ভ্যাম্পায়ার_কুইন# পর্বঃ২৮ .

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ২৮
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আমরা হ্যাভেনের গেটে দাড়িয়ে আছি। জানি না আমাদের ভিতরে এন্ট্রি হবে কিনা। কিন্তু এটুকু জানি এন্জেলরা আমাকে দেখলে আমার উপরে ঠিকই আক্রমন করবে। পুরো এগারো দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সৈন্য হলো হ্যাভেনের। তারা ডেভিলদের মোট সৈন্যের দ্বিগুন। এবং এক একজন এন্জেল সেনা দুজন ডেভিল সেনাকে হারাতে সক্ষম। তারপরও প্রত্যেকবার এন্জেল আর ডেভিলদের যুদ্ধ শেষ হতে পারে না। প্রত্যেক যুদ্ধ শেষের দিকে গেলেই এজগার্ড সেই যুদ্ধ বন্ধ করে দেই। তা নাহলে এই পর্যন্ত ডেভিলরা প্রায় প্রত্যেকবারই হারতো। এমন নয় যে ডেভিলদের সৈন্য সংখ্যা কম। পূর্বে সমস্যা হতো মনস্টার ওয়ার্ল্ডে থাকা মানুষ এবং অন্যান্য মনস্টার দেরকে নিয়ে। তারা কোনো মতে ডেভিল কিং এর সাহায্য করতে চাইতো না। এতে করে ডেভিলদের সৈন্য সংখ্যা দুর্বল থাকতো। আর হ্যা একটা কথা বলে রাখি একটা সময় ছিলো যখন মানুষ আর মনস্টার এক সাথে মনস্টার দুনিয়াতে থাকতো। তাদের অধিকাংশই পুরানো সব ডেভিল কিং দের হাতে মারা গেছে। আর যারা বেঁচে পৃথিবীতে গিয়েছিলো তাদের মেমোরীও ডেভিল কিং বদলে দিয়েছিলো যাতে তারা কখনো এই দুনিয়ার বিষয়ে মনে না করতে পারে। অবশ্য ডেভিল কিং দের আরেকটা ক্ষমতা হচ্ছে মেমোরী নিয়ন্ত্রন করা। তবে স্পেলটার জন্য আমি এখনো প্রস্তুত না। এটা অনেক শক্তিশালী স্পেল। এটা ব্যবহার করে আমি যে কারো মনে নকল মেমোরী দিয়ে দিতে পারবো, এমন কি তাদের মেমোরী নিজেও দেখতে পারবো৷ তবে সেটার জন্য এখনো সময় আছে। ভিরু ছোট হয়ে এবার আমার ঘাড়ে এসে বসলো। আর আমি আমার ডানা বারোটা মেলে দিলাম। রানী আলিয়ানা হাওয়ার মধ্যে ম্যাজিকের মাধ্যমে উড়তে লাগলো।
।।।
।।।
আমরা হ্যাভেনের দরজার কাছে গিয়ে নামলাম। জায়গাটা মেঘের বানানো। এখান থেকে এমন মনে হচ্ছে নিচে নামলেই আমরা মানুষের কিংবা মনস্টার দুনিয়া দেখতে পাবো, কিন্তু আসলে সেরকম না। নিচে নামলে আমরা মহাকাশের জিরো গ্রাভিটিতে আটকে যাবো। আমি গেটটা দেখতে লাগলাম। বিশাল আকারের গেট। মনে হচ্ছে কোনো দৈত্যের বাসার গেট এটা৷ আমার মনে হচ্ছে এন্জেলরা একসময় মনে হয় বিশালাকার ছিলো তাই তাদের গেট এতো বিশাল হবে। দরজা আস্তে আস্তে খুলতে লাগলো, আমি ভাবলাম কেউ কথা বলবে কিন্তু সেটা না করে তারা আমাদের দিকে তীর ছুরতে লাগলো। তীরগুলো আলোর গতিতে আমার দিকে আসতে লাগলো। সাধারন ম্যাজিক তীরের থেকে এটা কয়েকগুন বেশী ফাস্ট। এন্জেলরা কখনো ডেভিলদের ছাড়া কারো সাথে যুদ্ধে যায় না। কিন্তু এগারো দুনিয়ার মধ্যে কেউই কখনো এন্জেলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে সাহস পায় নি। কারন তাদের সেনা একদম আলাদা।
।।।
।।।
আমি আমার আল্ট্রা স্পিড মোডে চলে গেলাম। এবার তীর গুলো খুব আস্তে আস্তে আমার দিকে আগাতে লাগলো। আমি সেগুলো খুব সহজেই অবহেলা করে ঠিকমতো উঠে দাড়ালাম। আমার পাশে থাকা আলিয়ানা তার চারদিক দিয়ে একটা গোল ম্যাজিকাল ঢালের মতো বানালো। সেটা ভেদ করে তীর যেতে পারে নি। এবারও থামলো না। প্রথমে তো মনে হয় একশোর মতো তীর ছুড়েছিলো আমাদের দিকে, কিন্তু এবার হাজার হাজার তীর আমাদের দিকে আসতে লাগলো,
.
