যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:১৮

0
641

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:18
লেখনিতে:মৌসুমী





দুপুরের কড়া রোদ জানালা দিয়ে এসে ফারদিনের চোখে পড়ছে।ঘুমে চোখ খুলতেও কষ্ট হচ্ছে সেই সাথে রোদটাও সহ্য হচ্ছেনা।আস্তে করে চোখটা খুলে আবার বন্ধ করে নিলো ফারদিন তারপর আবার চোখটা খুলে ফোনে কয়টা বাজছে দেখলো।ঘড়িতে বাজে সাড়ে বারোটা।শোয়া থেকে উঠে বালিশটা পেছনে দিয়ে খাটের সাথে হেলানা দিয়ে বসলো এবার।জানালার মোটা পর্দাটা হাত বাড়িয়ে মেলে দিলো।এবার আর রোদ আসছেনা ঘরে।চোখ বন্ধ করে ভাবলো নিরার কথা,নিরা কি বাড়িতে আছে না কলেজে।মনে মনে ভাবলো নিহাকে জিঙ্গেস করবে,যেই ভাবা সেই কাজ।ভাবি বলে নিহাকে ডাক দিলো ফারদিন।ফারদিনের গলার আওয়াজ শুনে তুলতুল তার খেলনা রেখে নিহার কাছে ছুটলো রান্নাঘরে
-মাম্মাম ও মাম্মাম তোমাকে চাচ্চু ডাকে।
-নিহা চামচ দিয়ে তরকারি নাড়তে নাড়তে তুলতুলের দিকে না তাকিয়েই বললো,তোমার চাচ্চুকে গিয়ে বলো মাম্মাম রান্না করে এখন যেতে পারবোনা।কিছু লাগবে কিনা সেটা জিঙ্গেস করে আসো যাও।
-তুলতুল ছুটতে ছুটতে ফারদিনের ঘরে গিয়ে খাটের পর উঠে ফারদিনের পেটের ওপর উঠে পড়লো।আচমকা তুলতুল ফারদিনের পেটের ওপর বসায় চমকে উঠলো ফারদিন।চোখ বন্ধ করে থাকার ফলে সে তুলতুলকে দেখেছিলোনা আসতে।
-চাচ্চু মাম্মামকে ডাকো কেনো?
-কোথায় তোমার মাম্মাম ?
-মাম্মাম তো রান্না কলে।তোমার কিছু লাগবে?
-তোমার খালামণি কোথায় জানো?
-জানিনাতো কোতায়,কেনো চাচ্চু?
-বাসায় নাই তোমার খালামণি?
-না তো,খালামণি তো কয়দিন পর থেকে একানে আছেনি।
-মানে?তুলতুলকে নিয়ে এবার সোজা হয়ে বসলো ফারদিন,অবাক হয়ে বললো ,তোমার খালামণি গ্রাম থেকে আমাদের বাসায় আসেনি।
-তুলতুল কপাল ভাঁজ করে একটু ভেবে বললো,না,সেদিন তো খালামণিরা আগেই গাড়ি থেকে নেমে নানাভাই,নানী আর উততো মামার সাথে বাড়ি চলে গেছে।ফারদিন তুলতুলকে কোলে নিয়ে জোরে জোরে পায়ে হেঁটে বসার ঘরে আসলো,
-আম্মা আম্মা,কোথায় তুমি?
-ফজিলা বেগম ফারদিনের এত জোরে ডাক শুনে হুড়মুড় করে ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন।
-আম্মা নিরাকে তোমরা সাথে করে এ বাড়ি নিয়ে আসোনি কেনো?
-আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবোনা,তোর বৌ তুই সেটা জানিস.
-আম্মা,কি বলছো এসব ,আমার বৌ তোমাদের কেউ না?রবিবারে এসেছো আর আজ বুধবার,তোমরা আমাকে বলোওনি যে তোমরা নিরাকে নিয়ে আসোনি এ বাড়িতে।আমিও কাজের ব্যস্ততায় খোঁজ নিতে পারিনি,মনে করেছি এই বাড়িতেই আছে কারণ যেভাবেই হোক না কেনো বিয়ে তো তার সাথে আমার হয়েছে নাকি।
-তুই আমাদের মান-সম্মান ডুবিয়ে বিয়েটা করেছিস সেটা ভূলে যাসনা আর তোর আব্বা খুব রেগে আছে তাই এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারিনি তোর আব্বাকে।আর তুই ও আমাকে বলে এসেছিলিনা যে নিরাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে।
-আম্মা তোমাকে আমি চিনতে পারছিনা,যে তুমি নিরাকে এত ভালোবাসো ,আব্বা তাকে এতো মাথায় তুলে রাখতো সেই তোমরা এখন তাকে এ বাড়ি নিয়ে আসছোনা।দেখো আম্মা বিয়েটা আমি ভেবে চিন্তেই করেছি।তাই আমার বৌ আমার বাড়িতেই থাকবে।আমি বিকালেই যাবো নিরাকে আনতে।ভাবিও আমাকে কিছু বলেনি।



