যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:২০

0
680

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:20
লেখনিতে :মৌসুমী




সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিরা।রাতের বেলা চুল বেঁধে না শুয়ায় এখন চুলে ঝট পাকিয়ে আছে।সেই ঝট ই খুলছে সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।তিশা ঘরে এসে দেখে নিরা আয়নার সামনে।পেছন থেকে নিরাকে জড়িয়ে ধরলো তিশা।
-কিরে মন খারাপ কেনো?কেঁদেছিস মনে হচ্ছে?
-আব্বু-আম্মুকে ছাড়া ও বাড়িতে থাকতে পারবোতো আমি নিরু।
তিশার দিকে ঘুরে তিশার চোখের পানি এক হাত দিয়ে মুছে দিয়ে নিরা বললো,
-কেনো পারবিনা ,অবশ্যয় পারবি,প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও পরে ঠিক মানিয়ে নিবি।সব মেয়েরাই আস্তে আস্তে শ্বশুরবাড়িকে নিজের করে নেয়।আমার বোনকেই দেখেছি,প্রথম প্রথম ফোন করে কাঁদতো,যখন তখন ভাইয়াকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে আসতো,আর এখন সেই মেয়েই কত সংসারী হয়ে গেছে।আসেও না তেমন।তুই ও পারবি।কাঁদিস না।
-আমার খুব কষ্ট হচ্ছে নিরু,আমিতো কখনো আম্মুকে ছাড়া থাকিইনি এখন কিভাবে থাকবোরে।
-সব মেয়েকেই একদিন পরের বাড়ি যেতে হয়,এটাই আমাদের সমাজের নিয়ম।তোর আম্মু, আমার আম্মুও একদিন তাদের বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি এসেছে।তারা কি তাদের আম্মুদের ছাড়া থাকছেনা বল?তারাও মানিয়ে নিয়েছে।তুই ও পারবি,আর সেখানে মাহিন ভাইয়াতো আছেই তাইনা।তার সাথে থাকার জন্য ই তো এতদিন অপেক্ষা করেছিলি তাইনা?
তুই তো ভাগ্যবতিরে,তুই তোর ভালোবাসার মানুষটাকেই নিজের করে পাচ্ছিস,কজন মানুষের এমন কপাল থাকে বলতো,বলতে বলতে নিরার চোখেও পানি চলে আসলো।তুই তোর ভালোবাসার মানুষটার বুকেই রাতটা পার করে দিতে পারবি।তার সংসার করবি এর থেকে খুশির আর কি হতে পারে বল।
-হুম,কিন্তু এই বাড়িটা,এই ঘরটার কথাও মনে পড়বে খুব।কত স্মৃতি এই ঘরে।

তিশা এই তিশা কোথায় তুমি?তিশারা কথা বলতেই তার ঘরে এসে তার বড় মামি ঢুকলো।
-ও তোমরা এখানে?
-জ্বি বড়মামি।
নিরার দিকে তাকিয়ে নিরাকে তিশার বড়মামি বললো,
-তুমিই নিরা তাইতো?
-জ্বি,
-শিশির তোমার কথা আমাকে বলছিলো,কাল নাকি তোমার সাথে তার পরিচয় হয়েছে।
-জ্বি আন্টি।
-আমাকে চিনোতো,আমি তিশার বড়মামি আর শিশিরের মা।
-ওহ আচ্ছা।
-তা মা তুমিতো দেখতে ভারি মিষ্টি।মহিলার কথায় মিষ্টি করে হাসলো নিরা।
-তোমার বাবা-মা আসবেনা বিয়েতে?
-জ্বি আন্টি আসবে।
-আচ্ছা,আসলে পরিচিত হয়া যাবে কি বলো।
-জ্বি আন্টি।

বড়মামি এবার তিশাকে বললো,তোমার কাছে এলাম,তোমার কাছে বলে আলমারির চাবি আছে,সেটা আমাকে দাও।আমার কিছু জিনিস বের করবো।
-জ্বি মামি দিচ্ছি বলে চাবিটা বের করে তিশা তার বড়মামির হাতে দিলো।বড়মামি চাবিটা নিয়ে নিরা আর তিশাকে একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো তিশার ঘর থেকে।

