যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:১৫

0
593

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:15
লেখনিতে: মৌসুমী

টিনের চালে বৃষ্টির শব্দে ঝনঝন করছে চারিদিক।মাঝে মাঝে বিজলি চমকাচ্ছে।আর তার আলোতে চারিদিক আলোকিত করে তুলছে।বারান্দায় লাল টকটকে সুতির শাড়ি পড়ে দ্বাঁড়িয়ে আছে নিরা।মাথায় ঘোমটা।মুখে কোন সাজ নাই।কাঁন্না করে করে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।কাঁন্নার দাপটে বার বার কেঁপে উঠছে নিরার সাড়া শরীর।ঘড়িতে বাজে রাত বারোটা।নিরার জীবনটারো বারোটা বেজে গেলো আজ।কি কারণে যে পেয়ারা পাড়তে উঠেছিলো গাছে ।না উঠলে আর এই গ্রামে না আসলে আজ এই অপ্রিতিকর ঘটনার সাথে জড়াতোনা সে।আর ফারদিন নামক জঙ্গলটাকে বিয়েও করতে হতোনা আজ।

“আমি একজনকে খুঁজছি,
খুব খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছিনা।
হঠাৎ করেই হালকা পরিচয় হয়েছিলো আমাদের আবার হঠাৎ করেই হারিয়ে গেলো সে অজানাতে।মেঘের আড়ালে,কুয়াশার চাদরে ,বৃষ্টির দাপটে সে হারালো নাকি ?জানিনা আমি…..”

কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি বলোনা কোথায় হারালে।দেখো আজ আমি অন্যকারো হয়ে গেছি।তোমার অপেক্ষায় এতদিন ধরে অপেক্ষা করে ছিলাম তুমি এলে না।

যে শ্রাবণে এলে তুমি,
সে শ্রাবণেই হারালে তুমি আমারো দেহখানি,
এ জিবনে আর হলোনা দেখা আমাদের।
তুমি রহিলে আড়ালেই,আর আমি হারালাম তোমারো সঙ্গখানি।

রাত দশটার সময় কাজী নিয়ে এনে ফারদিনের সাথে বিয়ে নিরার বিয়ে দিয়েছে তাদের পরিবার।এভাবে যে নিরার বিয়েটা হয়ে যাবে তা সে ভাবতে পারেনি।কেমন লাগছে তার।কিছুই ভালো লাগছেনা।ফারদিনকে অবশ্য বিয়ে হয়ার পর থেকে একদম স্বাভাবিক লাগছে।কিন্তু নিরা স্বাভাবিক হতে পারছেনা।কি হয়ে গেলো
বিরবির করে কথা বলছে আর চোখের পানি ফেলছে নিরা।পেছন থেকে একটা হাত তার কাঁধটাকে ছুঁয়ে দিলো।নিরা চমকে পেছনে তাকালো।
ফারদিন দ্বাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।সাদা পান্জাবী আর পায়জামাতে ফারদিনকে অন্যরকম সুন্দর দেখাচ্ছে,মাথার চুলগুলো একটু এলোমেলো,মুখে কয়েকদিনের না কাটা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।ফর্সামুখটা কেমন নিস্তেজ হয়ে আছে।
-ঘরে চলো ,
ফারদিনের কথায় নড়ে উঠলো একটু নিরা।
-বাইরে দ্বাঁড়িয়ে আছো কেনো?এখন থেকে তুমি এ বাড়ির বৌ তাই এখন আর যা ইচ্ছা তাই করতে পারবানা ।চলো ঘরে।
ফারদিনের কথায় কোন হু হা না করে নিজে যেই ঘরে থাকে সে ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিলো নিরা।ফারদিন নিরার হাত ধরে নিজের দিকে টান দিলো।
-ওদিকে কোথায় যাও?আমার ঘরে চলো।
-না ওই ঘরে যাবোনা।আমি যে ঘরে থাকি সে ঘরেই যাবো।
-তুমি আমার বৌ,বৌ কথাটা শুনতেই নিরা ফারদিনের দিকে মুখ তুলে তাকালো।বৌ কথাটায় মেয়েদের মধ্যে আলাদা একটা ফিল আসে।কেমন একটা অন্যরকম অনুভূতি।নিরা ফারদিনের দিকে তাকিয়েই ভাবতে লাগলো ,সেও তাকে বৌ বলে ডাকতো মাঝে মাঝে।কিন্তু সে আজ নেই অন্য কেউ তাকে বৌ বলে দাবি করছে।
ফারদিন বললো তুমি আমার ঘরে আমার সাথেই থাকবে,না হলে লোকে কি বলবে,আর এটা গ্রাম তাই কোন ঢং করো না।চলো ঘরে।ও তার আগে চলো ওজু করে আসি ,বিয়ের রাতে নাকি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়।চলো ওজু করে আসি।

