শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ১৯

0
3689

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ১৯

🌼
রোশনি যখন অফিস থেকে বের হলো তখন শেষ বিকেল চলছে।চারপাশের মৃদু বাতাসে ভ্যাপসা গরম অনেকটাই কমে এসেছে তখন।সূর্যের তাপও খুব একটা গায়ে লাগছে না।রোশনি তাড়াহুড়ো করে কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে দ্রুত গেট পেরিয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালো।রিকশার জন্যে কতক্ষন অপেক্ষা করতে হবে কে জানে? আজ কাল রিকশাওয়ালাদেরও এ্যাটিটিউড বেড়ে গেছে।খুব সহজে তাদের দেখা মেলে না।রোশনি রাস্তার পাশে দাড়িয়ে রিকশার অপেক্ষা করতে লাগলো।হঠাৎই চোখ গেলো রাস্তার একপাশে দাড় করানো কালো রঙের আকর্ষনীয় গাড়িটার দিকে।এক মুহূর্তও লাগলো না গাড়িটাকে চিনতে।এটা যে ওই অসভ্য,বদমেজাজি ফাজিল লোকটার গাড়ি তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো রোশনি। ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন গাড়িটার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো।লোকটা কি এখনো অফিস থেকে বের হয় নি? রোশনি ভেবে পায় না একটা মানুষ সারাক্ষণ কি করে কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে পারে? হ্যা কাজ করা খারাপ নয়।কিন্তু সব কিছুরই একটা লিমিটেশন থাকে।লিমিটের বাইরে কোনো কিছুই ভালো নয়।হঠাৎ করেই রোশনি বুঝতে পারলো সে বিরক্ত হচ্ছে।লোকটাকে নিয়ে ভাবাটায় একটা বিরক্তিকর কাজ।ইনফ্যাক্ট লোকটা নিজেও আস্ত একটা বিরক্তির ড্রাম।রোশনির বিরক্তিটা আরো বাড়লো এই রিকশার জন্যে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে।একটা রিকশার জন্যে সে হা হুতাশ করে মরছে তবুও রিকশার খোজ নেই।রোশনি দুরে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কোনো রিকশা আসছে কি না।রিকশার টিকি টা পর্যন্ত চোখে পড়লো না রোশনির।রোশনি যদি একদিনের জন্যে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতো তাহলে বাংলাদেশ থেকে এই রিকশা নামক বিশ্রী জিনিটাই তুলে দিতো।যদিও রাজনীতি দু চোখে সহ্য করতে পারে না সে।তবুও এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে একদিনের জন্যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যে তার অবশ্যই রাজনীতিতে যোগদান করা দরকার ছিলো।রোশনি ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে হাটতে শুরু করলো।আজ সে হেটে হেটেই বাড়ি যাবে। রিকশাওয়ালারা যদি ওর রিকশায় না ওঠা নিয়ে মরেও যায় তবুও সে রিকশাতে উঠবে না।কিছুতেই না।অধিরের গাড়িটা পাড় করে চলে গিয়েও আবারো ফিরে এলো রোশনি।একটু নিচু হয়ে দেখার চেষ্টা করলো ভেতরে কেউ আছে কি না।কিন্তু কালো কাচের জন্যে ভেতরের কোনো কিছুই দেখা গেলো না।উল্টে নিজের চেহারায় ফুটে উঠলো কাচে।রোশনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে নিজের চুলগুলো ঠিক করতে লাগলো।ব্যাগ থেকে লিপস্টিকটা বের করে ঠোটে লিপস্টিক দিতে দিতে রিকশাওয়ালাদের ইচ্ছেমত গালি দিতে লাগলো।রোশনি আরো একবার নিজেকে দেখে নিয়ে লিপস্টিকটা ব্যাগে ঢুকাতে গিয়েও থেমে গেলো।মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এসেছে।রোশনি নিজের মনেই বিড়বিড় করে উঠলো,

