যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:৪

0
828

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:4
লেখনিতে:মৌসুমী

আজ শুক্রবার বাড়ির ছেলেরা আজ বাড়িতেই আছে।ফয়েজ,ফারদিন।ফজিলা বেগম আজকে প্ল্যান করছে আজ তার বেয়াই আর বেয়ানকে দাওয়াত করে খাওয়াবে।যেই ভাবনা সেই কাজ।জামান সাহেবকে বললেন তিনিও মত দিলেন তারপর নিহাকে বলে ও বাড়িতে ফোন করে দাওয়াতটা দিলো ফজিলা বেগম।মাহফুজা বেগম একটু দোনা মনা করলেও পড়ে রাজি হয় যে তারা বিকেলেই চলে যাবে ও বাড়ি তারপর রাতের খাবার খেয়েই আসবে।

মাহফুজা বেগম নিরার রুমে গিয়ে ওকে বললো শোন দুপুরে ঘুমাসনা বিকেলে নিহাদের বাসায় যেতে হবে।তোর তো আবার যেই ঘুম সহজে ভাঙেনা।
আম্মা আমি যাবোনা।
কেনো যাবিনা অন্য সময় তো লাফাতে লাফাতে একা একা গিয়েই পড়ে থাকিস তাহলে আজ যেতে পারবিনা কেনো।
আম্মা আমার আজ ভালো লাগছেনা তোমরা যেও আমি বাসাতেই থাকবো।
যাবিনা যখন তখন আর জোর করছিনা।মাহফুজা বেগম বেড়িয়ে গেলো নিরার রুম থেকে।মেয়ে বাড়ি যখন যাবে কিছু একটা বানিয়ে নিয়েতো যেতেই হবে এই ভেবে রান্না ঘরে ঢুকলো তিনি।

নিরার আজ মাথাটা ধরে আছে কিছুই ভালো লাগছেনা সকাল থেকে কয়েক কাপ চা খেয়ে নিয়েছে তবুও কিছু হচ্ছে না।বালিশটা ঠিক করে শুয়ে পড়লো সে বিছানায় ।একটু ঘুমালে যদি ভালো লাগে এই আশায়।
বালিশে মাথা রাখার কিছুক্ষণ পড়েই ঘুমিয়ে গেছে নিরা।

হ্যালো নিরা কি করছো তুমি।তোমার জন্য পড়াশোনায় একদম মন বসাতে পারছিনা জানো।সারাক্ষণ মনে হয় তোমার ভয়েজ শুনেই দিন রাত পার করে দিই।
নিরা শুধু কানে ফোনটা নিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে আবার লজ্জায় লাল ও হয়ে যাচ্ছে ফোনের ওপাশের মানুষটার কথা শুনে।
নিরা শুনছো আমার কথা আমি যে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি কি করবো বলোতো।তুমি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাওনা তারপর তোমাকে বিয়ে করে আমার বাড়ির রানি করে রাখবো তোমায়।মনের রানিতো করেছি সেই কবেই।
নিরা শুধু শুনেই যাচ্ছে আর লজ্জার হাসি দিচ্ছে।
জানো নিরা তোমার নামটাকে উল্টো করলে তোমার নাম রানি হয়।
হুম জানি লজ্জামাখা গলায় বললো নিরা।
আচ্ছা বৌ তুমি আমায় কখনো ভূলে যাবে না তো।নিরা বললো কখনোই না, আমি তোমাকে কখনো ভূলবোনা আর তুমি তো আমার পাশেই থাকবে সারাজিবন তাহলে ভোলার কথা আসছে কেনো?