–জ্যাকসন আমি কি কিছু করবো?(ভিরু)
.
–না এরা হয়তো জানে না এরা কার উপরে হামলা করছে। যখন দেখতে পারবে কাকে আক্রমন করছে তখন নিজ থেকেই আমার সামনে এসে কুর্নিশ করবে।(আমি হাসতে হাসতে বলতে লাগলাম)
.
–হঠাৎ তোমার কি হলো? এমন আজব ফিলিং তো আগে কখনো দেখি নি।(ভিরু)
.
–এটাই তো ডেভিল কিং দের আসল রূপ। তারা বাইরে ভালো হওয়ার চেষ্টা করবে, কিন্তু ভিতরে তারা একদম অন্ধকার।(আলিয়ানা)
.
–ব্যাপারটা মোটেও ভালোর দিকে যাচ্ছে না। রানী আলিয়ানা আপনি রানী লুসিকে সাথে নিন।(ভিরু)
।।।
।।।
ভিরু হয়তো বুঝতে পারলো আমি কি করবো, তাই আলিয়ানা আমার হাত থেকে লুসিকে নিলো, এবং ভিরু তাদের নিয়ে অনেক দূরে উড়ে গেলো। আমার দিকে যে তীর গুলো আসতে লাগলো আমি সেগুলোকে আমার ডানা বের করে এক ঝাপটায় তাদের দিকে উল্টো পাঠিয়ে দিলাম। তাতে তাদের অনেক সেনা গুরুতর নিহত হলো। কিন্তু আমার রাগ অনেক বেরে যাচ্ছে। আমি আমার মাইন্ডকে কেনো জানি কন্ট্রোল করতে পারছি না। আমার ডান পাশের সাদা ডানার অনেকটা অংশ কালো হয়ে গেলো। এবং বাম পাশের ডানা গুলো অনেক বড় হয়ে গেলো, আমার দিকে আবারো তারা তীর ছুড়তে লাগলো, যেহেতু আমি ডেভিল কিং, আর তারা শুধু এই দরজার গার্ড সৈনিক তাই কেউ আমার কাছে আসছে না লড়তে। দূর থেকে আমার দিকে তীর ছুরছে। কিন্তু আমার চারিদিক দিয়ে একটা কালো ছায়া ঘিরে ধরেছে আমাকে, যেটা সব তীরের পাওয়ারগুলোকে খেয়ে ফেলছে। আর সেই পাওয়ারগুলো আমার শরীরে মধ্যে পৌছে দিচ্ছে। আমি হ্যাভেনের মতো সুন্দর জায়গাকে ধ্বংস করতে চাই না, তাই ছোট একটা ব্লাক ম্যাজিক বল বানালাম যেটার আসল নাম “ব্লাক হোল”। এই স্পেলটার কাজ হলো এটা যেখানে ফেলবো সেই জায়গায় একটা গোল টেলিপোর্টেশনের মতো কাজ করবে। কিন্তু সমস্যা হলো সেটার ভিতর দিয়ে কেউ নিজের ইচ্ছায় যাতায়াত করবে না। বরং সেটা সবাইকে তার ভিতরে নেওয়ার জন্য টানবে। আর সেই টান একটা শক্তিশালী ঘূর্নিঝড়ের থেকেও একশোগুন শক্তিশালী হবে। আমি আমার স্পেলটা পড়লাম। এবং আমার হাতে একটা ছোট কালো বলের মতো কিছু একটা আসলো। আমি সেটাকে ছুড়ে মারলাম গেটের ভিতরে। সাথে সাথে সেখানে একটা টেলিপোর্টেশন হোল খুলে গেলো। আর সেটার ভিতরে শুধু এন্জেলদের নয় বরং আশেপাশের সবকিছু টানতে লাগলো। দেখতে দেখতে আমার চোখের সামনে থেকে গেটের পুরো এলাকা উধাও