আন্টি নিরাতো আজ ই যাচ্ছে আমাদের বাড়ি,আপনারা কিন্তু শুক্রবারে অবশ্যয় আসবেন।উৎসকেও আজ নিয়ে যাবো কিন্তু।উৎস তুমি রেডিতো।
– তিশা আপু আমি না গেলে হয় না?শুক্রবারে আম্মাদের সাথে যেতাম।
-আরে কি বলো,আজকেই যাবা।আমি কোন কথা শুনবোনা বুঝেছো।
-উৎস একদিকে ঘাড় কাত করে বোঝালো সে বুঝেছে।

নিরা বিশাল বড় ব্যাগপত্র নিয়ে হাজির হয়েছে ওর মায়ের সামনে।মাহফুজা বেগম এখুনো সেভাবে মেয়ের সাথে কথা বলছেনা।নিরাই বললো,
-আম্মা আসছি,তোমরা সাবধানে থেকো।আমি আব্বুকে ফোন করে বলেছি তিশার বিয়ের কথা আব্বু যেতে বলেছে তিশাদের বাড়ি।মাহফুজা বেগম থমথমে গলায় বললেন,
না বললেও কি শুনতি।আর সেটা কথা না তিশার আব্বু -আম্মু আগেই বাড়ি এসে বলে গেছে আর তোদের আজ যেতে বলেছে তাই এখানে আপত্তির কিছুই না,তবে ভালোভাবে থাকিস,বাপ-মায়ের সম্মানের কথাটা মাথায় রাখিস।দেরি করিসনা ,তিশা মা বিয়ের পর জামাইকে নিয়ে এসো কিন্তু,ভূলে যেয়ো না আমাদের।
-না আন্টি কি বলেন,অবশ্যয় আসবো।আপনারাও যাবেন,আসি তাহলে।মাহফুজা বেগমকে সালাম দিয়ে তিশা উৎস আর নিরাকে নিয়ে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।নিরাও রিকশায় উঠেছে তখনি ফারদিনো রিকশার পেছনে গাড়ি নিয়ে এসে দাঁড়ালো।গাড়ি থেকে নেমে সোজা নিরাদের বাসার কলিংবেল চাপলো।নিরাদের রিকশাটাও চলতে শুরু করে দিয়েছে।কেউ কাউকে দেখতে পায়নি।আরেকটু আগে ফারদিন আসলেই নিরার সাথে তার দেখা হয়ে যেতো।কিন্তু একটুর জন্য আর হলোনা দেখাটা।


