যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:১১

0
587

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:11
লেখনিতে:মৌসুমী

আকাশটা মোটামোটি পরিস্কার ই আছে।সাহেদা বেগম বাড়ি যাবেন আজকেই।থাকবেন না,নাইমা থাকার জন্য অনেক বাইনা করছে কিন্তু তা আর ঢপে টিকলোনা।সাহেদা বেগম যাওয়ার আগে সবাইকে কালকে তার বাড়ি যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিলো।সবাই যেনো সকাল সকাল গিয়ে তার বাড়িতে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে।সাহেদা বেগমের বাড়ি বেশি দূরে না।পাশের গ্রামেই।যেতে বেশি সময় লাগবেনা।তার ছেলে মোটর সাইকেল নিয়ে এসেছেন সেটাতেই তিনজন চলে যাবে।সাহেদা বেগমের নিরাকে খুব পছন্দ হয়েছে।তার ছেলের জন্য ।জমিলা বেগমকেও সেকথা জানিয়েছেন তিনি।জমিলা বেগম কোন কথায় বলেনি সে ব্যাপারে,নিজের নাতি হলে কি হবে ,নাইম বেশি পড়াশোনাও করেনি আর কাজ কাম ও সেভাবে করেনা।বাপের টাকায় সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেরায়।নিরা শহরের মেয়ে ,লেখাপড়া জানা,তার ওপর বড় ঘরের শিক্ষিত পরিবারের মেয়ে ,এমন টো টো কোম্পানির ম্যানেজারের সাথে কখনোই বিয়ে দিতে নিরার বাপ-মা রাজি হবেনা সেটা জমিলা বেগম খুব ভালো করেই জানেন,তাইতো মেয়ের কথায় কোন জবাব তিনি দেননি।

নাইম মোটর সাইকেলের আয়নায় বার বার নিরার মুখটা দেখছে।নিরা যেদিকে দ্বাঁড়িয়ে আছে আয়নাটাকে সেদিকেই রেখেছে নাইম।সাহেদা বেগম সবার সাথে কথা বলে মোটর সাইকেলে বসলো,মাঝে বসেছে নাইমা।নাইমা নাক টানতে টানতে ফারদিনকে বললো ,ফারদিন ভাইয়া কাল যাবেন কিন্তু আমহারে বাড়ি।আজ থ্যাক্যা কাল আপনাহেরে সাথে আমি যাতু আমহারে বাড়িতে কিন্তু মা থাকতেই দিলোনা।আপনি আসেন।ফারদিন মুচকি হাসলো নাইমার কথা শুনে।আজ যেই বিরক্ত করেছে এই মেয়ে কাল আবার নাকি তাদের বাড়ি যাবো কাজ তো নাই,মনে মনে কথাগুলো বললো ফারদিন।

ফয়েজ বার বার লক্ষ্য করছে নাইম আয়না দিয়ে নিরাকে দেখছে।আয়নাতে নিরার মুখটা ভালোমতো দেখা যাচ্ছে কারণ সে নাইমের মোটর সাইকেলের কাছাকাছিই আছে দ্বাঁড়িয়ে।নিরা নিহার পাশে দ্বাঁড়িয়ে সাহেদা বেগমদের যাওয়া দেখছে।বাড়ির দরজার পাশেই দ্বাঁড়িয়ে আছে তারা।

সাহেদা বেগমের সবার সাথে কথা বলা শেষ হলে নাইমকে যেতে বললো।এরপর তারা চলে গেলো।গাড়ি থেকে যতক্ষণ ফারদিনকে দেখা গেলো নাইমা ততক্ষণি সেদিকে তাকিয়ে থাকলো।আজ যেখানে ফারদিনকে সে দেখেছে সেখানেই ফারদিনের আশেপাশে থেকেছে।শুধু থাকেনি হা করে গিলেছে সে ফারদিনকে,ফারদিন যখন দুপুরে খেতে বসেছিলো তখনো ফারদিনের সামনে সেও বসেছিলো খেতে।ছোটবেলা থেকেই ফারদিনের প্রতি তার একটা আলাদা আর্কষণ।তাই যখনি দেখেছে ফারদিনকে তখনি ফারদিনের কাছ ছাড়া হয় না নাইমা।এখন একটু একটু লজ্জাও পায় তাকে দেখে।

নিরা?