হয়ে গেলো। আমি কখনো ভাবি নি এটা এতো বেশী ভয়ানক হবে। আমার উদ্দেশ্য ছিলো শুধু আমার উপরে যে সেনাগুলো আক্রমন করেছে তাদের ব্লাক হোলে ফেলা। কিন্তু এন্জেলদের পুরো একটা শহর যে উধাও হয়ে যাবে এটা দেখে অবাক। তারপর ও বুঝতে পারলাম লোকি কেনো আমাকে চাচ্ছে তার কাছে। আমি নিজের ক্ষমতার উপরে একটু অবাক হচ্ছিলাম। নিজেকে অনেকটা সুপারহিরো মনে হচ্ছিলো। কিন্তু এইদিকে কয়েকলক্ষ এন্জেল আকাশ দিয়ে সাদা ডানা নিয়ে উড়ে আসছে আমার দিকে। তারা এদের মতো গার্ড নয়। বরং তারা যুদ্ধে অংশগ্রহন কারী সেনা। তারউপর দুই তিন লক্ষের মতো তো তাদের হবে। তারা সবাই সাদা কাপড় পরে আছে। সাদা কাপড়, আর সাদা ডানায় তাদের দেখে মনে হচ্ছে আকাশ ভরা একঝাক সাদা পাখি আমার দিকে আসছে। মনে হচ্ছে বিষয়টা খারাপ যাচ্ছে। আমি ডেভিল কিং হলেও এতে সৈন্যের সাথে কখনো পেরে উঠতে পারবো না। প্রথমে ভাবলাম তারা আমার উপরে আক্রমন করবে, কিন্তু না একটা মেয়েকে দেখলাম তাদের মধ্য থেকে আমাদের দিকে আসতে,
বয়সে আমার সমান হবে কিনা জানি না। কিন্তু দেখে আমার মতোই মনে হচ্ছে। তার মাথার উপরে মাইকেলের মতো সাদা গোল একটা রিং উড়ছে। এটা সকল এন্জেলদের মাথায় থাকে না। বরং যারা রাজার রক্তের থাকে তাদের মাথায় থাকে এটা। এটা তার মাথায় মানে হয়তো সেই মাইকেলের কন্যা আফরিয়েল।
.
–আপনার ছায়া দেখে মনে হচ্ছে আপনি ডেভিল কিং। বাবা যেটা বলেছিলেন সেটাই সত্য তাহলে। আপনার ডান সাইড আসলেই এন্জেলের।(মেয়েটা)
.
–কে আপনি? আর আক্রমন করতে এসেছেন নিশ্চয়। তাহলে অপেক্ষা করছেন কেনো?(আমি)
.
–আমি আফরিয়েল গোন্জি ফ্যারাডে। থার্ড প্রিন্সেস অফ হ্যাভেন। আমি এখানে আক্রমন করতে আসি নি। প্রথমে ডেভিল কিং এর এখানে আসার কারন জানতে এসেছি। যদি কারনটা খারাপ হয় তাহলে আমার পুরো সেনা আপনার উপরে হামলা করবে এই শহরটা ধ্বংসের কারনে।(আফরিয়েল)
.
–আপনাদের সেনা প্রথমে আমার উপরে হামলা না করলে আমার কিছুই করতো হতো না। শহর ধ্বংসের আসল কারন আপনারা নিজেই।(আমি)
.
–এখানে আসার কারন বলুন। যদি লোকির সাথে লড়তে সাহায্য চাওয়ার জন্য এসে থাকেন তাহলে হ্যাভেন কোনো ভাবে সাহায্য করতে পারবে না।(আফরিয়েল)
.
–আমি এখানে কিছুই করতে আসি নি। শুধু কিং মাইকেলের সাথে কথা বলতে এসেছি। তার থেকে অনেক উত্তর নেওয়া বাকি আমার।(আমি)
.
