সংগোপনে’ পর্ব-৫৪

0
1103

#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_৫৪
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস

আগের পর্বের পর————-

ঠিক কতক্ষন কুহেলি একই ভাবে বসে আছে ওর জানা নেই, চোখের জল গুলোও যেন ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে এসেছে ঠিক ওর মতই। আশেপাশের সবকিছুই কেমন যেন শূন্য মনে হচ্ছে, একদৃষ্টে শুধু তাকিয়ে আছে ডায়েরির খোলা পাতাটার দিকে। একটা অসম্ভব যন্ত্রণা যেন দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিচ্ছে ওকে, কথা বলতে চাইছে কুহেলি। এমন কারোর সঙ্গে কথা বলতে চাইছে যাকে সবটা বলতে পারবে। এতদিন আলেখকে নিজের মনের কথা গুলো বলে এসেছে, ওর সুখ দুঃখের সমান অংশীদার আলেখ। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্য, এই বেদনা যতটা কুহেলির তার থেকেও অনেক অনেক গুণ বেশি আলেখের। কুহেলির অন্তরটা শুধু একটা কথা ভেবেই শুকিয়ে যাচ্ছে, যখন আলেখ এটা জানতে পারবে তখন কি হবে? কুহেলি কিচ্ছু ভাবতে পারছে না, সব কিছু এমন একটা জটিল পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যেখানে দাড়িয়ে কুহেলির সাধারণ চিন্তা শক্তি টুকু পর্যন্ত কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কাকে বলবে সে? কোথায় যাবে? কি করবে? এমন হাজারও প্রশ্নের ভিড়ের মাঝে বিষাক্ত তীক্ষ্ম তীরের ফলার মত বিদ্ধ হচ্ছে নভতেজ বাবুকে হারানোর ভয়, আলেখের ভেঙে পড়ার ভয়। বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে। ছোট থেকে যখনই কুহেলি কষ্ট পেয়েছে দুঃখে মনটা ভরে এসেছে তখনই সে ছুটে যেত একজনের কাছে। সবার আগে সেই মানুষটার কথাই মনে পড়ত কুহেলির, কারণ মানুষটা ওর কিছু বলার আগেই বুঝে যেত সবটা। আজও কুহেলির সেই মানুষটার কথাই মনে পড়ল, পাশে থাকা ফোনটা হাতে নেওয়ার আগেই সেটা যান্ত্রিক সুরে বেজে উঠল। স্ক্রীনের উপর ভেসে ওঠা নামটা দেখে কুহেলি আবার ফুপিয়ে কেদে উঠল, দ্রুত হাতে কলটা রিসিভ করেই ভেঙে পড়ল কান্নায়।

ঠাম্মু, কেন এমন হল ঠাম্মু, কেন?

একেই হয়তো বলে টেলিপ্যাথি। কুহেলির কষ্টটা কোনও অদ্ভুত উপায়ে হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে থাকা মানুষটার মনেও সৃষ্টি করেছে এক অজানা অস্বস্তির। শৈলজা দেবীর মনটা সকাল থেকেই বড্ড আনচান আনচান করছিল, মনে হচ্ছিল তার কুহুর হয়তো তাকে দরকার। তাই পারত পক্ষে যে মুঠোফোন টাকে তিনি ছুয়েও দেখেন না আজ সেই ফোনটাই তুলে নিয়েছিলেন হাতে। এছাড়া আর উপায়ও তো ছিল না, চৈতালী দেবী নার্সিংহোমে আর মান্তু সারাদিনের কাজের পর একটু ঘুমিয়েছে। কিন্তু তিনি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলেন না, মনটা বারবার বলছিল তার কুহু ভালো নেই। তাই শেষ পর্যন্ত তার কুহুরই শেখানো উপায়ে ফোন করেছেন কুহেলিকে। তার আশঙ্কা কে এইভাবে সত্যি করে দিয়ে কুহেলি যে এইভাবে কান্নায় ভেঙে পড়বে সেটা হয়তো আন্দাজ করতে পারেননি। এইসময়ে সাধারণত প্রথম যে আশঙ্কা টা সবার মনে আসে শৈলজা দেবীর মনেও সেই আশঙ্কা টাই উকি দিল। ভয়ে আশঙ্কায় তার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল, ব্যস্ত হয়ে বললেন,

কি হয়েছে কুহু? কি হয়েছে মা? বল আমাকে, তুই ঠিক আছিস তো? তোর কিছু হয়নি তো? কাঁদছিস কেন মা?

