সংগোপনে’ পর্ব-৫৫

0
1124

#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_৫৫
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস

আগের পর্বের পর————-

হরিশ আরেকটু জোরে চালাও প্লিজ।

ম্যাডাম এর থেকে বেশি জোরে চালানো টা ঠিক হবে না, বৃষ্টির বেগ অনেক বেড়েছে আর সঙ্গে হাওয়াও।

তুমি বুঝতে পারছ না হরিশ, প্লিজ আরেকটু জোরে চালাও।

কুহেলি যেন ছটফট করছে, হরিশ এই দুর্যোগের মধ্যেও যথেষ্ট জোরেই গাড়ি চালাচ্ছে কিন্তু কুহেলির মন যেন আরও দ্রুত আলেখের কাছে পৌঁছাতে চাইছে। সময়ের দিক থেকে মাত্র সন্ধ্যে সাতটা পেরিয়েছে কিন্তু আশেপাশের দুর্যোগ পূর্ণ পরিবেশের জন্য মনে হচ্ছে যেন মধ্যরাত। কুহেলির মনটা ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে, সময় যেন পেরোতেই চাইছে না, দূরত্ব যেন কিছুতেই ফুরোতে চাইছে না। কুহেলির চোখ দুটো একভাবে নিবদ্ধ হয়ে আছে বাইরের কালো পিচে মোড়া রাস্তার দিকে যার বুক চিরে এখন শুধু ওদের গাড়ি টাই ছুটে চলেছে। কুহেলি ওর গন্তব্যের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, দৃষ্টি এখনও বাইরের দিকেই যেন কিছু সন্ধান করে চলেছে অবিরত। মনের মধ্যে উকি দিতে থাকা অবাধ্য অলক্ষুণে আশঙ্কা গুলোকে প্রাণপণে মিথ্যে প্রমাণ করার আশায় যেন রাস্তার দিক থেকে এক মুহূর্তের জন্যও দৃষ্টি ফেরায়নি কুহেলি। কিন্তু এক জায়গায় এসে কুহেলির বুকটা যেন ধড়াস করে উঠল। রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে আছে একটা গাড়ি, এই ঘোর দুর্যোগে অন্ধকারেও কুহেলির চিনতে অসুবিধা হয় নি। মুহূর্তের মধ্যে চিৎকার করে উঠল কুহেলি,

হরিশ গাড়ি থামাও।

হরিশ গাড়িটা লক্ষ্য করেনি, তার সম্পূর্ণ মনোযোগ শুধুই গাড়ি চালানোর দিকে ছিল। এই ঝড়ো আবহাওয়ায় একটু অসাবধান হলেই দুর্ঘটনা অনিবার্য। কুহেলির আচমকা চিৎকারে চমকে উঠে ব্রেক কষল হরিশ, সে বুঝেছে কুহেলি নিশ্চয়ই আলেখের কোনও হদিশ পেয়েছে। কুহেলিদের গাড়িটা তখন অনেকটাই এগিয়ে গেছে, আলেখের কালো এক্স ইউ ভি টা কিছুটা পিছনে দেখা যাচ্ছে। কুহেলি সোজা গাড়ি থেকে নেমে ছুটে গেল সেদিকে, বাইরে তখনও অঝোর ধারায় ঝরছে অকাল বর্ষণ। হরিশ পিছন থেকে বলে উঠল,

ম্যাডাম কোথায় যাচ্ছেন? দাড়ান, বাইরে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে, ম্যাডাম আপনি ভিজে যাবেন। দাড়ান ম্যাডাম, একটু দাড়ান আমি দেখছি।

কিন্তু তার একটা কথাও কুহেলির কানে পৌঁছালো না, সে যত দ্রুত সম্ভব ছুটে এগোতে লাগল কালো গাড়িটার দিকে। গাড়িটার কিছুটা কাছে পৌঁছে যেন কুহেলির হাত পা অবশ হয়ে এলো, পায়ের তলার মাটিটা কেমন আলগা মনে হচ্ছে। এক জায়গায় স্থির হয়ে দাড়িয়ে পড়েছে, নড়বার শক্তি টুকুও যেন আর অবশিষ্ট নেই। কুহেলির মনে হচ্ছে যেন তার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে, নিঃস্ব হয়ে গেছে সে। মস্তিষ্ক টাও কেমন শূন্য মনে হচ্ছে, চিন্তা শক্তি, বোধ শক্তি কোনোটাই যেন আর অবশিষ্ট নেই। থাকাটা স্বাভাবিক নয়ও, কুহেলির সামনে যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তাতে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। হরিশও ততক্ষণে ছুটে এসেছে কুহেলির কাছে, সামনের দিকে তাকিয়ে হরিশ যেন চমকে উঠল।

একি! এটা তো স্যারের গাড়ি। এই অবস্থা কেন?