বাড়িতে সবাই চলে আসার পর ফয়েজ নিরাকে পেছন থেকে ডাক দিলো।ফয়েজের ডাকে নিরা ফয়েজের দিকে ঘুরে দ্বাড়ালো,ফয়েজ ফারদিনকে বললো,জানিস ফারদিন আমাদের নাইমের মনে হয় নিরাকে পছন্দ হয়েছে,মোটর সাইকেলের আয়না দিয়ে বার বার নিরাকে দেখছিলো নাইম।ঠোঁট টিপে টিপে নিরার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো ফয়েজ।ফারদিন কি বলবে এই ব্যাপারে ভেবে পেলো না সে মুখ ফুটে বললো,ভালোই তো,সুন্দরি মানুষ ,ছেলেরাতো দেখবেই।নিরা শুধু দু ভাইয়ের কথাগুলো শুনলো কিছুই বললোনা।নিহা পাশ থেকে বললো,নাইমের তো সবাইকেই ভালো লাগে।আমার বিয়েতে আমাকেই মনে হচ্ছিলো চোখ দিয়ে গিলছে এমন অবস্থা।ওর সবাইকে ভালো লাগে।ওর কথা বাদ দাও।চলো চা করছি খাবে।

রাত গভীর হচ্ছে।সেই সাথে মানুষের ঘুম ও।কেউ বা জেগেও আছে এই মধ্য রাতে।নিরার ঘরের ছোট জানালাটা খুলেই ঘুমিয়ে আছে সে।হঠাৎ একটা শব্দে তার ঘুমটা ভেঙে গেলো।চোখ খুলে ধরপর করে বসে পড়লো সে বিছানার ওপর।জানালার দিকে চোখ পড়তেই সে জানালাটা লাগাতে গেলো।এমন সময় নিচে পুকুরের ধারে একটা ছায়া দেখতে পেলো সে।সে শুনেছে গ্রামে রাতের বেলা অনেক ভূত ঘুরে বেড়ায়।ভয়ে জমে গিয়ে সে নড়াচড়া করতেও ভূলে গেছে।তারপরো সাহস মনের মধ্যে জোর করে টেনে এনে জানালাটা আস্তে করে লাগিয়ে দিলো।ভয়ের চোটে পানির পিপাশাও পেয়ে গেছে তার।উঠে গিয়ে টেবিলের পানির জগ ধরে দেখলো সেখানে একফোঁটাও পানি নাই।কি করবে বাইরে যাবে পানি আনতে কিন্তু এতবড় বাড়িতে তাও কতদূর গিয়ে কল চেপে পানি আনতে হবে।মহা মুশকিলে পড়া গেলোতো,,নিহা আপুকে ডাকি,না না তাকে ডাকা যাবে না সে ঘুমাচ্ছে ঘুমাক।আমি একাই যাই।কথাগুলো নিজের মনে বিরবির করে নিরা ঘরের দরজাটা খুললো।ঘর থেকে বেড়িয়ে বারান্দা থেকে পুরো বাড়িটাই একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।চাঁদের আলোই ঝকঝক করছে বাড়ির উঠানটা।কিন্তু সিঁড়ির কাছে খুব ই অন্ধকার হয়ে থাকে যা দিনের বেলাতেও কেমন লাগে।সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে এদিন সেদিকে তাকিয়ে দু পা ফেলে এদিয়ে যাচ্ছে নিরা কলতলার দিকে।চাঁদের মিষ্টি আলোর কারণে চারদিকটা ঘুটঘুটে অন্ধকার নাই।বারান্দা থেকে উঠানে নেমে নিরা এমন সময় জোরে ধাক্কা খেল সে একটা দেয়ালের সাথে।আসলে সেটা দেয়াল না কারো বুক।উঠানে তো দেয়াল দেওয়া নাই।এদিক সেদিক তাকানোর কারণে আর সামনের ব্যক্তিটিকে তার নজরে আসেনি।সেই ব্যক্তিটিও ফোন টিপাই এত ব্যস্ত যে সেও নিরাকে খেয়াল করেনি।
ও মাগো ..এখানে দেয়াল হলো কবে?বাপরে সেই জোরে লেগেছে।
ও হ্যালো ..কাকে দেয়াল বলছো তুমি?
আপনি ?আপনি এতরাতে এখানে সঙের মত দ্বাড়িয়ে আছেন কেনো।আর চোখে দেখতে পাচ্ছিলেন না আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছি তাও আপনি সরেননি?
তুমি দেখোনি যে এখানে দ্বাড়িয়ে ফোন টিপছি আমি?
আপনার জন্য এত ব্যাথা পেলাম।যদি বড় কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমার স্বামী কাকে নিয়ে থাকতো বলতে পারেন?
তোমার স্বামী মানে?তোমার বিয়ে হলো কবে?চুখমুখ চুচকে নিরার আগা মাথা দেখে প্রশ্ন করলো ফারদিন।
হয়নি এখুনো তবে হবে..
না হতেই এখুনি স্বামীর ভাবনা?
তো কি?সরেন আমি পানি নিতে যাবো।আপনার জন্য কত দেরি হয়ে গেলো।
তো যাও কে মানা করছে।
যাবোই তো বলেই নিরা গটগট করে কলতলায় চলে গেলো।
ফারদিন ফোনটা পকেটে রেখে দুই হাত ও প্যান্টের দু পকেটে রেখে কলতলায় মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকলো।

