ভ্যাম্পায়ার_কুইন# পর্বঃ০১

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ০১
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আকাশের তারাগুলো খুব উজ্জল ভাবে জ্বলজ্বল করছে। আজকে চাঁদকেও পুরো গোল রুটির মতো দেখতে লাগছে। জোৎস্না রাত আমার অনেক ভালো লাগে। কিন্তু আজকের জোৎস্না রাত উপভোগ করার মতো অবস্থা আমার নেই। নিজের কাছেই খারাপ লাগছে অনেক। বাবা মায়ের কথা গুলো এখনো কানে লাগছে। তাদের কথার ও একটা যুক্তি আছে। আজ বেশ অনেকদিন হলো তারপরও বিষয় তা ভুলতে পারছি না। আমাকে তারা নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেছে কিন্তু আমি তাদের কিছুই দিতে পারলাম না।

আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। হঠাৎ আমার পকেটে থাকা মুঠোফোন টা কেপে উঠলো। ভাইব্রেট মুডে থাকায় সারা শরীর কাপতে লাগলো। ফোনটা বের করে দেখি আবির ফোন দিয়েছে।
.
–কি করছিস।(আবির)
.
–চাঁদের আলোটা উপভোগ করতেছি।(আমি)
.
–ও। মনে হচ্ছে তোর মন খারাপ। দেখ চিন্তা করিস না। তোর লাইফ থেকে তো আর সব কিছু হারিয়ে যায় নি। দ্বিতীয় বার চেষ্টা করিস আবার।(আবির)
.
–সব কিছু দ্বিতীয় বার চেষ্টা করা যায় নারে।(আমি)
.
–আমি জানি দ্বিতীয়বার চেষ্টা করলে তুই ঠিকই পারবি।(আবির)
.
–হ্যা।(আমি)
।।।।
।।।।
ফোনটা কেটে বন্ধ করে দিলাম। পুরো লাইফে আমার এই একটা বন্ধুই হয়েছে। জানি না কেনো কিন্তু এই বন্ধুটাও আমাকে ধোকা দিয়ে দিবে এটা মানতে আমার খারাপ লাগছে। বেলকনির গ্রিলে হাতটা শক্ত করে ধরলাম। চোখ দিয়ে পানি পরছে। হঠাৎ কেউ একজন বেলকনিতে চলে আসলো। আমি চোখ দুটো মুছে পিছনে তাকালাম। আমার ছোট বোন দাড়িয়ে আছে সেখানে।
.
–ছোট বাচ্চার মতো কাদছিস কেনো?(হৃদি)
.
–এমনি।(আমি)
.
–দেখ ন্যাকামো করবি না আমার সামনে। তোর রুমে আসতে চাইছিলাম না। কিন্তু আম্মু জোর করে পাঠালো এইটা দিতে।(হৃদি আমার হাতে একটা চিঠির খাম দিয়ে বললো)
.
–কি এইটা?(আমি)
.