অন্ধকারে গাড়ির মধ্যে বসে যেটা বোঝা যায়নি সেটা এখন গাড়িটার কাছে এসে বোঝা যাচ্ছে। গাড়িটা রাস্তার একপাশে শুধু দাড়িয়ে নেই, একটা গাছের সঙ্গে তার সংঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। গাড়িটার সামনের বাঁদিকের হেডলাইট টা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে রয়েছে, সামনের কিছুটা কাঁচ ভেঙে পড়েছে, ড্রাইভিং সিটের দরজাটাও কিছুটা খোলা। এখান থেকে গাড়ির ভিতরের কিছুই প্রায় দেখা যাচ্ছে না, থেকে থেকে ঝলসে ওঠা বিদ্যুতের আলোয় গাড়িটার দিকে তাকিয়েই কুহেলি যেন পাথরের মূর্তির মত স্থির হয়ে রয়েছে। হরিশ একবার কুহেলির দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গেল গাড়িটার দিকে, কিন্তু কুহেলির যেন কোনও ভাবান্তর নেই। হরিশ নিজেও ভীত শঙ্কিত পায়ে এগিয়ে গেলো গাড়িটার দিকে, খোলা দরজাটা আরেকটু খুলে ভিতরে তাকিয়েই উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠল,

ম্যাডাম, স্যার এখানে নেই।

কুহেলির যেন এতক্ষন কোনও বাহ্যজ্ঞান ছিল না, কিন্তু হরিশের কথা শুনেই যেন চমকে উঠল। আলেখ নেই? কুহেলি ছুটে এগিয়ে গেল গাড়ির কাছে, নিজে গাড়ির ভিতরের তাকিয়ে দেখল আলেখ সত্যিই সেখানে নেই। কুহেলির শূন্য হৃদয়ে যেন প্রাণ ফিরে এলো, সে জানে আলেখ কোথায় আছে কিন্তু আলেখের মনের অবস্থা আর এখন গাড়ির এই অবস্থা দেখে চিন্তা টা হাজার গুন বেড়ে গেল যেন। কুহেলি কোনও দিকে না তাকিয়ে এক মুহূর্তও দেরী না করে এগোতে লাগল। দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে তার পদক্ষেপ, একপ্রকার ছুটতে ছুটতেই এগোতে লাগল সে। হরিশ পিছনে আসতে আসতে বলতে লাগল,

ম্যাডাম এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে আপনি হেঁটে কোথায় যাচ্ছেন? প্লিজ গাড়িতে উঠুন ম্যাডাম।

