যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:24
লেখনিতে:মৌসুমী
আমার ভাই,আমার নিজের ভাই বিয়ে করেছে,অথচ আমাকেই জানানো হয়নি?কেনো আম্মা কেনো?আমাকে কি তোমরা পর করে দিয়েছি নাকি?ও হ্যাঁ পর ই তো করে দিয়েছো।না হলে নিজের ভাই বিয়ে করেছে অথচ সেই কথা আমাকে জানানো হয়নি।তাও এতো কান্ড করে।এতকিছু হয়ে গেছে দাদি আমাকে ফোন করে না বললে জানতেই পারতাম না।ফাহমিদা কথা বলছে আর নাক টানছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অবিরত।
কেমন পরিস্থিতিতে বিয়েটা হয়েছে তুই তো জানিস,আমাদের মন মেজাজ কিছু ঠিক ছিলোনা তাই তোকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।ভেবেছিলাম পরে জানাবো ,আরো কয়েকদিন হলে কিন্তু তার আগেই তুই জেনে গেলি।তোর আব্বাতো এখুনো রেগে আছে।কারো সাথেই ঠিক করে কথা বলছেনা,বিশেষ করে ফারদিনের সাথে,তাহলে তুই বল আমরা কোন পরিস্থিতির মধ্যে আছি।ফজিলা বেগম এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন।
আম্মা শোনো একটা কথা আমি পরিষ্কার বুঝে গেলাম এই ফারদিনের বিয়ে হয়াতে সেটা হলো তোমরা আমাকে পর করে দিয়েছো।ভালো করেছো থাকো তোমরা সুখে আমি এখন বাড়ি যাই আর তোমাদের বাড়ি আসবোনা,তোমাদের কোন ব্যাপারে নাক ও গলাবোনা।
এক চড় দিবো,দুই বাচ্চার মা হয়েছে,এক মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে,ছেলেটা পড়ে টুয়ে তবুও তোর বুদ্ধি হলোনা।এসেছিস বাপের বাড়ি চুপচাপ থাকবি।দু দিন থেকে তারপর যাবি।
ও মাত্র দু দিন থাকবো?এতদিন পর আসলাম ,কোথায় একসপ্তাহ থাকতে বলবা তা না দু দিন।
তোর যতদিন ইচ্ছা থাক,তাও নিক্যামি করবিনা।যা ঘরে যা।রান্না হলে খেতে আসবি।আর চাইলে রান্নাঘরে গিয়ে নিহাকে সাহায্য কর।
”
”
”
-মা নিরার ফোন বন্ধ কেনো বলতে পারবা।ফোনে ওকে পাচ্ছিনা।তুমি একদিন যাও না নিরাদের বাড়ি।
-আচ্ছা দেখি কাল সময় পেলে যাবো,তুই টেনশন করিস না তো।
-টেনশন হবেনা বলো,ফোনে কিছুতেই নিরাকে পাচ্ছিনা।আমার কিছুই ভালো লাগছেনা।
-শোন তাসিফ ,তুই অযথায় টেনশন করছিস।ফোনে হয়তো ঠিকমত নেটওর্য়াক নাই তাই কল আসছেনা,এমনো হতে পারে তাইনা।
-হতে পারে মা।আচ্ছা রাখি,ভালো থাকো।
-তুইও ভালো থাক।
-হুম।
এই মেয়েটার কি যে হয়েছে আমার সাথে ঠিকমত কথায় বলছেনা ।থাম একবার দেশে আসি তারপর তোকে কিভাবে বাধিঁ নিজের সাথে।তখন কথা বলতে বাধ্য থাকবি আমার সাথে।বলেই মুচকি হাসলো তাসফি।
”
”
”
এই নিরা তোমার সাথে আমার ভাইয়ের কবে থেকে প্রেম ছিলোগো ,আর এত ই যখন ভালোবাসা তখন বাড়িতে জানালেই পারতে তাহলে বড়রাই তোমার সাথে আমার ভাইয়ের সম্মানের সাথে ধুমধাম করে বিয়েটা দিয়ে দিতো।
-আপু তুমিও ভূল বুঝছো?বিশ্বাস করো তোমার ভাইয়ের সাথে ওই ধরনের কোন সম্পর্ক ই আমার ছিলোনা।
-তাহলে সাকিবের মা এমনি এমনি ওতো কথা বললো?আবার ছবিও নাকি তুলেছে তোমাদের দুজনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের।
-তেমন কিছুই না,আমি পেয়ারা গাছে উঠেছিলাম,গাছ ভিজা ছিলো আর তাতেই আমি পা পিছলে গাছের ডাল ধরে ঝুলছিলাম,তখন তোমার ভাই আমাকে ওই অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে যাই আর তখনি পা পিছলে আমাকে সহ পড়ে যাই মাটিতে তোমার ভাই কিন্তু এই কথাতো কেউই বিশ্বাস করবেনা।
-কি বলো,সে যাই হোক ওই বাহানাতে বিয়েটাতো করলো আমার ভাইটা।আর তাছাড়া তোমাকে তো আগে থেকে চিনিই তাইনা।তা ফারদিন কখন আসবে?রাত তো হয়েই গেলো।
-জানিনা আপু।
-কি বলো?জানবানা কেনো নিজের স্বামির খবর।ফোন দিবে যে সে কখন আসবে এই সেই,খোঁজ খবর রাখতে হয় বুঝছো।