শিশিরের সাথে উৎসর খুব ভাব হয়ে গেছে।দুজনে একসাথেই থাকছে সবসময়।নিরা উৎসকে খুঁজছে ,উৎস সকালে খেয়েছে কিনা তা জানার জন্য।খুঁজতে খুঁজতে ছাদে গিয়ে পেলো নিরা উৎসকে।শিশিরের সাথে বসে আছে।আরো অনেকেই আছে সেখানে।
নিরা হাত দিয়ে ইশারা করে উৎসকে ডাকলো,উৎস কাছে আসতেই বললো,
-সকালে খেয়েছিস কিছু?
-হ্যাঁ খেয়েছি শিশির ভাইয়ার সাথে।
-তাহলে এখন চল গোসল করে নিবি।কমিউনিটি সেন্টারে যাওয়া লাগবে।বাড়িতে এত মানুষ ভিড়ের মধ্যে তখন গোসলের সিরিয়াল পাবিনা।
আমি করে নিয়েছি গোসল,তুই করলেই আমার ঝামেলা শেষ।
-দাঁড়াও শিশির ভাইয়াকে বলে আসি।
-আচ্ছা বলে নিচে চলে আয়,আমি গিয়ে তোর জামাকাপড় বের করি।তিশার রুমে আসিস কিন্তু,
-আচ্ছা।
নিরা নিচে চলে আসলো।উৎস গেলো শিশিরকে বলতে যে, সে নিচে যাচ্ছে গোসল করবে।

উৎসের সাথে শিশির ও নেমে আসলো ছাদ থেকে,সেও রেডি হবে।কমিউনিটি সেন্টারে তাকে যাওয়া লাগবে আগেই,

সব মেয়েরা এতটাই আটা-ময়দা মেখেছে মুখে যে কাউকে চেনা যাচ্ছেনা।সবাই এখন কমিউনিটি সেন্টারে চলে এসেছে,তিশাকেও বৌ সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছে একটা সোফার ওপর।সবাই যাচ্ছে আর তিশার সাথে ছবি তুলছে।বর নাকি আসছে রাস্তায়।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে ।তিশার কাজিনরা,ফ্রেন্ডরা গেট ধরবে তাই ফুল,মিষ্টি নিয়ে গেট ঘিড়ে দাঁড়িয়ে আছে আগে থেকেই।

বর আসতেই সবাই বর এসেছে বলে চিল্লাতে শুরু করলো,নিরা তিশার কাছেই বসেছিলো।বর এসেছে কথাটা শুনে তিশার সারা মুখে এক ঝাঁক লজ্জা এসে লাল,নীল নানা রঙে রাঙিয়ে দিলো।তা দেখে নিরা তিশাকে একটা বারি দিলো তার বাহু দিয়ে।তিশা লজ্জায় আরো কুকড়ে গেলো।নিরা তিশার অবস্থা দেখে খুব মজা পাচ্ছে,এর আগে কখনো সে তিশাকে এত লজ্জা পেতে দেখেনি।

অনেক তর্ক-বিতর্ক চলছে গেটে।বরপক্ষ আর কনেপক্ষের মধ্যে।কনেপক্ষ বরপক্ষের কাছে যা টাকা দাবি করছে তা বরপক্ষের কাছে অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে।শেষ পর্যন্ত বরপক্ষ কনেপক্ষের কাছে হেরে তাদের দাবি মিটিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে পারলো।মাহিন চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে,তিশাকে দেখার আশায়,যদি একঝলক দেখা যাই।তা দেখে মাহিনের এক বন্ধু বললো,ওভাবে চারিদিক দেখছিস কেনো,নতুন জামাইদের মাথা নিচু করে থাকতে হয়।আজ তো চারিদিকে আমরা তাকাবো,যদি কাউকে পটাতে পারি সে আশায়।মাহিন কিছু না বলে ঠোঁট কামড়ে একটা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকলো।

বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ।বিয়ে পড়ানো হয়ে গেছে,বর যাত্রীকেও খাওয়ানো শেষ।এখন বিদায়ের পালা।তিশা তার মাকে ধরে খুব কাঁদছে।মাহিন পাশে দাঁড়িয়ে আছে,তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে ও কেঁদে দিবে।নিরা মাহিনকেই ফলো করছে।মাহিনের কাছে গিয়ে বললো,ভাইয়া টিস্যু দিবো নাকি বলেই দাঁত বের করে হাসলো নিরা।মাহিন দুঃখি দুঃখি চেহারায় নিরার দিকে তাকালো,তারপর বললো,
-তিশার কাঁন্না আমার সহ্য হয়না নিরা,ওকে বোঝাওতো যে এত কাঁন্না যেনো সে না করে।সে আমার বাড়ি যাচ্ছে,কোন জেলখানায় নয়,তাহলে এতো কাঁন্না কেনো।
-সব মেয়েরাই বিয়ের দিন একটু কাঁদে ভাইয়া।হাজার হলেও নিজের বাড়ি ছেড়ে,বাবা-মাকে ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি যাই,সেখানে নতুন মানুষজন,নতুন পরিবেশ কেমন হবে সবকিছু ভেবেই মন অন্যরকম হয়ে থাকে।আপনি চিন্তা করেননা ভাইয়া তিশা ঠিক হয়ে যাবে।আর কাঁদবেনা ,একটু পর এমনি চুপ করে যাবে।

