যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:১৭

0
601

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:17
লেখনিতে:মৌসুমী




দুই দিন হয়ে গেলো নিরারা গ্রাম থেকে এসেছে।এখুনো ও বাড়ি থেকে কেউ নিরার খোঁজ নেয়নি এমনকি ফারদিন ও না।বাড়ির কেউ নিরার সাথে তেমন কথাও বলেনা।উৎস শুধু দু একবার কথা বলেছে।নিরার নিজেকে খুব একা একা লাগছে।ফারদিনের ওপরো খুব রাগ হচ্ছে।সেদিন নিরার অনিচ্ছা সত্বেও বিয়ে করলো অথচ এখুনো কোন খোঁজ নিলোনা ।একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে ওই বাড়ি গিয়ে থাকা লাগছেনা।কারণ নিরার কোন ইচ্ছা নাই ফারদিনের ঘর করার।নিরা তো সেই কবে থেকে ওই মানুষটার আশায় আছে।নিরার বিশ্বাস আছে কোন একদিন সে এসে নিরার সামনে দাঁড়াবে আর নিরাকে আপন করে নিবে।সব ঠিকঠাক ছিলো,মাঝখান থেকে এই ফারদিনটা সব লন্ডভন্ড করে দিলো।বিয়ে করে নিরার সর্বনাশ করে দিলো।

রিকশায় আস্তে আস্তে নিরা ভাবনার মধ্যে ডুবে গিয়েছিলো,রিকশাওয়ালা মামার ডাকে নিরা ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসলো।কলেজের গেটে ঢুকতেই তিশার সাথে দেখা।তিশা দাঁড়িয়ে আছে।কাছাকাছি গিয়ে দুই বান্ধবী দুজনকে জড়িয়ে ধরলো।নিরা বলে উঠলো,কতদিন পর দেখারে দোস্ত,কেমন আছিস?তিশা নিজেকে নিরার হাতের বাঁধন থেকে আলগা করে বললো,বেড়াতে গিয়ে তো আমাকে ভূলেই গেছিলি।আমি বলে কেউ যে আছি তোর মনে ছিলো?
নিরা তিশার একটা হাত নিয়ে বললো,তোকে ফোন দিইনি বল?দিয়েছিলাম তো তাহলে এমন করছিস কেনো?
তিশা বললো,ওই একবার কি দুবার দিয়েছিলি তারপর তো আর দিসনি।
নিরা বললো,আচ্ছা আর রাগ দেখাতে হবেনা আমিতো চলেই এসেছি তাইনা।
তিশা এবার হাসি মুখ করে বললো,হুম জানেমন বলে আবার দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো।জড়িয়ে ধরা অবস্থায় নিরা বললো,তোকে অনেক কিছু বলার আছে তিশু।
তিশাও নিরাকে ঝাঁকিয়ে নিরার মুখটা সামনে এনে বললো,আমারো তোকে কিছু বলার আছে।দুই বান্ধবী কথা বলতে বলতেই আরো কয়েকটা বান্ধবী এসে তাদের ঘিরে ফেললো।পাশ দিয়েও যারা যাচ্ছে নিরাদের সালাম দিয়ে হাসিমুখে চলে যাচ্ছে।