কুহেলি যেন নিজের কষ্ট গুলো উজাড় করে দিতে চাইছে, বহু চেষ্টা করেও নিজেকে সামলাতে পারল না। কুহেলির অনবরত কান্নার আওয়াজ যেন শৈলজা দেবীর বুকে আশঙ্কার মেঘের সঞ্চার ঘটাল। এখনও কুহেলি তার প্রশ্নের উত্তর দেয়নি, একভাবে শুধু কেদেই চলেছে। শৈলজা দেবীর চোখ দুটোও ভিজে এলো, তার হৃদয়ের টুকরো, তার কুহুর চোখে জল বুঝতে পারার পরে আর কি নিজেকে সামলে রাখতে পারেন? কুহেলি বেশ কিছুক্ষণ শুধুই কাদল, কোনও কথা সে বলতে পারল না। একসময় তার কান্নার স্রোত একটু কমে এলে শৈলজা দেবী উদ্বিগ্ন কণ্ঠে আবার প্রশ্ন করলেন,

বল মা কুহু, কি হয়েছে তোর? এইভাবে কেন কাদছিস? আমি জানি তোর কিছু একটা হয়েছে, সকাল থেকেই আমার কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। বল না কুহু, কি হয়েছে? তুই ঠিক আছিস তো? আর আমার ছোট্ট সোনা টা? কি হলো? বল না কুহু, আমার কিন্তু ভয় করছে কুহু।

কুহু অতি কষ্টে কান্না জড়ানো গলায় বলল,

আমি ঠিক আছি ঠাম্মু, আর সেও ঠিকই আছে।

শৈলজা দেবী যেন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। কিন্তু সমস্যা তো কিছু একটা হয়েছে, না হলে কুহেলি এত কেন কাদছে? শৈলজা দেবী আবার প্রশ্ন করলেন,

কি হয়েছে বল কুহু, তোরা ঠিক আছিস তাহলে কি হয়েছে? ওখানে সবাই ঠিক আছে তো?

কুহেলির কান্নার গতি আবার বৃদ্ধি পেল, কান্না ভেজা গলায় বলল,

না ঠাম্মু, কিচ্ছু ঠিক নেই, কিচ্ছু ঠিক নেই।

কেন রে মা? আলেখের কিছু……

আশঙ্কায় কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারলেন না শৈলজা দেবী। কুহেলি বলে উঠল,

না, আলেখ ঠিক আছে, ওর কিছু হয়নি কিন্তু কতদিন ঠিক থাকবে আমি জানি না ঠাম্মু। আমি সত্যিই জানি না।

শৈলজা দেবী কিছু বুঝতে পারছেন না, কিন্তু খুব খারাপ যে কিছু একটা ঘটেছে সেটা বুঝতে পারছেন। শঙ্কিত কণ্ঠে বললেন,

আমাকে খুলে বল কুহু, কি হয়েছে? কেন এরকম করছিস তুই?

কান্নায় যেন কুহেলির কণ্ঠ অবরুদ্ধ হয়ে আসছে। অতি কষ্টে সে মাত্র একটি শব্দ উচ্চারন করতে পারল,

ড্যাড।

শৈলজা দেবী উদ্বিগ্ন হয়ে বলে উঠলেন,

নভতেজ! ওর কি হয়েছে? কি হল কুহু বল।

কুহেলি অতি কষ্টে থেমে থেমে সবটা খুলে বলল শৈলজা দেবীকে। কান্না গুলো এখনও থামেনি, কিকরেই বা থামবে! এক নিমেষেই যে কুহেলির সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেছে। শৈলজা দেবীও শুনে খুব কষ্ট পেলেন, তার ঈষৎ ভেজা চোখ দুটোর কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল নোনা জলের ধারা। প্রথম দিন দেখেই খুব ভালোলেগেছিল নভতেজ বাবুকে, প্রাণখোলা মানুষটাকে কার না ভালো লাগবে? সেই মানুষটার মনে এত কষ্ট লুকিয়ে ছিল! আপনজন কে হারানোর দুঃখ টা তিনিও বোঝেন। অকালেই হারিয়েছিলেন স্বামীকে আর তারপরে নিজের একমাত্র সন্তানকেও। প্রিয়জন কে হারানোর কষ্টটা তাই তিনি খুব ভালো করেই বোঝেন। নভতেজ বাবুর মনেও কষ্ট থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়, কিন্তু হাসিখুশি মানুষ টাকে দেখে কখনও মনে হয়নি নিজের মনের গভীরে এত বেদনা লুকিয়ে রেখেছেন। তাও তো ছেলে পুত্রবধূ নিয়ে ভালই থাকতে পারতেন, এখন তো ওনার ঘরে নতুন অতিথিও আসতে চলেছে। বাকি জীবনটা তাদের নিয়েই সুখে শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু সেটাও হবে না? আর তার কুহু! মেয়েটা সেই ছোট্ট থেকে বাবার স্নেহ ভালবাসা কিছুই পায়নি। ছোটবেলায় অন্যদের বাবার হাত ধরে খেলতে দেখলে মেয়েটা কেমন মনমরা হয়ে যেত। তখন উনিই তো সামলিয়েছেন ওকে, চৈতালী দেবীর সঙ্গে মিলে অনেক চেষ্টা করেছেন যাতে বাবার অভাব সে বুঝতে না পারে কিন্তু কারোর জায়গা কেউ কি পূরণ করতে পারে! তবুও নভতেজ বাবু কুহেলিকে ঠিক নিজের মেয়ের মত করেই টেনে নিয়েছিলেন কাছে। মেয়েটা প্রথম উপলব্ধি করছিল বাবার স্নেহ কাকে বলে, জীবনের একটা শূন্যস্থান সবে পূর্ণ হয়েছিল কিন্তু আবার সেই স্থান টা শূন্যই রয়ে যাবে। সবথেকে বড় কথা আলেখ, কীকরে সামলাবে সে নিজেকে? সেই ছোট বয়সে মাকে হারিয়েছিল, এখন আবার বাবাকেও হারাতে হবে? ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে ছেলেটা, কীকরে সহ্য করবে এত কষ্ট? শৈলজা দেবী আপনমনে বিলাপ করে উঠলেন,