_ব্যাটা অসভ্য ফাজিল লোক।আমাকে সব সময় ঝাড়ি মারিস তাই না?আমাকে তুই থাপ্পড়ও মেরেছিস সব মনে আছে আমার।তোর মুখের উপর কিছু বলতে না পারলেও আজ বুঝবি রোশনি কি জিনিস।দাড়াও চান্দু,,,,,যখন তুমি অফিস থেকে বেরিয়ে নিজের ফেভারিট গাড়ির কাছে আসবে তখন তোমাকে চমকে দেওয়ার ব্যবস্থায় করছি আমি।

রোশনি লিপস্টিক দিয়ে গাড়ির কাচের উপর ইচ্ছে মত আঁকিবুঁকি করতে লাগলো।লিপস্টিকটার উপর যদিও ভিষন মায়া হচ্ছে তবুও সে পিছু হটবে না।ওই অসভ্য লোকটাকে চমকে দিতে এমন হাজারো লিপস্টিক সে কুরবান করতে রাজি।রোশনি কাচের উপর বড় বড় করে অসভ্য,ফাজিল,গোমড়ামুখো,,,,, মাথায় যা এলো সব লিখে গাড়ির কাচ ভরে ফেললো।লেখা শেষ করে সোজা হয়ে দাড়িয়ে শয়তানি হাসলো রোশনি।এসব দেখে অসভ্য লোকটার মুখের অবস্থা কেমন হবে তা কল্পনা করতেই অদ্ভুদ আনন্দে ভরে উঠছে মন।রোশনির মনে হলো সে আরো একটা শব্দ লিখতে ভুলে গেছে।রোশনি তাড়াতাড়ি করে আবারো একটু ঝুকে দাড়ালো। অবশিষ্ট লিপস্টিক দিয়ে শব্দটা লেখার জন্যে হাত তুলতেই গাড়ির কাচ নেমে গেলো।কাচ নামতেই রোশনির মুখ আপনা আপনিই খুলে গেলো।অধিরকে দেখে শুকনো ঢোক গিললো রোশনি।নিজেকে এই মুহূর্তে অসহায় হরিনীর মত মনে হচ্ছে।আর অধিরকে হিংস্র সিংহ।যেন এখনি হামলে পড়বে।অধির গাড়িতে বসে ফোনে কথা বলছিল।কথা বলতে বলতেই খেয়াল করলো গাড়ির বাইরে রোশনি দাড়িয়ে চুল ঠিক করছে।ব্যাগ থেকে লিপস্টিক বের করে ঠোটে লাগাতে দেখে নিজের মনেই হাসছিলো অধির।রোশনিকে বিড়বিড় করে কিছু বলতে দেখে অধির ফোন কেটে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে।রোশনি যখন লিপস্টিক দিয়ে গাড়ির গ্লাসে কিছু লিখছিলো তখন ভ্রু কুচকে যায় অধিরের।এদিকে অধিরকে দেখে মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে শুরু করে রোশনি।অধির যে ওর কি অবস্থা করবে এখন সেটা ভেবেই গলা শুকিয়ে আসছে।অধিরের চোখ মুখ গম্ভির।অধির গাড়ির দরজা খুলতেই কয়েক কদম পিছিয়ে গেল রোশনি।অধির গাড়ি থেকে নেমে রোশনির সামনে এসে দাড়ালো।গাড়ির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে লেখা গুলো পড়ে।চোয়াল শক্ত করে রোশনির দিকে তাকাতেই রোশনির জান যায় যায় অবস্থা হয়।যাকে বলে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি টাইপ মোমেন্ট।অধিরকে এভাবে তাকাতে দেখে রোশনি কুলকুল করে ঘামতে শুরু করলো।সেই সাথে শুরু হলো চিরপরিচিত হিচকি।রোশনি বাম হাতে কপাল আর গলার ঘামটুকু মুছে ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলো,

