যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:৩৬

0
678

#যে_শ্রাবণে_এলে_তুমি💕💕
#পর্ব_36
#লেখনিতে_মৌসুমী

এরপর একদিন বাড়ি থেকে খবর আসলো , আমার ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে,মেয়ের বাড়ি কাছাকাছিই।মেয়ে নাকি দেখতে মা শা আল্লাহ।আমার ভাইয়ের নাম ফয়েজ।তার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছিলো,সে নাকি ভাবিকে দেখে এক দেখাতেই পছন্দ করেছে।অথচ আগে অনেক কয়টা মেয়েই তাকে দেখানো হয়েছিলো সে রাজি হয়নি।কিন্তু ভাবিকে দেখেই সে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিয়েছে।ভাবিরা নাকি দুইবোন এক ভাই।ভাবিই বড় ভাইবোনদের মধ্যে।ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনে অতিরিক্ত উত্তেজনায় কোথায় ভাইয়ার বিয়ে সেটা জানা হয়েছিলোনা আর মনেও ছিলোনা।
বিয়ের দিন ঠিক হলো,এমনভাবে ঠিক করলো আমার পরিক্ষা যেনো সে সময় না থাকে।আমি বিয়ের দু’দিন আগে চলে গেলাম রাজশাহী।তারপর কাজে লেগে পড়লাম,কারণ বিয়ে বাড়িতে অনেক কাজ থাকে তো বসে থাকা আর যাবেনা।বিভিন্ন কাজের চাপ ,বাড়ি ভর্তি মেহমান,দাদাবাড়ির,নানাবাড়ির,আমার বোনের শ্বশুরবাড়ির মানুষে গিজগিজ করছিলো। সব মিলিয়ে তার সাথে আমার কথা বলা হচ্ছিলোনা।যাইহোক,বিয়ের আগের দিন মানে গাঁয়ে হলুদের দিন আমি খুব ব্যস্ত,ভাবির বাড়ি থেকে ভাইয়াকে হলুদ দিতে আসবে তো তাদের খাবারের সব ব্যবস্থা আমাকে আর আমার বন্ধুদের ই করতে হচ্ছে।আমি আমার সব বন্ধুদের ই দাওয়াত করেছিলাম।হলুদের দিন সন্ধ্যের পর ভাবির বাড়ি থেকে চলে আসলো মেহমান।আমি ব্যস্ততার কারণে তো কোনদিকে নজর দিতে পারছিনা,তবে একসময় আমার নজরটা একটা কর্ণারে আটকে গেলো,ছাদের এক সাইডে একটি মেয়ে বসে আছে অনেকগুলো মেয়েদের মাঝে।লেমন কালারের একটা শাড়ি পড়ে আছে,মাথায় অবশ্য হিজাব সুন্দর করে বেঁধেছে।ঠোঁটে দিয়েছে কড়া লাল কালারের লিপস্টিক।মুখে মেকাপ, হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে,মেয়েটা যখন হাত নাড়িয়ে কথা বলছে তখন তার কাঁচের চুড়িগুলো কেমন একটা রিনঝিন শব্দ তুলছে।ওকে দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেছি ।এমন সাজে দেখে।মেয়েটি আর কেউ না আমারি ভালোবাসা,যার সাথে আমি দু’দিন থেকে ফোনে কথা বলতে পারিনি কাজের ব্যস্ততায়।সেও আমাকে একটিবার ও ফোন করেনি এই দুইদিন।আমি ওকে দেখতে দেখতে কখন যে তার কাছাকাছি চলে গেছি বুঝতেই পারিনি।তার সামনের একটা চেয়ার ছিলো চার হাত দূর হবে সেখানে বসে থেকে আনমনে তাকে দেখেই যাচ্ছি,তার কথার শব্দ,ঠোঁট নাড়ানো,হাসি,হাত নাড়ছে কথা বলার সময় সব ই আমি দেখছি অপলক চোখে।আমার সামনের চেয়ারে যারা বসে আছে তাদের সাথেই কি নিয়ে যেনো গল্প করছে।ঢাকা থাকার কারণে তাকে তো আর আমি দেখতে পেতামনা,কথা প্রতিদিন হলেও তাই ওকে দেখে আমার যেনো দেখার পিপাসাটা মিটছিলোই না।এক ধ্যানে বসে ছিলাম আমি।ধ্যান ভাঙলো বন্ধু আসিফের ধাক্কায়।সে এসে বললো,
-তোর ভাইয়ের কার সাথে বিয়ে জানিস?
আমি না ধলে মাথা নাড়লাম।আসিফ বললো ? নিরার বোনের সাথে,আমি শুনে অবাক?নিরা আর আমার ভালোবাসার মানুষটি,যাকে এতক্ষণ আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখে যাচ্ছি,যাকে দেখার পর যার নাম শোনার পর আমি কয়েকরাত ঘুমাতে পারিনি।নিরা নামটা জানলাম যেদিন সেদিন সারারাত আমার মনের পাতায় কতশত কোটিবার তার নাম আমি লিখেছিলাম।ওর নামটা সারাক্ষণ জিকির করতাম মনে মনে,করতাম কেনো বলছি এখুনো করি।সেই নামটা আমি ভূলতে পারিনি আজ ও।