কিন্তু কুহেলির কানে এখন কোনও কথাই প্রবেশ করছে না, সে ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। বেশিক্ষণ লাগল না, কুহেলি তার গন্তব্যে পৌঁছে গেল, দ্রুত পদক্ষেপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত হয়েছে তার নিশ্বাস প্রশ্বাসের গতি। বেশ বুঝতে পারছে হাপিয়ে উঠেছে সে, শীতের রাতের অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজে গেছে তার সর্বাঙ্গ। ঝড়ো হাওয়া আর মুষলাধার শীতল বারি ধারা যেন একযোগে আঘাত হানছে ওর শরীরে কিন্তু কুহেলির সেদিকে কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই। তার দৃষ্টি সামনের দিকে, পরিচিত সেই ছোট্ট ঝিল টার পাড়ে বিরাট মহীরুহের নীচে জরাজীর্ণ বেঞ্চটায় বসে আছে আলেখ। কুহেলির অশান্ত চোখ দুটো যেন শান্ত হল, অবশেষে সম্পূর্ণ হয়েছে তার অনুসন্ধান। অজান্তেই চোখের কোনা বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দু ফোঁটা উষ্ণ নোনা জল। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল আলেখের দিকে, বৃষ্টি যেন থামার কোনও নামই নিচ্ছে না অবিরাম গতিতে সে ঝরে চলেছে। হয়তো শীতল বারিধারায় শান্ত করতে চাইছে দুটো অশান্ত মনের ঝড়। কুহেলি আলেখের পাশে বসে একপলকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল তার দিকে, একটা ঘন্টাও হয়নি কিন্তু কুহেলির যেন মনে হচ্ছে কত যুগ পরে সে দেখছে আলেখকে। এই কিছুক্ষণের মধ্যেই কুহেলি অনুভব করে নিয়েছে আলেখ ছাড়া তার জীবনের কোনও অর্থ নেই। আলেখ কেমন যেন স্থির হয়ে বসে রয়েছে, কুহেলি যে তার পাশে এসে বসেছে সেই খেয়াল টুকুও হয়তো এখনও হয়নি। বিরাট মহীরুহের নীচে বৃষ্টির তেজ কিছুটা কম হলেও অকাল বর্ষণের ধারা এখনও ওদের সিক্ত করছে। কুহেলি আলেখের কাধে একটা হাত রাখল, আলেখ যেন চমকে উঠল। এই নির্জন একাকী প্রান্তরে হঠাৎ কারো স্পর্শে যেন আলেখ কোনও এক অজানা গভীর অতল অন্ধকার থেকে জেগে উঠল। চমকে উঠলেও আলেখের মন হয়তো জানত এই স্পর্শটা প্রত্যাশিতই ছিল। কুহেলির দিকে তাকাতেই যেন রুদ্ধ হয়ে আসা সব অনুভূতি গুলো নিজেদের মুক্ত করতে চাইল। ঘন আঁধারের মাঝেও যেন কুহেলি দেখতে পেল কিছুক্ষণ আগের অনুভূতিহীন ঈষৎ সবুজ চোখ দুটোয় টলটল করছে জল। কুহেলির একটা হাত আপনা থেকেই এগোতে লাগল আলেখের দিকে, এমন সময়ে আবার একটা কর্ণভেদী শব্দে ঝলসে উঠল আলো। মুহূর্তের মধ্যে কালো আধারের বুক চিরে আলোকিত হয়ে উঠল চারিপাশ। সেই ক্ষণিকের আলোয় আলেখের দিকে তাকিয়ে যেন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যেতে লাগল কুহেলির অন্তর। একি অবস্থা হয়েছে আলেখের! কপালের বাদিকটা কেটে গিয়ে রক্তের ধারা নেমে এসেছে গাল বেয়ে, মুষলধারার তীব্র জলস্রোত মুছে দিতে পারেনি সেই লালের ধারা। কুহেলির অন্তর থেকে যেন একটা তীব্র বেদনা মোচড় দিয়ে উঠল, নোনা জল গুলো অবিশ্রান্ত বারিধারার মতই ঝরে পড়তে লাগল। আলতো হাতে ছুয়ে দিল আলেখের ক্ষত টা, কিন্তু সেই ক্ষত তো শুধু বাহ্যিক, অন্তরের যে ক্ষত তাকে কি করে স্পর্শ করবে! আলেখ যেন এই আলতো ছোয়ার অপেক্ষায় ছিল, কঠিন বরফ যেমন সামান্য উষ্ণতার পরশেই গলতে শুরু করে ঠিক তেমনই আলেখের এই কঠিন ভাবলেশহীন আবরণ ভেদ করে বেরিয়ে আসতে লাগল দুমড়ে মুচড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া ওর মনটা। কুহেলিকে একটানে মিশিয়ে নিল নিজের