনা এমন করবে।
.
–কিরে ওর খেয়াল তো এখন থেকেই রাখা শুরু করে দিয়েছিস।(জেসি)
.
–উহু এখন থেকে কোথায়। ওর খেয়াল তো প্রতিরাতেই রাখি।(এনা)
.
–কি তুই?(জেসি অন্য কিছু ভেবে বলো উঠলো)
.
–আরে তুই যেটা ভাবছিস সেটা না। ওর রুম তো আমার রুমের সামনা সামনি। ওর জানালা খোলায় থাকে প্রতিদিন। আমি প্রতিরাতে ওর রুমে গিয়ে ওর এলোমেলো করা রুম পরিস্কার করে দিয়ে আসি। সকালে উঠে ও ভাবে হয়তো ঘুমের ঘোরে ও নিজেই করেছে।(এনা)
.
–অন্য কিছু তো করোস না?(জেসি)
.
–আর কি করবো? আর তোরা দুজন ওমন দূরে দূরে বসে আছোস কেনো। হ্যারি তুমিও ওর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকো।(এনা)
.
–না ভাইয়ের মাইর খেয়ে সেদিন যে ভয় পাইছে এখন নাকি ওর সামনে আমার হাত ধরতেই ওর হাত পা কাপে।(জেসি হাসতে হাসতে বললো)
.
–হাইসো না। আমি কি জানতাম তোমার ভাইয়া হাইব্রিড জিনিস।(হ্যারি)
.
–এখন ধরো ও তো ঘুমাচ্ছে আমার কোলে।(এনা)
.
–কখন উঠে তার ঠিক আছে?(হ্যারি)
.
–আমার ভাবতেই অবাক লাগে তুমি একাডেমীর স্টুডেন্ট কাউন্সিলর প্রেসিডেন্ট আর তুমি কিনা আমার ভাইকে এতো ভয় পাচ্ছো?(জেসি)
.
–বেবী ভয় তো আমি আমার বাবাকে ও পাই না। কিন্তু তোমার ভাইকে ভয় না পেলে তো তোমাকে আমার হাতে তুলে দিবে না।(হ্যারি জ্যাসির হাতে তালুর উপরে একটা চুমু দিয়ে বললো)
.
–বাব্বা কি রোমান্টিক দৃশ্য।(এনা)
.
–মনে হয় আমরা চলে এসেছি।(জেসি)
.
–হ্যা সামনেই ট্রেন থামবে।(এনা)
।।।
।।।
ট্রেনটা থেমে গেলো। ব্লাক লোটাস রাজ্যের প্রধান স্টেশনে আমরা চলে আসলাম। বাইরের মনোরম পরিবেশ ট্রেন থেকে উপভোগ করা যায় না। বেশীরভাগ সময় সাদা থাকে বাইরে দিয়ে। এনা আমাকে ডাকতে যাবে তখনি আমি উঠে গেলাম।
.
–চলো ট্রেন তো থেমে গেছে।(আমি)
.
–এই তুমি ঘুমাও নি?(এনা)
.
–কি খারাপ দেখছিস? ঘুমের ভান করে তোর কোলে শোয়ার মজা নিচ্ছিলো।(জেসি হাসতে হাসতে বললো)
.
–আচ্ছা বাদ দে বের হ নাহলে ট্রোন আমাদের নিয়েই চলে যাবে।(এনা)
.
–হ্যা।(আমি)
।।।
।।।
আমার কাধে শুধু একটা ব্যাগ। তাছাড়া কেউ কোনো জিনিস আনে নি। আমি আবার আমার ব্যাগ ছাড়া কোথাও যায় না। যেখানে যাবো আমার ব্যাগ নিয়েই যাবো। আমরা চারজন বের হলাম ট্রেন থেকে। যেটা দেখলাম সেটা দেখার মতো প্রস্তুত ছিলাম না আমি। মনে হচ্ছে পুরো একশ জনের উপরে লোক এসেছে আমাদের নিয়ে যেতে। সবাই কালো কোর্ট, কালো প্যান্ট, কালো চশমা, কালো সু পরে দাড়িয়ে আছে লাইন ধরে। সবার ডান হাতে একটা ধারালো তলোয়ার। আমাদের দেখে একজন বয়স্ক লোক এগিয়ে আসলেন। তার হাতে ফুলের একটা তোড়া। সেটা সে এনার হাতে তুলে দিলো। আর বলতে লাগলো,
.
