যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:১৩

0
686

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:13
লেখনিতে:মৌসুমী।
.
.

আছরের নামাজ পড়ে নিরা এসে দ্বাঁড়ালো পেয়ারা গাছের নিচে।পেয়ারা গাছের দিকে তাকিয়ে নিরার এখন গাছে চড়তে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে কিভাবে উঠবে গাছে সেটাই ভাবতে শুরু করলো।ভাবতে ভাবতে নিরার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে আসলো।সে এখন চেয়ারের মাধ্যমে গাছে উঠবে।গাছটায় অনেক ডাল আছে তাই দ্বাঁড়াতে সমস্যা হবেনা আর আরামে পেয়ারাও পারা যাবে এই ভেবে নিরা ঘরে গেলো এবং সেখান থেকে একটা কাঠের চেয়ার নিয়ে আসলো গাছের কাছে।

চেয়ার টা এত ভারি বাবাগো বাবা।আহ হাঁপিয়ে গেছি,একটু বসে রেস্ট নিই তারপর গাছে উঠবো।হুম এবার গাছে উঠার চেষ্টা করি।কেউ নাই যে একটু চেয়ারটা ধরতে বলবো,থাক কাউকে ধরতে হবে না এই নিরা একাই একশো।আমি একাই চেষ্টা করি।ভয় ও লাগছে,উঠানটা ভেজা পিচ্ছিল কখননা আবার চেয়ার ই ডিগবাজি মারে।আল্লাহ দেখো তুমি।আমি যেনো পেয়ারা নিজের হাতে গাছ থেকেই নামাতে পারি।
.
.
.
সাহেদারে তোর বাড়ি এসে যে আজ একটু শান্তিমত ঘুরবো তার ও উপায় নাই,এত বৃষ্টি হলো আবার এখনো কত মেঘ ,কখন না আবার বৃষ্টি শুরু হয়।

বড়ভাই আপনি ঠিক ই বল্যাছেন,একটু যে ব্যাড়াবেন তাও উপায় নাই,আজ আবার পানিও হতেই আছে।চারিদিখে কাঁদা খালি।বিহাইকে লিয়্যা এদিক ওদিক যাবেন তার ও উপায় নাই।তার লেগ্যাইতো আজ আপনারা থাকবেন কাল যাবেন।ভাবি কতদিন পর আসলো না থাকলে হয়।তবে নিহারা চল্যা গেলো একটা রাত থাকলে কি হতো এখেনে।

তুলতুল জ্বালাচ্ছিলো তাই চলে গেলো,তুই মন খারাপ করিসনা আবার আসবে আর ওদিকে নিরা আছে বাড়িতে সেজন্য ই গেলো,স্বান্তনার স্বরে বললো জামান সাহেব।