নিরা মনে মনে বললো,
-খোঁজ খবর না ছাই রাখবো।আমার জিবনটাকে এমনি ত্যানাত্যানা করে দিলো।ভাললাগেনা।তার মধ্যে আমার ফোনটাও লুকিয়ে রেখেছে ফাজিলটা।
কি ব্যাপার আপু কখন এলি?ঘরে ঢুকেই ফাহমিদাকে দেখে ফারদিন বললো কথাটা।তারপর নিরার দিকে তাকালো,নিরা সাথে সাথে একটি মুখ ভেংচি দিলো ফারদিনকে।
-এই তো ভাই সকালে,তোর বিয়ের কথা শুনেই এসেছি,তোরা তো আর জানাবিনা।দুঃখি দুঃখি চেহারা করে বললো ফাহমিদা কথাটা।
-আরে তা না আপু।আমি তো মনে করেছি তুমি জানো,আম্মা জানিয়েছে।
-আম্মার কি আর আমার কথা মনে থাকেরে ভাই।বাদ দে সেসব কথা।ফ্রেশ হয়ে আয় বাইরে,আমি দেখি রাতের খাবারের কি হলো।
ফারদিন নিরাকে একটা চোখ টিপ দিয়ে ওয়াশরুমে গেলো,ততক্ষণে ফাহমিদা চলে গেছে ফারদিনের রুম থেকে।
নিরা আলমারি খুলে কি একটা খুঁজছিলো এমন সময় ফারদিন দরজা বন্ধ করে নিরার পেছনে এসে নিরাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
-কি করছেন ছাড়ুন।
-না ছাড়বোনা,ছাড়ার জন্য ধরিনি।
-সব সময় এসব ভালো লাগেনা,কি পেয়েছেন আমাকে হ্যাঁ,সুযোগ পেলেই জড়িয়ে ধরছে,মেজাজ খারাপ।
ফারদিন নিরার গালে একটা চটাস করে চুমু বসিয়ে দিয়ে বললো,
-কি করবো বলো,বিয়ে করার পর আমার খালি তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকতেই ইচ্ছে করে।কাজেও মন বসেনা জানো?
-ঢং
-সত্যি বলছি।
-আমাকে ছাড়বেন ?আমি বাইরে যাবো,আমার খিদে পেয়েছো খাবো।
-খিদে তো আমারো পেয়েছো কিন্তু খেতেই পারছিনা।
-এভাবে ধরে রাখলে খাবেন কিভাবে?বাইরে চলেন,
-এই খিদে সেই খিদে নয়রে পাগলি ,এই খিদে হলো,,নিরাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নিরার ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বললো ,এটার খিদে।
যান সড়েন বলে জোরে ফারদিনকে ধাক্কা দিয়ে পালালো নিরা দরজার দিকে।দরজা খুলে যেতে যেতে বললো,
-এ আমি কার পাল্লাতে পড়লাম আল্লাহ,কোন সময় শান্তি নাই।
ফারদিন দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাচ্ছে আর হাসছে দাঁত সবটা বের করে।
খাবারের টেবিলে সবাই একসাথেই খেতে বসেছে।ফয়েজ ও আজ তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।সবাই চুপচাপ খাচ্ছে।কেউ কোন কথা বলছেনা।এমন সময় নিরার গলায় খাবার আটকে গেলো।সে অনবরত কাশছে।নিহা ওমনি সাথে সাথে পানি দিলো খেতে তবুও কাশি থামছেনা এমন সময় ফারদিন নিজের পা দিয়ে নিরার পায়ে সুড়সুড়ি দিতে শুরু করলো আর তখনি নিরার কাশি থেমে গেলো।কিন্তু খাবার যে মুখে দিবে তা আর পারছেনা। সুড়সুড়ির অত্যাচারে।
ফজিলা বেগম বললেন,
-খাচ্ছোনা কেনো নিরা।গলা জ্বলছে নাকি?
-না মামনি,আমি আর খাবোনা ,খেতে পারছিনা।
নিহা পাশ থেকে বললো,
-এতটুক খেলে চলে,সব ভাত শেষ কর প্লেটের।
-না আপু ,আর পারবোনা।
ফারদিন মুচকি মুচকি হাসছে আর খাচ্ছে সাথে নিরার পায়ে সুড়সুড়ি দেওয়াও বন্ধ করছেনা।নিরার মাথায় আগুন জ্বলছে ফারদিনের হাসি দেখে ,দিলো আরেক পা দিয়ে ফারদিনকে গুতা।গুতা খেয়ে ফারদিন আহ করে উঠতেই সবাই এবার ফারদিনের দিকে তাকালো,ফয়েজ বললো,
-কিরে,তোর আবার কি হলো,আহ করছিস?
-কিছুনা ভাইয়া ,কিসে যেনো পায়ে গুতা দিলো,বিড়াল হবে হয়তো।
নিরার রাগটা এবার আরো বেড়ে গেলো ওকে বিড়াল বলাতে।
ফজিলা বেগম বললেন,
-এখানে বিড়াল এলে কোথায় থেকে,আমরা তো দেখতে পাচ্ছিনা।
-নিরার দিকে তাকিয়ে ডেভিল হাসি দিয়ে ফারদিন বললো,
-আছে আম্মা,তুমি দেখতে পাচ্ছোনা ,আমি দেখতে পাচ্ছি,মস্ত একটা বিড়াল।সেই বিড়ালটাকে আজ রাতেই পোষ মানাতে হবে।
-কি সব বলছিস,চুপচাপ খা,বিরক্ত হয়ে বললেন ফজিলা বেগম।
চলবে।