নিরা নামটা শুনে আর এতক্ষণ ডায়েরিটা পড়ে এখন চোখের অস্রু ঝড়াচ্ছে নিরা।সে পড়তে পড়তে আনদাজ করছিলো,যে মানুষটাকে সে না দেখে এতো ভালোবেসে এতদিন ধরে তারজন্য সে কষ্ট পাচ্ছে সে আর কেউনা সে ফারদিন।আর ফারদিন যে মেয়েটার কথা বলছে সে নিরা,নিরা এতক্ষণে শিউর হলো পুরোপুরিভাবে।ডায়েরিটা কোলের ওপর রেখে কিছুক্ষণ কাঁন্না করলো তারপর আবার ডায়েরিটা পড়তে শুরু করলো নিরা।

নিরার বোনের সাথে বিয়ে আমি জানিনা,কৈ নিরাতো একবার ও ফোনে বলেনি তার বোনের বিয়ে,অবশ্য আমিও তো বলিনি আমার ভাইয়ার বিয়ের কথা।নিরা বললে অবশ্য বুঝতে পারতাম যে,তার বোন ই আমার ভাবি হতে যাচ্ছে।আমি আসিফকে বললাম,
-তুই জানতিনা যে নিরার বোনের সাথেই ভাইয়ার বিয়ে?
-জানতাম কিন্তু তোকে চমকে দেওয়ার জন্য বলিনি।আমি তো জানতাম নিরা আসবে তখন তুই ওকে দেখে চমকে যাবি আর তাই হলোও তুই চমকে গেলি।
-বুঝলাম,এবার তুই যা ,আমি আমার নিরারানিকে দেখি।
এরপর আমি আবার নিরাকে দেখতে শুরু করলাম,সে বকবক করেই যাচ্ছ তো যাচ্ছেই।মনে মনে সেদিন অনেক হেসেওছিলাম কারণ যাকে আমি ভালোবাসি,যাকে আমি বিয়ে করতে চাই সেই হয়ে গেলো আমার ভাইয়ের শালি।কত কাছে চলে এলো সে আমার।এখন আমি রাজশাহী এলে নিরাকে সামনাসামনিই দেখতে পাবো।লুকোচুরি করে দেখতে হবেনা।যখন ইচ্ছে তখন ভাবিকে সাথে নিয়ে নিরাকে দেখতে যেতে পারবো।সেদিন ওরা অনেক রাত পর্যন্ত আমাদের বাড়ি ছিলো,আমরাও গিয়েছিলাম ভাবিকে হলুদ দিতে।সেদিন ই প্রথম ওদের বাসায় আমার যাওয়া হয়েছিলো।নিরা তো এক জায়গায় থামছিলোনা শুধু এদিক থেকে ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছিলো।আমার অবশ্য মনে হচ্ছিলো গিয়ে বলি আমিই সেই, যার সাথে তুমি প্রতিদিন কথা না বলে থাকতো পারোনা।আমিই সেই ,যাকে তুমি খুব ভালোবাসো,আমিই সেই,যার ফোনের অপেক্ষা তুমি প্রতিনিয়ত করো।হ্যাঁ সে আমার ফোনের অপেক্ষা প্রতিনিয়ত ই করতো ,আমি দেখেছিলাম সে গাঁয়ে হলুদের দিন,বিয়ের দিন সে হাজার কথা বলার মাঝে,হাজার ছুটাছুটির মাঝেও সে বার বার তার ফোনটা দেখছিলো আর যখন দেখছিলো আমার কোন ফোনকল নেই তখন সে মন খারাপ করছিলো ।আমি পরে যখন ভেবেছিলাম যে এবার নিরাকে বলেই দিবো আমার ব্যাপারে তার আগেই অন্য একটা ঘটনা ঘটলো আমার সাথে।আমি অন্য একটি বিষয় সেদিন জানতে পারি,অবশ্য জেনে ভালো হয়েছিলো না হলে আরো অপমানিত হয়ে যেতাম ।এমনিতে কম অপমানিত হৈনি,কম কষ্ট পাইনি।