–তোর জিনিস তুই দেখ।আর হ্যা কনগ্রাটস ফেইল আর পছন্দের মেয়ে হারানোর জন্য।(হৃদি জোরে হেসে চলে গেলো রুম থেকে)
।।।।।
।।।।।
আবার ও পরিবেশ নিরব হয়ে গেলো। হৃদি আমার সাথে তেমন কথা বলে না। ওর সাথে কথা বলতে গেলেই ঝগড়া করে সব সময়। এখন ও কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিয়ে গেলে। ৩ বিষয়ে ফেইল করেছি আমি এইটা ভেবে আবার ও দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমার সাথে যারা ছিলো এক ক্লাসে সবাই পাশ করেছে কিন্তু আমিই ফেইল করেছি ভাবতে পারছি না। যে প্রতি পরীক্ষায় সবার থেকে বেশী নাম্বার পাই। যে ছেলে ক্লাসের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী সে ফেইল করেছে তিন বিষয়ে এটা নিজেই মেনে নিতে পারছি না। একটা বছর আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। চ্যালেন্জ করেও কোনো ফল পাই নি।

যা হয়ে গেছে সেটা তো আর পরিবর্তন করতে পারবো না। হাতের চিঠির খামটা খুললাম। ভিতরে একটা কাগজ, একটা চিঠি। চিঠিটা খুলে পড়তে লাগলাম।
,
প্রিয়,
আশা করি ভালো আছো। বেশী কিছু বলবো না। এখন সব কিছু জানলে তোমার ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা আছে। মন খারাপ করে আছো তোমার রেসাল্টের জন্য। এই ব্যাপারটা আমার মোটেও ভালো লাগছে না। তাই ছোট একটা উপহার দিলাম তোমাকে। নেকলেসটা সব সময় কাছে রেখো। সঠিক সময়ে তোমাকে পথ দেখাবে। তোমার মায়ের নেকলেস এইটা। আর আশা করি খুব শীঘ্রই দেখা হবে আমাদের।
ইতি,
তোমার দাদা।
।।।।
।।।।
চিঠিটা পরে আমার হাত কাপতে লাগলো। কিছুই মাথায় ঢুকতেছে না। নিজের আপন পরিবার সম্পর্কে আমার কোনো ধারনায় ছিলো না। আজ হঠাৎ করে আমার আপন দাদা আমাকে চিঠি লেখলো কেনো বুঝলাম না। এতো দিন কোনো খোজ নিলো না। আজকে হঠাৎ করে কেনো আমার খোজ নিলো বুঝলাম না। খামের ভিতরে একটা নেকলেস আটকে আছে। নেকলেসটা বের করলাম। অনেক অদ্ভুদ একটা নেকলেস। এমন নেকলেস আমি জীবনেও দেখি নি। কঙ্কাল এর বডির আকারে তৈরী নেকলেসটা। ভালোই লাগলো নেকলেসটা। এটা তো গলায় পরার মতো মেয়ে মানুষ না আমি। তাই হাতে পেছিয়ে রাখলাম। খামে বাকি কাগজটা দেখতে যাবো তখনি আমার রুমে বাবা আর মা ঢুকলো।
.
–এটা কি বুঝতে পারছো?(মা)
.
–দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো কলেজের ভর্তির ফর্ম।(আমি)
.
–হ্যা।(বাবা)
.
–কিন্তু আমি তো পাশ করি নি। এই ফর্ম দিয়ে কি হবে।(আমি)
.
–এটা আমিও ভেবেছিলাম। কিন্তু যে এই চিঠি পাঠিয়েছে সে আমাকে ফোন দিয়েছিলো।(বাবা)
.
–সে বললো পাশ না করলেও এই কলেজে ভর্তি হওয়া যাবে।(মা)
.
–তার মানে আমি কলেজে পড়তে পারবো।(আমি)
.
–হ্যা।(বাবা)
.
–কিন্তু।(মা)
.
–কিন্তু কি মা।(আমি)
.
–আমি তোমার ব্যাগ গুলো প্যাক করে দিচ্ছি। কালকে তোমাকে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে।(মা)
.
–কালকেই?(আমি)
.
–হ্যা।(মা)
.