বুকের সঙ্গে, আরও ভালো করে বলতে গেলে আজ আলেখ আশ্রয় নিল কুহেলির বুকে। দুহাতে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে কুহেলির ঘাড়ে মুখ গুজে দিল আলেখ, কুহেলিও প্রাণপণে আঁকড়ে ধরল আলেখকে। দুজনের পরনেই ঘরোয়া শীত পোষাক, যা এখন সম্পূর্ণ ভিজে। অঙ্গে লেপ্টে থাকা ভিজে পোশাক আর বৃষ্টির শীতল জলকণার স্পর্শের মাঝেও কুহেলি অনুভব করতে পারছে আলেখের উষ্ণ নোনা জলের স্পর্শ। আলেখ কাদছে, কাদুক, মনের মধ্যে জমে থাকা সব অনুভূতি গুলো আজ ঝরে যাক, ধুয়ে যাক। কারোর মুখে কোনও কথা নেই, যেন তাদের মুখে কোনদিনও ভাষারা ছিলই না। সবসময় অনুভূতিদের শব্দের প্রয়োজন হয় না, নীরবতার মাঝেই তারা খুঁজে নেয় নিজেদের অস্তিত্ব। হাজার শব্দের থেকেও নীরব কিছু স্পর্শ অনেক কিছু ব্যক্ত করতে পারে, ঠিক তেমনই একটা মুহুর্তের সাক্ষী আজকের এই ঝড় বাদলের রাতটা। হরিশ কুহেলি কে অনুসরণ করে এখানে এসে পৌঁছেছে অনেকক্ষণ, তীব্র বৃষ্টিতে সেও সম্পূর্ণ ভিজে গেছে কিন্তু সেদিকে তার কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। ছোট থেকে সে ওঙ্কার ভিলায় মানুষ, তার বাবা বিষ্ণুচরণ বহু বছর নভতেজ বাবুর কাছে ড্রাইভারি করেছেন আর তার অবর্তমানে সেই স্থান টা হরিশ নিয়েছে। এই বাড়ির প্রত্যেককে সে ভীষন শ্রদ্ধা করে আর ভালোবাসে, আলেখের জন্য সেও চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। কি হয়েছে সেটা সে এখনও জানে না, কিন্তু কুহেলির ব্যাকুলতা দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়নি গুরুতর কিছু ঘটেছে। দূর থেকে লক্ষ্য করছিল সে ওদের, অন্ধকারে ভালো বোঝা না গেলেও তাদের চোখের আড়াল করতে চায় না সে। কি মনে হতে হঠাৎ সে একছুটে ফিরে যেতে লাগল, যেখানে তাদের গাড়িটা রয়েছে। গাড়িতে উঠে সেটা নিয়ে আবার উপস্থিত হলো সেইখানে যেখানে আলেখ আর কুহেলি রয়েছে। আলেখ তখনও কুহেলিকে আঁকড়ে ধরে রয়েছে, এখনও অব্যাহত রয়েছে উষ্ণ অশ্রু ধারা। এখনও থেকে থেকেই গর্জন করে উঠছে মেঘমালা, তীব্র বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠছে চারিধার। আলেখের সেদিকে যেন কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই, ছোট থেকে তার একমাত্র ভীতি এই কর্ণবিদারী বজ্রপাত কিন্তু আজ সেই ভীতির কথাও যেন আর মনে নেই। হঠাৎ অন্ধকারের বুক চিরে হলদে আলোর রেখা ওদের ওপর এসে পড়ায় কুহেলি সেই আলোর উৎসের দিকে তাকাল। কিছুটা দূরে দেখা যাচ্ছে ওদের গাড়িটা, হরিশ গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে। কুহেলি নিজেও এতক্ষণ যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল, এখন যেন ধীরে ধীরে বাস্তব বোধগুলো ফিরে আসতে লাগল। ওদের অঙ্গের পোশাকগুলো না জানি কখন থেকে ভিজে রয়েছে, এখনও তারা অবিরাম বর্ষণ মাথায় নিয়েই বসে আছে। এটা ঠিক নয়, এই মুহূর্তে ওদের কারোর শরীর দূর্বল হলে চলবে না, এখন যে সামনে অনেক কাজ বাকি। তাছাড়া কুহেলি এই অবস্থায় বেশিক্ষণ থেকে নিজের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ছোট্ট অংশ টাকেও কোনরকম কষ্ট দিতে চায় না। আর আলেখ….. তারও তো চোট লেগেছে, তার উপর এতক্ষণ এই অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজে… না না আর এইভাবে থাকা যাবে না। কুহেলি আলেখকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলল,

