যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:২১

0
600

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:21
লেখনিতে:মৌসুমী



দরজার সামনে ফারদিনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিরা অবাক।এত রাতে ইনি এখানে কি করছে,এতদিন কোন খোঁজ ছিলো না,আজ কোথায় থেকে টপকালো এই মাল।মনে মনে বলছে নিরা।ফারদিনের কথায় ভাবনা নামের বইটা বন্ধ করে অবাকের রাজ্য থেকে নিজের রাজ্যে ফিরে এলো নিরা।
-ভেতরে আসতে দিবেনা নাকি?
-আসতে কে নিষেধ করলো?
-তুমি,,
-আমি?
-তো কে,কখন থেকে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছো।এখনো ভিতরে ঢুকতে দাও নি তো কি বলবো।
-আসুন ভিতরে বলে দরজা ছেরে সড়ে দাঁড়ালো নিরা।ফারদিন ভিতরে গিয়ে ধপ করে সোফায় বসলো।শ্বাশুরি আম্মা আর শ্বশুর আব্বা কোথায়?দেখছিনা যে?
ফারদিনের মুখে শ্বাশুরী আম্মা আর শ্বশুর আব্বা কথাটা শুনে এক লাফে আবার অবাকের সবচেয়ে উচুঁ পর্বতে উঠে বসলো নিরা।মুখটা তার হা হয়ে গেলো,এতটাই হা হলো যে একটা আস্ত রসগোল্লা ঢুকে যাবে মুখে।
-কি ব্যাপার বৌ এতবড় হা করে আছো কেনো?ক্ষিদে পেয়েছে বুঝি?সমস্যা নাই,আজ তোমাকে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর খাবার খাওয়াবো,যাকে বলে অমৃত।
নিরা হা করেই আছে,হা বন্ধ হচ্ছেনা।যেই ছেলে আগে তাকে দুচোখে দেখতে পারতোনা,ওদের বাড়ি গেলে তাড়াই তাড়াই করতো।তার এত পরিবর্তন সামান্য এই বিয়েটা হয়াতে। যে কিনা এখন তার বাবা-মাকে শ্বশুর আব্বা,শ্বাশুরী আম্মা বলছে ,তাকে আবার ঢং করে বৌ বৌ করে কিন্তু আমিতো এই বিয়ে মানিনা।তার সংসারো আমি করবোনা।আমি যাকে ভালোবাসি তার সাথেই সংসার করলে করবো না করলে সারাজিবন তার আশায় বসে থাকবো।এই যে মিসেস ,,,এই যে,,,

ও বাবা চলে এসেছো,আমি নামাজ পড়ছিলাম।নিহার আব্বুও ঘরে আছে।সে মনে হয় বুঝতে পারেনি যে তুমি এসেছো।
-না আন্টি সমস্যা নাই।আপনার মেয়েতো আছেই।আমার আর সমস্যা কিসের তাইনা নিরা।হেসে গদগদ হয়ে বললো ফারদিন।
-চলো বাবা খেয়ে তোমরা বেরিয়ে পড়ো,কাল তো তোমার অনেক কাজ আছে তাই অযথা সময় নষ্ট করে লাভ নেই।
-তোমরা বলতে আর কে আম্মু?
-তুই,তুই ছাড়া আবার কে,বিয়ে হয়েছে,সারাবছর খালি বাপের বাড়িতেই থাকবি নাকি?
-এসব তুমি কি বলছো,আর ওই বিয়ে আমি মানি না।তাই কোথাও যাবোও না।
-এক চড় দিবো,আমার মুখের সামনে বেয়াদবি করছে।যেভাবেই হোক বিয়েটা তোর হয়েছে ফারদিনের সাথে তাই এখন তুই ফারদিনের বিয়ে করা বৌ,ও যেখানে থাকবে তোকেও সেখানে থাকতে হবে।
-আমি যাবোনা আম্মু বলেই নিরা কাঁদতে শুরু করলো,ফারদিন বসে বসে দুই মা মেয়ের কথা শুনছে,কিছু বলছেনা।
-তুই যাবি,তোর ঘাড় যাবে।মাহফুজা বেগম খুব রেগে গেছে।
-আমি যাবোনা,যাবোনা।এই বিয়ে আমি মানিনা,আর আমি কেনো,এই যে এই ফারদিন নামের মানুষটা যে কিনা এখন আমার স্বামি সেও এই বিয়ে মানেনা শুধু জেদ দেখিয়ে আমাকে বিয়ে করেছে।আর ওর বাড়ির লোক ও আমাকে মেনে নেয়নি,মেনে নিলে সেদিন গ্রাম থেকে এসে আমাকে এখানে না রেখে সাথে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতো,কিন্তু তারা তা করেনি,এমনকি এখন অব্দিও তারা আমার খোঁজ নেয়নি।আর এই আমার স্বামি ইনিও আমাকে ফেলে রেখে চলে এসেছিলো।আর আজ এতদিন পর এসে ঢং দেখাচ্ছে।
অনেক বলেছো আর একটা কথাও না,আমি তোমাকে আমার ইচ্ছায় বিয়ে করেছি তাই এখন আমার সব কথা তোমাকে শুনতে হবে।আমি যা বলবো তাই।আর তুমি আন্টির মুখে মুখে তর্ক করছো,সাধে কি তোমাকে বেয়াদব বলি।এখন ঝটপট রেডি হয়ে নাও তারপর আমরা বের হবো।
জোরে কথার আওয়াজে নেওয়াজ সাহেব,উৎস চলে এসেছে বসার ঘরে।নেওয়াজ সাহেব নিরাকে ঠান্ডা মাথায় বললেন,
-যা যা তোমার জিনিস আছে নিয়ে যাও আর চুপচাপ শ্বশুরবাড়ি যাও।এমনিতে মান-সম্মান কিছু রাখোনি।আত্মীয়-স্বজনের কানে এই কথা এখুনো যাইনি।তাই আর যেনো এই বিষয় কারো কাছে না যাই তাই ভালো মেয়ের মত গিয়ে সংসার করো।আমাদের কেউ জিঙ্গেস করলে বলবো,তোমাদের গ্রামেই বিয়ে হয়েছে হঠাৎ করে তাই কাউকে জানাতে পারিনি,তুমিও সবাইকে তাই বলবে বুঝেছো।
মাহফুজা খাবার দাও টেবিলে।ফারদিন এসো খেয়ে তারপর বাড়ি ফিরো।