_পানি খাবো।

রোশনির কথায় অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেলো অধির।এই মুহূর্তে যে রোশনি এমন কিছু বলে বসবে সেটা কল্পনাও করে নি অধির।যাকে দেখে ভয়ে ঘেমে নেয়ে রিতিমত কাপাকাপি করছে তাকেই বলছে পানি খাবো।রোশনি কথাটা বলে নিজেই নিজেকে বকতে লাগলো মনে মনে।ভয়ের চোটে কি বলতে কি বলছে বুঝতেই পারছে না।সামনে দাড়ানো বিশাল দেহী লোকটা এখন নিশ্চয় কষিয়ে দু চারটা চড় থাপ্পড় দেবে।এবার যে একটাতে উনি শান্ত হবেন না সে বিষয়ে নিশ্চিত রোশনি।আগের বার একটাতে থামলেও এবার মনে হয় সেই রেকর্ড ভেঙে দু চারটা পড়বে।রাস্তায় দাড়িয়ে এভাবে মাইর খাওয়া বিষয়টা ভিষনই বিশ্রী একটা ব্যাপার হয়ে দাড়াবে।রোশনি আশে পাশে তাকিয়ে মানুষ গুনতে লাগলো।রাস্তার এদিক ওদিক মিলিয়ে ছয় সাত জনের মত মানুষের আনাগোনা চোখে পড়লো।তবুও ভালো,,,এদিকটায় তেমন কোনো মানুষ আসে না।রোশনি এবার ভয়ে ভয়ে তাকালো অধিরের দিকে।নিজেকে চড় খাওয়ার জন্যে প্রস্ততও করে নিলো।কিন্তু রোশনিকে অবাক করে দিয়ে অধির গাড়ি থেকে পানির বোতল বের করে রোশনির সামনে ধরলো।অধিরের এমন কাজে আপনা আপনিই হিচকি বন্ধ হয়ে গেলো রোশনির।চোখে মুখে ভর করলো পাহাড় সমান বিষ্ময়। লোকটা তাকে থাপ্পড় না মেরে পানির বোতল এগিয়ে দিচ্ছে।ব্যাপারটা স্বাভাবিক লাগছে না রোশনির কাছে।রোশনির ইচ্ছে করছে অধিরের কপালে হাত দিয়ে জ্বর পরিক্ষা করতে।কোথাও জ্বরের ঘোরে এমন করছে না তো? কারন এই কয় দিনে অধিরকে ও যতোটুকু চিনেছে তাতে অধিরের এখন রেগেমেগে ওকে দু চারটে চড় থাপ্পড় মারা উচিত ছিলো।অধির চড় মারলে সেটা স্বাভাবিক মনে হতো রোশনির কাছে কিন্তু অধির যা করলো এটা ভিষনই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে ওর কাছে।রোশনিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিরক্তিতে মুখ কুচকালো অধির।

_কি হল এভাবে হ্যাং মেরে দাড়িয়ে আছো কেন? একটু আগেই তো বললে পানি খাবে।হিচকি তুলে আবার অফও করে দিলে।কথা বলছো না কেন?হিচকির সাথে সাথে কি কথা বলার শক্তিও চলে গেলো নাকি?

অধিরের এমন কথায় মাথা ঘুরাতে শুরু করলো রোশনির।লোকটাকে কি জ্বিনে আচড় করলো? কেমন অদ্ভুদ বিহেভ করছে।রোশনির সন্দেহ হচ্ছে এটা আদৌও অধির চৌধুরি তো?নাকি ওনার রুপে অন্য কেউ?রোশনি আর ভাবতে পারছে না।মাথা ঘুরাচ্ছে।রোশনি অধিরের হাত থেকে পানির বোতল এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে ঢকঢক খেতে শুরু করলো।রোশনিকে এভাবে পানি খেতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো অধির।রোশনি বোতলের সবটুকু পানি শেষ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো।অধির এক ভ্রু উচু করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।

_গাড়িতে কি করছিলে এসব?তা রাগ কমেছে আমার উপর? নাকি পুরো গাড়িতে পেইন্টিং করে তবে কমবে?

