শঙ্খচিল পর্বঃ-৩২

0
1309

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৩২

তানহা শিল নোড়ায় হলুদ বাটার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। শিল নোড়ায় বাটার অভ্যাস তার নেই, বললেই চলে। রান্না ঘরের কাজ সব সময়ই রহিমা খালা আর মানহা সামলিয়েছে তাই রান্না-বান্নার তেমন অভিজ্ঞতা নেই।
খুব কষ্টে এক বাটি কাঁচা হলুদ বেটে তানহা ঘেমে একাকার হয়ে গেলো। রহিমা খালা মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
” তানহা তোমার সাদা শাড়িতে হলুদ লেগে গেছে, হায় হায়! ”
তানহা খেয়াল করে দেখলো, সত্যি তার শাড়িতে অনেক টা হলুদ লেগে গেছে৷ লাল হলুদ পাড়ের সাদা শাড়িটা তার ভীষণ পছন্দে। শাড়িটায় হলুদের দাগ লাগাতে তানহার একটু মন খারাপ হলো৷ অগত্যা সে হলুদের বাটি নিয়ে ড্রইংরুমে গেলো। তানিয়ার হাতে হলুদের বাটি দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ প্রতিবেশী একটা মেয়ে তানহা কে মেহেদী পড়াতে নিয়ে গেলো। ড্রইংরুমে এক কোনে বসে তানহা মেহেদী পড়ছে, আর সবার সাথে হাসি ঠাট্টা করছে।
দূর থেকে ইলহাম আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে তানহার হাসি দেখছে।
চোখ ফেরাতে চেয়েও ফেরাতে পারছে না সে।

মেহেদী দেওয়া শেষ হতেই মানহা তানহাকে ইশারা করে ডাক দিলো। মানহা ছোট বোনের গালে হলুদ ছুঁইয়ে দিলো। তানহা ঠোঁট উলটে বললো,
” ইসসস, আমার দু হাতেই মেহেদী দেওয়া আমি তোমাকে হলুদ ছোঁয়াতে পারলাম না। ”

তানিয়া হেসে বললো,” মেহেদী শুকিয়ে গেলে। মানহাকে হলুদ দিও। ”

তানহা মাথা দোলালো, মানহা বললো, ” ওই দিকের গেস্ট দের নাস্তার ব্যাবস্থা কর। ওনারা খালি হাতে বসে আছেন যে।”

” যাচ্ছি আপু। ”
বলেই তানহা মেহমান -দের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো। ইলহাম সোফার পাশেই বসে আছে। অথচ সে এতোক্ষণ খেয়লই করে নি, শুভ্র হলুদ পাঞ্জাবী পরে বসে আছে ইলহাম, চুল গুলো, ফ্যানের কৃত্রিম বাতাসে উড়ছে আর মনোযোগ দিয়ে ফোন ঘাটছে।
রহিমা খালাকে বলে, তানহা নাস্তার ব্যাবস্থা করলো। হাতে মেহেদী দেওয়ার কারনে সে সার্ভ করতে পারলো না।
ইলহামের উদ্দেশ্য বললো,
” প্লিজ কিছু মনে করবেন না, আমি মেহেদী লাগিয়েছি তাই সার্ভ করতে পারছিনা৷ ”

ইলহাম আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” ইটস ওকে। আমরা নিয়ে নিচ্ছি। ” বলেই পাশে বসা শিহাবের হাতে জ্যুস দিলো।

তানহা হালকা হাসলো, হুট করেই তার সে দিনের কথা মনে পড়ে গেলো৷ সেদিন যদি ইলহাম তার হাত ধরে টান না দিতো, বাসে এক্সিডেন্টে তানহা হয়তো মারাই যেতো। ব্যালেন্স হারিয়ে ইলহামের বুকে পড়ে যাওয়া, ভাবতেই লজ্জায় তানহা ইলহামের সামনে দাঁড়াতে পারলো না দ্রুত সরে গেলো।
একে একে সবাই মানহা কে হলুদ দিচ্ছে, কেউ কেউ গল্প করছে, তানহা বারান্দার এক পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে, না চাইতেই চোখটা বার বার ইলহামের দিকে চলে যাচ্ছে, ভাগ্যিস সে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে নহতো ইলহাম দেখলে কি না কি ভাবতো৷