না যদি আমরা দুজন দুজনকে হারিয়ে ফেলি তাই বললাম।
নিরা অমনি রেগে বললো এই কথা আর কখনো বলবানা বলেদিলাম।
ফোনের ওপাশের মানুষটাও বললো আচ্ছা আচ্ছা আর বলবোনা এবার হাসোতো একটু আমার বৌ।
না হাসবোনা বলে নিরা অভিমানে ফেটে পড়লো।
ধরফর করে শোয়া থেকে উঠে বসলো নিরা।তারপর হঠাৎ কেঁদে উঠলো সে।কাঁদতে কাঁদতেই নিরা বলতে শুরু করলো ,,তূমি কোথায় ,কোথায় তুমি ,কোথায় হারিয়ে গেলে ,দেখো আজ ও আমি তোমাকে ভূলতে পারিনী তুমি কেনো আমায় ভূলে গেলে।কি অপরাধ ছিলো আমার বলেই নিরা ডুকরে কেঁদে উঠলো।নিরার কান্নার শব্দ শুনে মাহফুজা বেগম ও ছুটে আসলেন তার কাছে।পাশে বসে বুকে টেনে নিয়ে বললেন কি হয়েছে আমার নিরা মায়ের কাঁদছিস কেনো।বল আমায় কাঁদছিস কেনো ঘুমিয়েছিলি নাকি স্বপ্ন দেখেছিস ?বল?বল আমায়?বলবিনা আম্মাকে।মাহফুজা বেগমের জোরে কথা বলার শব্দে উৎস ও তার রুম থেকে বের হয়ে নিরা রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।নিরা অনেক্ষণ কাঁন্নাকাটির পর একটু শান্ত হলো।এতক্ষণ মায়ের বুকের ভিতর মুখ গুজে কাঁদছিলো।তারপর বুক থেকে মুখ তুলে বললো কিছু হয়নি আম্মা ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখেছিলাম,তুমি যাও আমি ঠিক আছি বলে আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো।মাহফুজা বেগম ও মেয়ের সাথে উঠে দাঁড়ালেন তারপর নিরাকে বললেন ,তাহলে যা গোসলটা সেরেনে দুপুর হয়ে গেছে ।নামাজ পড়ে খাওয়া দাওয়া করে পরে আবার ঘুমাস একটু ঠিক লাগবে।আচ্ছা আম্মা বলে ওয়াসরুমে গিয়ে দরজা লাগানো নিরা।মাহফুজা বেগম ও চিন্তিত মনে ঘর থেকে বেরোলেন।মাঝেমাঝেই নিরা এমন ঘুম থেকে উঠেই কাঁদতে শুরু করে।কেউ জিঙ্গেস করলে বলে কিছুনা।স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছে ভেবেই মাহফুজা বেগম বিষয়টা উড়িয়ে দেয় মন থেকে।তবু মায়ের মন চিন্তাটা একটু হলেও থেকেই যাই।

বিকাল পাঁচটায় উপস্থিত হলো উৎসরা নিহাদের বাসায়।উৎসরা বলতে উৎস আর ওর বাবা-মা।নিরা আসেনি।ওর নাকি ভালোলাগছে তাই আর বের হয়নি ওদের সাথে।টুনি আছে বাসায় তাই ওতটা সমস্যা নাই একা একা।কিছু খেলে টুনিই করে দিবে এই ভরসাতে নিরা ওর মাকে চিন্তা করতে নিষেধ করে দিয়েছে।