–সেকেন্ড প্রিন্সেস অফ ব্লাক লোটাস এলিনা কোয়াডার্ট, মাই লেডি আপনার জন্য সেনা প্রস্তুত। আমি আপনার সেনাপতি জন মাইক।(বয়স্ক লোকটা)
.
–বাবাকে কত করে বলেছি আমার এসবের দরকার নেই।(এনা)
.
–সরি মাই লেডি। কিন্তু এটা মহারাজের আদেশ না।(মাইক)
.
–তাহলে ভাইয়ার কাজ। আমি তো এখনো আমার গ্রাজুয়েশন কম্প্লিট করলাম না। এর মধ্যেই আমার সেনা আমার কাছে দিয়ে দেওয়ার কোনো মানে আছে?(এনা)
.
–এনা কি হচ্ছে?(আমি অবাক হয়ে এনাকে জিজ্ঞেস করলাম)
.
–ও মাই এপোলজি। আপনারা প্রিন্সেস এর ফ্রেন্ড মনে হচ্ছে। প্রথমে পরিচয় দি, আমি জন মাইক। মাই লেডি প্রিন্সেস এলিনা কোয়াডার্টের প্রধান সেনাপতি আমি।(মাইক)
.
–আমি জ্যাকসন, ও আমার বোন জেসিকা, আর ও হ্যারি।(আমি)
.
–স্যার জ্যাকসন, স্যার হ্যারি, ম্যাডাম জেসিকা আপনাদের সবাইকে স্বাগতম ব্লাক লোটাসে।(মাইক)
.
–মাইক আমরা খুব ক্লান্ত আমরা প্রাসাদে যাবো।(এনা)
.
–জ্বী মাই লেডি আমাকে ফলো করুন।(মাইক পুরো ফরমালিটির সাথে হাত দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো এনাকে)
।।।
।।।
পিছনে দাড়ানো সবাই এবার দুই পাশ হয়ে দাড়িয়ে মাঝ খান দিয়ে যাওয়ার একটা রাস্তা করে দিলো। আমি দাড়িয়ে রইলাম। বুঝতে পারলাম না কি হয়ে গেলো। এনা একজন প্রিন্সেস সেটা তো কখনো বলে নি আমাকে। তাহলে মিথ্যা বলেছে আমাদের কাছে ও। এনা বুড়ো লোকটার হাত ধরে যেতে লাগলো। হয়তো এটা ফরমালিটি। এনা আমাকেও ফলো করতে বললো। আমরা তিনজনও এনার পিছন পিছন যেতে লাগলাম। স্টেশন থেকে বের হয়ে পুরো অবাক হয়ে গেলাম। রাস্তা দিয়ে পুরো ৫০ টার বেশী কালো গাড়ি দাড়িয়ে আছে। দেখতে আমাদের দুনিয়ার বিএমডব্লিউ এর মতোই। এনাকে একটা গাড়িতে বসিয়ে দিলো। ভাবলাম আমরাও একই গাড়িতে গিয়ে বসবো। কিন্তু না শুধু জেসিকে এসে নিয়ে গেলো বুড়োটা। একদম সেই ফরমালিটি দিয়ে জেসির হাত ধরে এনার পাশে নিয়ে বসিয়ে দিলো। আমি আর হ্যারি তাকিয়ে রইলাম। হ্যারি রাগে দাত করমর করতে লাগলো,
.