বারান্দা দিয়ে হুঁ হুঁ বাতাস আসছে, হতো রাতে বৃষ্টি আসতে পারে, তানহার হাতের মেহেদী এখনো শুকায় নি, তানহা এক প্রকার বিরক্ত হয়ে বসে আছে। মনে মনে ভাবছে, কোন দুঃখে সে মেহেদী লাগাতে গেলো কাজের বারোটা বাজে গেলো, রহিমা খালা একা এতো কাজ কি ভাবে সামলাচ্ছে, কে জানে…
হঠাৎ ইলহামের কল আসতেই দেখতে পেলো, হারুন কল দিয়েছে। এতো মানুষের সামনে কি ভাবে সে কথা বলবে, ভাবতে ভাবতেই বারান্দার দিকে তার চোখ গেলো। আবছা অন্ধকার বারান্দায় কাউকে দেখতে না পেয়ে ইলহাম বারান্দায় চলে গেলো।

হঠাৎ ইলহাম কে দেখে তানহা ভরকে গেলো, কিছু বলার আগেই ইলহাম ফোন রিসিভ করে বললো, ” হ্যাঁ হারুন বলো। ”
ওপাশ থেকে হারুন রশীদ কিছু একটা বলছে কিন্তু তানহা শুনতে পারছে না। ইলহাম মনোযোগ দিয়ে শুনছে, ফোনের ওপাশ থেকে হারুন বলছে,
” বস ওই ছোকরা টাকে কাল কারাগারে নিয়ে যাবে শুনলাম। ”

” কোন কারাগার? ”

” চকবাজার। ”

ইলহাম কপালে হাত রেখে বললো, ” উফফ সব কিছু হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে হারুন৷ কাজের কাজ কিচ্ছু হচ্ছে না। ”

ফোনের ওপাশ থেকে হারুন বললো, ” স্যার ওই ছোকরার কাছ থেকে আর কিছু জানার আছে?”

তানহা আগের মতোই আবছা অন্ধকারে বসে আছে, ফোনের ও পাশ থেকে হারুন কি বলছে সে কিছুই ধারণা করতে পারছে না। ইলহাম বলে উঠলো..

” আছে হারুন৷ কোর্টের চত্ত্বরে ও কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেছিলো। ও এমন কিছু জানে৷ যা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ”

” আসবেন নাকি স্যার? ”

” হ্যাঁ। আমি আসছি। ”

বলেই ইলহাম বারান্দা থেকে বের হতে যাবে ঠিক তখনি তানহার হাঁচি পেলো, তানহা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অন্ধকারে ইলহামের গাঁয়ে হাঁচি দিলো৷ সাথেই তানহার হাতের মেহেদীও ইলহামের পাঞ্জাবিতে লেপ্টে গেলো। ইলহাম অবাক হয়ে বললো,
” কে এখানে কে আমার গাঁয়ে হাঁচি দিলো। ইয়াককক..”

তানহা দ্বিতীয় হাঁচি দিয়ে বললো, ” সরি আই আম সো সরি আসলে আমার মনেই ছিলো না মেহেদী তে আমার এলার্জি আছে একটু। ”

ইলহাম পূর্নরায় অবাক হয়ে বললো, ” আপনি অন্ধকার বারান্দায় কি করছেন?”

” বাসায় এতো মানুষ তাই ভাবলাম একটু বারান্দায় আসি।”

” আড়ি পেতে আমার কথা শুনছিলেন তাই তো? ”

তানহা বললো, ” এক্স কিউজ মি! আমি আগে বারান্দায় এসেছিলাম। আমি কি জানতাম নাকি আপনি আসবেন!”

” তাহলে ঘামটি মেরে বসেছিলেন কেনো। শব্দ কেনো করেন নি?”

” আমি কিছু বলার আগেই তো আপনি বক বক শুরু করে দিয়েছিলেন। ”

ইলহাম স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,” আমি বক বক করছিলাম। ”

” আলবাদ আপনি বক বক করছিলেন। ”

ইলহাম তানহার কাছে এসে বললো,” আবার বলুন।”

তানহা আমতা আমতা করে বললো, ” কা কা কাছে আসবেন না মেহেদী লাগিয়ে দিবো..”

ইলহাম আরেকটু কাছে এসে বললো, ” বলুন কি করছিলাম। ”

তানহা অবাক হয়ে বললো, ” তানিয়া আপু।”

ইলহাম পিছনে তাকাতেই, তানহা ইলিহামের পাঞ্জাবিতে মেহেদী লেপ্টে দিয়ে দৌড় দিলো, ইলহাম বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো। তনহা হো হো করে হাসলো..