ফারদিন আর নিরা ফারদিনের ঘরে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে এখন বসে আছে।নিরা বসে আছে খাটের ওপর,ফারদিন কাঠের একটা চেয়ারে।দরজা বন্ধ।মাটির ঘর হওয়ায় দরজা ,জানালা বন্ধ হওয়ায় বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছেনা তেমন।দুজন চুপচাপ বসে আছে।ফারদিন বলে উঠলো,সারারাত এভাবেই বসে থাকবে নাকি ঘুমাবে?আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
-আমি ঘুমাবোনা ,আপনি ঘুমান,আপনাকে ধরে রাখিনি আমি।
-কে বললো ধরে রাখোনি?রাত দশটার সময় তিনবার কবুল বলে আমাকে সারাজিবনের জন্য ধরে রেখে দিলে, আর এখন বলছো ধরোনি?
-আমি এই বিয়ে করতে চাইছিলাম,আপনি আমাকে জোড় করে বিয়ে করলেন।
-আমি কোন জোড় করিনি।
-হ্যাঁ করেছেন।আমি রাজি না তবুও আপনি সুযোগ পেয়ে আমাকে বিয়ে করে নিলেন।
-নিয়েছি তো,কি হয়েছে।বেশি কথা বলবানা আজ আমাদের বাসর রাত,আজ কোন কথা না আজ শুধু আদর ,সোহাগ এগুলো হবে।ফারদিন কথাগুলো বলতে বলতে উঠে দ্বাঁড়ালো চেয়ার থেকে।খাটের দিকে পা বাড়াতেই নিরা ধমকে উঠলো ফারদিনের ওপর,
-একদম আমার কাছে আসবেন না।বিয়ে করেছেন বলে যা ইচ্ছা তাই আমার সাথে করতে পারবেন না বলে দিলাম।
-আসবো কি করবে তুমি?আমার বৌকে আমি আদর করবো,সোহাগ করবো।আরো কত কি করবো।বলতে বলতে ফারদিন খাটের কাছেই এসে গেলো।নিরা ভয়ে আস্তে আস্তে দেয়ালের সাথে লেগে গেছে।পেছনে যাওয়ার আর রাস্তা নাই।ফারদিন খাটের ওপর উঠে বালিশ ঠিক করে শুয়ে পড়লো।তারপর নিরার দিকে তাকিয়ে বললো,আমার রুচি এত খারাপ না যে তোমার মত ঝগড়িকে আদর করতে যাবো।ওসব ভয় ভীত দূর করে আমার মাজাটা মালিশ করে দাও।তখন পিছলে পড়ে আমার কোমরের অবস্থা বেশি ভালোনা।স্বামীর সেবা করো।
-পারবোনা।
-পারবানা?
-না,
-ঠিকাছে তাহলে এখন আমি আমার বৌকে আদর করবো।তখন যা পারিনী এখন যখন অধিকার আছে তখন দেরি কিসের।এমন সুন্দর কচি বৌ আমার,আহা।
-আপনি না বললেন আমাকে ওসব করবেন না?
-তোমাকে নাতো আমি আমার বৌকে করবো।
-আমিই তো আপনার বৌ,বৌ কথাটা মুখ দিয়ে বের করেই নিরা দুই হাত দিবে নিজের মুখটা চেপে ধরলো।ফারদিন হালকা একটু হেসে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে নিরাকে হাত দিয়ে টান দিলো।নিরা ছিটকে এসে ফারদিনের বুকের ওপর পড়লো।নিরার ঘন কালো দীঘল চুলগুলো ফারদিনের চোখে মুখে পড়লো।এক হাত দিয়ে নিরার চুলগুলো সড়ালো ফারদিন।
-আমাকে ছাড়েন।
-উহু কোন ছাড়াছাড়ি নাই।
-ছাড়েন না হলে কামড় দিবো,
-দাও,তার আগে আমিই একটা দিই বলে নিরার ঠোঁটে একটা কামড় আস্তে করে বসিয়ে দিলো ফারদিন।নিরার ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নেওয়ার সময় অজানা ভালোলাগায় ফারদিনের অন্যরকম লাগছিলো।কামড় দেওয়ার পর নিরাও আহ করে উঠে।সাথে অন্যরকম একটি অনুভূতিও টের পায় নিরা।কিন্তু সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আহ করে কাঁন্না জুড়লো সে।ফারদিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো নিরার কাঁন্না দেখে।যখন নিরাকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে যাবে ফারদিন তখন একটা পুরনো কিছু মনে পড়ে যাই ফারদিনের তখনি নিরাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সড়িয়ে দেয়।
-আচমকা ধাক্কায় নিরা হতভম্ব হয়ে যাই।তারপর ফারদিনের কাছ থেকে ছাড়া পেয়েছে বলে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।
-এতক্ষণ যেভাবে নিরার সাথে সহজভাবে কথা বলছিলো ফারদিন এখন কেমন গম্ভির হয়ে গেলো।গম্ভির কন্ঠেই নিরাকে বললো ,শুয়ে পড়ো,চিন্তা নাই ছোঁবোনা ।
-নিরা দেয়াল ঘেসে ঘুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়লো।গাঁয়ের ওপর টেনে নিলো পাতলা কাঁথাটা।মনে মনে ভয় ও লাগছে।পাশে এরকম ছেলেমানুষ শুয়ে আছে।কেমনি যেনো লাগছে নিরার।ঘুমাতেও ভয় লাগছে।
ফারদিন এক হাত চোখের ওপর দিয়ে চিৎ হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।এভাবে শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে চোখটা লেগে গিয়েছিলো তা ফারদিন বুঝতে পারেনি।ঘুমের মধ্যে ঠান্ডা লাগার কারণে নিরার কাছ থেকে কাঁথাটা টেনে নিজের গাঁয়ে নিয়েছে ফারদিন।নিরারো ঠান্ডা লাগছে।আস্তে আস্তে ফারদিনের দিকে সড়ে এসে কখন যে ফারদিনের বুকের ভিতর নিরা ঢুকে পড়েছে তা নিরা ঘুমের কারণে বুঝতে পারেনি।ফারদিনো ঘুমের মধ্যেই নিজেও নিরাকে জড়িয়ে নিয়েছে বুকের মধ্যে কোলবালিশ ভেবে।