কলেজ গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে একসময় নিরা দেখলো এক ছেলে তাদের দেখে কথা না বলে সালাম না দিয়েই তাদের পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে।নিরা এটা দেখে ছেলেটাকে বললো,
-এই ছেলে দাঁড়াও।ছেলেটা দাঁড়ালো।
-তুমি এই কলেজে নতুন নাকি,আমাদের সালাম না দিয়েই চলে যাচ্ছো।তোমার এত্তবড় সাহস,ছেলেটি নিরার ধমকে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমতা আমতা করে বললো,
-আসলে আপু আমি তো নতুন,ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছি,তাই আপনাদের আমি চিনিনা।
-চিনোনা যখন আমাদের চিনে নাও পাশ থেকে তিশা বললো,আমি তিশা,ও নিরা আরো যারা আছে সবার নাম বললো ছেলেটাকে।নিরা বললো,
-শোনো ছেলে,আমাদের এরপর থেকে দেখলে,সালাম দিবে,আর হাসিমুখে কথা বলে যাবে বুঝেছো,আমরা তোমার বড় আপু।তা তোমার নাম কি বলো?ছেলেছি বললো,
-জ্বি আমার নাম তুহিন।নিরা এবার বললো,
-কোন ডিপার্টমেন্টের তুমি?
-তুহিন হাসি হাসি মুখে বললো,ভূগোল।
-নিরা ও আচ্ছা বলে তুহিনকে বললো,বলতো তুহিন ভূগোল কাকে বলে?
-তুহিন মনে মনে বলছে ,আচ্ছা যন্ত্রনায় পড়া গেলো,এখন এদের ভূগোল কাকে বলে তাও বলা লাগবে।মনের কথা মনে রেখে তুহিন হাসি হাসি মুখে বললো, মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনাকে ভূগোল বলে।
-নিহা ওমনি খ্যাক করে উঠে বললো,কে তোমাকে এই কথা বলেছে যে,মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনাকে ভূগোল বলে?শোনো,পৃথিবীর যা কিছু গোল গোল,দিঘোল দিঘোল তাই হলো ভূগোল,যা পড়ে মানুষের মাথা হয়ে যাই ঘোল ঘোল বুঝেছো।তুহিন না পারছে হাসতে,না পারছে রাগ করতে আর না পারছে এখান থেকে এই পাগলদের কাছ থেকে পালাতে।মহা মসিবতে পড়ে আছে তুহিন নামের ছেলেটি।

নিরার কলেজের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ফারদিন নিরাকে দেখে সেখানে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো,তুহিনকে যখন নিরা ডাকে তখন সে গাড়ি থেকে নেমে নিরার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে শুনছিলো যে,নিরা ছেলেটাকে ডাকলো কেনো।তারপর নিরার আর তুহিনের কথাবার্তা শুনে আর ভূগোলের সংঙ্গা শুনে এখন ফারদিনের মাথা গোল গোল হয়ে ঘুরছে।মনে মনে বলছে এই কোন মেয়েরে বাবা একটা ছেলেকে দেখছি আজ ই পাগল করে পাবনা হেমায়েতপুরে পাঠাবে।মনে মনে এসব বলে সেখান থেকে কেটে পড়লো ফারদিন।নিরার সাথে কথাও বললোনা এমনকি নিরাকে নিজের চেহারাও দেখালোনা।চলে গেলো সে বাড়িতে।গতকাল সকালে বের হয়েছিলো ফারদিন বাড়ি থেকে,আজ এখন যাচ্ছে বাড়িতে।কদিন ছুটি কাটানোর ফলে এখন একটুও রেস্ট নিতে পারছেনা সে।নিরা যে ফারদিনদের বাড়িতে নেই তা ফারদিন এখুনো জানেনা।

এদিকে নিরা অনেক বকবক করে তারপর তুহিনকে ছাড়ে।তুহিনো যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে এমন অবস্থা।

নিরা আর তিশা দুই বান্ধবী এখন মাঠে বসে আছে,আজ আর ক্লাশ করবেনা কারণ দুজনের ই অনেক কথা জমে আছে দুজনকে বলার জন্য।তিশা বললো নিরাকে,বল কি বলবি বলছিলি,আগে তোর কথা শুনি তারপর আমার কথা তোকে বলবো।
নিরা বললো ,না আগে তোর কথাগুলো শুনি বল কি বলতে চাইছিলি,তিশা বললো,তাহলে শোন,আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আর আগামী শুক্রবারেই বিয়ে আমার।নিরা অবাক হয়ে বললো,কি বলিস,আমাকে এখন বলছিস? আগে বলিসনি কেনো?কার সাথে?কোথায় বাড়ি ছেলের?মাহিন ভাইয়ার কি হবে?তিশা হাসতে হাসতে বললো,আরে থাম থাম সব বলছি এত উত্তেজিত হোস না,নিরা বললো,বল আগে,তিশা বলছি বলে বলতে শুরু করলো,মাহিনের সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে,বাড়ি থেকে আমাদের মেনে নিয়েছে,আর তোকে সামনা-সামনি বলবো বলেই জানাইনি।
নিরা খুশি খুশি গলায় বললো,যাক ভালোই হলো,তাহলে জমিয়েই বিয়েটা খাওয়া যাবে।তিশা হুম বলে নিরাকে বললো,এবার তোর কি কথা আছে বল?নিরা বললো আমার কথা পরে শুনিস এখন চল আমার কত শপিং করতে হবে ,আমার বেস্টির বিয়ে বলে কথা,চল চল আজ থেকেই কেনাকাটা শুরু করবো,আর তো বেশিদিন নাই।আমার কাছে কিছু টাকা আছে তা দিয়েই আজ শুরু করি বলেই উঠে দাঁড়ালো নিরা।তিশাকেও টেনে তুললো বসা থেকে।

চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে ফয়েজ।সামনে টিভি চলছে সেদিকে তার কোন মন নাই।আনমনা হয়ে কিছু একটা ভাবছে সে বোঝায় যাচ্ছে।নিহা কফি এনে ফয়েজকে কয়েকবার ডাক দিলো ।ফয়েজ শুনতেই পেলোনা নিহার ডাক।নিহা এবার ফয়েজকে হালকা ধাক্কা দিলো।এবারে ফয়েজের ধ্যান ভঙ্গ হয়েছে।কফির মগ ফয়েজের হাতে দিতে দিতে নিহা বললো,কি হয়েছে?কি ভাবছিলে?
ফয়েজ কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বললো কি আর ভাববো নিরা আর ফারদিনের কথায় ভাবছি।দুদিন হয়ে গেলো নিরাকে এ বাড়ি আনার কথা কেউই বলছেনা,এমনকি ফারদিনো এ বিষয়ে বাড়িতে কিছু বলছেনা।নিহা মন খারাপ করে বললো,কি বলবো বলো,কেউতো এভাবে বিয়েটা মেনে নিতেই পারছেনা।আর আমিও আব্বা-আম্মাদেরকে কিছু জিঙ্গেস করিনি এ ব্যাপারে।ফারদিনো ঠিকমত থাকছেনা বাড়িতে।আজ এসেছিলো বিকালে ঘুম থেকে উঠেই আবার চলে গেলো হাসপাতালে।কিছু বলার মত সুযোগ ই দিচ্ছেনা।
ফয়েজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,কি যে হবে এদের দুজনের আল্লাহ ভালো জানে।নিরার সাথে কথা বলেছো?
নাহ,বলিনি,কারো সাথেই বলিনি,আম্মার যে রাগ ভয়ে আম্মার সাথেও কথা বলিনি।শোননা ফয়েজের বুকে এবার মাথা রাখলো নিহা তারপর বললো,আমি কিছুদিন ও বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে চাই,অনেকদিন হলো যাইনি।ফয়েজ দুই হাতে নিহাকে জাপটে ধরে বললো,আচ্ছা রেখে আসবো তবে,সেটা দুই দিনের জন্য।নিহা ফয়েজের বুক থেকে মাথা তুলে বললো,না আমি এক সপ্তাহ থাকবো।তুমিতো সারাদিন বাড়িতে থাকোইনা তাহলে আমি কয়দিন আম্মাদের ওখানে থাকলে সমস্যা কি?
ফয়েজ নিহার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে বললো,সারাদিন না থাকলেও রাতে এই বুকটা খাঁ খাঁ করে তুমি না থাকলে।নিহা ফয়েজকে আরেকটু শক্ত করে ধরে বললো,আচ্ছা তাহলে তুমিও রাতে ওখানে থাকবে যেদিন তোমার আমাকে ছাড়া ভালো লাগবেনা সেদিন।ফয়েজ বললো,আমার তো তোমাকে ছাড়া এক রাত ও একা থাকতে ইচ্ছে করেনা।দেখি মুখটা বের করোতো একটু আদর দিই।নিহা লজ্জা পেয়ে বললো ,না ,এখন ওসব কিছুনা ছাড়ো আমি রান্নাঘরটা গুছিয়ে আসি।ফয়েজ এবার আরো শক্ত করে নিহাকে জড়িয়ে ধরলো তারপর বললো,আমার কাছে থাকা বাদ দিয়ে সব সময় এত পালাই পালাই করো কেনো বলোতো ?নিহা ফয়েজের বুকে মুখ ঘসতে ঘসতে বললো,আমি এখনি আসবো ছাড়ো ,কাজগুলো সেড়ে আসি।ফয়েজ নিহাকে ছাড়লো তারপর নিহার মুখটা উপরে তুলে নিহার কপালে একটা গাঢ় করে চুমু খেলো।যাও ,কাজ সেড়ে আসো আমি অপেক্ষা করছি।নিহা চলে গেলো ঘর থেকে।ফয়েজ টিভির খবর শোনায় মনোযোগ দিলো।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here