–ভাই এটা কি হলো?(হ্যারি)
.
–আমিও তো বুঝতেছি না।(আমি)
.
–তোমার গার্লফ্রেন্ড যে একটা রাজার মেয়ে হবে সেটা কি ভেবেছিলে কখনো?(হ্যারি)
.
–না। ভাবলে তো এতো অবাক হতাম না।(আমি)
.
–মিয়া তোমার কপালে কষ্ট আছে। তোমার রাজ্য আর ব্লাক লোটাসের অনেক আগে থেকেই শত্রুতা চলছে। আর যদি এখানের রাজা জানে তুমি অষ্টম ডিউকের হারানো বড় ছেলে প্রিন্স জ্যাকসন তাহলে তুমি শেষ।(হ্যারি আমার কানে কানে বললো)
।।।
।।।
আমি আর হ্যারি এনার পিছনের গাড়িতে বসলাম। সেনাপতি শালা আমাদের গাড়িতেই সামনে বসেছে। হ্যারির কথায় এখন ভয় করতে লাগলো। যদি লংস্টার আর লোটাসের মধ্যে শত্রুতা থাকে তাহলে আমার আসল পরিচয় কখনো শেয়ার করা যাবে না।
।।
।।
গাড়ি চলতে শুরু করলো। আমি প্রথমে ভাবলাম মনস্টার দুনিয়া অনেক অস্বাভাবিক হবে। চারিদিক ভয়ংঙ্কর পরিবেশ থাকবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিলো। একটা ফ্লাইওভার দিয়ে গাড়ি যাচ্ছিলো। রাজ প্রাসাদে যাওয়ার জন্য এটাই নাকি একটা রাস্তা। আর যেতে হলে উড়ে যেতে হবে। ফ্লাইওভারের উপর থেকে সব ভালো করে দেখা যাচ্ছে। ফ্লাইওভারটা কাচঁ দিয়ে ঢাকা। স্বচ্ছ কাচঁ হওয়ায় বাইরের সব কিছু দেখা যাচ্ছে। অনেকটা উচু হওয়ায় নিচের বাড়িঘর দেখতে সুবিধা হচ্ছিলো। এখানের বাড়ি ঘর দেখে মনে হচ্ছে আমি আমাদের দুনিয়াতেই আছি। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে এখানের সময় নিয়ে। যদি এটা মানুষের দুনিয়া হতো তাহলে কেউ মেনে নিবে না। কোনো সাধারন মানুষকে এখানে এনে দিলে সে বলবে আমি অতীতে চলে এসেছি।
।।।
।।।
হ্যা এখানের সব কিছু মানুষের থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। বাড়ি ঘর উন্নত হলেও এখানে কোনো প্রযুক্তি নেই যে এদের সংস্কৃতি ও উন্নত হবে। মোট কথা আমার অনেক ভালো লেগেছে। কারন এই মনস্টার দুনিয়া পুরো ফ্যান্টাসি দুনিয়ার মতোই। কারন এখানে ম্যাজিক আছে। ম্যাজিক দিয়েই এখানে সব কাজ কর্ম হয়। আমি বইতে যেসব পড়েছি সেসবের মধ্যে বেশী মিল নেই। আমার এই দুনিয়া সম্পর্কে জানতে হলে এই শহর গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে হবে।
.
–তো কেমন লাগছে জ্যাক আমাদের মনস্টার দুনিয়া?(হ্যারি)
.
–অনেক সুন্দর। পুরো ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড একটা।(আমি)
.
–হ্যা মানুষের দুনিয়ায় গিয়ে আমারও তেমনি মনে হয়েছিলো।(হ্যারি)
.
–আচ্ছা এখন তো আমরা একাডেমী জোনের বাইরে তাই না?(আমি)
.
–হ্যা।(হ্যারি)
.
–এখন তো ন্যাচারাল ম্যাজিক গুলো ব্যবহার করতে পারবো তাইনা?(আমি)
.