ভাবি নাও তুলতুলকে,নিহার কাছে তুলতুলকে এগিয়ে দিলো ফারদিন।

ফয়েজ হাত বাড়িয়ে বললো এসো মা আমার কোলে,চলো আমরা রুমে যাই।

তুলতুল নিহার কোলে যাওয়ার জন্য নিহার দিকে ঝুকলো।নিহা বুঝতে পেরে ফারদিনের কাছ থেকে নিলো তুলতুলকে।ফয়েজ আগে আগে হাঁটতে শুরু করলো,নিহা পিছে তুলতুলকে নিয়ে।ফারদিন আবার গাড়িতে বসে গাড়িটা নিয়ে বাড়ির ভিতর চলে গেলো।উঠানের একপাশে গাড়িটা রেখে নামলো গাড়ি থেকে।নিহারা দোতলায় তাদের রুমে চলে গেছে।ফারদিন নিজের ঘরে না গিয়ে পুকুরের দিকে যাওয়ার জন্য বাড়ির পেছনে গেলো।পেছনের দিকেই পুকুরে যাওয়ার দরজা আর সেখানেই আছে পেয়ারা গাছ।ফারদিন সেদিকে যেতেই একটা খয়েরি রঙের কাপড় ঝুলতে দেখলো গাছে।গাছের নিচে একটা চেয়ারো আছে।আশেপাশে কাউকেই দেখা যাচ্ছেনা,চোখ ঘুরিয়ে চারদিকে তাকালো ফারদিন ,কেউ নেই কোথাও।আরেকটু কাছে যেতেই আহহহহহহ করে শব্দ করে উঠলো গাছের কাছে।
পা পিছলে গাছের ডালে ঝুলে আছে নিরা।বৃষ্টিতে গাছের ডাল ভিজে আছে।ভিজা ডালকে শক্ত করে ধরে চিল্লাচ্ছে নিরা।ফারদিন শব্দ শুনেই ওমনি গাছের কাছে গিয়ে নিরাকে ধরে নামাবে এমন সময় ফারদিন নিরাকে নিয়েই দরাম করে সেও পড়ে গেলো মাটিতে।স্যাঁতসেঁতে পিচ্ছিল উঠান।গাছের পানি পড়ে সেই অবস্থা হয়ে আছে সেখানে।ফারদিনের অবস্থা খারাপ পড়ে গিয়ে এমনি তার ওপর নিরাও পড়ে আছে ফারদিনের ওপর।
ওহ গেলো আমার কোমর,আহ,তার ওপর বস্তাও আমার ওপর,ওহ,,চোখ বন্ধ করে কুকাচ্ছে ফারদিন।নিরাও কুকাচ্ছে ,চোখ খুলে ফারদিন নিরাকে ধমকাবে যে তার ওপর থেকে নামছেনা ক্যান তখন ই নিরার মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছুই বলতে পারলোনা সে।
নিরা এলোমেলো চুলে পড়ে আছে ফারদিনের ওপর,মুখটা ফারদিনের মুখের কাছে ঝুকে আছে।মুখটা অনেক ব্যাথা পাইছে এমন করে রেখেছে।তার ও কোনদিকে হুশ নাই,ফারদিনের শরীরের ওপর যে সে পড়ে আছে নামতে হবে সেই খেয়ালি নাই তার,ওহ,,আহ করতেই ব্যস্ত সে।
সারাদিন যে মুখটা না দেখে ছটফট করেছে ফারদিন, সেই মুখটাই এখন তার মুখের কাছে ঝুকে আছে।ফারদিন নিরার মুখের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে কতদিন দেখেনি সে নিরাকে।নিরার মুখটা দেখে সব ব্যথা এক নিমিষেই ভূলে গেলো সে।মুগ্ধ হয়ে দেখছে এখন সে তার মনের রানিকে।হ্যাঁ মনের রানি,যে সারাজিবন ফারদিনের মনের রাজমহলে রানি হয়ে সেই কবে থেকেই বসে আছে খুব গোপনে যার খবর সে কাউকে জানাতে চাইনা গোপনেই সামলে রেখে দিতে চাই।
নিরার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘোরের মধ্যে চলে গেছে ফারদিন,কখন যে তার দুই হাত শক্ত করে নিরাকে জাপটে ধরেছে তা সে নিজেও জানেনা।নিরা যে এদিকে ফারদিনকে ঠেলছে সেটাও ফারদিনের কানে যাচ্ছেনা।এবার ফারদিন আরেকটা কাজ করলো,সমস্ত শক্তি দিয়ে নিরাকে এক ঝটকায় নিচে ফেলে নিরার ওপর সে নিজেই উঠে পড়লো।নিরা দুই হাত দিয়ে ফারদিনকে সড়ানোর চেষ্টা করছে,মুখে সড়তে বলছে এগুলোর কিছুই কানে নিচ্ছেনা ফারদিন।একধ্যানে নিরার দিকে তাকিয়ে আছে।এবার এক হাতের আঙ্গুল দিয়ে নিরার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল বুলাতে শুরু করলো।
নিরাও ফারদিনের এমন কাজ দেখে চুপ হয়ে গেছে।সে বুঝতে পারছেনা ফারদিন এমন করছে ক্যান তার সাথে।সে এই ফারদিনকে একদমি চিনতে পারছেনা।কারণ ফারদিনকে এমন ভাবতে পারছেনা সে।
কেউ আসছেও না।আর ফারদিনকে নড়ানোও সম্ভব হচ্ছেনা।এত বড় একটা শরীর নিয়ে পড়ে আছে সে এখন নিরার ওপর।
.
.
.
বাবাই আমি চকলেত খাবো,এনে দাও বাবাই।