কেন মধুসূদন? তুমি এত নিষ্ঠুর কেন? তোমার সন্তানদের এইভাবে কষ্ট কেন দিচ্ছ? এ কেমন পরীক্ষা তোমার? ছেলে মেয়ে দুটোর কথা একবারের জন্যও ভাবলে না তুমি? এভাবে ওদের অনাথ করে দেবে তুমি? অত ভালো মানুষটার জন্য তুমি এই পরিণতি লিখে রেখেছ? কাউকে নিজের কাছে টানার হলে আমাকে নিতে পারতে, আমার আর কি প্রয়োজন বলো এই দুনিয়ায়? অনেক তো বাঁচলাম। এইভাবে ওদের মাথার ওপর থেকে পিতার ছায়া কেড়ে নিচ্ছ কেন?

ঈশ্বরের প্রতি নিজের ক্ষোভ উগরে দিতে দিতে একসময় শৈলজা দেবীও ভেঙে পড়লেন। কিন্তু এখন তো তাকে ভেঙে পড়লে হবে না, তিনি ভেঙে পড়লে তার কুহুকে সাহস যোগাবে কে? শৈলজা দেবী নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,

কুহু, মা আমার কথা ভালো করে শোন, আগে কান্না টা বন্ধ কর মা। ভুলে যাস না তুই এখন একা নোস, তোর শরীরে আরও একটা ছোট্ট প্রাণ আছে যার দায়িত্ব তোর। তুই এইভাবে কাদলে তার যে ক্ষতি হবে, কাদিস না মা, শক্ত কর নিজেকে।

জানি ঠাম্মু, কিন্তু কীকরে সামলাবো বলো নিজেকে।

সামলাতে হবে মা, তুই এইভাবে ভেঙে পড়লে আলেখকে কে সামলাবে? ওর কথা ভেবে দেখেছিস? যখন জানতে পারবে কি হবে একবারও ভেবেছিস?

ভেবেছি, আর সেটা ভেবেই আরও ভয় পাচ্ছি। ও সহ্য করতে পারবে না ঠাম্মু, ভেঙে পড়বে, আমি জানি।

তাহলে তুইই বল, তুই যদি এইভাবে ভেঙে পড়িস তাহলে ওকে কীকরে সমলাবি?

আমি জানি না ঠাম্মু, কিচ্ছু জানি না।

জানি না বললে হবে না কুহু। ভুলে যাস না আমরা মেয়েমানুষের জাত, এত সহজে ভেঙে পড়লে হবে না। প্রয়োজনে নিজের দুঃখ কষ্টকে ভুলে নিজের আপনজনদের আগলে রাখা আমাদের দায়িত্ব। আর এত গুরু দায়িত্ব টা আমাদের কেন জানিস তো? কারণ, আমাদের মধ্যে একটা অসীম শক্তির ভান্ডার আছে যা অন্য কারোর কাছে নেই। ঈশ্বর আমাদের সেইভাবেই গড়েছেন, পরিস্থিতি যেমনই হোক আমরা তাকে সামাল দিতে জানি। প্রয়োজনে আমরা সব পারি কুহু, তুইও পারবি, পারতে তোকে হবেই। তোর নিজের জন্য, আলেখের জন্য, তোদের সন্তানের জন্য।

কুহেলির ভেঙে পড়া দুর্বল মনটায় যেন শৈলজা দেবীর কথায় আবার নতুন করে শক্তির সঞ্চার হল। মনে মনে ভাবল,

সত্যিই তো, আমিই যদি এইভাবে ভেঙে পড়ি তাহলে আলেখকে কে সামলাবে?