আম্মা নিরা আসলোনা যে?আর বলোনা ফয়েজ তোমার আদরের শালিকার কথা তার নাকি আসতে ইচ্ছে করছেনা তাই আর আসলোনা আমাদের সাথে।পাশ থেকে ফজিলা বেগম বললেন কি বলেন বেয়ান আসলোনা কেনো আমার মেয়েটা ।কদিন ধরে দেখিনি তাকে।আমি ওকে আপনাদের সাথে না দেখে মনে করেছি হয়তো পরে আসবে।মাহফুজা বেগম বললেন,না আপা সে আসবেনা।আজ দুপুরে আবার ঘুম থেকে উঠেই কি কান্না।একটু দূরেই বসেছিলো ফারদিন ।কথাটা শুনে ভ্রু কুচকালো সে।
ফজিলা বেগম বললেন,কি বলেন বেয়ান কান্না করছিলো কেনো নিরা মা।
মাহফুজা বেগম বলার আগেই উৎস বললো মামনি আপি মাঝেমাঝেই এমন করে।ঘুম থেকে উঠেই কাঁদতে থাকে।মাহফুজা বেগম ও উৎসর সাথে সাথে বললো।তারপর বললো কি যে করি আপা ওই মেয়েকে নিয়ে।এমনিতে বদের হাড্ডি কোন কথা শুনে না আরেক দিকে এমন করে কাঁন্নাকাটি করে মাঝেমাঝেই।ভাবছি ওর ও বিয়ে দিয়ে দিবো।কি বলেন আম্মা এখুনি নিরার বিয়ে দিবেন আব্বা রাজি হবে ফয়েজ বললো কথাটা।তোমার আব্বাকে রাজি করাতে হবে আর ওর বয়সোতো বাড়ছে তাই নয় কি।ফজিলা বেগম বললেন ফারদিনেরো বিয়ে দিয়ে দিবো কিন্তু ব্যাটা আমার রাজিই হয় না বেয়ান।ফারদিন ফোন টিপাটিপি করছে আর সবার কথা শুনছে কিন্তু মুখে কিছুই বলছেনা।কিছুক্ষণ পর উঠে দাঁড়িয়ে বললো নিরাকে নিয়ে আসতে হবে নাকি আম্মা বলো?ফজিলা বেগম বললেন, যাবি আনতে?মাহফুজা বেগম বললেন না থাক ফারদিন বাদ দাও তুমি রেস্ট করো ও আসবেনা আমাকে সকালেই বলে দিয়েছিলো।ফজিলা বেগম বললেন তা বললে হয় বেয়ান আমরা সবাই এখানে আনন্দ করবো আর নিরা মা আমার একা একা ওবাড়ি থাকবে তা হয় না।ফারদিন বললো আন্টি আমি বাইরে যাচ্ছি নিয়ে আসি ওকে নাহলে ভাবিও মন খারাপ করবে নিরা না আসাতে।নিহা এখুনো জানেইনা যে নিরা আজ এখানে আসবেনা নাহলে এতক্ষণ ফোনের ওপর ফোন করতেই থাকতো।সবাই ভালোমন্দ খাবে আর ওর বোনটা যা তা খেয়ে থাকবে তা কি হয় নাকি।
ফারদিন তার ঘরে গিয়ে গাড়ির চাবিটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো বাইরে।নেওয়াজ সাহেব এসেই তার বেয়াইকে নিয়ে চা খেতে বের হয়ে গেছে।এখুনো তারা আসেনি।আর নিহা রান্না করছে।তাকে সাহায্য করছে বক্কর।

