যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:19
লিখনিতে:মৌসুমী
”
”
”
তিশার গাঁয়ে হলুদ খুব ধুমধামের সাথেই হচ্ছে।বাড়ির ছাদেই গাঁয়ে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে।চারিদিকে তাজা ফুলের গন্ধে ম ম করছে সেই সাথে বিভিন্ন আলোই চারপাশ ঝকমক করছে।কাঁচা হলুদ রঙের জামদানী পড়ে আর তাজা ফুলের গহনা পড়ে স্টেজের ওপর বসে আছে তিশা।নিরাই সাজিয়ে দিয়েছে তাকে।তিশার ইচ্ছা ছিলো তার বিয়েতে সে নিরার হাতেই সাজবে,আর বাঙালি করে শাড়ি পড়বে সাথে তাজা ফুলের গহনা।নিরা তার ইচ্ছামত তিশাকে সাজিয়ে দিয়েছে।নিরা পড়েছে লাল জামদানি।হলুদ ফর্সা গায়ের রঙে লাল জামদানি যেনো নিরার গাঁয়ে ফুটে উঠেছে।দেখতে নিরাকে লাল গোলাপের মত ই লাগছে।কারণ মাথায় লাল রঙের ই হিজাব বেঁধেছে।হাতে লাল চুড়ি।মুখে হালকা মেকাপ।ঠোঁটে দিয়েছে লাল লিপস্টিক।উৎস একটা নীল রঙের পান্জাবী পড়েছে।স্টেজে তিশার পাশে তিশার কাজিনরাই বসে আছে।নিরা উৎসর সাথে বসে আছে স্টেজের পাশে চেয়ার নিয়ে।বসে সেলফি তুলছে বিভিন্ন পোজ দিয়ে।
”
”
-হ্যালো ,
-নিরা ফোনটা নামিয়ে হ্যালো বলা ছেলের দিকে তাকালো। ছেলেটিকে বললো,আমাকে বললেন?
-ছেলেটি মুখে হালকা হাসি নিয়ে বললো,জ্বি।
নিরা বললো,বলুন কি বলবেন?
-জ্বি বসে কথা বলি?
-অবশ্যয়।
ছেলেটি একটা চেয়ার টেনে বসলো।তারপর বললো,
-আমি শিশির,,
-ওহ আচ্ছা বলে খুব সুন্দর একটা হাসি দিলো নিরা।উৎস কিছু বলছেনা চুপচাপ বসে নিরা আর শিশিরের কথা শুনছে।
-আমি তিশার মামাতো ভাই,আপনি কে হোন তিশার,মানে আগে আপনাকে দেখিনি কখনো তাই বললাম।
-আমি নিরা,তিশার বেস্টফ্রেন্ড।
-ও ও,আপনার কথা তিশার মুখে শুনেছি মনে হচ্ছে।
-শুনতেই পারেন,কারণ ছোটবেলার ফ্রেন্ড সে আমার।
-হুম।আমার বাড়ি আসলে নঁওগা তাই তিশাদের বাড়ি তেমন আসা হয় না।আর ব্যস্ত ও থাকি।
-নিরা কিছু বললোনা একটু মুচকি হাসি দিলো।
-শিশিরো একটু মুচকি হেসে বললো,এটা কে হয় আপনার? উৎসকে দেখিয়ে।
-নিরা উৎসর দিকে একবার তাকিয়ে বললো,আমার ছোট ভাই।
-ও আচ্ছা,নাম কি তোমার ভাইয়া?
উৎস একগাল হেসে বললো,
-উৎস ,আমার নাম উৎস।
-খুব সুন্দর নাম তোমার।
-ধন্যবাদ।
শিশির মিষ্টি একটা হাসি দিলো।তারপর নিরাকে বললো,
-খেয়েছেন আপনারা?