—————————————————

রাত দশ টা কি সারে দশটা বাজে, ডিউটিরত সব অফিসার রা বাসায় চলে গেছে, তিন চার জন কন্সটেবল আর হারুন ছাড়া। ইলহাম থানায় প্রবেশ করে নিজের রুমে যাবে ভাবতে ভাবতেই ইলহাম সোজা হাজতে চলে গেলো। কিশোর ছেলেটা উবু হয়ে বসে আছে, তার মনে এখন কি চলছে তা কারোই জানা নেই, ইলহাম ছেলেটাকের থেকে কিভাবে কথা বের করবে তা একবার ভেবে নিলো। অতঃপর লকাপের তালা খুলে ঢুকে গেলো। ইলহামের উপস্থিতি টের পেয়ে ছেলেটা মাথা উঁচু করে তাকালো। ফিনিক হেসে বললো,
” এস আই স্যার যে? এই সময় কি মনে করে?”

” তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার। ”

ছেলেটা অবাক হয়ে বললো, ” আমার সাথে? ”

” হ্যাঁ। আমি যা বলবো তা ভেবে দেখবি তার পর ভেবে উত্তর দিবি। দেখ আজ তুই হাজতে আছি এক মাত্র ব্লেক কোবরার কারনে, তোর যাবজ্জীবন কারাবাস হয়েছে ব্লাক কোবরার কারনে, পরিবার হারিয়েছিস, ভাই হারিয়েছিস এক মাত্র ব্লাক কোবরার কারনে। যে তোর জীবন নষ্ট করেছে, তোর মতো শত শত যুবক কে ভুল পথে চালিত করছে তুই কি চাস না তার শাস্তি হোক!”

ছেলেটা চুপ করে ইলহামের দিকে তাকিয়ে, রইলো কিছু বললো না৷ ইলহাম বললো, ” তুই কি চাস তুই ঠিক কর। ”

” চাই! আমার কাছে কি চান আপনে, আমি কোবরারে দেখি নাই কখনো৷ ”

ইলহাম সিগারেট জ্বালিয়ে, ধোঁয়া টেনে বললো, ” জানি। কোর্টের চত্ত্বরে কি বলতে চাচ্ছিলি তুই সেটা বল আপাতত। ”

” শুনেছিলাম দুবাইয়ে নারী ব্যাবসায়ীদের সাথে কোবরার ডিল আছে। ”

” কবে, কোথায়?”

” তা জানি না। ”

ইলহাম ছেলেটার দু কাধে ঝাকিয়ে বললো,” তাহলে কে জানে?তার নাম বল?”

” নন্দু ভাই?”

” এর ঠিকানা কোথায় পাবো?”

” কারওয়ান বাজার! ” বলেই ছেলেটা থেমে গেলো অতঃপর সব ডিটেইলস বলতে শুরু করলো।

ইলহাম মনোযোগ দিয়ে কথা শুনতে শুনতে আর সিগারেটে মনোযোগ দিতে পারলো না। জ্বলন্ত সিগারেটটা হাতেই ছাই হয়ে গেলো।
ইলহাম নন্দু ভাইয়ের আস্তানার ঠিকানা নিয়ে বের হতে যাবে ঠিক তখনি, হারুন অবাক হয়ে বললো,
” স্যার আপনি কখন এলেন? আপনার রুমে বসে অপেক্ষা করছিলাম আমি। ”

” কিছুক্ষণ আগেই এসেছি। ”

হারুন দ্বিতীয় বার অবাক হয়ে বললো, ” স্যার আপনার পাঞ্জাবিতে মেহেদী লেপ্টে আছে। ”

ইলহাম তার পাঞ্জাবির দিকে তাকালো, সাদা পাঞ্জাবি অধিকাংশ জায়গা মেহেদী লেপ্টে আছে।
তানহা তার পাঞ্জাবিতে মেহেদী লেপ্টে দৌড়ে দিয়েছিলো।

————————-
ভাবসা গরমে ওয়াহাব ঘেমে একাকার। প্রায় এক ঘন্টা যাবৎ হযরত শাহ-জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে আছে সে। রাত হওয়াতে মানুষ জনের তেমন ভীর নেই, ওয়াহাব এয়ারপোর্টে ভেতরে প্রবেশ করতেই হঠাৎ….



চলবে

ওয়াহাবের কাল বিয়ে কিন্তু সে কি করছে? কোন আইডিয়া আছে তোমাদের? হু হু?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here