–যা কিছুই হোক তুমি সব সময় আমাদের বড় ছেলেই থাকবা। তাই কোনো কিছুর চিন্তা করার দরকার নাই।(বাবা আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো)
।।।।
।।।।
বাবা আর মা আমার ব্যাগ প্যাক করে দিয়ে চলে গেলো। আমি কাগজটা হাতে নিয়ে বসে রইলাম। কলেজের নাম লোচার্ট একাডেমী। অনেকটা জাপানি স্টাইলের কলেজ। জাপানেই কলেজ বা স্কুলের নামে একাডেমী ব্যবহার করা হয়। আমি ফর্মের দিকে তাকিয়ে আছি। অনেকটা অবাক করার মতো ফর্ম। কারন এক জায়গায় হাতের ছাপ দেওয়ার জায়গা আছে। আমি কোনো কলেজের ভর্তিতে হাতের ছাপের প্রয়োজন হয় বলে শুনি নাই। সেখানে বুড়ো আঙ্গুলের ছাপ দিলাম আমি। হঠাৎ করে পুরো ফর্মটা একা একা পূরন হতে শুরু করলো। আর আমার হাতের ফর্ম হঠাৎ করে আমার হাত থেকে উপরে উড়তে লাগলো। কাগজ থেকে প্রচুন্ড আলো বের হতে লাগলো। হঠাৎ করে আমি সাদা আলোতে হারিয়ে গেলাম। আমার নিজের কাছে মনে হচ্ছিলো আমি সাদা আকাশে পাখির মতো উড়ে বেরাচ্ছিলাম। চোখ খোলার সাথে সাথে নিজেকে একটা ট্রেনের মধ্যে পেলাম। মাথায় ব্যথা করছে খুব।

মনে হচ্ছে রাতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। আর বাবা মা আমাকে ট্রেনে তুলে দিয়েছে। কারন মাথার উপরে আমার ব্যাগ গুলো দেখতে পেলাম। খারাপ লাগছে তাদেরকে গুড বাই ও বলতে পারলাম না। তাদের কথা মনে পরতে আমি ফোন বের করলাম পকেট থেকে। কিন্তু আমার ফোনের অবস্থা বারোটা। একটু ও নেটওয়ার্ক নেই। এমন মনে হচ্ছে আমি একটা অন্য রকম জায়গায় যাচ্ছি। একরাতেই কিছু একটা হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। কারন কালকে রাতের চিঠি আসার পর থেকেই অদ্ভুদ কিছু একটা হচ্ছে। আমি ট্রেনের জানালা খুললাম। ভয়ে আমি পিছনে গিয়ে পরলাম। জানালার বাইরে ভেবেছিলাম সুন্দর প্রকৃতি হবে। কিন্তু না বাইরে শুধু সাদা জায়গা। সাদার পরে সাদা শুধু। আমি কি স্বপ্ন দেখছি। কি হচ্ছে আমার সাথে এসব? আমি কোথায় যাচ্ছি। জোরে করে চেঁচিয়ে উঠলাম। ব্যাপারটা মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার কাছে।আমি হয়তো স্বপ্নের রাজ্যে আছি এখনো। আমি আমার কেবিন থেকে বাইরে বের হলাম ট্রেনে অন্য কাউকে খোজার জন্য। আমি আমার কেবিনেট থেকে অন্য কেবিনেটে ঢুকলাম। একটা কেবিন থেকে আওয়াজ আসলো। আমি ভিতরে যাওয়ার জন্য হাত বারালাম দরজা খুলবো। কিন্তু ভিতর থেকে আওয়াজ শুনতে পেলাম।
.
–জানিস কালকে একটা মানুষকে মেরে ওর রক্ত দিয়ে গোসল করেছি। পুরো গরম স্পা এর মজা নিয়েছি।
.
–কি বলিস,আমাকে জানাতি একটু।
.
–তোকে বললে তো আমার গোসলই হতো না। তার আগে তুই সব রক্ত খেয়ে ফেলতি।
.
–হাহাহাহা
।।।
।।।
আমার পায়ের মাটি নরে উঠলো। কোথায় আসলাম আমি। না না আমি আসি নি। আমাকে নিয়ে এসেছে কেউ এখানে। আমি থাকবো না এখানে। এক ভো দৌড় দিলাম আমি। সোজা আমার কেবিনে চলে আসলাম। কিন্তু আমার কেবিন এখন ফাকা না। কে একজন যেনো চাদরে ঢাকা বসে আছে। আমি দেখেই চিল্লিয়ে উঠলাম।
.
–ভূত। ভূত। ভূত। আ বাচাও বাচাও।(আমি)
.
–আ।(চাদরটা ফেলে দিয়ে চিৎকার করে আমার উপরে পরে গেলো)
.
–বাচাও বাচাও। প্লিজ আমার রক্ত খেয়ো না। আমি মাফ চাই প্লিজ আমার গলা কেটো না।(আমি চিল্লিয়ে বল্লাম)
.
–ও তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়েই দিয়েছো।(একটা মেয়ের আওয়াজ)
।।।
।।।
আমি চোখ খুলে দেখলাম একটা মেয়ে আমার উপরে উঠে এসেছে। অনেকটা ভয় পেয়েছে ও। হয়তো ভূতকে ভয় পায় অনেক। আমি যেভাবে ভূত বলে চেচিয়ে উঠলাম তাতে তো ভয় পাবেই। মেয়েটা আমাকে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিলো। ওর দিকে এখন ভালো করে তাকালাম। অনেক মিষ্টি একটা চেহারা। যে কোনো ছেলে ওকে দেখলেই পাগল হয়ে যাবে।
.