নিজের পেটে একটা হাত রেখে বলল,

তোর কথা তোর পাপার কথা তো আমাকেই ভাবতে হবে, আমাকে ভেঙে পড়লে চলবে না। এখন আমার কষ্ট নিয়ে ভাবার সময় নয়।

শৈলজা দেবী বললেন,

কুহু, মা তুই কিন্তু ভুলেও আলেখের থেকে কিছু গোপন করার কথা মনেও আনবি না। এমনিতেই নভতেজ তোদের কাছ থেকে কথাটা গোপন করে ঠিক করেনি। জানি তোদের বিশেষ করে আলেখের কষ্ট কম করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কিন্তু এটা ঠিক নয়। ওর বোঝা উচিত ছিল একদিন না একদিন তো সত্য টা সবাই জানতে পারবেই। তখন কষ্ট যে আরও বেশি হবে সেটা হয়তো ভেবে দেখেনি। এখন তুইও সেই এক ভুল করবি না কুহু, এতে আলেখের কষ্ট বাড়বে বই কমবে না। আজ বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তুই আলেখকে এই কথাটা বলবি। আর হ্যা, পারলে নিজের চোখের জল গুলোকে আটকে রাখার চেষ্টা করিস।

তাই করব ঠাম্মু, তুমি চিন্তা করো না। আমি আলেখকে সবটা আজকেই বলব, আর ওর সামনে দুর্বল হব না। কিন্তু তার আগে আমাকে জানতে হবে ড্যাড কোথায় আছে, সত্যিই কি লন্ডনে আছেন নাকি অন্য কোথাও। লন্ডনে থাকলেও কোথায় আছেন কোথায় ট্রিটমেন্ট করাচ্ছেন এসব কিছুই জানি না ঠাম্মু, আগে এগুলো জানতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

ঠিক বলেছিস মা, আমি জানি তুই সবটা সামলে নিতে পারবি। নিজের খেয়াল রাখিস কুহু, জানি পরিস্থিতি খুব কঠিন কিন্তু তাও তোকে শক্ত হতে হবে।

জানি ঠাম্মু, আমি নিজের খেয়াল রাখব তুমি চিন্তা করোনা। তুমিও কিন্তু নিজের দিকে খেয়াল রাখবে, বেশি চিন্তা করবে না।

শৈলজা দেবী একটু হাসলেন, সত্যিই কি অদ্ভুত। একটু আগেই মেয়েটা কিভাবে ভেঙে পড়েছিল আর এখন দেখ… সত্যিই মেয়েদের অদ্ভুত কিছু ক্ষমতা আছে যা তারা নিজেরাও জানে না। নিজের কাছের মানুষ গুলোর সামনে নিজের কষ্ট দুঃখ সব তুচ্ছ মনে হয়। চোখের জল টুকু মুছে শৈলজা দেবী বললেন,

আমাকে নিয়ে ভাবিস না মা, আমি ঠিক আছি তুই এখন তোর কাজ কর।

হুম।

শৈলজা দেবী ফোন টা রেখে দেওয়ার পর কুহেলি ডায়েরিটা সযত্নে বন্ধ করে আবার জায়গা মতো রেখে এলো। আলেখের হাতে এই ডায়েরিটা না পড়াই ভালো, যা বলার কুহেলি নিজেই তাকে বলবে। ডায়েরিটা দেখলে হয়তো আরো বেশি কষ্ট পাবে ছেলেটা, এমনিতেই খবরটা শুনে আলেখের প্রতিক্রিয়া ঠিক কিরকম হতে পারে সেটা অনুমান করেই কুহেলির ভিতরটা কেপে উঠছে। কিন্তু না, এখন যে তার দুর্বল হওয়ার সময় নয়, এখন তার অনেক কাজ। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল আলেখের ফেরার এখনও কিছুটা সময় আছে, এখনই তার কাজ শুরু করতে হবে। কুহেলি সোজা নভতেজ বাবুর ঘরে চলে গেল, আতিপাতি করে খুঁজতে লাগল এমন কিছু যার থেকে সামান্যতম একটা সূত্র পাওয়া যায়। সাজানো ঘরের প্রতিটা জায়গা খুঁজে ফেলল কুহেলি, কিন্তু তেমন কিছুই পেল না যার থেকে নভতেজ বাবু কোথায় আছে তার সামান্যতম সূত্রও পাওয়া যায়। হতাশ হয়ে কুহেলি বসে পড়ল সোফায়, মনটা আবার দুর্বল হয়ে আসছে, কি করবে সে এখন? হঠাৎ কি মনে হতেই আবার সাবধানী অথচ দ্রুত পদক্ষেপে উঠে এলো স্টাডি রুমে। টেবিলের ওপর একটু খুঁজতেই পেয়ে গেল তার কাঙ্খিত বস্তুটা, একটা মাঝারি মাপের ডায়েরি। এটা নভতেজ বাবুর খুব পুরনো অভ্যাস, তার পরিচিত প্রত্যেকের নাম ঠিকানা ফোন নম্বর তিনি এই ডায়েরিতে লিখে রাখেন। একদিন কুহেলি নিজে দেখেছিল, প্রশ্নও করেছিল এখন এই যুগে দাড়িয়ে ডায়েরিতে এসব লিখে রাখার কি দরকার। এখন তো ফোনেই সব তথ্য রাখা যায়, শুধু শুধু তাহলে এসবের কি প্রয়োজন। তার উত্তরে নভতেজ বাবু হেসে বলেছিলেন,