অধিরের শান্ত কথাতেও ভয়ে কাপতে লাগলো রোশনি।ঝড় আসার আগে পরিবেশ যেমন শান্ত থাকে এখন তেমনটাই মনে হচ্ছে রোশনির কাছে।এটা নিশ্চয় ঝড় আসার পূর্বাভাস। রোশনি বার দুয়েক ঢোক গিলে কিছু বলতে যাবে তার আদি রাস্তার ওপর পাশ থেকে অধিরকে ডেকে উঠলো।অধির আদির দিকে তাকাতেই সেই সুযোগে অধিরের সামনে থেকে সরে পড়লো রোশনি।কাধে ঝুলানো ব্যাগটাকে শক্ত করে চেপে ধরে দৌড়াতে শুরু করলো।অধির আদিকে এদিকে আসতে বলে পিছনে ফিরতেই দেখে রোশনি নেই।অধির ভ্রু কুচকে এদিক ওদিক তাকিয়েও রোশনির হদিস পেলো না।এতো তাড়াতাড়ি কোথায় হাওয়া হয়ে গেল কে জানে?আদি এসে অধিরের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই চোখ গেল গাড়ির কাচের দিকে।ওখানে লেখা শব্দ গুলো পড়েই মুখে হাত দিলো আদি।গলার স্বর উচু করে বলে উঠলো,

_হায় আল্লাহ,,,,,এসব কি? কে লিখেছে এসব?কার এতো বড় সাহস অধির চৌধুরির গাড়িতে এসব লেখে?তুমি শুধু নামটা একবার বলো।আমি নিজে খুজে বের করবো তাকে।খুজে তার সাথে এতটা সেলফি আর একটা অটোগ্রাফ নেবো।এমন সাহসী একটা মানুষের সাথে ছবি তো তুলতেই হবে।আর সেই ছবি আমি ড্রয়িংরুমে বড় করে বাধিয়ে রাখবো।আমার আর সহ্য হচ্ছে না।তুমি তাড়াতাড়ি নামটা বলো ভাইয়া।কে সেই দুঃসাহসী ব্যাক্তি?

আদির কথায় বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে এলো অধিরের।অধিরকে এমন চোখ মুখ কুচকে তাকাতে দেখে দমে গেল আদি।আমতা আমতা করে বলে উঠলো,

_না মানে এমন একজন দুঃসাহসী মানুষের সাথে সেলফি না তুললে হয় বলো? নোবেল দেওয়ার ক্ষমতা থাকলে আমি এখনি ছুটে গিয়ে দিয়ে আসতাম।সেটা যখন পারবো না তখন একটা সেলফি তো হতেই পারে।এমন দুঃ——-

আদিকে কথা শেষ করতে না দিয়ে অধির ওর হাত থেকে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিলো।গলার স্বর গম্ভির করে বলে উঠলো,

_ গাড়িটা ক্লিন করার ব্যবস্থা কর।

অধির চোখে সানগ্লাসটা পড়ে সামনের দিকে হাটা দিলো।পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো আদি,

_আমি বাড়ি যাবো কি করে? আমার গাড়ির চাবিটা তো দিয়ে যাও।

আদির কথায় পিছনে ফিরে তাকালো অধির।বাকা হেসে বলে উঠলো,

_এতোক্ষন যে থার্ডক্লাস কথাগুলো বললি এটা তার পানিশমেন্ট। ট্যাক্সি করে চলে যা নয়তো গাড়ি ক্লিন করা পর্যন্ত ওয়েট কর।সি ইউ,,,,

অধিরের কথায় ঠোট উল্টালো আদি।তার ভাইটা আসলেই একটা অসভ্য ফাজিল আর গোমরামুখো মানুষ।যে এই নামগুলো ওকে দিয়েছে সে একদম ঠিক নামই দিয়েছে তার ভাইকে।এখন তো ওই ব্যক্তিকে দেখার ইচ্ছেটা আরো বেশি করে হচ্ছে।কেন যে ভার্সিটি থেকে বাড়ি না গিয়ে এখানে আসতে গেল?