নিরার মা মাহফুজা বেগমের সাথে আলাপ জুড়েছে তিশার বড় মামি।শিশিরের ব্যাপারেই বলছে বেশি,আমার ছেলে এমন,তার তেমন,এই,সেই হাজার প্রশংসার ঝুলি নিয়ে বসেছে মহিলা।মাহফুজা বেগম হাসিমুখে তা শুনে যাচ্ছে।কথা বলতে বলতে এবার শিশিরের মা বললেন,
-আপা আপনার মেয়ের বিয়ের কথা ভাবছেন না।
-আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে আপা।মুচকি হেসে বললো মাহফুজা বেগম।
-কি বলেন আপা,নিরার বিয়ে হয়েছে,দেখে তো মনে হচ্ছেনা।
-এইতো কয়েকদিন হলো।
-ওহ,তা জামাই কি করে?
-জামাই আমার ডাক্তার।
মুখটা পানসে করে শিশিরের মা বললো,
-আচ্ছা।তা জামাই আসেনি?
সাথে সাথে মাহফুজা বেগমের ফোনটা বেজে উঠলো,ফারদিন কল করেছে।ফোন কানে নিয়ে মাহফুজা বেগম বললেন,
-হ্যাঁ বাবা বলো?
ফোনের এপাশ থেকে ফারদিন বললো,
-আন্টি আজ ই নিরাকে সাথে করে বাড়ি আনবেন।আমি রাতে গিয়ে ওকে নিয়ে আসবো।শনিবারের কথা বলেছিলাম কিন্তু কাল পারবোনা,কাল আমি সকাল থেকেই খুব ব্যস্ত থাকবো।আর আব্বা-আম্মার সাথেও কথা বলেছি।আপনি ওকে আজকেই বাড়ি নিয়ে আসবেন।
-আচ্ছা বাবা।নিয়ে আসবো।তুমি কখন আসবে?
-নয়টার দিকে আসবো।
-আচ্ছা তাহলে রাখছি।
শিশিরের মা কান পেতে এতোক্ষণ মাহফুজা বেগম আর ফারদিনের ফোনালাপ শুনছিলেন।
-জামাই নাকি আপা?
-জ্বি আপা,ছোট জামাই।নিরাকে বাড়ি নিয়ে যাবে তাই সাথে করে এখান থেকে নিয়ে যেতে বললো।
-আপনার কয়টা মেয়ে আপা?
-দুইটা আপা।আর দুই মেয়ের এক বাড়িতেই বিয়ে হয়েছে।
-ওহ আচ্ছা,ভালোতো।দুইবোন মিলেমিশে থাকবে।
-জ্বি আপা।এখন তাহলে উঠি আপা,বাড়ি যেতে হবে,জামাই আসবে রাতে।
-আচ্ছা আপা,আসেন একবার আমাদের নঁওগায়।
-জ্বি চেষ্টা করবো।আপনিও তিশার আম্মুর সাথে আমাদের বাসায় আসবেন।হাসিমুখে শিশিরের মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিরার কাছে আসলো মাহফুজা বেগম।
-নিরা ব্যাগ গুছিয়ে নে যা।
-আম্মু পরশু আমার যাওয়ার কথা না বাসায়?
-তিশা তো নাই ,ওর শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে,তুই থেকে কি করবি?
-আম্মু তিশাকে কাল আনতে যেতে হবে।
-সেটা কাল সুযোগ পেলে যাস তিশাকে আনতে,আজ বাড়ি চল তাড়াতাড়ি।আমি তিশার আম্মুকে বলে আসছি তুই ব্যাগ নিয়ে আয় যা।

অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিরা চলে আসলো বাড়িতে মাহফুজা বেগমদের সাথে।নেওয়াজ সাহেবকে ফারদিনের আসার কথা মাহফুজা বেগম বাড়ি এসেই জানিয়েছেন।নেওয়াজ সাহেব এখন স্ত্রীকে সাহায্য করছে বিভিন্ন কাজে। কারণ নতুন জামাই আসছে বাসায়।যেভাবেই হোক না কেনো বিয়ে তো হয়েছে মেয়ের।ফারদিন এখন বাড়ির জামাই তার তো খাতির যত্ন করতে হবে।

নিরা এখুনো জানেনা ফারদিনের আসার কথা।সে মন খারাপ করে তার ঘরে বসে আছে।উৎসোরো মন খারাপ।শিশিরের সাথে তার ভালোই বন্ধুত্ব হয়েছিলো।আসার সময় বলেও আসতে পারেনি যে সে তার নিজের বাড়ি চলে আসছে।মাহফুজা বেগম তাড়াহুড়া করে ওদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে এসেছেন।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here