এই অভ্যেস টা আমার মোবাইল আসার অনেক আগের বুঝলে তো, আর আমি আবার পুরনো কোনও অভ্যাসই সহজে ছাড়তে পারি না।

আজ কুহেলির মনে হচ্ছে ভাগ্যিস এই অভ্যাস টা উনি ছাড়েননি। ডায়েরিটা নিয়ে নিজের ঘরে চলে এল কুহেলি, একবারের জন্য ভেবেছিল যদি এটা উনি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে থাকেন কিন্তু ভাবনা টা ভুল দেখে মনে যেন বড় একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। কিন্তু এখনও যে কাজ সম্পূর্ণ হয়নি, একজন মাত্র বন্ধুর নাম কুহেলি নভতেজ বাবুর মুখে শুনেছে। কিন্তু সেটাও যে কতটা সত্যি কে জানে! কারণ এখন তো সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়া তার নিমন্ত্রণে লন্ডনে যাওয়া, ফিরে আসার পরেও আবার সেই বন্ধুর ডাকে লন্ডনে যাওয়া আর সব শেষে সেই বন্ধুর দৌলতেই বিশ্ব ভ্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া সবটাই নভতেজ বাবুর অজুহাত ছিল। তাই সেক্ষেত্রে বন্ধুটির যদি বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নাও থাকে তাতে বিশেষ অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু চেষ্টা তো করতেই হবে, তাই কুহেলি একের পর পৃষ্ঠা ওল্টাতে লাগল আর একসময়ে সে যা চাইছিল সেটা পেয়েও গেল। করনজিত নামে সত্যি একজন আছেন, আর তার ঠিকানা আর ফোন নম্বর সত্যিই লন্ডনের। কুহেলির মনে হল যেন হাতে স্বর্গ পেয়েছে, এভাবে সবকিছু জানার পরেও শুধুমাত্র সেই দুঃসংবাদের জন্য অপেক্ষা করা যায় না। কুহেলি তড়িৎ গতিতে নিজের ফোনটা হাতে তুলে নিল, ডায়েরিতে লেখা নম্বরটা ডায়াল করে কানে লাগানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হল রিং। প্রতিটা রিংয়ের সঙ্গে যেন কুহেলির হৃদস্পন্দনও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, একসময় কেউ একজন ফোনটা রিসিভ করলেন। কণ্ঠ শুনে বোঝা যায় ব্যক্তি টির উচ্চারণ সাহেবি ধাঁচের হলেও তিনি আদতে ভারতীয়।

হ্যালো।

হ্যালো, মে আই স্পিক টু মিস্টার করণজিত খুরানা?

ইয়েস স্পিকিং।

এরপর কুহেলি হিন্দীতেই কথা বলতে লাগল,

আমি আপনার পুরনো বন্ধু মিস্টার নভতেজ শর্মার পুত্রবধূ বলছি।

ওপাশের ব্যক্তিটি যেন ওর পরিচয় শুনে খুশি হলেন।

আরে, হাউ আর ইউ বেটা? আমি শুনেছি তোমার কথা নভতেজের কাছে।

কুহেলি বুঝল নভতেজ বাবু নিশ্চয়ই এনার সঙ্গে বিগত কয়েক মাসের মধ্যে যোগাযোগ করেছেন না হলে ওর কথা জানতে পারতেন না। কুহেলি যেন আশার আলো খুঁজে পেল, আর কোনও ভনিতা না করে বলল,

আঙ্কেল আমি একটা প্রয়োজনে ফোন করেছি, আই রিয়েলি নিড ইওর হেল্প।

কুহেলির কণ্ঠের উদ্বেগ যেন কোনও ভাবে করণজিত বাবুও বুঝতে পারলেন। একটু থেমে বললেন,

হোয়াটস রং বেটা? কি হয়েছে?

