যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:২৫

0
565

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:25
লেখনিতে:মৌসুমী

আমাকে বিড়াল বললেন কেনো তখন?কোমরের দুইপাশে দুই হাত রেখে রাগি রাগি গলায় জিঙ্গেস করলো নিরা ফারদিনকে।
-তো বিড়াল কে বিড়াল বলবোনা।
-আমি বিড়াল?
-তো কি,আমাকে গুতো দিলে কেনো তখন?
-আর আপনি আমাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছিলেন কেনো?
-আমার ইচ্ছে হয়েছিলো তাই।
-ইচ্ছে হলে কেউ কাউকে সুড়সুড়ি দেয় নাকি।আপনার সুড়সুড়ির ঠ্যালায় গলায় খাবার আটকে আমার কাশি শুরু হয়ে গেছিলো,আবার বড় মুখ করে বলছেন ইচ্ছে হয়েছিলো তাই সুড়সুড়ি দিয়েছেন।
-কাশি যেমন আমার সুড়সুড়ির জন্য উঠেছিলো তেমনি আমার সুড়সুড়ির জন্য কিন্তু ব্যাটা কাশি থেমেও গেছিলো।
-এই থামেন,কাশি ব্যাটা বেটিও হয় নাকি?
-তো কি,মেয়েদের ব্যাটা কাশিতে ধরে আর ছেলেদের বেটি কাশিতে ধরে তাই বলে সবাইকে না কিন্তু,এটা অন্য কাশি এটা শুধু বিবাহিতদেরি ধরে।
-আজাইরা কথা।দেখি পা সড়ান আমি ঘুমাবো।
-পারবোনা।তুমি সড়িয়ে দাও।
-আমার বয়েই গেছে।সড়ান না হলে কিন্তু চিমটি দিবো।
-দাও,বৌএর হাতের চিমটিও সেই মজার।
-এই শোনেন আপনি এরকম ছ্যাবলাপনা করছেন কেনো আমার সাথে।আগে তো অহংকারে কথায় বলতেন না।সহ্য করতে পারতেন না আমাকে আর এখন কথার খই ফুটছে মুখ থেকে।
-ফারদিন হঠাৎ গম্ভির হয়ে গেলো,একপাশে সড়ে নিরাকে জায়গা দিলো শোয়ার জন্য।
নিরা আর কিছু বললোনা চুপ করে শুয়ে পড়লো,এমন সময় ফোনের রিং বেজে উঠলো।ফোনটা নিরার,ফারদিন নিজের কাছে ফোনটা লুকিয়ে রেখেছিলো।কখন ফোনটা চালু হয়ে গেছে ফারদিন তা বুঝতে পারেনি।

ফোনের দিক তাকিয়ে ফারদিনের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো তারপর বললো,
-এই শালা তোমার ফোনে বারবার কল দেয় ক্যান?
ফারদিনের মুখে শালা শব্দটা শুনে নিরা অবাক।
-কি হলো বলো?এই তোমাকে কেনো এখুনো ফোন দেয়।জানেনা তোমার বিয়ে হয়ে গেছে।রাগে তিরতির করছে ফারদিন।
-কে কল করেছে?
-কে আবার দেখো,কথা বলো,তার সাথে কথা বলে তাকে উদ্ধার করো যত্তসব বলে ফোনটা বিছানায় জোরে আছাড় মেরে বারান্দায় চলে গেলো ফারদিন।নিরা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো,,,




