যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:৬

0
612

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:6
লেখনিতে:মৌসুমী
.
.
.
.
.
ঘড়িতে বাজে দুপুর বারোটা।কলেজে না গিয়ে নিউমার্কেট চষে বেরাচ্ছে নিরা আর তিশা।এ দোকান থেকে সে দোকান এই করেই ঘুরে বেরাচ্ছে।কিছু কিনেছেও দুজনে ।হাতে ব্যাগগুলো নিয়ে এবার এক জায়গায় দাঁড়ালো দুজনে।অপেক্ষা মাহিনের জন্য।মাহিন আসলেই তারা একটু ঘুরাঘুরি করে তারপর একটার মধ্যে বাড়ি চলে যাবে।বারোটা পার হয়ে যাচ্ছে এখুনো মাহিন আসছেনা সেখানে।নিরা বিরক্ত মুখে তিশাকে বললো এই ব্যাটা মাহিনকে তুই কিভাবে সহ্য করিস বলতো?সবসময় সব জায়গায় আসতে লেট করে।মেজাজ খারাপ।বিরক্ত মুখে তিশা বললো,আর বলিস নারে বোন এর মত লেট লতিফ আমি কখনো দেখেছি কিনা সন্দেহ।
নিরা বললো আমি আরো একজনকে দেখেছি বা দেখি সে হলো আমার একমাত্র দুলাভাই।
তিশা অবাক হয়ে বললো ,কি বলিস ফয়েজ ভাইয়াও এমন।তাহলে এত কাজ সামলায় ক্যামনে।
নিরা বললো ওমন করেই।তারপরি দুজন দেখতে পেলো মাহিন মুখে হাসি নিয়ে এগিয়ে আসছে ওদের কাছে।কাছে এগিয়ে এসেই তিশার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে নিরাকে বললো কি অবস্থা নিরা তোমার?নিরা হাসি হাসি মুখে বললো,এইতো ভাইয়া।আপনার কি অবস্থা ? আমারো ভালোই তবে তোমার বান্ধবীকে সবসময় কাছে পেলে আরো ভালো থাকবো বলে তিশার দিকে তাকালো মাহিন।ওরা যেখানে দ্বাঁড়িয়ে কথা বলছে সেখান থেকে কিছু দূরে এক লোকের সাথে দ্বাঁড়িয়ে কথা বলছে ফারদিন।নিরার চোখ এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতেই ফারদিনকে দেখে সেখানে তার চোখটা আটকে যাই।ফারদিন কেমন কঠিন চোখে তার দিকে তাকিয়েই লোকটার সাথে কথা বলছে।নিরা চোখটা সেখান থেকে সরিয়ে আবার তাকালো সেখানে,এবার দেখলো ফারদিন আর নাই সেখানে।মনের ভূল ভেবে সেদিকে আর ধ্যান দিলোনা চলে আসলো ওরা অন্যদিকে তারপর কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে তারপর খাওয়া-দাওয়া করে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নিরা চলে গেলো তার বাসায় আর তিশা মাহিনের সাথে ঘুরতে চলে গেলো।

আজ অনেক রোদ দেখে ছাদে আচার শুকাতে দিয়েছে মাহফুজা বেগম।মাঝে মধ্যে রোদে দিলে আচারটা ভালো থাকে আর খেতেও ভালো লাগে।মাহফুজা বেগম অনেক রকমেরি আচার করে রাখে ঘরে।বাড়ির সবার ই আচার খুব পছন্দ ,বিশেষ করে খিচুরির সাথে খাওয়ার জন্য।তবে নিরা খালি মুখেই অনেকটা শেষ করে দেয়।
বিকেলের দিকে আবার আকাশটা মেঘলা মেঘলা করছে।তাই মাহফুজা বেগম টুনিকে নিয়ে ছাদে গেলেন আচারের বয়ামগুলো আনতে।এদিকে নিরা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।আসরের আজান হয়ে গেছে তবু নিরার বিছানা ছাড়ার নাম নাই।উৎস গিয়ে যখন ডাক দিলো তখন উঠে ওজু করে নামাজটা পড়ে আবার শুয়ে পড়লো।খাটের একপাশে উৎস বসে থেকে ফোনে গেম খেলছিলো।নিরা শুয়ে পড়ার পর উৎস বললো ,,কিরে আবার শুয়ে পড়লি যে ?কত ঘুমাস তুই বলতো।একটু তো আম্মাকে সাহায্য করতে পারিস কাজে।
উৎস এই কথা বলাতে নিরা উৎসর দিকে একটু চোখ পাকিয়ে তাকালো তারপর উৎসকে বললো,,,এত যখন দরদ আম্মার প্রতি তো তুই তো একটু আম্মাকে সাহায্য করতে পারিস।এই কথা বলে চোখটা বন্ধ করলো সে।উৎস আর কিছু বললোনা গেম খেলায় মনোযোগ দিলো।