–বাবা তো আপনাকে অনুমতি দেই নি। তার অনুমতি ছাড়া তার সাথে কথা বলা যাবে না।(আফরিয়েল)
।।।
।।।
মেয়েটা অনেক চালাক। আমি ভেবেছিলাম বোকা হবে। কিন্তু মাইকেলের সাথে আমাকে কথা বলতে দিবে না। বরং আমি পিছনে লক্ষ করছি তার সেনাগুলো আক্রমনের জন্য রেডি হয়ে আছে। শুধু কিছু একটার অপেক্ষায় আছে তারা। আমার মনে হয় না হ্যাভেনে আসার চিন্তাটা সঠিক ছিলো৷ মাইকেলের সাথে কথা বলার ছিলো। আমার আম্মার সম্পর্কে কিছু কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো তাকে, তাই তো হ্যাভেনে আসতে রাজি হয়েছি আমি। আমি ভিরুকে মনে মনে বললাম একটু কাছে আসতে। কারন আমার এখান থেকে পালাতে হবে। এখানে থাকলে হয়তো আমার তাদের মারতে হবে নাহলে তারা আমাকে মেরে ফেলবে। আর মনে হচ্ছে না মাইকেল এখন এখানে আছে। নাহলে আমি এখানে এসেছি সেটা বুঝতে পারতো। যায়হোক মেয়েটা হয়তো জানে মা আমি ওর খালাতো ভাই। না জানায় ভালো, কারন আমার এখান থেকে পালাতে হলে ওকে কিডন্যাপ করতে হবে।
।।।
।।।
আমার সাথে কথা বলতে ছিলো আফরিয়েল। কিন্তু সুযোগ বুঝে তার হাতে থাকা একটা ছোট ধারালো ছুড়ি দিয়ে আমার পেটে আঘাত করলো। আমি মেয়েটাকে চালাক ভেবেছিলাম মাত্রই। কিন্তু এতো বোকা হবে আমি কখনো ভাবি নি। একটা সামান্য আঘাত কখনো ডেভিল কিং কে কিছু করতে পারে না সেটা হয়তো সে জানে না। প্রাসাদ থেকে কখনো বের না হলে যা হয়। আমিও তাকে ফাসানোর সুযোগ পেলাম।
.
–কখনো আপনার গার্ড কম করা উচিত ছিলো না। শত্রু কখনো দয়া দেখাবে না। যেভাবেই হোক আঘাত করবে।(আফরিয়েল)
.
–হুমমম কে জেনো বলেছিলো যুদ্ধে সুন্দরী মেয়েরা অনেক কাজের হয়। কারন তারা তাদের রূপে শত্রুকে মুগ্ধ করে তাদের হত্যা করতে পারে। আজ সেটা যে সত্য বুঝলাম। আপনার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আমি আমার গার্ড কম করে দিয়েছিলাম। আর সেটার সুযোগ নিয়ে আপনি আমাকে আঘাত করলেন।(আমি)
।।।
।।।
জানি না কেনো কিন্তু আমার মুখ থেকে এমন প্রশংসা শোনার পর এদের মুখ লাল হয়ে যায় কেনো? কোনো মানুষকে এভাবে প্রশংসা করলে হয়তো তারা আমাকে জুতা খুলে মারবে। যাক আমি একটা সুযোগ পেলাম। তাদের সৈন্য এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো। তারা সামনের দিকে আসতে লাগলো। আর আমি এই সুযোগে আফরিয়েল এর হাত ধরে হেচকা টানে আমার বুকের মধ্যে নিয়ে আসলাম। তাকে ঘুরিয়ে বাম হাতে এক্সোনিয়া ধরে তার গলায় ধরলাম। এবার তার সেনারা থেমে গেলো,
.
–আসল কথা বলতে আমি এখানে এসেছিলাম আপনার জন্য। ভেবেছিলাম সব ধ্বংস করেই হয়তো আপনাকে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু না দেখছেন আপনার মনে কতো টান। আপনি সোজা আমার কাছে চলে আসলেন।(আমি)
.
–আমার মনে আপনার জন্য টান থাকবে কেনো? আপনি ডেভিল কিং আপনি আমার শত্রু।(আফরিয়েল)
.
–বেশী কথা বইলেন না। সবাই কিভাবে চুপ করায় জানি না। কিন্তু আমি বলে দিচ্ছি আপনি যে কয়টা কথা বলবেন আমি আপনাকে সে কয়টা কিস দিবো।(আমি)
।।।
।।।
এবার আর কোনো কথা বললো না আফরিয়েল। যাক আমার তাকে দরকার ছিলো শুধু লুসিকে ঠিক করার জন্য। আমার সাথে নিয়ে যায়, পরে মাইকেল ঠিকই আসবে তাকে আমার থেকে ফেরত নিতে। আর তখন মাইকেলের সাথে আমার কথা হবে।
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন পরের পার্টের জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here