[ আমার আইডিতে সমস্যা হয়েছে, ঠিক হলে আগের মতো গল্প কন্টিনিউ করবো]
#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ১০
শিহাব গনিত বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ডজন খানেক নৌকা বানিয়েছে বৃষ্টির পানিতে ভাসানোর জন্য। সন্ধ্যা হতে না হতেই শুরু হয়েছে মেঘের গর্জন। মিসের কথা সে কিভাবে অমান্য করবে, তাই বৃষ্টি শুরু হবার আগেই গনিত বই ছিঁড়ে নৌকা বানিয়ে বানিয়ে জরো করছে শিহাব।
ওয়াহাব কফির কাপ নিয়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে ঠিক তখনি তার চোখ পড়লো শিহাবের দিকে৷ বই ছিঁড়ে নৌকা বানাচ্ছে দেখে, থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। বইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো বইয়ের নাম, ❝ ছোটদের গানিতিক সমস্যার সমাধান ❞। অংক শিহাবের অপছন্দ তা ওয়াহাবের জানা আছে তাই বলে বই ছিঁড়ে নৌকা?
ওয়াহাব ঘরে ঢুকলো, শিহাব এক নজর তাকিয়ে আবারো নৌকা বানাতে মন দিলো। ওয়াহাব স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” কি করছো শিহাব?”
” নৌকা বানাচ্ছি মামু। ”
” সেটা তো আমিও দেখতে পাচ্ছি৷ কিন্তু গনিত বই ছিঁড়ে ফেললে কেনো? ”
” মিস আমাকে পড়তে বলেছিলো, পড়তে ইচ্ছা না করলে নৌকা বানিয়ে বৃষ্টির পানিতে ভাসাতে বলেছে। ”
ওয়াহাব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভাবলো এ কেমন মিস, যে স্টুডেন্ট কে পড়তে ইচ্ছা না করলে বই ছিঁড়ে নৌকা বানাতে বলে। শিহাবের মিস কে দেখার জন্য কৌতুহল মনে নাড়া দিচ্ছে। হঠাৎ মেঘের গর্জনে ওয়াহাবের ধ্যান ভাংলো। চারিদিকে বৃষ্টি শুরু হতে লাগলো৷ কাল বৈশাখী ঝড়।
শিহাব বললো, ” মামা নৌকা ভাসাতে যাবে? ”
” কোথায়? ”
” বাইরে। ”
ওয়াহাব অবাক হয়ে বললো, ” এই বৃষ্টির মধ্যে? ”
” বৃষ্টি কমলে৷ ”
ওয়াহাব এক নজর বাইরের দিকে তাকালো বৃষ্টি কমবে বলে মনে হলো না। ওয়াহাব কফি খাচ্ছে এবং শিহাবের নৌকা বানানো দেখছে। শৈশবে ওয়াহাব নিজেও এভাবে নৌকা বানাতো, তবে তা পাঠ্য বই দিয়ে নয়৷ অপ্রয়োজনীয় কাগজ দিয়ে। তানিয়া আপু এক বার তাকে নৌকা বানানো শিখিয়ে ছিলো। ওয়াহাব পরবর্তীতে তার ছোট ভাই ইলহাম কে-ও নৌক বানানো শিখিয়ে ছিলো।
শৈশবের স্মৃতি তে ডুব দিলো ক্ষনিকের জন্য৷ ওয়াহাবের শৈশব কেটেছে গ্রামের বাড়িতেই। তিন সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শহরে বাস ভবন তৈরি করেন। ক্লাস এইটে পড়া কালিন ওয়াহাবের শহরে চলে আসা…
” মামু ”
ওয়াহাব শিহাবের দিকে তাকালো, ধীরে ধীরে বর্তমানে ফিরে এলো, ” হুম। ”
” বৃষ্টি থেমে গেছে, চলো বাইরে যাই। ”