ঘড়িতে তখন বারোটা বেজে পাঁচ মিনিট।সোফার উপর বসে সামনের দিকে স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অধির।সামনে রাখা টি-টেবিল জুড়ে ছড়িয়ে আছে রোশনির অনেকগুলো ছবি।কিছু ছবি আজকের তোলা আর কিছু সেদিনের।যেদিন রোশনি পানিতে পড়ে যায় আর অধির তাকে বাচায়।গত এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে সে ছবিগুলোকে দেখে চলেছে।ভালো লাগছে দেখতে।অধির টেবিল থেকে কয়েকটা ছবি তুলে হাতে নিলো।একটা ছবিতে রোশনি আড় চোখে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে কাউকে আড় চোখে দেখছে।মুখ জুড়ে লজ্জার আভা।অন্য একটায় রোশনি হাতের চুড়িগুলো ঠিক করছে।এমন আরো অনেক ছবিতে চোখ বুলালো অধির।হঠাৎ একটা ছবিতে চোখ আটকে গেলো।সেদিন পুলে রোশনি যখন অধিরকে জড়িয়ে ধরে বলছিল,”প্লিজ আমায় ধরে রাখুন””তখন রোশনির ঠোট অধিরের গলায় স্পর্শ করছিল।ছবিটা তখনকারই।রোশনি দুহাতে আকড়ে ধরে আছে অধিরকে।আর অধিরও শক্ত করে নিজের সাথে ধরে রেখেছে রোশনিকে।ছবিতে দুজনের চোখই বন্ধ।অধিরের আবারো সেদিনের কথাগুলো মনে পড়ে গেল।সেদিন কতোটা কাছে ছিল রোশনি।অধির চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো।ছবিগুলো খুব যত্নে তুলে রাখলো ড্রয়ারে।ছবিগুলো রাখতেই চোখ গেলো ড্রয়ারের এক কোনায় পড়ে থাকা ছোট্ট ঝুমকোটার দিকে।অধির ঝুমকাটা তুলে চোখের সামনে ধরতেই রোশনির মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।মেয়েটা আস্তে আস্তে তার মায়ায় জড়িয়ে নিচ্ছে ওকে।অধিরেরও ইচ্ছে করছে ওর মায়ায় নিজেকে জড়াতে।অধির ঝুমকাটাকে আলতো হাতে ছুঁইয়ে আবারো রেখে দিলো আগের জায়গায়।এরপর লাইট অফ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।

আজ ছুটির দিন।চৌধুরি ম্যানশনের ছোট বড় সবাই জড়ো হয়েছে এক জায়গায়।বাগানে পেতে রাখা সোফায় গোল হয়ে বসে প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় নানা কথায় মত্ত হয়েছে তারা।সামনের গোল টেবিল জুড়ে পিজ্জা,বার্গার থেকে শুরু করে সামুচা সবই রয়েছে।সাথে রয়েছে চায়ের কাপ।সবাই যখন খেতে ব্যস্ত তখন আদি গভির মনোযোগ নিয়ে তাকিয়ে আছে পিজ্জার দিকে।কপালে চিন্তার ভাজ।অনেকক্ষণ ধরেই সে কিছু একটা ভেবে চলেছে।কিন্তু কিছুতেই বিষয়টা ক্লিয়ার হচ্ছে না।আদিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাশ থেকে সাহিল বলে উঠলো,

_কিরে এমন হ্যাং মেরে আছিস কেন?আর পিজ্জা না খেয়ে ওমন তাকিয়েই বা আছিস কেন? দেখ ভাই খেলে খাবি নয়তো ওমন ভাবে তাকিয়ে থাকিস না।নজর লেগে গেলে বহুত প্রবলেমে পড়ে যাবো।

সাহিলের কথায় কপাল আরো খানিকটা কুচকে গেলো আদির।বিরস গলায় বলে উঠলো,

_আমি না একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছি না।আই হেভ এ গভির প্রশ্ন।কাটাপ্পা বাহুবলীকে কেন মেরেছিল সেটা তো এখন ক্লিয়ার হয়ে গেছে।কিন্তু এই জিনিসটা কিছুতেই ক্লিয়ার হচ্ছে না।দেখো,,,,পিজ্জা গোল হয়। বক্স স্কোয়ার আর পিস ট্রাইএ্যাঙ্গেল। এমনটা কেন হয়?