সন্ধ্যার পর বসে বসে চা খাচ্ছে নিরা ,উৎস আর মাহফুজা বেগম।টুনি রান্নাঘরে গেছে পিঁয়াজি ভাজতে।মাহফুজা বেগম সব রেডি করে দিয়েছে টুনি শুধু তেলে ভাজছে।নেওয়াজ সাহেব এখুনো আসেনি।তিনজন বসে বসে চা খাচ্ছে আর টিভি দেখছে ,মাঝে মাঝে কথাও বলছে।এমন সময় মাহফুজা বেগমের ফোনটা বেজে উঠলো।ফোনটা কানে ধরলেন মাহফুজা বেগম,,,,ওপাশ থেকে সাথে সাথেই আম্মা ডাকটা শুনতে পেলেন মাহফুজা বেগম।নিহা ফোন করেছে।ফোন করে বলছে ,আম্মা কি করো?মাহফুজা বেগম বললেন,চা খাচ্ছি ,তুই কি করিস?নিহা ওপাশ থেকে বললো আম্মা বসে আছি তোমার সাথে মা কথা বলবেন ,ও তো দে আপাকে বললো মাহফুজা বেগম।ফজিলা বেগম ফোন কানে নিয়ে সালাম দিলো মাহফুজা বেগমকে,মাহফুজা বেগম ও সালামের উত্তর নিয়ে তিনিও সালাম দিলেন ফজিলা বেগম কে।সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে ফজিলা বেগম বললেন,বেয়ান আমিতো ফয়েজের দাদাবাড়ি যেতে চাচ্ছি আপনার ভাইকে সাথে নিয়ে তো ভাবছি এবার আপনারাও সবাই চলেন সেখানে।সেই কবে গেছেন আর আম্মাও আপনাদের নিয়ে যেতে বলে।এবার চলেন আমাদের সাথে বেয়ান ,সবাই একসাথে আনন্দ করা হবে গ্রামে গিয়ে।

মাহফুজা বেগম একটু ভেবে তারপর বললো,আপনাঋ ভাইকে আগে বলি আপা সে যদি রাজি হয় তাহলে আর কিসের আপত্তি ।ফজিলা বেগম বললেন ,বেয়ান শুনেন বেয়াইকে আপনার বেয়াই ফোন করে বলেছেন,তিনি রাজি তাই আপনি ব্যাগ গুছান তাহলে আমরা কাল বিকেলে বের হবো ইন শা আল্লাহ।
আপনার বেয়াই যখন রাজি তাহলে আর আপত্তি কিসের তাহলে সব গুছাতে শুরু করি বলে হালকা হাসি দিয়ে মাহফুজা বেগম ফজিলা বেগমকে বললো তাহলে রাখি আপা বলে সালাম দিয়ে ফোনটা রাখলো মাহফুজা বেগম।পাশে থেকে নিরা আর উৎস তার মায়ের ফোনালাপ শুনলো এতক্ষণ।টুনিও রান্নাঘর থেকে চলে এসেছে সে ও শুনলো।মাহফুজা বেগম সবার দিকে তাকিয়ে বললেন ,সবাই কি কি নিবে ব্যাগে আপন আপন নিয়ে নাও কাল আমরা সবাই ফয়েজের দাদা বাড়ি যাচ্ছি।মাহফুজা বেগমের এই কথা শুনে উৎস আর নিরা খুশিতে লাফাতে শুরু করলো।উৎস বলছে,ইয়ে আমরা সেখানে গিয়ে নদীতে মাছ ধরবো খুব মজা হবে সাথে নিরাও মহা উৎসাহে বললো,ঠিক বলেছিস ভাই ,আমিও মাছ ধরবো।তারপর সবাই আপন আপন নিজের রুমে গিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় ,সব ব্যাগে প্যাক করতে শুরু করলো।

