যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:৩

0
1460

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:3
লেখনিতে:মৌসুমী

খিচুরীর গন্ধে সারাবাড়ি ম ম করছে।মাহফুজা বেগম আজ খিচুরী রান্না করেছেন সকালে।সাথে বেগুন ভাজা,আলু ভর্তা আর ডিম ভাজা।বৃষ্টির দিনে খিচুরী অপছন্দ করে এমন বাঙালি কম ই আছে।ছোট বড় প্রায় সবার ই পছন্দ খিচুরী।মাহফুজা বেগমের ছেলে -মেয়ে ,স্বামী এবং তিনি নিজেও খিচুরী খুব পছন্দ করে।তাইতো বৃষ্টির দিনে তিনি খিচুরী রাঁধতে ভূলেননা।নেওয়াজ সাহেব ফজরের নামাজ পড়ে আর ঘুমায় না হাঁটতে চলে যান বাইরে।আজ বৃষ্টির কারণে বাইরে যেতে পারেনি বাড়িতেই বসে থেকে গতকালের খবরের কাগজটাই আবার পড়ছে কারণ আজকের খবরের কাগজ এখনো পাননি তিনি।মাহফুজা বেগম তো রান্নাই করছে সেই সকাল থেকেই।উৎস ও উঠেছে অনেক সকালে শুধু এখুনো উঠেনি নিরা।অনেক্ষণ ধরে উৎস চেষ্টা চালিয়েছে নিরাকে জাগানোর জন্য কিন্তু নিরা উ আ করে আবার ঘুমিয়ে গেছে।ওর ঘুম দেখে মনে হচ্ছে কত বছর ঘুমাইনি সে তাই আজ তার ঘুম শেষ হচ্ছেনা।উৎস আর চেষ্টা না করে চলে গেলো মাহফুজা বেগমকে ডাকতে।
আম্মা তোমার মেয়েকে উঠাতে পারলাম না তুমি ডাকো গিয়ে আমি আর পারবোনা তোমার মেয়েকে ডাকতে যেতে।এমন ঘুম ঘুমাচ্ছে সে যে জাগানোয় মুশকিল।আচ্ছা আমি ডেকে তুলছি নিরাকে তুই তোর আব্বুকে ডাক টেবিলে খাবার দিয়েছি।আমি ততক্ষণে নিরাকে ডেকে আনি।মাহফুজা বেগম নিরাকে ডাকতে যেতে যেতে বললো ,এই মেয়ে এত ঘুম যে কোথা পাই বুঝিনা,প্রতিদিন নবাবজাদিকে ডেকে তোলা লাগে ,পড়তে বসারতো নাম ই নাই।মাহফুজা বেগম নিরার ঘরে গিয়ে নিরাকে ডাকতে শুরু করলো,,নিরা উঠ তাড়াতাড়ি খিচুরী রান্না করেছি সবাই মিলে খাব একসাথে উঠ বলছি।নাহলে কিন্তু পানি ঢালবো তোর গাঁয়ে।পানি ঢালার কথা বলতেই চটপট উঠে বসলো নিরা তারপর চোখ ডলতে শুরু করলো।চোখ ডলাডলি বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে উঠ।আম্মা আরেকটু ঘুমাই ,দেখো আমার চোখে এখুনো কত ঘুম।
রাখ তোর ঘুম তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াসরুমে যা।নয়তো বলেই মাহফুজা বেগম নিরার হাত ধরে খাটের নিচে নামালো তারপর ঠেলেঠুলে ওয়াসরুমে ঢুকিয়ে ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে নিরার মুখে ঠুসে দিলো তারপর বললো পাঁচ মিনিটের মধ্যে খাবার টেবিলে আসবি ডাকতে যেনো না হয় বলে তিনি বের হয়ে এলেন সেখান থেকে।