ওয়াহাব বাইরের দিকে তাকালো, সত্যিই বৃষ্টি থেমে গেছে কফির কাপে কফিও কাপের তলায় পড়ে আছে বৃষ্টির সাথে সাথে সে ও হয়তো অতীতে থমকে গিয়েছিলো৷ ওয়াহাব খুব ভালো করেই জানে শিহাব যা বলে তাই করে, তাকে আটকিয়ে রাখার কনো উপায় নেই। ওয়াহাব না গেলে হয়তো শিহাব একাই রাস্তায় চলে যাবে নৌকা ভাসাতে।
কফির মগ টা রেখে ওয়াহাব বললো, “চলো। ”
–
–
ছাতা নিয়ে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াহাব। টুপ টাপ বৃষ্টি পড়ছে। ওয়াহাব নিজে ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে থাকলেও শিহাব কে কোন মতেই ছাতার ভেতর নিতে পারছে না।
সে নিজের মতোই নৌকা ভাসিয়েই চলেছে। গেটের চারি পাশ সাদা কাগজে কালো অক্ষরে নৌকা ভেসে চলেছে৷
দ্বিতীয় তলা থেকে তানিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছেলের কান্ড দেখছে। কাজে সহকারী মহিলা তানিয়ার পেছন থেকে বলে উঠলো,
” শিহাব ভাইয়ের ঠান্ডা লাগবো তো। ”
” লাগুক ঠান্ডা। কত দিন পর আমার ছেলে টা প্রান খুলে আনন্দ করছে দেখতে পারছো খালা। ”
সহকারী মহিলা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। তানিয়া ছল ছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” চব্বিশ ঘণ্টা বাবা বাবা করেই কাটেয়ে দিতো ছেলে টা। মানহা মেয়েটা আসার পর থেকে ছেলেটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছে। হাসছে, খেলছে পড়ছে। ”
সহকারী মহিলা তানিয়ার কাঁধে হাত রেখে বললো, ” কেঁদো না মা। জামাই বাবা একদিন ঠিক সব কিছু বুঝতে পারবে। ”
” পারবে না খালা। সেই পথ আর নেই। ” বলেই চুপ করে রইলো তানিয়া।
———————————————–
সকাল দশটা কি সারে দশটা বাজে। শাহবাগ থানার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তানহা৷ আদোও সে জানে না পুলিশের কাছ থেকে সে কোন নিরাপত্তা পাবে কি না। ছোট বেলা থেকেই পুলিশের ব্যাপারে তার একটা ধারণা আছে পুলিশেরা কাগজে দাগ দিলেও ঘুষ চায়৷
” কাকে চাই?” হঠাৎ কারো কন্ঠে তানহার ধ্যান ভাংলো। তাকিয়ে দেখলো। পঁচিশ -ছাব্বিশ বছরের একজন পুলিশ যুবক তার দিকে প্রশ্ন ছুড়েছে৷
” জিডি করতে এসেছি। ”
” চুরির কেস নাকি? ”
তানিহা লোকটার নেইম প্লেটের দিকে একনজর তাকিয়ে দেখলো, লোকটার নাম হারুন রশীদ। অতঃপর বললো,
” না। ”
” তাহলে?”
“ব্লেক মেইলের কেস। কোথায় জিডি লেখা হয়? ”
হারুন রশীদ খানিক অবাক হয়ে তকালো, ক্ষানিকটা বিড় বিড় করে কিছু একটা বললো৷ অতঃপর বললো, ” সামনে গিয়ে বাম পাশে চার নম্বর টেবিলে ডিজি লেখা হয়। ”
তানহা কিছু না বলে হেটে চলে গেলো, এবং লোকটা ওকি টকি নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে শুরু করলো। চার নম্বর টেবিলে আসতেই দেখতে পেলো সামনে একজন যুবক বসে আছে, হাতে কলম নিয়ে ঝিমুচ্ছে, তানহা হঠাৎ বললো,
” এক্সকিউজ মি! ”
লোকটা তাড়াহুড়ো করে বললো, “আমাকে বলছেন? ”
“জ্বি। আপনি জিডি লিখেন? ”
” হ্যাঁ। কি জিডি করতে চান?”