পানি নিয়ে ঘুরে দ্বাড়াতেই ফারদিনকে দেখলো নিরা।ফারদিন দ্বাড়িয়ে আছে।
আপনি এখুনি এখানে?পানির জগ দুই হাতে ধরে বললো নিরা।
হুম ,তোমার জন্য?কথাটা এমন ভাবে মায়ামাখা কন্ঠে বললো ফারদিন যে নিরে সরাসরি ফারদিনের চোখের দিকে তাকালো।সে চোখে তাকিয়ে নিরার কেমন যেনো ঘোর লেগে গেলো,ফারদিন তার গভীর চাহনি দিয়ে নিরার চোখে তাকিয়ে আছে,নিরার একমুহূর্তের জন্য মনে হলো এ চোখে অনেক মায়া,ভালোবাসা,অনেক আকাংক্ষা ।তাও আবার তার জন্য ই।এটা কেনো মনে হলো নিরার সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছেনা।যখন ই ফারদিনের দিকে এর আগে তাকিয়েছে তখন ই মনে হয়েছে ফারদিনের চোখে গভীর আক্রোশ,নিরাকে সে সহ্য করতে পারেনা এমন মনে হয়।আর আজ অন্য কিছু মনে হলো নিরার নিজের কাছে।
ফারদিন নিরার অবাক হয়ে তাকানো দেখে তার দৃষ্টি সরিয়ে বললো,তুমি যদি ভয় পাও তাই দ্বাঁড়িয়ে আছি,হাজার হলেও তুমি আমাদের বাড়ির মেহমান তাই না।
নিরা মুহূর্তেই নিজেকে স্বাভাবিক করে,গলায় জোর এনে বললো ,আমি ভয় পাবো এটা আপনাকে কে বললো?যান সরেন,আসছে সাহসী ব্যাটা আমাকে পাহারা দিতে।আমি নিজেই নিজেকে পাহাড়া দিতে পারি,আর ভয় আমি ওত পাইনা বুঝেছেন আমি সাহসী মেয়ে।
ফারদিন তখনি রেগে গিয়ে বললো,তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করা উচিত ই না।তুমি আসলেই একটা বেয়াদব মেয়ে,এ কথা বলেই বড় বড় পা ফেলে নিরাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলো সে দোতলায়।নিরা মনে মনে ফারদিনকেও হাজারটা গালি দিয়ে দিলো তাকে বেয়াদব বলার জন্য।অন্যের বাড়ি না হলে বুঝিয়ে দিতো নিরাকে বেয়াদব বলার মানে।

নিহা, জানেমন,সোনা,ময়না,টিয়াপাখি,আমার টুনটুনি ,,তুলতুলকে তোমার ওপাশে রাখোনা জান।আমি তোমার কাছে যাই।
আমার কাছেই তো আছো ,ঘুম ঘুম চোখে ফয়েজকে বললো নিহা।
কৈ আছি বৌ?মধ্যে তো ইন্ডিয়া বাংলাদেশের বর্ডার হয়ে তুলতুল আছে।বৌ ও বৌ কথা বলো?
আহ এই মাঝ রাতে ঢং করো না তো।তোমার জন্য একটা রাত ও শান্তিমত ঘুমাতে পারিনা।ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও।
আমি তোমাকে ঘুমাতে দিইনা ?ওই বলো ?হাত বাড়িয়ে ফয়েজ নিহাকে নড়ালো নিহার কোন হুশ নাই।
ফয়েজ আপন মনে বিরবির করলো,কি ঘুমরে বাবা,কথা বলতে বলতেই ঘুম….

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here