বাড়ি চলো আলেখ, এখনও অনেক কাজ বাকি।

আলেখ কিছু বলল না, শুধু বেদনাক্লিষ্ট চোখে চেয়ে রইল কুহেলির দিকে। হরিশ ততক্ষণে এগিয়ে এসেছে ওদের কাছে,

ম্যাডাম এবার ফিরে চলুন, বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে আপনাদের শরীর খারাপ করবে।

হ্যা, তুমি চলো, আমরা আসছি।

হরিশ আবার ফিরে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে উঠে বসল। কুহেলি উঠে আলেখের একটা হাত ধরে বলল,

চলো আলেখ।

আলেখ কোনও কথা না বলে কুহেলির হাত টা শক্ত করে ধরল। কুহেলি আলেখকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল, হরিশ গাড়ি ঘোরাল ওঙ্কার ভিলার উদ্দেশ্যে। আলেখ আর কুহেলি ফিরে এসেছে কিছুক্ষণ হল, প্রভাত সহ বাড়ির বাকিরাও উদ্বিগ্ন হয়ে ছিল ওদের জন্য। ওদের ফিরতে দেখে যতটা স্বস্তি পেয়েছিল তার থেকেও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছিল আলেখকে দেখে। কুহেলি তাদের সবাইকে আশ্বস্ত করে আলেখকে নিয়ে চলে এসেছিল ওদের ঘরে। আগে আলেখকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে এক মুহুর্তও দেরী না করে নিজে চলে গিয়েছিল পাশের ঘরের ওয়াশরুমে, যে আসছে তার খেয়াল তো তাকেই রাখতে হবে। কুহেলি ঘরে ফিরে এসে দেখল আলেখ চুপচাপ মাথা নীচু করে বসে আছে খাটের ওপর, মাথাটাও ঠিক করে মোছে নি, বিন্দু বিন্দু জল ঝরে পড়ছে এলোমেলো চুল গুলো থেকে। কেমন যেন হেরে যাওয়া সর্বস্বান্ত একটা মানুষের মত মনে হচ্ছে তাকে। কুহেলি সহ্য করতে পারছে না আলেখের এই রূপ, ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে, কান্না গুলো যেন সমস্ত বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু না, এখন তার দুর্বল হলে চলবে না। কুহেলি একটা তোয়ালে নিয়ে আলেখের সামনে গিয়ে আলতো হাতে মুছিয়ে দিল চুল গুলো। কপালের ক্ষতটা তেমন গভীর না হলেও এখনও সম্পূর্ণ রক্ত ক্ষরণ বন্ধ হয়নি। কুহেলি ফার্স্ট এইড বক্স টা এনে আলেখের পাশে বসল, চোখের জল গুলোকে বহু কষ্টে আটকে পরম যত্নে ক্ষতটা পরিষ্কার করে একটা ব্যান্ডেজ করে দিল। আলেখ এতক্ষণ চুপ করে শুধু চেয়ে ছিল কুহেলির দিকে, হঠাৎ কুহেলির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। কুহেলি বুঝল আলেখ এখন একটা আশ্রয় খুঁজছে, একটা নিরাপদ আশ্রয়। সাধারণত মানুষ যখন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, তখন তারা ছুটে যায় মায়ের কাছে, মায়ের কোলে মাথা রেখে ভুলতে চায় সব দুঃখ সব কষ্ট। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে সেই আশ্রয় টা আলেখের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে বহু বছর আগেই। তার ক্ষত মনের কোনও কোণায় আজও জীবিত আছে, আর এখন নিয়তি আবার তার আশ্রয় কেড়ে নিতে চাইছে। কুহেলি আলতো হাতে আলেখের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল, নারীর শত রূপের কথা কুহেলির নিজেরও এতদিন শুধুই শোনা ছিল। আজ নিজেকে দিয়ে বুঝতে পারছে নারী প্রয়োজনে সব পারে, কখনও প্রেমময়ী প্রেমিকা কখনও দায়িত্ব সম্পন্না স্ত্রী আবার কখনও স্নেহশীলা মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে অনায়াস দক্ষতার সঙ্গে। কতক্ষন এভাবেই কেটে গেল কেউ জানে না, কুহেলির মনে হচ্ছে কথারা যেন আজ ছুটি নিয়েছে। কিন্তু না, অখণ্ড নীরবতা ভেঙে আলেখ হঠাৎ বলে উঠল,

কেন কুহেলি? আমার সঙ্গেই এমনটা কেন হয়?

কুহেলি কি উত্তর দেবে! উত্তর টা যে তারও অজানা। আলেখ কুহেলির কোলে মাথা রেখে বলে চলল,

ছোট থেকে যাকে আকড়ে ধরতে চেয়েছি সেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কত খুশি ছিলাম আমরা, ছোট হ্যাপি ফ্যামিলি। কিন্তু মম যেদিন থেকে আমায় ছেড়ে চলে গেছে সেদিন থেকে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। একে একে তারপর সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, নানু নানি সবাই। ড্যাড কে নিয়েই তো বেচে ছিলাম, ড্যাড ছাড়া কেউ যে ছিল না আমার লাইফে। তারপর তুমি এলে হঠাৎ করেই, তখনও ভাবিনি তুমি এতটা জায়গা করে নেবে আমার জীবনে। ভালোবাসলাম তোমাকে, তোমার ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে যেন সম্পূর্ণ মনে হচ্ছিল। আর আমাদের ছোট্ট নতুন অতিথির খবর শুনে মনে হয়েছিল এবার আমার ফ্যামিলি টাও আবার সম্পূর্ণ হতে চলেছে। ছোট্ট হ্যাপি ফ্যামিলি। কিন্তু……