তানহা একে একে সব কথা খুলে, বললো। ওকিটকি তে কথা বলা হারুন রশীদ আড়াল থেকে সব কথা শুনলো। জিডি লেখা শেষ করে বললো, ” আপনার কাছে কোন প্রমাণ আছে?”
” না। ”
ছেলেটা ক্ষানিকটা অবাক হয়ে বললো, ” প্রমাণ নেই?”
” কেনো আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? ”
” না মানে কোন প্রমাণ থাকলে আপনার জিডি আরো স্ট্রিং হতো। ”
” জিডি কার্যকর হবে কবে?”
” সঠিক বলতে পারছি না। ওসি স্যার এপ্রুভাল দিলেই কার্যকর হবে। ”
তানহা কিছু বললো না। মনে মনে নিজের ওপর ভিষণ রাগ লাগছে৷ কেনো যে এখানে আসতে গেলো। তার কেস যে খুব খুটিয়ে দেখবে এদের লক্ষন দেখে তো মনে হচ্ছে না। দু দিন না যেতেই ফাইলের নিচে তার জিডির কাগজ ও জমা হয়ে স্তপের মাঝে পড়ে থাকবে।
” ম্যাডাম, এস আই স্যার আপনাকে ডেকেছেন। ”
তানহা তাকিয়ে দেখলো, থানার ঢুকতেই যেই লোকটার সাথে তার কথা হয়েছে সেই লোকটা। তানহার ভীষণ অবাক লাগছে, এই শুনে যে এস আই তাকে ডেকেছে। তানহা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
” আমাকে ডাকছে? কিন্তু ওনার সাথে আমার পূর্বের কোন পরিচিতি নেই। ”
” এটা আপনি ওনাকে জিজ্ঞেস করবেন। বরাবর রুমটাই স্যারের৷ ” ইশারায় দেখিয়ে লোকটা চলে গেলো।
তানহা কিছু একটা ভেবে রুমটায় চলে গেলো। দরজায় কড়া দরজায় কড়া নেড়ে বললো, ” আসতে পারি। ”
ভেতর থেকে কেউ কিছু বললো না। তানহা একটু অপেক্ষা করে বললো, ” এস আই সাহেব, আসতে পারি? ”
এবারো ভেতর থেকে কোন উত্তর না পেয়ে তানহা বিরক্ত বোধ করলো৷ চুপ করে ক্ষানিক ক্ষন দাঁড়িয়ে চলে এলো৷ মনে মনে বিড় বিড় করে বললো, ” কি লোক রে বাবা। ডেকে নিজেই উধাও। উধাও যেহেতু হবে সেহেতু ডাকার কি দরকার । ”
তানহার রাগে গাল লাল হয়ে গেলো।
অপর পাশে সি.সি ক্যামেরার তানহার কর্ম কান্ড দেখে। তীক্ষ্ণ হাসি ফুটে উঠলো, সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে বললো,
” দ্যা গেইম স্টার্ট নাও ” বলেই মুচকি হাসি দিলো।
তানহা জিডির ডেস্কের সামনে গেলো। জিডি লেখা পুলিশ যুবক ফোন ঘাটাঘাটি করছে বসে৷ তানহা বললো, ” তদন্ত শুরু হবে কবে?”
ছেলেটা এক নজর তাকিয়ে বললো ” কিসের তদন্ত? ”
তানহা হতবম্ভ হয়ে বললো, ” কিসের তদন্ত মানে? আমি যে জিডি করলাম তার তদন্ত। ”
” অহ। অপেক্ষা করতে হবে ম্যাডাম। এখন আসতে পারেন৷ ” বলেই লোকটা আবারো ফোনে মনোযোগ দিলো।
।
।
চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই
Story by Ruhi jahan আমার পেইজ টিতে লাইক দেওয়ার অনুরোধ রইলো 🌹