আদির কথায় সবাই সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে।সবার এমন তাকানোতে খানিক ঘাবড়ে গেলো আদি।তবে আদির কথাটা নেহাৎই তুচ্ছ নয়।কথায় লজিক আছে।এভাবে বিষয়টা আগে ভাবা হয়ে ওঠে নি কারো।কিছুক্ষন সবাই ভাবনায় মত্ত থেকে নড়ে চড়ে বসলো।পিজ্জা গোল হোক বা লম্বা,,আর তার বক্স স্কোয়ার হোক বা সার্কেল তাতে কার কি এসে যায়? পিজ্জা খেতে পেলেই হলো।এসব ফালতু চিন্তা ছাড়াও তাদের চিন্তা করার মত আরো অনেক টপিক আছে।তাই ওর কথায় খুব একটা পাত্তা না দিয়ে আবারো খাওয়ায় মনোযোগ দিলো সবাই।কিছুক্ষন আদির দিকে তাকিয়ে থেকে ওর পিঠে চাপড় দিয়ে উঠলো সাহিল।আদিল চমকে তাকাতেই গালের উপর আস্তে করে চড় বসালো।আদি গালে হাত দিয়ে ঠোট উল্টালো।মুখে অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে দাদির দিকে তাকিয়ে অনুযোগের সুরে বলে উঠলো,

_দাদি দেখো তোমার নাতি আমায় কিভাবে মারছে।যদি ওর মাইরের কারনে আমার সুন্দর চেহারাটা খারাপ হয়ে যায় তখন আমি সুন্দর মেয়েদের সামনে মুখ দেখাবো কি করে?

আদির কথায় রিয়া ফিচেল হেসে মুখ খুললো,

_কি আর করবি ভাইয়া,,,মুখ ঢেকেই না হয় ঘুরে বেড়াবি।এমনিতেও তোর ওই শয়তানি মুখ দেখে দেখে হাপিয়ে গেছে মেয়েরা।ওদের ওপর তো এটুকু দয়া দেখাতেই পারিস।এখন থেকে তুই বরং চোরের মত মুখ ঢেকে বের হইস।

কথাগুলো বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো রিয়া।ওর সাথে তাল মেলালো বাকি সবাইও।আদি রিয়ার চুল ধরে টানতেই রিয়াও আদির চুল খামচে ধরলো।দুজন দুজনের চুল টানাটানি করতে শুরু করে দিলো।ওদের এমন কান্ডে সবাই ভিষন বিরক্ত।এতো বড় হওয়ার পরেও সেই ছোট বেলার মত মারামারি এখনো গেলো না।সাহিলের বাবা ইমায়েত চৌধুরি ধমকে উঠতেই দুজনে চুল ছেড়ে শান্ত হয়ে বসলো।চোখ দিয়ে দুজন দুজনের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে রইলো যেন চোখ দিয়েই দুজন দুজনকে ভৎস করে দেবে।পিজ্জার মাত্র একটুকরোই পড়ে আছে টেবিলে।আদি আর রিয়া একবার একে অপরকে দেখছে তো এতবার পিজ্জার টুকরোটাকে দেখছে।রিয়া বাকা হেসে হাত বাড়াতেই আদি ওমনি পিজ্জার টুকরোটা তুলে নিয়ে দৌড় দেয় বাড়ির মধ্যে।রিয়াও বকতে বকতে তেড়ে যায় আদির দিকে।আজ যে করেই হোক আদির থেকে ওটা নিয়েই ছাড়বে সে।নিজে খেতে না পারলেও আদিকে সে খেতে দেবে না।কিছুতেই না।ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভুস করে নিশ্বাস ছাড়লো সবাই।তারপর আবারো গল্পে মত্ত হলো।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here