আলেখের গলা বুজে এল, চোখের কোল বেয়ে অবিরাম বয়ে চলেছে নোনা জলের স্রোত। কুহেলি অনেক চেষ্টা করেও ধরে রাখতে পারল না আর, তার চোখের কোন থেকেও ঝরে পড়ল উষ্ণ অশ্রু বিন্দু। কুহেলি চোখের জল টুকু মুছে নিয়ে বলল,

জানো আলেখ ঠাম্মু বলে আমাদের ভাগ্যে যা লেখা থাকে তার থেকে বেশি পাওয়া সম্ভব নয়। আমি বিশ্বাস করতাম না, ডেসটিনি বলে কিছু থাকলেও তাকে নিজে হাতে গড়ে নিতে হয়। দুজনের বিশ্বাস একটু আলাদাই ছিল, কিন্তু পরে আমি বুঝেছি আমি বা ঠাম্মু কেউই সম্পূর্ণ সঠিক ছিলাম না আবার সম্পূর্ণ ভুলও ছিলাম না। যেটা হওয়ার সেটা হবেই তাকে বদলানো যায় না, কিন্তু তাই বলে শুধু তার অপেক্ষা তে বসেও থাকা যায় না। হার মেনে নিলে ভাগ্যও তোমাকে শুধু হারই ফিরিয়ে দেবে কিন্তু শেষ অবধি চেষ্টা করে যেতে পারলে অনেক সময় হেরে গিয়েও জেতা যায়। তুমি এভাবে আগেই হেরে যাবে আলেখ? চেষ্টা টুকুও করবে না?

আলেখ এতক্ষণ শুধু চুপ করে কুহেলির কথা গুলো শুনছিল। এবার উঠে বসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল কুহেলির গভীর কালো চোখ দুটোয়। হঠাৎ শক্ত করে কুহেলিকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,

আমি হারতে চাই না কুহু, না আমি কাউকে আমার জীবন থেকে হারাতে চাই। খুব ভয় হয় জানো তো, আমি শুধুই হারিয়েছি, মম নানু নানি, এখন ড্যাডও আমায় ছেড়ে চলে যেতে চাইছে। আচ্ছা তুমিও কি আমায় ছেড়ে চলে যাবে কুহু? আমায় একা করে দিয়ে চলে যাবে না তো তুমি?

ছেলেটা ভেঙে পড়েছে, খুব ভেঙে পড়েছে। আপনজনদের হারানোর ভয়টা যেন অন্তর পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়েছে। কুহেলি আলেখকে আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাব বলো? কেন ভাবছ তুমি এসব কথা? আমি আছি আর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকব, আর তোমার ছোট্ট প্রিন্সেস, তার কথা কেন ভুলে যাচ্ছ? আমরা সবাই আছি আলেখ, আর ড্যাডও আছে আলেখ। সত্যিটা হয়তো নির্মম, কিন্তু এটা ভাব আলেখ বাকি দিন গুলো আমাদের একসাথে থাকা উচিৎ, তাই না? আর ড্যাড তো এখনও আমাদের প্রিন্সেসের কথা জানেই না, জানাতে হবে না ড্যাড কে? তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে? তুমি এত সহজে দুর্বল হতে পারো না, ড্যাডের কথাটাও ভাব আলেখ। মানুষটা কতটা কষ্টে আছে একবার ভাব, কেউ কি চায় তার নিজের সুখের সংসার এভাবে ছেড়ে চলে যেতে? কিন্তু সেও অপারগ, তোমার কথা আমাদের কথা ভেবেই সেই মানুষটা সব কষ্ট নিজের মনের মধ্যে রেখে আড়ালে সরে গেছে। আমাদের কি কর্তব্য নয়, তার এতদিনের কষ্ট গুলো কিছুটা হলেও কম করার?

আলেখ কুহেলিকে ছেড়ে চুপ করে রইল, কিছুক্ষণ থেমে থাকার পর মুখ তুলে তাকাল। নিজেকে যেন কিছুটা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে বলল,

ঠিক বলেছ কুহু, কিন্তু….

আলেখ কি বলতে চাইছে বুঝতে পেরে কুহেলি বলল,

চিন্তা করো না আলেখ, আমি যতটা সম্ভব ব্যবস্থা করে রেখেছি। আমরা কালকেই লন্ডন যাচ্ছি, টিকিট বুক করে নিয়েছি।

কুহেলি করণজিত বাবুর সাথে হওয়া কথা গুলো বলে বলল,

আমার বিশ্বাস ড্যাড লন্ডনেই আছে, ওখানে গিয়ে দেখবে আমরা ঠিক ড্যাড কে খুঁজে পাব।

আলেখ সজল চোখে কুহেলির দিকে তাকিয়ে বলল,

তুমি না থাকলে আমি কি করতাম কুহু? এভাবেই আমার পাশে সারাটা জীবন থাকবে তো?