বক্কর এই বক্কর তাড়াতাড়ি আয়তো আমার রুমে দরকার আছে।ফয়েজের ডাক শুনে বক্কর হাতের কাজ ফেলেই ছুটলো তার কাছে।
কিছু বলবেন বড় ভাইয়া
শোন বক্কর আলি আমি না আসা পর্যন্ত তুই এখানেই বসে থাকবি কেমন।এক পাও নড়বিনা বলে দিলাম।
আচ্ছা বড় ভাইয়া কিন্তু আপনি কুথায় যাছেন আমাখে তো ভাবি ডাকবে।
ডাকবেনা তোর ভাবি আমি আসছি তুই এখানেই থাক বলেই ফয়েজ বেরিয়ে সোজা রান্নাঘরের দিকে গেলো।একবার বাড়ির আর সকলকেই দেখে নিলো।সবাই এখুন ব্যস্ত।এই সুযোগে ফয়েজ রান্নাঘরে গিয়ে পেছন থেকে নিহাকে জড়িয়ে ধরলো।আচমকা জড়িয়ে ধরিয়ে নিহা ভয়ে চিল্লাতে যাচ্ছিলো তার আগেই ফয়েজ হাত দিয়ে নিহার মুখটা চেপে ধরলো তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে নিহাকে বললো,আমি তোমার একমাত্র স্বামি।তারপর নিহাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নিহার মুখের দিকে তাকালো তারপর একবার চোখাচোখি করেই হাতটা ছাড়লো নিহার মুখ থেকে।নিহাও বাঁচলো তারপর কয়েককার শ্বাস নিলো।তারপর ধমকে উঠে ফয়েজ কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ঠোঁট আক্রমণ করলো ফয়েজ।এদিকে নিহাতো ফয়েজকে ছাড়াতে ব্যস্ত কারণ নিহা মোটেও এটার জন্য এই সময়ে প্রস্তুত ছিলোনা।কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে যাবে।কিন্তু কিছুতেই ফয়েজকে সে ছাড়াতে পারছেনা।চিনে জোঁকের মত নিহার সাথে লেগে গেছে সে।ফয়েজের পিঠের ওপর ধমাধম দিয়েই যাচ্ছে নিহা।
মাম্মাম পানি খাবো মাম্মাম রান্নাঘরে হা করে দ্বাঁড়িয়ে আছে এখন তুলতুল ।সামনে অপরাধির মত ফয়েজ দ্বাঁড়িয়ে আছে নিহা ও সেখানে দ্বাঁড়িয়ে আছে আর রাগি চোখে তাকাচ্ছে বার বার ফয়েজের দিকে।আবার একবার করে নিরিহ মুখ করে তাকাচ্ছে তুলতুলের দিকে।কিছুক্ষণ নিরবতা পালনের পর তুলতুল বললো বাবাই তুমি মাম্মামকে ওভাবে ধলে কি কলছিলে?ফয়েজ আমতা আমতা করতে করতে অনেক ভেবে তারপর বললো তোমার মাম্মামের চোখে কি যেনো পড়েছিলো তাই খুঁজছিলাম মা।তাইনা বলো নিহা।নিহাও সাথে সাথে উপর নিচ মাথা করে বললো তাই তাই মা।ও তাই বলো বাবাই আমি ভাবলাম কি নাকি।নিহা বললো কি না কি মানেকি মাম্মাম।তুলতুল তখন বড়দের মত ভাব করে বললো কিতু না মাম্মাম ও তুমি বুঝবেনা।পানি দাও আমি খাবো তারপর উততো মামাইয়ের সাথে খেলবো।নিহা পানি দিলে সেই পানি খেয়ে তুলতুল সেখান থেকে প্রস্থান করলো তারপর ফয়েজ আর নিহাও হাফ ছেড়ে বাঁচলো।নিহা এবার কটমট করে তাকালো ফয়েজের দিকে।ফয়েজ সেই লুক দেখে একটা ক্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।

মাগরিবের নামাজ পড়ে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করছিলো নিরা।টুনি ও তার নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছিলো।অনেকক্ষণ ধরে কলিংবেল বেজেই যাচ্ছে কেউ দরজা খুলছেনা।বাইরে একটু আগেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে।এই বৃষ্টির মধ্যে আবার কে আসলো ভেবে বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে গেলো নিরা।টুনি দরজা খুলবে এ আশায় এতক্ষণ উঠছিলোনা সে।টুনির রুমে উঁকি দিয়ে দেখে সে ঘুমাচ্ছে।তাই আর না ডেকে দরজার দিকে গেলো নিরা।দরজা খুলে তো নিরা অবাক।একটা ছেলে হালকা ভেজা শরীরে দ্বাড়িয়ে দরজার সামনে কিন্তু মুখটা নিরা দেখতে পাচ্ছেনা।ছেলেটি দরজার দিকে না তাকিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here