পারবোনা তোর আম্মুকে বল।

মাম্মামের কাছে নাই।

আমার কাছে আছে তোকে বলেছি,যা সড়।

দোকান থেকে এনে দাও বাবাই।

নিহা চুল আচড়াচ্ছে আর বাপ মেয়ের কথা শুনছে।

তখন আমি কোলে নিতে চাইলাম আসলি তুই যে চকলেট এনে দিবো তোকে?তখন তো তোর মার কাছে গেলি তো তাকেই বল এনে দিতে।

নিহা ফয়েজের এই কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,এই ব্যাপার কেউ রাগ করে?যাও চকলেট নিয়ে আসো,আমি দেখি নিরা কি করছে,তার ঘরে যাওয়া হয়নি।

যাও কে মানা করছে,আমি ধরে রেখেছি তোমাকে?আমার জন্য তো তোমার কাছে কোন সময় ই নাই।রেগে রেগে কথাগুলো বললো ফয়েজ তারপর পকেট থেকে ডেইরি মিল্কের একটা প্যাকেট বের করে দিলো সে তুলতুল কে।

নিহা চুল বাঁধতে বাঁধতে এসে ফয়েজের পাশে বসলো।ফয়েজের মুখটা এক হাতে তুলে বললো,ওমা বাবুটা রাগ করেছে দেখছি খুব,রাগে মুখটা কেমন লাল হয়ে আছে।আহ্লাদিভাবে বললো নিহা।তুলতুল একটা খেলনা নিয়ে মেঝেতে খেলছে।নিহা তুলতুলের দিকে একবার তাকিয়ে টুপ করে ফয়েজের গালে একটা চুমু দিলো।ফয়েজ সেই সুযোগে সেও একটা নিহার গালে বসিয়ে দিলো।আরো কিছু করতে যাওয়ার আগে নিহা তুলতুলের দিকে ইশারা করলো।

.
.
ও আল্লাহ গো কি সর্বনাশের কথা।এখেনে দিনে দফরে কি হছেগো আল্লাহ,হায় হায় কি দেখছি আমি,কে কতি আছোগো তাড়াতাড়ি আসো। দেখ্যা যাও এখেনে কি নষ্টামি হছে।ছি ছি আইভো(অবিবাহিত)ছেল্যা মেয়্যা এগল্যা কি করছেগো।
সাকিবের মায়ের চিল্লাচিল্লিতে আশেপাশে ছোটবড় সব মানুষ পেয়ারা গাছের কাছে চলে এসেছে।নিরা আর ফারদিনকে ঘিরে দ্বাড়িয়ে আছে সবাই।সাকিবের মা জমিলা বেগমের প্রতিবেশি।তিনি আসছিলেন জমিলা বেগমের কাছে।পুকুরের পাশ দিয়ে তিনি এসে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে আসছিলেন।বাড়িতে ঢুকতেই তিনি ফারদিন আর নিরাকে একসাথে দেখে।নিরার ওপর ফারদিন পড়ে আছে আর মুখটা এখন ভাবে ঝুকেছিলো তিনি অন্য কিছু ভেবে নিয়েছেন।তারপরি চিল্লাচিলি শুরু করেছেন।বিকেল হয়ার কারণে অনেকেই বাইরে ছিলো এমন চিল্লাচিল্লিতে সবাই ছুটে এসেছে আর নিহা,ফয়েজসহ বাড়ির কাজের মানুষরাও।নিরা আর ফারদিনতো এমন পরিস্থিতিতে পড়বে আশা করেনি তারা চোরের মত দ্বাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি।সাকিবের মা সবাইকে বিস্তারিত বলছে।সে কেমন অবস্থায় নিরা আর ফারদিনকে দেখেছে।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here