কুহেলি আলেখের চোখের জল গুলো মুছে দিয়ে বলল,

তোমাকে ছাড়া আমার জীবন অর্থহীন আলেখ, বিয়ের সময় কথা দিয়েছিলাম, আজ আবার কথা দিচ্ছি জীবনে যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন আমি তোমার পাশেই থাকব আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত। আলেখ আবারও জড়িয়ে ধরল কুহেলিকে, আজ দুজনেই যেন তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাই নিতে চাইছে। গোটা রাতটা প্রায় বিনিদ্রই কাটাল দুজনে, কুহেলি অনেক চেষ্টা করেছিল দুচোখের পাতা এক করার কিন্তু মন যদি অশান্ত থাকে তাহলে ঘুম কি আর আসে! ভোর রাতের দিকে হয়তো মানসিক ক্লান্তির ভারেই বুজে এসেছিল চোখ দুটো কিন্তু আবার ঠিক অভ্যেস মতই ভেঙে গিয়েছিল ঘুমটা। অশান্ত মনেই রোজের সব কাজ সেরে নিল কুহেলি, আলেখও কেমন যেন যন্ত্র চালিতের মত উঠে দৈনন্দিন কাজ গুলো সেরে নিল। ওদের ফ্লাইট দুপুরে, সকাল থেকে কুহেলি দুবার ফোন করেছে রাত্রিকে কিন্তু এখনও নট অ্যাভেলেবেল বলছে। রাত্রি ওদের অনেকটা সাহায্য করতে পারবে কিন্তু যোগাযোগ টাই তো করা যাচ্ছে না, একবার করণজিত বাবুকেও ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে ওরা আজ যাচ্ছে। কালকে যা পরিস্থিতি ছিল তাতে আর গোছগাছ কিছুই করা হয়নি, আজই তাই ব্যস্ত হাতে জরুরী কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিল। কাল রাতেই কুহেলি দেখেছিল চৈতালী দেবী অনেকবার ফোন করেছিলেন কিন্তু রিসিভ করার মত পরিস্থিতি ছিল না। কুহেলি একটা মেসেজ করে দিয়েছিল শুধু, চৈতালী দেবীও তাই উৎকণ্ঠা মনের মধ্যে রেখেই অপেক্ষা করছিলেন সকালের। সকাল হতে না হতেই কুহেলির ফোনটা বেজে উঠেছিল, চৈতালী দেবীকে সবটা বলতে পেরে যেন কুহেলি নিজেও কিছুটা হালকা বোধ করছিল। আলেখের সাথেও কথা বলেছেন চৈতালী দেবী, যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছেন সাহস যোগানোর। কুহেলি আর আলেখ একটা নতুন আশার আলো নিয়েই পাড়ি দিল এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। ফ্লাইট কিছুটা ডিলে হওয়ায় দুজনেই লবিতে বসে অপেক্ষা করছিল, কুহেলি ইতিমধ্যেই রাত্রিকে আরও বেশ কয়েকবার ফোন করেছে কিন্তু একবারও কলটা কানেক্ট হয়নি। কুহেলির এবার নিজেরই বিরক্ত লাগছে কেন অ্যামির নম্বরটা নিয়ে রাখেনি। দুজনেই হাজারো প্রশ্নের ভিড়ে ডুবে ছিল, হঠাৎ একটা পরিচিত কণ্ঠ শুনে দুজনেই চোখ তুলে তাকাল।

আরে কুহেলি, মিস্টার শর্মা আপনারা এখানে?

সামনে দাড়ানো নিশীথ আগরওয়াল হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে, চোখের দৃষ্টিতে যদিও মিশেছে কিছুটা বিস্ময়। কুহেলি বা আলেখ কোনও উত্তর দেওয়ার আগেই আবার নিশীথের প্রশ্ন শোনা গেল, কণ্ঠে উদ্বেগের সুর।

হোয়াট হ্যাপেন্ড মিস্টার শর্মা? আর ইউ ওকে? এটা কীকরে হলো?