নিরা কাঁন্নাকাটি করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।ফারদিনের ঘরে সে এখন বসে আছে।ফারদিন শুয়ে পড়েছে বিছানার একপাশে।নিরা পাশে বসে কাঁন্নার রিংটোন বাজাচ্ছে মুখে আর নাক টানছে অনবরত।

-তোমার নাক টানা আর এই প্যা পু বন্ধ করবা বিরক্ত।চুপচাপ শুয়ে পড়ো।আমি ঘুমাবো,কাল অনেক কাজ আছে আমার।
-আমি ঘুমাবোনা,আপনি ঘুমান।
-তুমি কাছে না আসলে কি করে ঘুমাবো।হাজার হলেও এখন আমি বিবাহিত পুরুষ।বৌ এর আদর ছাড়া ঘুমাবো কি করে?
-এইসব আদর ফাদর আমার কাছে ভূল করেও আশা করবেননা।আমাকে ছুঁতেও পারবেননা।
-তাই নাকি?বাহ ভালোতো,তা কিজন্য শুনি?
-কারণ আমার সব আদর, ভালোবাসা একজনের জন্য ই ,যাকে আমি ভালোবাসি।
-ফারদিনের এবার খুব রাগ হলো নিরার ওপর,সে কোন দিক দিয়ে কম যে তাকে ভালোবাসা যাইনা,তার ওই তাসিফের থেকে কোন দিক দিয়েই কম তো না তাহলে?হাত দিয়ে নিরাকে টান দিকে নিজের বুকের ওপর ফেললো ফারদিন।
-কাকে ভালোবাসো আমি জানিতো,তোমার ওই খালাতো ভাই তাসিফ না ফাসিফ ওকে।সেটা আর হচ্ছেনা বুঝেছো।
নিরা অবাক হয়ে গেছে ফারদিনের কথা শুনে,সে তাসিফকে কেনো ভালোবাসতে যাবে আজব,সে তো আমার ভাই।আমি তো ভালোবাসি,,,
-এসব আপনি কি বলছেন?তাসিফ ভাইয়া আমার ভাই,আমিতো ভালোবাসি,,,যাকগে ছাড়ুন আমাকে বলে মোচড়াতে শুরু করলো নিরা।
-তুমি তাসিফকে ভালোবাসোনাতো কাকে বাসো?
মোচড়াতে মোচড়াতে নিরা বললো,
-বলবোনা ,ছাড়ুন বলছি।
-ছাড়বোনা,দেখি কি করো,আর যাকেই ভালোবাসোনা কেনো সেটা আজ থেকে এই মুহূর্ত থেকে ভূলে যাও।তুমি এখন আমার সম্পদ,তাই ওসব নষ্টামির কথা ভূলে যাও।
-আপনি আমাকে ছাড়বেন?
-কখনোই না।বলেই টপ করে নিরার পেটের ওপর উঠে বসে পড়লো ফারদিন।তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো নিরার ঠোঁটের দিকে,দুই হাতে শক্ত করে নিরার হাত বিছানার সাথে চেপে ধরলো যাতে নিরা নড়তে না পারে।এবার নিরার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে ফারদিন বললো,
-বলেছিলাম না আজ অমৃত খাওয়াবো,তো খাওয়া শুরু করা যাক কি বলো বলেই নিরার কানে একটা কামড় দিলো তাতে নিরা আহ করে উঠলো,সেই সুযোগেই ফারদিন নিরার ঠোঁটদুটো নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিলো।

নিরার দু চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে,নড়তেও পারছেনা।একজন এতবড় দেহের মানুষ তার ওপর পড়ে আছে,এটাকি কম বড় কথা।



আজ নিহা খুব খুশি,তার দেবর তার বোনকে নিয়ে এসেছে,এর থেকে খুশির খবর আর কি হতে পারে।ফয়েজ আসার সাথে সাথেই ফয়েজের গলা জড়িয়ে ধরে অনবরত আনন্দ অশ্রু ঝড়িয়েই যাচ্ছে।ফয়েজ ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।একদম জাপটে ধরে আছে নিহা তাকে।পাশেই তুলতুল ঘুমাচ্ছে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here