কলিংবেলের শব্দে টুনি এসে দরজাটা খুলে দিলো।ফারদিনকে দেখে ভেতরে আসতে বললো।
-টুনি আন্টি কোথায়?
-চাচি তো ভেতরে আপনি বসেন আমি ডেকে আনছি।
ফারদিন সোফার উপরে বসে চারিদিকে তাকাচ্ছে।বাড়িটা কেমন চুপ হয়ে আছে।অথচ এর আগে আসলে এমন মনে হতো না।অবশ্য ফারদিন খুব কম ই এ বাড়িতে এসেছে।বাড়ির সবাই আসলেও ফারদিন সব সময় এড়িয়ে চলতো।আর ফারদিন রাজশাহীতেও থাকতোনা সে কারণে আরো আসা হতো না এ বাড়িতে।
-কেমন আছো বাবা,মাহফুজা বেগম ফারদিনের সামনের সোফায় বসতে বসতে বললো কথাটা।
-ফারদিন সালাম দিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললো,আলহামদুলিল্লাহ।আপনার শরীর ভালো?
-এই মোটামোটি চলছে বাবা।
-ফারদিন নেওয়াজ সাহেব,উৎসর খবর নিয়ে বললো,বাড়িতে কেউ নাই নাকি,কেমন চুপচাপ হয়ে আছে।
-না,আমি আর টুনিই আছি,তোমার আঙ্কেল আসতে আসতে রাত,নিরা আর উৎস একটু আগেই বের হলো,নিরার বান্ধবীর বিয়ে শুক্রবারে তাই আজ ই গেলো।কাল গাঁয়ে হলুদ।
-আমতা আমতা করতে করতে ফারদিন বললো,আমিতো নিরাকে নিয়ে যেতে এসেছি আন্টি,এ কদিন খুব ব্যস্ত ছিলাম ।
-মাহফুজা বেগম এবার চুপ করে গেলেন।কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে বললেন,তোমার আব্বা-আম্মা তো এ ব্যাপারে কিছু বলেননি আমাদের।সেদিন গ্রাম থেকে এসেও কিছু বললোনা, নিরা কোন বাড়ি যাবে,কি করবে।একটা ভূল তো তোমরা করেছো।তার ওপর এই কদিনে তোমরা কেউ কোন কথায় বলোনি আমাদের সাথে।
-আসলে আন্টি এভাবে বিয়ে হয়াতে আব্বা আমার ওপর খুব রেগে আছে।
-তোমার আব্বা-আম্মা কিছু না বললে কিভাবে আমি আমার মেয়েকে পাঠাই তোমাদের বাড়ি বলো?আমার আরেকটা মেয়েও আছে ওই বাড়ি ,তার যদি কোন সমস্যা হয়।
-কি বলছেন এসব আন্টি,ভাবির সমস্যা হবে কেনো?এখানে ভাবির তো কোন দোষ নেই,সব দোষ আমার।আর আমি যেহেতু আপনার ছোটমেয়েকে বিয়ে করেছি তো আমিই তাকে নিয়ে যাবো আমার বাড়ি।আর তাছাড়া আমিতো বেকার না,যথেষ্ট রোজগার করি তাই আপনার কোন ভয় নেই।
-তোমার আঙ্কেলের সাথে কথা বলে দেখি,সে কি বলে।আর নিরাও আসুক বিয়ে খেয়ে।
-আন্টি শনিবারে আমি এসে নিরাকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো।আসি আন্টি বলেই উঠে দাঁড়ালো ফারদিন।
-বসো বাবা,চা-নাস্তা খেয়ে যাও,
-না আন্টি ,আজ আর বসবোনা।ভালো থাকবেন বলেই সালাম দিয়ে বেড়িয়ে গেলো ফারদিন।




-হ্যালো,,
-কি ব্যাপার নিরা,আমার ফোন রিসিভ করছিসনা কেনো,কবে থেকে তোকে কল করছি?
-তাসিফ ভাইয়া আমি আসলে খুব ব্যস্ত গো।তোমার সাথে পরে কথা বলবো ।
-কি নিয়ে এত ব্যস্ত তুই?
-আমার বান্ধবী তিশার বিয়ে,তাদের বাড়িই আছি এখন।
-ও তাই বল,তো বেশি ঢং ঢং করে বেড়াসনা বুঝেছিস? আর একাই এসেছিস নাকি?
-না উৎস এসেছে।
-ভালো,
-হুম,এখন রাখি,কাজ আছে,
-শোন রাখিস না,আরেকটু কথা বলি আর আমি সামনের মাসে …টুট..টুট…
নিরা তাসিফের কথা না শুনেই ফোনটা রেখে দিয়েছে।




চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here