কুহেলি সবটা সংক্ষেপে বুঝিয়ে বলল ওনাকে, আর জানতে চাইল উনি এই বিষয়ে কিছু জানেন কিনা। করণজিত বাবু তো যেন আকাশ থেকে পড়লেন, ওনার কথায় কুহেলি জানতে পারল উনি কিছুই জানেন না। তবে আশ্বাস দিলেন নভতেজ বাবু যদি সত্যিই লন্ডনে কোথাও চিকিৎসা করিয়ে থাকেন তাহলে সেটা জেনে নিতে ওনার কোনও সমস্যা হবে না। কুহেলি বারবার বলল যেন কোনও খবর পেলেই উনি তৎক্ষণাৎ ওকে খবর করেন। কথা শেষ করে কুহেলি বসে পড়ল, একটা আশার আলো দেখতে পেলেও সেটা এখনও অনিশ্চিত। শুধু করণজিত বাবুর ভরসায় যে বসে থাকা যাবে না সেটা কুহেলি জানে, কুহেলি নিজের ফোনটা নিয়ে আগেই দুটো লন্ডনের টিকিট বুক করল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখানে পৌঁছাতে হবে। দেখতে দেখতে ঘড়ির কাটা কখন যেন সাড়ে পাঁচটা পেরিয়ে গেছে, সময়ের হিসেব কেই বা রাখে এইসময়! কুহেলি চুপচাপ বসে ছিল বারান্দায়, যদিও মন খারাপ হলে তার সঙ্গী গোলাপ গাছ দুটোর কাছেই ছুটে যায় কিন্তু আজ আর সেখানে যায় নি। কারণ খোলা ছাদের নীচে বসে আছে দেখলে আলেখ রাগ করবে আর আজ যে বেদনার সম্মুখীন সে হতে চলেছে কুহেলি চায় না তার আগে কোনও কারণে আলেখ কষ্ট পাক। আলেখ অফিস থেকে ফিরেই সোজা ওদের ঘরে এসে কুহেলিকে না দেখতে পেয়ে হাকডাক শুরু করল,

কুহেলি, এই কুহেলি, কোথায় গেলে?

আলেখের গলা শুনে কুহেলির ভিতর টা কেমন মুচড়ে উঠল, নিজেকে এতক্ষণে অনেকটা শক্ত করে নিয়েছে সে। এছাড়া যে আর কোনও উপায়ও নেই, কিন্তু তাও এখন যখন সেই সময় আসন্ন তখন যেন সব শক্তি ওর হারিয়ে যাচ্ছে। কীকরে বলবে সে আলেখকে? আলেখ বারান্দায় এসে কুহেলিকে বসে থাকতে দেখে ওর পাশে বসে জড়িয়ে ধরে বলল,

এখানে বসে আছ কেন?

কুহেলি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

এমনি, ঘরে আর ভালোলাগছিল না তাই।

কুহেলিকে আলেখ খুব ভালো করে চেনে, গলার স্বরে স্বাভাবিকতা বজায় রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা আলেখের নজর এড়াল না। কুহেলিকে নিজের থেকে একটু সরিয়ে বলল,

কি হয়েছে কুহেলি?

কুহেলি জানত আলেখকে সে ফাঁকি দিতে পারবে না, কিন্তু সবে মাত্র অফিস থেকে এসেছে। এত বড় একটা দুঃখ এভাবেই কীকরে দেবে সে তাকে? কুহেলিকে চুপ করে থাকতে দেখে আলেখ বলল,

কি হল? কি হয়েছে বলো। তোমাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন? তুমি কেদেছ কুহেলি? কিন্তু কেন? কি হয়েছে আমাকে বলো প্লিজ।

কুহেলি মিথ্যে বলতে পারে না, চায়ও না, কিন্তু প্রয়োজনে সবই করতেও হয় আর পারতেও হয়। জানে, হয়তো সাময়িক ভাবে আলেখকে সত্য টা থেকে দূরে রাখতে পারবে কিন্তু এই মুহূর্তে সেটাই অনেক। কুহেলি একটু হেসে বলল,

কিছু না, মায়ের কথা মনে পড়ছিল।

আলেখ সন্দিহান দৃষ্টিতে চেয়ে রইল কুহেলির দিকে। হঠাৎ মায়ের জন্য মন খারাপ করে কান্না কাটি করার মেয়ে যে কুহেলি নয় সেটা আলেখ খুব ভালো করেই জানে।

তুমি সত্যি বলছ?

মিথ্যে কেন বলব? আমি জানি তুমি এটা কেন বলছ, কিন্তু এটাও নিশ্চয়ই জানো এইসময় মেয়েরা একটু বেশিই ইমোশনাল হয়ে পড়ে।

কথাটা যে খুব একটা অযৌক্তিক তা নয়, তবে এত তাড়াতাড়ি এই অনুভূতির উত্থান পতন শুরু হয় না। কিন্তু আলেখ এত কিছু জানে না, এইসময়ে এইরকম হওয়াটা স্বাভাবিক সেইটুকুই জানে। তাই বিশ্বাস করতে অসুবিধা হল না, একটু হেসে বলল,

তুমি এভাবে কাদলে আমার লিটল প্রিন্সেস কিন্তু আপসেট হয়ে পড়বে। সো, তোমার যতই মুড সুইং হোক না কেন তোমার কিন্তু কান্না কাটি করা একদম বারন বুঝেছ?