ফারদিনের আজ সকালেই ডিউটি এদিকে ফজিলা বেগম বার বার করে বলছে আজ বিকেলে যেনো তাদের সাথে সেও যাই গ্রামে।

চল না বাপ আমাদের সাথে ,খুব মজা হবে দেখিস সেখানে গেলে।তোর দাদী বার বার করে বলেছে তোর দু ভাইকে সাথে নিয়ে যেতে।ফয়েজ রাজি হয়েছে সে যাবে তুই ও চল।

আম্মা কিভাবে যাবো ছুটি পাবোনাতো।তোমরা যাও ঘুরে আসো,আমি থাকি বাসায় বলে একটা আপেলে কামড় দিলো ফারদিন।

ফজিলা বেগম চেয়ারটা ফারদিনের কাছাকাছি এনে বললো ,কদিন ছুটি নিয়ে নে একটু বলে কয়ে দেখ ঠিক ছুটি দিবে এটা তোর হসপিটালের কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আশা।তারা আমার ছেলেকে ঠিক ছুটি দিবে তুই দেখে নিস।

আপেল খাওয়া বন্ধ করে মায়ের দিকে তাকালো ফারদিন তারপর বললো,আম্মা এসব কি বলছো ছুটি নেওয়া বললেই নেওয়া না বুঝেছো।আমি যাবোনা।

ফজিলা বেগম এবার চেহারায় একটু কাঁদো কাঁদো ভাব এনে বললো,তা যাবি কেনো?আমাদের সাথে গ্রামে গেলে তো আর তোর হসপিটালের সুন্দরি নার্সদের দেখতে পাবিনা তাইনা তাই যেতে চাচ্ছিস না।আসলে তুই আমায় ভালোইবাসিস না বলে ফজিলা বেগম নাক টানতে শুরু করলো।

পাশে বসে ফারদিন তার মায়ের এই কথা শুনে কিছুক্ষণ চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকলো তারপর ফজিলা বেগমকে বললো,আম্মা তুমি পাগল হলে নাকি?কি সব বলছো,নার্স,তাকিয়ে থাকা ,মানে কি?তুমি যানো আমি এমন না।মা হয়ে তবুও এসব ফালতু কথা বলছো।

ফজিলা বেগম তার নাক টানা বন্ধ করে বললো ,তো কি,,তাহলে যাবিনা ক্যান বল?

ফারদিন বললো,ছুটি নাই তাই।

ফজিলা বেগম এবার আরো কান্নার ভান করা শুরু করলো তারপর বললো তুই যদি আমাকে ভালোবেসে থাকিস তাহলে আজ যেতে না পারলেও কাল আসবি গ্রামে ।এই কথা বলে কাঁদতে কাঁদতে উঠে দাঁড়ালো তারপর নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।
আর ফারদিন চুপচাপ তার মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

বিকেলবেলা সবাই একদম যাওয়ার জন্য রেডি।ফজিলা বেগম,জামান সাহেব,ফয়েজ,নিহা,আর তুলতুল ,সব এখন গাড়িতে বসে আছে,বড় একটা গাড়ি নিয়েছে তারা।এখন নিরাদের নিয়ে রওনা হবে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

চলবে।

অনেক দেরি করে দিলাম এর জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।ব্যস্ত থাকার কারণে দিতে পারছিলাম না ।আজ ও ব্যস্ত ছিলাম আর ক্লান্ত তবুও দিলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here