কি ব্যাপার তিশা, নিরা বিয়ের দিন ই চলে গেছিলো তোমাদের বাড়ি থেকে।তার তো আরো দুইদিন থাকার কথা ছিলো তোমাদের বাড়িতে।শনিবারে আমাদের বাড়ি আসার কথা ছিলো তাও আসলোনা।আবার তাকে ফোনেও পাচ্ছোনা।
-আম্মু বললো,আন্টি নাকি বিয়ের দিন ই জোড় করে নিয়ে গেছে নিরাকে।
-ওহ, কিছু হয়েছে নাকি?
-জানিনাতো,,চলো একদিন তুমি আর আমি যাবো নিরাদের বাসায়।আন্টি তো বলেছেই তোমাকে নিয়ে যেতে।
-সে পরে দেখা যাবো,এখন আসোতো আমার কাছে।
-সব সময় কাছে কাছে করো নাতো মাহিন দরজা খোলা।
-দরজা লাগিয়ে দিলেই হলো।কে আবার ফোন দিলো এসময় তোমাকে,তিশার ফোনটা বেজে উঠতেই বিরক্ত মুখে বললো মাহিন।
-শিশির ভাইয়া ,হ্যালো, শিশির ভাইয়া, কি অবস্থা তোমার?
-অবস্থা আর কি,একটা মেয়েকে মনে ধরলো,ভাবলাম এবার বিয়েটা করেই ফেলবো কিন্তু কপাল কি দেখ মেয়েটা নাকি বিবাহিত।
-তুমি কার কথা বলছো?কোন মেয়ে?কোথায় দেখলে?
-মেয়েটা তো তোর পরিচিতোই,তোর বিয়েতেই দেখে পছন্দ হয়েছিলো তারপর মাকে বললাম,মা পরে জানতে পারে মেয়েটার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে।
-কে সেই মেয়ে?নাম কি?
-নিরা।
-নিরা?
-হ্যাঁ নিরা,তোর ই বেস্টফ্রেন্ড।
-কি বলছো এসব?নিরা বিবাহিত হতে যাবে কেনো?ওর তো এখুনো বিয়েই হয়নি।
-তুই ঠিক বলছিস,নিরার সত্যি এখুনো বিয়ে হয়নি?
-না ভাইয়া।নিরার বিয়ে হয়নি,হলে আমি জানতাম না বলো?সে তো আমার ই ফ্রেন্ড।
-তাহলে নিরার মা কেনো আমার মাকে বলেছে নিরার বিয়ে হয়ে গেছে?
-কি বলছো এসব? আমার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা।নিরার বিয়ে হলে আমি জানবোনা বলো?তুমি চিন্তা করো না ,বড়মামি হয়তো অন্য কারো সাথে কথা বলেছে।নিরার আম্মার সাথে না।আমি নিরাদের বাড়ি গিয়ে তোমার কথা ওদের বলবো কেমন।তুমি চিন্তা করো না কিন্তু একদম।
-যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুই যাবি কিন্তু বলে দিলাম।আমার নিরাকে খুব ভালো লেগেছে জানিস।তোর কথা শুনে আমি আবার আশার আলো খুঁজে পেলাম।আচ্ছা রাখছি,আল্লাহ হাফেজ।
-আল্লাহ হাফেজ ভাইয়া।




বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফারদিন একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছে।তার মেজাজ এখন খুব খারাপ।নিরার ফোনে তাসিফের নাম্বার থেকে ফোন আসার পর থেকে রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা ফারদিন।এই তাসিফকে সে দুচোখেও সহ্য করতে পারেনা।তার নামটা শুনলেও তার গাঁ জ্বালা করে।শুধু মাত্র ওর জন্য এতদিন ফারদিন নিরার কাছ থেকে দূরে থাকতো,নিরার সাথে দূর্ব্যবহার করতো।সেই তাসিফের জন্য সে এতদিন ধরে নিজের মনের সমস্ত অনুভূতি গলা চিপে নিজের মনের বুক পকেটে দুমরে মুচরে রেখে দিয়েছিলো।সেদিন যখন গ্রামে নিরাকে নিজের করে পাওয়ার সুযোগ সে পায় তখন কোন কিছুকে আর পাততা না দিয়ে মনের কথা শুনে নিরাকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়েছিলো।আর বিয়েটা সে করেও নিয়েছে।এত বছরেও সে নিরাকে মন থেকে মুছতে পেরেছিলোনা,সে বুঝে গিয়েছিলো কোনদিন পারবেওনা নিরাকে ভূলতে সে তাইতো বিয়েটা করেই নিলো সে।যা হয়ার হোক নিরাতো এখন তার বিয়ে করা বৌ,আর কি চাই।

নিরার ফোনটা আবার বাজতে শুরু করেছে।নিরা তখন ভয়ে রিসিভ করেছিলোনা ফোনটা,এবার যখন রিসিভ করতে যাবে তখন ই ফারদিন বারান্দা থেকে ঝড়ের বেগে এসে ফোনটা নিরার হাত নিয়ে শরীরের সব শক্তি দিয়ে মেঝেতে আছাড় দিলো।টুকরো টুকরো হয়ে চারদিকে ছিটিয়ে পড়লো ফোনের হাত,পা,গলা,মুখ।