ভোরে বৃষ্টির মধ্যেই বাড়ি ফিরেছে ফারদিন।তারপর কোনরকম হাত মুখ ধুয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে সকালের নাস্তাটাও করেনি।এখন ঘড়িতে বাজে বেলা বারোটা।ঘুম ঘুম চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো বেলা বারোটা বাজে।সাথে দেখলো ফোনে কয়েকটা মিসকল।সব এক নাম্বার থেকেই এসেছে।নাম্বারটা দেখে কল দিলো ওই নাম্বারে সে।রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না।আবার দিলো।এবারে একটা মেয়েকন্ঠ ভেসে এলো ওপাস থেকে।হ্যালো ফারদিন তুই আজ বিকেলে এসে আম্মা আর আব্বাকে নিয়ে যাস বাসায় তারা আর থাকতে চাচ্ছেনা বলছে তুলতুলকে দেখার জন্য নাকি মনটা হাকুপাকু করছে।এতক্ষণে ফারদিন কথা বলে উঠলো,,,আপু হাকুপাকু এটা আবার কেমন শব্দ?ফাহমিদা তখন বললো তোকে বুঝতে হবেনা কি শব্দ।দুবছর বিদেশ থেকেই এই অবস্থা তোর আরো না জানি কত বাংলা শব্দ ভূলে গেছিস তুই।শোন আপু তোমার এই আজগবি নিজে আবিষ্কার শব্দ আমি মনে রাখতেই চাইনা।সেটাই তুই বিকেলে এসে আম্মা-আব্বাকে নিয়ে যাস তাহলেই হবে।আপা ভাইয়াকে বলো আমারতো কাজ আছে।রাতে ডিউটিও আছে আমার।ফয়েজ আসতে পারবেনা তাইতো তোকে বললাম।তাহলে তুমিই নিয়ে চলে এসো আপা।তুমিওতো অনেকদিন আসোনা।
আমি কিভাবে যাবো ফারদিন ছেলেমেয়ের স্কুল আছেনা।তুই গাড়ি নিয়েই টুপ করে নিয়ে বাসায় দিয়ে তারপর ডিউটিতে যাস কেমন।এখন রাখি বলেই ফোনটা কেটে দিলো ফাহমিদা।ফারদিনো কান থেকে ফোনটা নামিয়ে ওয়াসরুমে গেলো।কিছুই করার নাই ফারদিনকেই যেতে হবে আব্বা আম্মাকে আনতে তার বড় ভাই ফয়েজ খুব ব্যস্ত মানুষ।এত ই তার ব্যস্ততা যে শ্বশুরবাড়িও ঠিকমত যেতে পারেনা সে।নিহাতো এজন্য অনেক কান্নাকাটিও করে তাকে একটুও সময় দেয়না বলে।

বৃষ্টিটা এখন আর নেই।আকাশটাও বেশ পরিষ্কার দেখাচ্ছে।তবে কখন আবার কালো হয়ে যাই বলা যাবেনা।বর্ষাকাল বলে কথা।বেশিরভাগ সময় ই আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরতে থাকে কখনো জোরে তো কখনো আসতে আবার কখনো আকাশ পরিষ্কার হয়ে রোদ ও দেখা যাই।নিরা তাদের দোতলার বারান্দায় বসে বসে চা মুড়ি খাচ্ছে বিকেল বেলা।সাথে পাপড়ো আছে।পাশেই বসে আছে উৎস।রাস্তার ধারে বাড়ি হওয়ায় বারান্দা থেকে রাস্তাটা ভালোই দেখা যাই সেই সাথে রাস্তার মানুষ আর গাড়িও।রাস্তা থেকেও ওদের বারান্দা দেখা যাই।ওপাশ দিয়ে গাড়ি নিয়ে ফারদিন যাচ্ছিলো বোনের বাড়ি বাবা মা কে আনতে।নিরাদের বাড়ির কাছাকাছি এসে দূর থেকে গাড়ির জানালা দিয়ে একবার ভালো করে দেখলো নিরা বারান্দায় আছে কিনা।তারপর কি মনে করে বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা থামিয়ে সেখানে নামলো সে গাড়ি থেকে তারপর নিচ থেকে উৎস বলে একটা ডাক দিলো।এক ডাকেই উৎস বসা থেকে উঠে চায়ের কাপটা টি টেবলে রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে জবাব দিলো জ্বি ভাইয়া।উপরে এসো।ফারদিন বললো,না যাবোনা ফ্রি আছিস থাকলে আন্টিকে বলে আয় আপাদের ওখানে যাচ্ছি তুই ও আমার সাথে চল।আচ্ছা আমি আম্মাকে বলে আসছি বলে ছুটে বেড়িয়ে গেলো সেখান থেকে আন্টিকে বলতে।নিরা ওখানে বসে থেকে ওদের কথা শুনছিলো আর চা খাচ্ছিলো মাঝে মাঝে ভেংচি কাটছিলো ওদের কথা শুনে।
একটু পর ই ছুটে নেমে আসলো উৎস তারপর গাড়িতে ফারদিনের পাশে বসে পড়লো।ফারদিন ও আর দেরি না করে একবার দোতলার দিকে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো।
কিরে কি করছিলি উৎস এখন।
এইতো চা খাচ্ছিলাম আমি আর আপি বসে বসে।
তো তোর আপিকে রেখে চলে আসলি সে রাগ করবেনা তোর ওপর?
রাগ কেনো করবে,আমি বাসায় না থাকলেই সে খুশি হয়।আপি কি বলে যানো ভাইয়া?
কি বলে?
আপি বলে তুই কোথ থেকে এসেছিস বলতো তুই না থাকলে সব খাবার আমি একাই খেতাম ভাগ করা লাগতোনা,আবার বলে তোকে শার্ট টাট এটা সেটা কিনতে যে টাকা দেয় তুই না হলে সেগুলো সব আমারি থাকতো।বলো তখন ওসব শুনে কেমন লাগে।আপিটা খুব ই হিংসুটি জানোতো।
বুঝলাম হাসি হাসি মুখে বললো ফারদিন।