আলেখের কপালে তখনও ব্যান্ডেজ করা, কুহেলি বলেছিল একবার একটু ডাক্তার দেখিয়ে নিতে কিন্তু কিছুতেই রাজি হয়নি আলেখ। কুহেলি নিজেই সকালে একবার ড্রেসিং করে নতুন ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। আলেখ একবার কুহেলিকে যেতে বারন করেছিল, এই অবস্থায় জার্নি করাটা ঠিক নয় কিন্তু কুহেলিও শোনেনি। এখানে বসে থেকে চিন্তায় দিন কাটানো তার পক্ষে সম্ভব নয় আর তাছাড়া আলেখকে এই মুহূর্তে একা ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। নিশীথ উৎকণ্ঠা আর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে দেখে কুহেলি উত্তর দিতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই ওদের ফ্লাইটের ঘোষণা হল। কুহেলি উঠে দাড়িয়ে বলল,

সরি মিস্টার আগরওয়াল এখন আর কথা বলার সময় নেই আমাদের ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেছে।

আপনারা লন্ডন যাচ্ছেন?

হ্যা।

তাহলে আর সময়ের অভাব হবে না।

কুহেলি একটু অবাক হয়ে বলল,

মানে?

মানে আমিও লন্ডন যাচ্ছি, এই ফ্লাইটে।

ওহ।

কথা গুলো শুধু কুহেলিই বলল, আলেখ একটা কথাও বলেনি। আসলে ওর এই মুহূর্তে কারোর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ওরা তিনজনে একসঙ্গেই ফ্লাইট বোর্ড করল। কুহেলি আর আলেখকে দেখে নিশীথের মত ব্যক্তির এটা বুঝতে কোনও অসুবিধা হয়নি যে কোনও গুরুতর সমস্যা ওদের জীবনে হঠাৎ হানা দিয়েছে। নিশীথের সিট কুহেলি আর আলেখের থেকে বেশ কিছুটা দূরেই ছিল কিন্তু নিশীথের অসাধ্য কি আর কিছু আছে? সামান্য একটা সিট পরিবর্তন করা তার কাছে কোনও অসুবিধা নয়। কুহেলি দের ঠিক পাশের রো তেই ওদের পাশেই একজন যাত্রীর সঙ্গে সিট টা অদল বদল করে নিল নিশীথ। কুহেলির সমস্যা টা না শোনা পর্যন্ত ভালো লাগছে না, যদি কোনও সাহায্য করতে পারে। ফ্লাইট টেক অফ হয়েছে মিনিট পাঁচেক হল, নিশীথ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল,

বলুন কুহেলি, হোয়াটস দ্য প্রবলেম?

কুহেলি এখন আর অবাক হয় না, অন্যের মনের খবর জেনে নেওয়ার যে একটা অদ্ভুত সহজাত ক্ষমতা নিশীথের আছে সেটা এতদিনে সে জেনে গেছে। কুহেলি একবার আলেখের দিকে তাকাল, আলেখ চোখের ইশারায় জানিয়ে দিল তার কোনও আপত্তি নেই। কুহেলি নিশীথ কে গোটা ঘটনা টা সংক্ষেপে বলল, বলতে বলতে কয়েকবার গলাটা রুদ্ধ হয়ে এসেছিল কিন্তু কুহেলি নিজেকে সামলে নিতে জানে। নিশীথ সবটা শোনার পর বলল,

আপনাদের পরিস্থিতি টা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু মিস্টার শর্মা ইউ হ্যাভ টু বি স্ট্রং।

আলেখ শুধু নিঃশব্দে ঘাড় নাড়ল, নিশীথ কুহেলিকে বলল,

ডোন্ট ওয়ারি কুহেলি, আই অ্যাম শিওর এভরিথিং উইল বি ফাইন। মিস্টার শর্মারও লন্ডনে যথেষ্ট পরিচিতি আছে, আর কিছুটা পরিচিতি আমারও আছে। সব দিক থেকে ট্রাই করলে একটা না একটা উপায় নিশ্চয়ই হবে। আমি নিজের দিক থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করব, ডোন্ট ওয়ারি।

কুহেলি সামান্য একটু হাসি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে একটা ধন্যবাদ জানাল। এরপর আর কেউ কোনও কথা বলল না, প্রায় এগারো ঘণ্টার পথ, কিন্তু কুহেলি আর আলেখের কাছে যেন দীর্ঘ এক যুগের প্রতীক্ষা। আকাশপথে উড়ে চলেছে উড়োজাহাজটা তার গন্তব্যের দিকে, তার গর্ভে বসে অপেক্ষারত দুটো মানুষ, সুদীর্ঘ এই যাত্রার পরিসমাপ্তির।

ক্রমশ___________

© স্বত্ব সংরক্ষিত

আজ আর কিছু বলছি না, আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। আজ তবে আসি দেখা হবে আগামী পর্বে ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here