যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:10
লেখনিতে:মৌসুমী
ঠোঁটে লাল লিপস্টিক,চোখের পাতায় আইলাইনারের টান বড় করে,চোখের নিচে গাঢ় কাজল,চোখের পাতায় মাশকারা,মুখে গাঢ় মেকাপ,গালে গোলাপি ব্লাশন,গলায় পুঁথির মালা,নাকে নোলক,হাত ভর্তি চুরি,গাঁয়ে লাল টকটকে সালোয়ার কামিজ,পায়ে উঁচু হিল পড়ে ঠক ঠক করে এগিয়ে আসছে নাইমা।কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে আসছে আর মিটমিট করে হাসছে।ওহ নাইমার হাতে একটা ভ্যানিটি ব্যাগ ও আছে ,পেছনে একটা বড় ব্যাগ নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বারান্দার ওপর ব্যাগটা রাখলো নাইমার মা সাহেদা।সাহেদা হলেন এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে,জামান সাহেবের বোন।ফয়েজ,ফারদিনের একমাত্র আপন ফুপু।ফয়েজ,ফারদিন,উৎস,সিফাত আরো কয়েকজন বারান্দার একপাশে বসে কথা বলছে,কেউ মোবাইল টিপছে।নিরা নিজের বাড়িতে এককাজ করে না এখানে এসে আজ বলছে জমিলা বেগমকে,,
দাদি আমি ঝাড়ু দিই বাড়িটা?নিরার কথা শুনে সবাই নিরার দিকে হা করে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে,বিশেষ করে মাহফুজা বেগম,নিহা,উৎস,ফয়েজ এবং অবশ্যয় ফারদিন।
জমিলা বেগম তো আর জানেননা যে নিরা কোন কাজ ই বাড়িতে করেননা তাই তিনি নিরাকে বললেন,তুমি কুটুমবাড়ি আস্যাছো বুবু,তুমি ক্যান বাড়ি ঝ্যাড় দিয়্যা ব্যাড়াব্যা,তুমি বসো মেজো বৌ ঝ্যাড় দিবেহেনি।
না দাদি আমিই ঝাড়ু দিবো ,আপনি নিষেধ করেননা।এমন জোর করতে শুরু করলো নিরা যে বাধ্য হয়ে জমিলা বেগম নিরাকে অনুমতি দিলেন।
নিরা এতক্ষণ ঝাড়ুই দিয়ে যাচ্ছিলো নাইমাকে দেখে থামলো আর অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে।অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে তার কারণ,এমন জোকার সাজ সে জিবনে দেখেছেকি সন্দেহ,কারণ নাইমার সাজে সবকিছুই কেমন বেশি বেশি।
নাইমা হেঁটে ফারদিনরা যেখানে বসে আসে সেখানে গেলো।সবাইকে রেখে ফারদিনকে হেসে হেসে বললো,ফারদিন ভাইয়া কেমন আছেন,এখেনে অ্যাসাছেন আমাকে একবার মোবাইলো করেননি?
ফারদিন ফোন টিপছিলো সে নাইমাকে খেয়াল করেছিলোনা যে তারা এসেছে এ বাড়িতে ,ওখানে যারা বসে আছে কেউই খেয়াল করেনি তাকে।হঠাৎ এমন জোকার সাজের মেয়েকে দেখে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা লেগে গেছে।ফারদিনের তো কথায় আটকে গেছে,সে বিস্ময় নিয়ে লাল টকটকে ঠৌঁটের সাদা দাঁতের হাসিওয়ালা মেয়েটিকে দেখছে।মেয়েটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।এটা তার ই ফুপুর মেয়ে নাইমা,হ্যাঁ নাইমা।
কি ভাইয়া কথা বলছেন না যে,ও ফয়েজ ভাইয়া কেমন আছেন,ভাবি কতি ?ভাবিখে ম্যালাদিন দেখিনি দেখ্যা আসি থাকেন সবাই পরে গল্প করবোহনি।ফারদিন ভাইয়া থাকেন।
ফারদিনকে একটা চোখ টিপ দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো নাইমা।
ফারদিন চোখ মুখ কাচুমাচু করে নিলো চোখ টিপ দেখে।আর সবাই হাসতে শুরু করলো।
সাহেদা ব্যাগ থেকে একে একে সব বের করছে ,যা যা সাথে করে নিয়ে এসেছে সে।নিহা,নিরা ,মিতু আরো কয়েকজন দেখছে সাহেদা বেগম সব তার মাকে দিচ্ছে।জমিলা বেগম সেসব ঘরে রেখে আসলো।
মেয়ের পাশে বসলো জমিলা বেগম।এতকিছু আনতে হবে তোকে কে বলেছে সাহেদা।
কি বুলছো মা,নিয়্যা আসবোনা ক্যান,এসবতো আমার বাড়ির ই ।
তাও,কত কষ্ট করে আনলি,তোর বিটিতো একটা কাজের ও না,ব্যাগডা তোর সাথে ধরে আনলেও পারতো।
চুপো মা পড়ের বাড়ি গেলে ঠিক হয়্যা যাবে।তোমার শরীর কেমন মা এখন?