চারিদিকে ফজরের আজান হচ্ছে।ফারদিন হালকা চোখ খুলে আবার বন্ধ করে নিলো।তারপর কোলবালিশটাকে মানে নিরাকে আরো চেপে ধরলো।
নিরা তখনি উম উম করতে শুরু করলো সাথে নড়াচড়াও।
ফারদিন মনে মনে বলছে,কি ব্যাপার কোলবালিশ শব্দ করে আবার নড়ে ক্যান আজব।তারপর জোড় করে চোখ খুলে দেখে এটা কোলবালিশ না এটা নিরা ।আচমকা ঘুম থেকে উঠে নিরাকে দেখে ভয়ে ছেড়ে দিলো নিরাকে।মনে মনে বলছে,এই এখানে ক্যান,আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি।তারপর আস্তে আস্তে ফারদিনের মনে পড়লো রাতে এই নিরার নামের মেয়েটার সাথে তার বিয়ে হয়েছে এবং সে এখন তার বৌ।তাই তার সাথেই এক বিছানায় একি কাঁথার নিচে দুজনে শুয়ে আছে।

,
,
,
,
তুলতুল সক্কাল সক্কাল ফারদিনের ঘরের সামনে এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে।ফজরের নামাজ পড়েই আবার নিরা আর ফারদিন ঘুমানোর জন্য শুয়েছে।রাতে বেশি ঘুম হয়নি আর এত সকালে কি করবে ভেবেই শুয়ে পড়েছে দুজন।চোখটা একটু লেগে আসতেই দরজা ধাক্কানোর শব্দ ফারদিনের কানে আসলো।নিরার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ঘুমিয়ে পড়েছে।উঠে এসে দরজা খুললো ফারদিন।দরজা খুলতেই তুলতুল ঘরে ঢুকে গেলো।খাটের ওপর গিয়ে নিরার বুকের ওপর বিড়াল ছানার মত চুপ করে শুয়ে পড়লো।ফারদিন দরজাটা লাগিয়ে এসে ওদের পাশে শুয়ে পড়লো।
-চাচ্চু তোমার আর খালামণির বিয়ে হয়েছে।
-হুম মা,
-নিরা একটু নড়ে উঠে তুলতুলকে দেখে ওকে জড়িয়ে ধরলো তারপর আবার চোখ বন্ধ করলো।
-শোনো তুলা রানি এখন থেকে তোমার খালামণিকে আর খালামণি বলবানা কেমন,ছোট আম্মু বলবে
-না আমি খালামণি বলবো
-তাহলে আমাকে খালু বলে ডাকিস কেমন।
-না খালু ডাকবোনা,চাচ্চু ডাকবো।
-মাইর খাবি?
-খালামণিকে চুমু দাও চাচ্চু আর আমাকেও।
-এই বুড়ি কি বলিস এসব চুপ।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here