নিরা ছাদ থেকে কাপড়গুলো নিয়ে আয় যা,একটু আকাশটা পরিষ্কার দেখে কাপড়গুলো দিলাম ঠিকি কিন্তু একটাও শুকিয়েছে কিনা আল্লাহ জানে আবার তো মেঘ মেঘ করছে।বর্ষার দিনে এই জ্বালা কাপড় শুকাতে চাইনা তাড়াতাড়ি।আম্মা কার সাথে কথা বলছো বলো তো কেউ তো নেই তাহলে।
তোকে কি বলেছি শুনতে পাসনি?
না তো আম্মা অবাক হয়ে জানতে চাইলো নিরা।
তোকে যে কাপড় আনতে বলেছি ছাদ থেকে তা তোর কানে যাইনি।
ও তাই বলো আমিতো শুনতে পাইনি এই বলে কান থেকে ইয়ারফোনটা বের করলো নিরা।মাহফুজা বেগম ওটা দেখে আরো রেগে গেলো।
নিরা যখন ওর মায়ের মুখের দিকে তাকালো দেখলো ওর মা ওর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।তখন ও এক দৌঁড়ে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে গেলো।

নিহা আজ খুব ব্যস্ত শ্বশুর শ্বাশুড়ি আসছে বাসায় এক সপ্তাহ পর।রান্নাবান্না করে নিচ্ছে আগে আগেই।নিহার শ্বশুর রাতের বেলা রুটি খায় সেজন্য সেটাও করে নিয়েছে।কখন বলে চলে আসে বাসায় তাই আগেই আগেই রান্না শুরু করে দিয়েছিলো সে।কলিংবেল বাজতেই দৌড়ে গেলো নিহা দরজা খুলতে।দরজা খুলে দেখে ফয়েজ দ্বাড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
কি ব্যাপার তুমি এখন বাসায়? এতো তাড়াতাড়ি?
আম্মারা আসছে তাই চলে এলাম কাজ করতে ইচ্ছে করছিলোনা বলে গলার টাইটা খুলতে খুলতে ঘরে চলে গেলো ফয়েজ।নিহাও দরজা লাগিয়ে স্বামীর পিছু পিছু গেলো।তারপর ফয়েজকে সব এগিয়ে দিয়ে আবার রান্নাঘরে আসলো ফয়েজের জন্য কফি বানাতে।ফয়েজ কে কফি দিতে রুমে ঢুকছিলো নিহা এমন সময় আবার কলিংবেল বেজে উঠলো তাড়াতাড়ি করে কফিটা রুমে রেখেই দরজা খুলে দেখলো তার শ্বশুর -শ্বাশুড়ি চলে এসেছে বাসায়।তারপর তাদের সালাম করে ভেতরে আসার পথ করে দিলো সে।
নিহা কে এসেছে ,রুম থেকে চেঁচিয়ে বললো ফয়েজ।

আম্মারা এসেছে বললো নিহাও চেঁচিয়ে।
কৈ আমার তুলতুল কৈ তাকে দেখছিনা কেনো তাকে ডাকো বৌমা।
আম্মা তুলতুল পাশের ফ্ল্যাটে আমি এক্ষুণি নিয়ে আসছি বলে নিহা তাড়াহুড়ো করে ছুটলো পাশের ফ্ল্যাটে।
এদিকে ফয়েজ এসে সালাম করলো তার আব্বা-আম্মাকে তারপর কেমন কাটালো মেয়ের বাড়ি সেসব নিয়ে গল্প করতে শুরু করলো।

ফারদিন একটা ছবি নিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ছবিটির দিকে।আর মন ভরে ছবির মানুষটাকে দেখে যাচ্ছে সে।আজ ক বছর ধরে এই ছবিটাকে বুকে আগলিয়ে রেখেছে সে।
আজ আর ডিউটি নেই ফারদিনের সকালবেলা হসপিটাল থেকে এসেই ঘুমিয়েছিলো সে দুপুর পর্যন্ত।এখন বিকালবেলা।ছাদের রেলিংয়ের ওপর বসে থেকে ছবির মানুষটির মুখটা দেখছে সে অপলক চোখে।চাচ্চু তুমি পলে যাবা তো নামো বলতি বলে পেছন থেকে ফারদিনের পিঠে হাত রাখলো তুলতুল।ফারদিন পেছন ঘুরে তুলতুলকে বললো একা এসেছিস ছাদে নাকি ভয় করেনি?
একা আছবো কেনো মাম্মাম রেখে গেলোতো।বললো তুমি চাচ্চুর সাথে থাকো আমি কাজ করি গিয়ে বলে চলে গেলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here