ভালো আছি ,যা ঘরে যা একটু জিরিয়্যা লে,আমি দেখে রান্ধার কতদূর হলো।
আজ সব ভাইবোনদের দাওয়াত করেছে জামান সাহেব,সবাই যেনো দুপুরে খাই,সেজন্য একমাত্র বোনটাকেও আসতে বলেছিলো।বাড়িতে অনেক মানুষ সবাই ব্যস্ত।অনেক রান্নাবান্না হচ্ছে।নাইমা বসে বসে টিভি দেখছে আর মিতুর সাথে গল্প করছে।নিরা তুলতুলকে নিয়ে নাইমাদের ওখানে বসলো।নাইমা নিরাকে দেখে একটা মুখ ভেংচি দিলো।মিতু তুলতুলকে নিতে চাচ্ছে কিন্তু তুলতুল তার কাছে যাচ্ছেনা।তুলতুল নিরাকে বললো,খালামণি মোতু,পাতলু দেখবো।নাইমা পাশ থেকে রিমোটটা নিয়ে নিলো নিজের কাছে।তারপর তুলতুলের গাল ধরে বললো ,হিন্দি গান দেখো কত সুন্দর,ওসব দেখোনা হ্যাঁ,তুলতুল মুখটা ফুলিয়ে বললো,না আমি মোতু পাতলু দেখবো দাও।নাইমা নাছোড়বান্দা সে দিবেনা,সে হিন্দি গান ই শুনবে,মিতু দিতে বললো নাইমাকে তাও মোটু পাতলুতে দিলোনা।তুলতুল এবার ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে শুরু করলো আর মুখে বলছে মোতু পাতলু দেখবো।
যে ঘরে তুলতুলরা আছে সেই ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো ফারদিন,তুলতুলের কান্নার আওয়াজ শুনে ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে জানতে চাইলো তুলতুল কাঁদছে কেনো,ফারদিনকে দেখে নাইমা আবার তার লাল টকটকে ঠোঁটের সাদা দাঁত বের করে ফারদিনকে ভিতরে আসতে বললো।ফারদিন নাইমার দিকে একবার তাকিয়ে মিতু কে বললো,তুলতুল কাঁদছে কেনো।মিতু ফারদিনের গম্ভির মুখ দেখে ভয়ে ভয়ে বললো ,তুলতুল মোটু পাতলু দেখবে তাই কাঁদছে।
তো দিয়ে দে ওই চ্যানেল বললো ফারদিন।
তুলতুল কাঁদো কাঁদো সরে ফারদিনকে বললো,ও দিচ্চেনা চাচ্চু,আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে নাইমাকে দেখালো।
নাইমা এবার কাচুমাচু মুখ করে বললো,দিছিতো সোনা দিছি বলে যখন রিমোটে হাত দিবে নাইমা তখন ফারদিন তুলতুলকে নিরার কাছ থেকে নিয়ে চলে গেলো।নিরাও আর থাকলোনা সেও বের হয়ে গেলো,সাথে মিতুও।নাইমা একটা ভেংচি দিয়ে আবার গান দেখতে শুরু করলো।
ফারদিনের ফোনে বসে বসে গেম খেলছে তুলতুল,নিরাকেও বসিয়ে রেখেছে তার কাছে।নিরা আবার মিতুকে যেতে দেয়নি তার সাথে গল্প করছে।ফারদিন তুলতুলকে ফোনটা দিয়ে গোসলে গেছে।শুক্রবার জুম্মার নামাজে যাবে তাই গোসলে গেছে।
ফয়েজ গোসল করতে যাবে সেসময় নিহা এলো রুমে।
নিহা গোসল করবানা?
করবোতো একটু পর।
একটু পর কেনো,চলো এখুনি দুজন গোসল করি একসাথে পুকুরে।
ফয়েজের এমন আজগবি কথা শুনে নিহা অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো।
কি হলো ,চলো একসাথে গোসল করি।
তুমি পাগল হলে নাকি?বাড়িতে এত মানুষ আর একসাথে গোসল করতে বলছো।
তো কি হয়েছে,আমরা মনে হয় কখনো একসাথে গোসল করিনি?
করেছি সেটা খোলামেলা জায়গাতেনা,আমাদের বাথরুমে।
আজ পুকুরে করে অভিঙ্গতা অর্জন করি চলো।
না যাবোনা ,আমার কাজ আছে।নিহা বের হয়ে আসলো ঘর থেকে তারপর সোজা রান্নাঘরে।
ফয়েজ নিহার উপর রেগেমেগে তার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে পুকুরে গেলো গোসল করতে।
চলবে..