খুব কষ্ট পেয়েছি।জিবনের সব রং ফ্যাকাশে হয়ে গেছে আমার কাছে।বাঁচতে ইচ্ছে করেনা।বৌভাতের দিন বিষয়টা আমি জানতে পারি।সেদিনো আমি খুব ব্যস্ত কারণ ভাইয়ার বিয়েটা খুব ধুমধামের সাথে হচ্ছিলো,অনেক লোককে দাওয়াত করে হয়েছিলো সে কারণে বসার পর্যন্ত সময় পাচ্ছিলাম না।একসময় ক্লান্ত হয়ে একটা চেয়ারে বসে আছি তখন এক লোক ,লোক বলবোনা ছেলে,আমার বয়সিই হবে,লম্বাচড়া,ফর্সা,যাকে বলে ধবধবে ফর্সা ছেলেটি,মুখটা গম্ভির করে আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লো,আমার একটু মেজাজ খারাপ হলো যে, ছেলেটা আমার পাশে আমাকে না বলেই বসে পড়লো বলেই।ছেলেটাকে অবশ্য আমি দেখছি গাঁয়ে হলুদের দিন থেকেই।কনেপক্ষ,ছেলেটি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
-আমি তাসিফ।
আমি তাসিফ নামের ছেলেটার দিকে ভালোভাবে চোখ মেলে তার হাতে হাত মিলিয়ে বললাম,
-আমি ফারদিন।
তাসিফ গম্ভির মুখেই ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে বললো,
-আপনি ফয়েজ ভাইয়ার ভাই আমি জানি,এটাও জানি আপনার নাম ফারদিন,ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্টুডেন্ট।এখানে থাকেন না ,এইচ এস সি পরিক্ষার পর থেকেই ঢাকায় থাকেন এবং মাঝেমাঝে এখানে আসেন।
আমি কপাল কুচকে তাসিফে কথাগুলো শুনে বললাম,
-আপনিতো দেখি আমার বিষয়ে ভালোয় পড়াশোনা করেছেন ।
-আরো অনেক কিছুই জানি।
-ভালো,তো আপনি ভাবির কে হোন?
-আমি আপনার ভাবির খালাতো ভাই।
-ওহ আচ্ছা।
-যে কথা বলার জন্য আসলাম সেটাই বলি,সময় নষ্ট না করে,
-কি বলতে চান,সিরিয়াস কিছু?
-অবশ্যয়।আপনি যে নিরার সাথে ফোনে কথা বলেন তার সাথে যেই সম্পর্ক আপনার সেই সম্পর্ক আজ থেকে,এই মুহূর্ত থেকে আপনি আর রাখবেননা।নিরাকে কোন ফোন,মেসেজ দিবেননা।
তাসিফের বলা কথা শুনে আমি অবাক ও হলাম আবার রেগেও গেলাম ।অবাক হলাম কারণ ,সে কি করে জানলো আমার আর নিরার সম্পর্কের ব্যাপারে,আর রাগলাম কারণ সে নিষেধ করার কে?যে তার কথায় আমি নিরাকে ছেড়ে দেবো যোগাযোগ বন্ধ করবো।আমি রাগে দাঁত খিটিমিটি করে তাসিফকে বললাম,
-আপনার কথায় আমি কেনো নিরাকে ছাড়তে যাবো?আমি নিরাকে ভালোবাসি?তাকে আমি কখনোই ছাড়বোনা।
মুখে মেকি হাসি নিয়ে তাসিফ আমাকে যা বললো এরপর আমার পায়ের নিচের মাটি সড়ে গেলো,রাগে আমার গা রি রি করতে শুরু করলো,তাসিফ বললো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here