-নিরা ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো,ফোন থেকে চোখটা তুলে বললো,
-না এখুনো খাইনি,পরে খাবো
-আচ্ছা তাহলে থাকেন আমি নিচে যাবো।
নিরা মাথা দুলালো ,মানে বুঝালো,আচ্ছা আপনি যেতে পারেন।
শিশির যেতেই আবার নিরা আর উৎস ছবি উঠাতে শুরু করলো।একটু পর চেয়ার থেকে উঠে তিশার ছবি তুলতে শুরু করলো,তিশার পাশে বসে কয়েকটা সেল্ফিও নিলো ।
আত্মীয়-স্বজনে ভরপুর হয়ায় পুরো বাড়ি, ছাদ বোঝায় হয়ে আছে।শান্তিমত নিরবে থাকার জায়গা নাই।বিয়ে বাড়ি মানেই এমন।চারিদিকে শুধু হৈ হুল্লোর।তাসিফ নিরার ফোনে কল করেছে ,নিরা রিসিভ করেছে ঠিক ই তবে কিছুই শুনতে পাচ্ছেনা ।নিরা বার বার কেটে দিচ্ছে।তাসিফ তবুও কল করেই যাচ্ছে।তাসিফের এই কাজে নিরা এখন খুব বিরক্ত হচ্ছে।শেষে না পেরে ফোনটায় বন্ধ করে দিলো।
উৎসর লেগেছে খিদে সে নিরাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু পুরো ছাদের কোথাও নেই নিরা।শেষে খুঁজতে খুঁজতে নিচে গিয়ে একটা ঘরে পায় তাকে।নিরা তার আরো কয়েকটা বান্ধবীর সাথে বসে কথা বলছে।উৎস পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই নিরা বললো,
-কিরে ,মুখ এমন করে রেখেছিস কেনো?
-আপু একটু কথা ছিলো,তুই একটু এদিকে আয়।
-এখানেই বল,দেখছিস না আমি বন্যাদের সাথে কথা বলছি।
-আপু খিদে লেগেছে।
উৎসর খিদে লেগেছে এই কথা শুনে নিরার বান্ধবীরা হেসে দিলো।উৎস এদের হাসি দেখে খুব বিব্রতবোধ করছে।নিরা বিরক্ত নিয়ে বললো,
-খাওয়াচ্ছে যেখানে সেখানে গিয়ে খেয়ে নে,এই কথা আমাকে বলতে এসেছিস কেনো।যা এখান থেকে।পাশ দিয়ে শিশির যাচ্ছিলো ,শিশির উৎসকে বললো,
-কোন সমস্যা উৎস?
-না,কোন সমস্যা নাই,
-আমাকে বলো?নিরা পাশ থেকে বললো,কিছুনা ভাইয়া আপনি যান আপনার কাজে।শিশির বললো,
-কোন সমস্যা হলে আমাকে বলো,আমি যাচ্ছি কাজ আছে।শিশির যেতেই নিরার সব বান্ধবীরা বললো,
-এই ছেলেটা কে রে নিরা।
-তিশার মামাতো ভাই।
রিয়া বলে একজন বলে উঠলো,
-কি দেখতেরে ,পুরাই হিরো।
সাইমা বলে মেয়েটা বললো,
-ঠিক বলেছিস,তা এই চকলেট বয়ের কথা তিশা আমাদের আগে বলেনি কেনো বলতো।
নিরা এদের কথাতে বিরক্ত হচ্ছে,সে উৎসকে বললো,চল আমার সাথে।উৎস আর নিরা গেলো যেখানে খাওয়াচ্ছে সেখানে।
”
”
”
তোমাকে কি এখন খেতে দিবো ফারদিন?দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বললো নিহা।ফারদিন এখুনি আসলো হাসপাতাল থেকে।
-আব্বা-আম্মার খাওয়া হয়েছে?
-হ্যাঁ,
-ভাইয়া আসেনি?
-তোমার ভাইয়া রাস্তায়।ফোন করেছিলাম,আসছে এখন।
-রাত এগারোটা বাজে এখুনো আসতে পারেনি ভাইয়া।কি এত কাজ তার?