কুহেলি একটু হেসে মাথা নাড়াল, বুকের ভিতরে যে কি উথাল পাথাল চলছে সেটা একমাত্র সেই জানে। নিজেকে সামলে কুহেলি বলল,

আচ্ছা, তুমি এখন যাও আগে ফ্রেশ হয়ে এসো। বাইরের ড্রেসে কতক্ষন থাকবে?

আলেখ একটু হেসে কুহেলির কপালে নিজের ঠোঁট দুটো ছুঁইয়ে চলে গেল ফ্রেশ হতে, আর কুহেলি নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগল সেই আসন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার জন্য। কুহেলি নিজে আলেখের জন্য কফি করে নিয়ে এলো, আলেখ ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। কুহেলিকে কফি হাতে নিয়ে ঢুকতে দেখে বলল,

আরে তুমি কেন আনলে?

এমনি, ইচ্ছে হল।

কুহেলি, তুমি এগুলো করোনা প্লিজ।

আচ্ছা আর করব না, কিন্তু এখন তুমি এটা খাও এটা তো বানানো হয়ে গেছে।

আলেখ সোফায় বসে কুহেলিকেও বসাল, কফিটা হাতে নিয়ে বলল,

এটাই লাস্ট কিন্তু।

ঠিক আছে।

হালকা কিছু কথার মধ্যে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল, কফিটাও শেষ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ কিন্তু কুহেলি এখনও বলে উঠতে পারেনি। কীকরে বলবে? যতবার চেষ্টা করছে ততবার গলাটা যেন বুজে আসতে চাইছে কিন্তু এভাবে তো চলবে না, বলতে তাকে হবেই। কুহেলি চোখ দুটো বন্ধ করে বলল,

আলেখ আমার কিছু বলার আছে।

আলেখ ল্যাপটপ টা নিয়ে কিছু কাজ করছিল, কুহেলির গলা শুনে চমকে ওর দিকে তাকাল। কারণ কুহেলির গলায় এমন কিছু ছিল যা আলেখকে আসন্ন কিছুর একটা ইঙ্গিত দিয়ে গেল। কুহেলি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাল আলেখের দিকে, আলেখের সবুজ চোখের তারায় জমেছে একরাশ প্রশ্ন। আলেখ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু কুহেলি বাধা দিয়ে বলল,

এখন কিছু বলো না আলেখ, আমাকে বাধা দিও না প্লিজ, না হলে আমি বলতে পারব না।

বলতে বলতে কুহেলির দুচোখের কোনায় বাষ্প জমতে শুরু করল। আলেখ সেটা লক্ষ্য করেও কিছু বলল না, কুহেলি বলতে শুরু করল, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা। বলতে বলতে কুহেলির চোখের বাষ্প গুলো ঝরে পড়ল উষ্ণ জলের স্রোত হয়ে। আর আলেখ…. সে যেন কুহেলির কণ্ঠস্বরেই আন্দাজ করেছিল এমন কিছু ঘটতে চলেছে যা তছনছ করে দেবে ওর সাজানো সুখের সংসার। কুহেলি সবটা বলার পর একটু থেমে তাকাল আলেখের দিকে, চোখ দুটো কেমন যেন অস্বাভাবিক রকমের শান্ত হয়ে আছে। সেখানে কোনও প্রতিক্রিয়া খুঁজে পাচ্ছে না কুহেলি, যেন নিষ্প্রাণ দুটো তারা চেয়ে আছে অজানার উদ্দেশ্যে। কুহেলির অন্তর টা কেপে উঠল এক অজানা আশঙ্কায়, আলেখ কোনও কথা বলছে না কেন? এরকম ভাবলেশহীন হয়ে কেন বসে আছে সে? কুহেলি ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল,

আলেখ, তুমি কিছু বলছ না কেন? আলেখ? আলেখ?