–ভয় কমলে আমার উপর থেকে উঠো।(মেয়েটা অনেক লজ্জা পেয়েছে)
.
–ও সরি। আমি আসলে খুবই দুঃখিত।(মেয়েটা আমার উপর থেকে উঠে ওর সিটে গিয়ে বসলো)
।।।।
।।।।
ওর কোমল কথাগুলো শুনে আমি সত্যিই ওর উপর কিছুটা দুর্বল হয়ে গেলাম। মেয়েটার মুখ লজ্জায় এখনো লাল হয়ে আছে। আসলেই আমার ঔরকম চিল্লানো উচিত হয় নি। ভূত বলতে তো কোনো জিনিসই নাই। শুধু শুধু ভয় পাইয়ে দিয়েছি। আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে লাগলো।
.
–হাই।(মেয়েটা)
.
–হাই।(আমি)
.
–আমি এলিনা কোয়াডার্ট।(মেয়েটা ওর হাতে থাকা একটা কার্ড দেখিয়ে বললো)
.
–আমি হৃদয়।(আমি)
.
–ও নাইচ নেইম।(এলিনা)
.
–তোমার নামটা ও কিউট অনেক।(আমি)
.
–তুমি আমাকে এনা বলতে পারো।(এনা)
.
–ওকে এনা।(আমি)
.
–তাহলে তুমি কি লোচার্ট একাডেমীতে এবার প্রথম?(এনা)
.
–হ্যা।(আমি)
.
–আমিও। প্রথমবার যাচ্ছি তো তাই একটু ভয় পাচ্ছি।(এনা)
.
–ও।(আমি)
.
–তো আমরা তো বন্ধু হতে পারি তাই না?(মেয়েটা খুব মায়া করে আমার দিকে তাকালো)
.
–হ্যা অবশ্যই।(আমি)
.
–তো আজ থেকে আমরা বন্ধু। তো বলো তুমি কি?(এনা)
.
–আমি কি মানে?(আমি)
.
–এই আমি একজন ভ্যাম্পায়ার। তুমি কি?(এনা)
.
–কি তুমি ভ্যাম্পায়ার মজা করছো?(আমি ভাবলাম মেয়েটা মজা করছে যেহেতু বন্ধু হয়েছে)
.
–না। এই সুস্বাদু ঘ্রান টা কিসের?(এনা)
.
–কোথায় আমি তো পাচ্ছি না?(আমি)
.
–এটা তোমার থেকে আসছে। আমি আর পারছি না।(এনা)
.
–কোথায়?( আমি আমার শার্টে পারফিউমের ঘ্রান পেলাম না। তাহলে মেয়েটা পাগল হচ্ছে কেনো)
.
–সরি হৃদয় বাট আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। এটা আমার প্রথম বার।(এনা)
.
–এনা কি করছো। থামো থামো।(আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো এনা। আমি ওকে থামাতে চেষ্টা করলাম)
।।।।
।।।।
ভাবলাম আমার ঠোটের দিকে এগিয়ে আসছিলো এনা। কিন্তু না। সোজা আমার ঘাড়ে একটা কামড় দিলো। প্রথমে একটু ব্যথা লাগলো৷ কিন্তু পরে অনেক ব্যথা শুরু হলো। আমি এনাকে ধাক্কা দিয়ে বল্লাম।
.
–কি করছো এনা?(আমি)
.
–আমি বল্লাম তো আমি একজন ভ্যাম্পায়ার। সত্যি বলতে আমি এই প্রথম কারো রক্তের স্বাদ নিলাম।(এনা)
.
–কি?(আমার মাথা ঘুরতে লাগলো ওর কথা শুনে। ভয়ে আমি বেহুস হয়ে গেলাম)
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

।।
।।।
।।।।
।।।।।
কেমন হলো জানাবেন। পরবর্তী পার্ট আপনাদের মতামতের উপরে লেখবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here