-আমি কি জানি,আজ নাকি পুঠিয়া গেছিলো,ওখান থেকেই আসছে।
-আমি ফ্রেস হয়ে আসছি,তুমি খাবার দাও টেবিলে।
-আচ্ছা বলে নিহা চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে।শরীর ক্লান্ত হয়ে গেছে তার।সারাদিন খাটাখাটনি করে যে একটু তাড়াতাড়ি শুবে তা হয়না।এখুনো ফয়েজ আসেনি সে আসলে তার সেবায় আবার লেগে পড়তে হবে।বিয়ের আগেই ভালো ছিলো।পায়ের ওপর পা তুলে থেকেছে,কোন কাজ করতে হয়নি,আর এখন সারাদিন কাজ,রাতের অর্ধেক পর্যন্ত।
”
”
”
রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো ফারদিন।বালিশের তলা থেকে ছবিটা বের করে চোখের সামনে ধরলো,খুব বিয়ে খাওয়া হচ্ছে না?একটা যে তোমার বর আছে তা কি তোমার মনে আছে।মনে নাই তাইতো,থাকবে কেমন করে,মাথায় তো অন্য ছেলে বসে আছে,আমাকে তাই মনে পড়েনা।তবে সুযোগ যখন পেয়েছি এবার আর তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছিনা।এতদিন অনেক ছেড়ে রেখেছি,রাগ করে নিজের ভালোবাসাটা আড়াল করে রেখে দিয়েছি ।বিয়ে যখন তোমার সাথে আমার হয়েই গেছে তখন আর পালাবে কোথায়।কারো আর সাদ্ধি নাই আমার কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নেওয়ার,সেটা তোমার প্রানের তাসিফ ও না।গাঢ় করে নিরার ছবিতে একটা চুমু দিয়ে ছবিটা বুকে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো ফারদিন।
”
”
”
বিয়ে বাড়িতে সব থেকে যে সমস্যাটা থাকে তা হলো শুয়া নিয়ে ।তিশাদের বাড়িতেও সেই এক ই সমস্যা দেখা দিয়েছে।সব মেহমানরা যে যেখানে পারছে শুয়ে পড়ছে।নিরা ঝামেলায় পড়েছে উৎসকে নিয়ে,সেতো তিশার সাথে তিশার ঘরে সব বান্ধবীরা মিলে ঘুমাবে কিন্তু উৎসকে কোথায় শুতে দিবে।তিশাকে যে কিছু বলবে তার ও উপায় নেই,তিশা এখন ব্যস্ত তার হবু বরের সাথে ফোনে কথা বলতে।নিরার মেজাজ খুব খুব খারাপ হচ্ছে তিশার ওপর,আরে বাবা কাল ই তো তোদের বিয়ে ,কাল সারারাত পাবি কথা বলার জন্য,কাল কেনো বলছি,কাল থেকে প্রতিদিন তো তারা একসাথেই থাকবে তাহলে আজ এত ফোনে কথা বলার কি দরকার।অযথা ফোনের ব্যালেন্সগুলো নষ্ট করছে দুই ফাজিলে আর সিম কোম্পানীকে বড়লোক করে দিচ্ছে।
-কিছু ভাবছেন?
-আচমকা শিশিরের কথা শুনে শিশিরের দিকে তাকালো নিরা।তারপর বললো,
-কিছু বলছিলেন?
-বলছিলাম কিছু ভাবছেন?
-ওহ,না, হ্যাঁ,কিছুনা।
-আপনাকে দেখে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে মিস নিরা?
-আপনি কোথায় শুবেন?
-মানে?
-বলছি আপনি যেখানে শুবেন সেখানে যদি জায়গা থাকে তাহলে উৎসকে সেখানে যদি রাখতেন।
-ওহ আচ্ছা,এই ব্যাপার সমস্যা নাই,আমরা সবাই ওই কোনার ঘরটাই শুবো ছেলেরা মিলে,উৎসকেও নিয়ে যাচ্ছি,কোথায় উৎস?
-উৎস টিভির ঘরে,চলেন ওর কাছে।নিরা টিভির ঘরে গিয়ে দেখে উৎস ঘুম ঘুম চোখে সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।নিরা বললো,
-উৎস শিশির ভাইয়ার সাথে শুতে যা,সাবধানে শুয়ে থাকিস,কারো গাঁয়ে পা তুলে দিসনা কেমন।
শিশির উৎসকে নিয়ে গেলো ,নিরা এবার চিন্তামুক্ত হয়ে তিশার ঘরে আসলো ,তিশা এখুনো ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে।বাকি মেয়েরা ঘুমিয়ে গেছে।নিরা এসে সেও শুয়ে পড়লো।
চলবে….