নাহ, আলেখের মধ্যে কোনরকম ভাবান্তর দেখা গেল না। কুহেলি এবার সত্যিই ভিষন ভয় পেল, সে প্রাণ পনে চেষ্টা করতে লাগল আলেখের মুখ থেকে অন্তত একটা কথা বের করার কিন্তু সবই বৃথা। হঠাৎ আলেখ কুহেলির হাত ছাড়িয়ে উঠে পড়ল, ওকে আচমকা উঠে দাড়াতে দেখে কুহেলিও উঠে দাড়াল। আলেখ কিছু না বলে শুধু নিজের গাড়ির চাবিটা নিয়ে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। কুহেলি ওকে ডাকতে ডাকতে পিছন পিছন গেলেও লাভ হল না, আলেখ যেন ঝড়ের গতিতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। কুহেলি পিছন থেকে চিৎকার করতে লাগল,

আলেখ, কোথায় যাচ্ছ তুমি? আলেখ প্লিজ দাড়াও, আলেখ।

কুহেলি যতক্ষণে নীচে এসে পৌঁছেছে ততক্ষণে আলেখ ওর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে। কুহেলির এমন চিৎকার শুনে বাড়ির সব পরিচারক পরিচারিকারা ছুটে এলো। প্রভাত বলল,

কি হয়েছে ম্যাডাম?

কুহেলি তখন উত্তর দেওয়ার পর্যায় নেই, তার যেন সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। মনের মধ্যে একটা ঝড় উঠেছে, যেটা তছনছ করে দিচ্ছে সবকিছু। হঠাৎ বাইরে কানফাটানো বজ্রপাতের শব্দে যেন উপস্থিত সবাই কেপে উঠল। কখন যেন ঈশান কোণে মেঘ করেছিল, কেউ লক্ষ্য করেনি, ধীরে ধীরে গোটা আকাশ কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে সবার অলক্ষ্যে। অসময়ের এই বৃষ্টি, এই ঝড় যেন কুহেলি আর আলেখের জীবনে ওঠা ঝড়ের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হল প্রবল হাওয়ার বেগ আর তার সঙ্গে সমান তালে চলতে লাগল মেঘের গর্জন। কুহেলি হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে উঠল, আলেখ, কোথায় গেল আলেখ এই ঝড়ের মধ্যে? ও যে ভয় পায়, হ্যা আলেখ ভয় পায় এই কর্ণভেদী মেঘের আওয়াজে। কুহেলি নিজে দেখেছে, সেই প্রথম প্রোডাক্ট লঞ্চের দিন ফেরার পথে। কুহেলি কিছুতেই শান্ত হতে পারছে না, কোথায় গেল আলেখ? হঠাৎ কুহেলি স্থির হল, একছুটে বেরিয়ে গেল বাড়ির বাইরে, গ্যারেজে নভতেজ বাবুর গাড়িটা আছে সেটাই এখন কুহেলির লক্ষ্য। কুহেলিকে ওভাবে বেরোতে দেখে প্রভাত আর হরিশ দুজনেই ছুটে এলো ওর পিছনে। কুহেলি গাড়ির কাছে যাচ্ছে দেখে ওরাও বুঝল কুহেলি কি করতে চাইছে। প্রভাত ছুটে এসে বাধা দিয়ে বলল,

ম্যাডাম কোথায় যাচ্ছেন আপনি? এই ঝড়ের মধ্যে আপনি কোথাও যাবেন না।

আমাকে যেতে দাও প্রভাত, আলেখের এখন আমাকে দরকার।

কিন্তু আমরা কেউ জানি না স্যার কোথায় গেছেন।

আমি জানি।

কিন্তু ম্যাডাম তাও আপনি প্লিজ যাবেন না, এই অবস্থায় আপনার যাওয়া ঠিক হবে না। আপনি বলুন আমরা গিয়ে নিয়ে আসছি স্যার কে।

তোমরা গেলে হবে না প্রভাত, আমাকেই যেতে হবে। কেন বুঝতে পারছ না? হরিশ প্লিজ চাবি টা দাও।

ওরা কি হয়েছে না জানলেও এটুকু বুঝতে পারছে খুব গুরুতর কিছু একটা ঘটেছে। কিন্তু তাও ওরা কুহেলিকে এই ঝড়ের মধ্যে একা বেরোতে দিতে চাইলো না, কিন্তু কুহেলিও কিছুতেই শুনবে না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে হরিশ বলল,

ঠিক আছে ম্যাডাম, আপনার যাওয়া যখন এতটাই জরুরি তখন চলুন আমি আপনাকে নিয়ে যাব।

কিন্তু….

প্লিজ ম্যাডাম না করবেন না।

কুহেলি আর আপত্তি করল না, হরিশ কে নিয়েই বেরিয়ে পড়ল তার আলেখের উদ্দেশ্যে।

ক্রমশ___________

© স্বত্ব সংরক্ষিত

কোথায় গেল আলেখ? যেখানে এটা শোনার পর আলেখের ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাওয়ার কথা সেখানে তার চোখ দুটো পর্যন্ত এমন প্রতিক্রিয়া হীন কেন? কি মনে হয় আপনাদের? আবার নতুন করে বিপদ বাড়বে না তো? নিজেদের মতামত আমাকে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। অপেক্ষা করব প্রতিবারের মতই, আজ তবে আসি দেখা হবে আগামী পর্বে ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here