-আপনি আমার ফোনটা ভেঙে দিলেন?
-হ্যাঁ দিয়েছি আর বেশ করেছি।
-ফোনটা কি দোষ করেছিলো শুনি?যেদিন আমাকে এখানে এনেছেন সেদিন থেকে ফোনটা আমার কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছিলেন ,আজকে ভেঙেই ফেললেন।ফোনটা আমাকে তাসিফ ভাইয়া দিয়েছিলো,কত দামি ছিলো ফোনটা।
ফারদিন এবার চিৎকার করে উঠলো,
-তাসিফ,,,তাসিফ,,,তাসিফ,এই তাসিফের বাচ্চা সব কথাতে আসে কেনো?শালা এই দেশে না থেকেও শালা সবকিছুতেই আছে।থরথর করে রাগে কাঁপছে ফারদিন।
-আপনি তাসিফ ভাইয়াকে নিয়ে এসব কি বলছেন?
-এই তাসিফের জন্য তোর এত দরদ কেনো আর তোকে তাসিফ ফোন দেয় কেনো,সেদিন যে বললি তাসিফের সাথে তোর কোন সম্পর্ক নাই তাহলে?কৈ ভাবিকেতো দেয়না।দেয়ালের সাথে চেপে ধরেছে ফারদিন নিরাকে।
-কারণ তাসিফ ভাইয়া ছোটবেলা থেকেই আমাকে খুব ভালোবাসে তাই,কাঁপা কাঁপা সড়ে বললো নিরা।
-ভালোবাসে?তাই,তো এতদিনেও তোকে বিয়ে করেছিলোনা কেনো?
-বিয়ে করবে কেনো?সে তো আমাকে বোনের মত ভালোবাসে।নিরার এই কথা শুনে ফারদিন হো হো করে এবার হাসতে শুরু করলো।
-তুমি কি পাগল?তোমাকে সে বোনের মত ভালোবাসেনা বুঝেছো?
-তো কিসের মত ভালোবাসে আজব।
-সেটা ওকেই জিঙ্গেস করো।
-ফালতু কথা বলবেন না।
-আমি কোন ফালতু কথা বলছিনা বলে ফারদিন নিরাকে ছেড়ে সিগারেট একটা নিয়ে আবার বারান্দায় চলে গেলো।নিরা কিছুক্ষণ বারান্দার দিকে তাকিয়ে মেঝেতে বসে ফোনের ভাঙা টুকরোগুলো এক জায়গায় করলো।




-কাল আমি আম্মাদের ওখানে যেতে চাই।
-কাল কিভাবে নিহা?আপা এতোদিন পর এখানে এসেছে আর তুমি বলছো কাল তুমি তোমার বাপের বাড়ি যাবে?
-আমিও তো কতদিন থেকে যাইনি,আমার কি যেতে ইচ্ছে করে না নাকি।আপা আছে থাক,সমস্যা নাই তো।
-আমি কিছু বলতে পারবোনা,কাল আম্মাকে বলে দেখো যদি যেতে দেয় তাহলে যাবে।
-তুমি তার মানে রাজি না।আমি কয়দিন ওখানে থেকে আসি এ ব্যাপারে।
ফয়েজ চুপ করে থাকলো এবার,কিছুই বললোনা।নিহা অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে শুয়ে কাঁদতে শুরু করলো।এত কাছে বাপের বাড়ি হয়া সত্ত্বেও সে দুটো দিনের জন্য ও সেখানে গিয়ে থাকতে পারেনা।এখানে সকাল থেকে রাত অবধি সে খেটেই মরে।নিজের জন্য কোন সময় ই বের করতে পারেনা।সবসময় শ্বশুর-শাশুরী,স্বামি,মেয়ে,দেবর এদের দেখাশোনা করতেই সময় চলে যাই তার।

তুলতুল কাঁদছে,ঘুমের মধ্যে হয়তো কোন বাজে স্বপ্ন দেখেছে।নিহা তুলতুলের কাঁন্না শুনেও তার কাঁন্না থামানোর কোন চেষ্টা করলোনা।
ফয়েজ তুলতুলকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করলো।একটু পর আবার তুলতুল ফয়েজের গলা ধরেই ঘুমিয়ে পড়লো।

ফয়েজ শুনতে পাচ্ছে নিহার নাক টানার শব্দ তবুও কিছুই বললোনা।তুলতুলকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়লো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here