–হ্যা। পারবে। চারটা স্তরে ভাগ করা হয় ম্যাজিক ব্যাবহারকারীদের।(হ্যারি)
.
–স্তর কিসের আবার?(আমি)
.
–আগে শুনো। প্রথম স্তরে থাকে রাজার বংশ, নোবেল প্রধান জেনারেলের বংশধর, এরপরের স্তর হলো যারা সেনার অংশ হয় তারা, আরেক অংশ হলো হান্টার, আর সব শেষ স্তর হলো সাধারন জনতা।(হ্যারি)
.
–এর মধ্যে শক্তিশালী কারা?(আমি)
.
–সবাই শক্তিশালী হতে পারে। তবে সেটা নিজের ট্রেনিং আর ম্যাজিকের উপরে।(হ্যারি)
.
–আমি দুংখিত আপনাদের কথার মধ্যে কথা বল্লাম। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে স্যার জ্যাকসন আপনি মানুষের দুনিয়া থেকে এসেছেন তাইনা?(মাইক)
.
–হ্যা।(আমি)
.
–আপনার জন্য কিছু কথা বলি। আপনি তো নোবেল পরিবারের সন্তান নাহলে লোচার্ট একাডেমীতে চান্স পেতেন না। আসলে সেখান থেকে প্রথম ১০ জনদের ৫ টা রাজ্যে ভালো পদে চাকরী দিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো তো সাধারন জনতাদের জন্য না। কিন্তু আপনি আমরা এদের থেকেও বেশী সুবিধা সব সময় থাকে হান্টারদের। সেনাদের আইনী সুবিধা বেশী দিলেও বেশীরভাগ দিক দিয়ে তাদেরকে আটকে রাখা হয়। কিন্তু হান্টারদের কাজের ভিতরে কোনো আটকানো হয় না।(মাইক)
.
–হান্টারদের কাজ কি?(আমি)
.
–হান্টারদের আরেক নাম হলো এডভেঞ্চরেরার। তাদের প্রধান কাজই বিভিন্ন এডভেঞ্চারে যাওয়া। বিভিন্ন রকম মিশন শেষ করা। এবং সেই মিশনের বদলে টাকা ইনকাম করা।(মাইক)
.
–এটা তো সেরকম লাগছে।(আমি)
.
–হ্যা। জিনিসটা আসলেই অনেক সুন্দর। কিন্তু হান্টার আর রাজ্যের সেনাদের মধ্যে তেমন যায় না। লড়াই হয় অনেক গোপনে।(হ্যারি)
.
–তো হান্টার হওয়ার কোনো লাভ আছে?(আমি)
.
–হ্যা লাভ থাকবে না কেনো? একজন হান্টার পুরো পাঁচটা রাজ্যে বিনা কোনো আইডি কার্ড ছাড়া যেকোনো সময় ঘুরতে পারবে। পুরো পাঁচটা রাজ্যেই থাকতে পারবে। যেকোনো গিল্ডে জয়েন হতে পারবে।(হ্যারি)
.
–স্যার একটা কথা বলতাম আপনাকে। আমাদের প্রিন্স নিজে একজন হান্টার।(মাইক)
.
–একজন প্রিন্স হান্টার হতে পারেন।(আমি)
.
–হ্যা কেনো নয়। যদি রাজার আদেশ থাকে তাহলে সবই হতে পারবে।(হ্যারি)
.
–এটা তো ভালো জিনিস।(আমি)
।।।
।।।
দেখতে দেখতে আমরা প্রাসাদে চলে আসলাম। আসলেই এই দুনিয়া আমার ভালো লাগতে শুরু করেছে। আমি এমন দুনিয়া শুধু কার্টুন মুভিতেই দেখেছি। কোনোদিন ভাবতে পারি নাই আমি নিজেই এমন একটা দুনিয়া থেকে জন্মেছি।
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ১১ তম পর্বের জন্য

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here