যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:২২

0
623

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:22
লেখনিতে:মৌসুমী





তোমাকে আজ আমি খুব ভালোবাসবো,খুব,তোমার সবসময় অভিযোগ থাকে আমি তোমাকে ভালোবাসিনা,আদর করতে দিই না ,আজ মনভরে তোমাকে আদর করবো,ফয়েজকে জাপটে ধরে রেখেই নিহা বলছে কথাগুলো।আজ নিরা এসেছে ,ফারদিন নিজে গিয়ে নিরাকে নিয়ে এসেছে জানোতো,আজ আমি খুব খুশি।বিয়েটা ওদের অন্যভাবে হলেও আমি ওদের বিয়েতে খুব খুশি হয়েছি,ফারদিনের মত কয়টা ছেলে আছে বলো?ফারদিন আমার পাগলি বোনটাকে খুব সুখে রাখবে এটা আমি ভালোমত ই জানি।তবে একটা কথা কি জানোতো,আমার দুইটা ফুপু যদি শুনে ওইরকম অবস্থাতে নিরার বিয়ে হয়েছে তাহলে ওরা ওই কথা চারদিকে ছড়িয়ে দিবে।আমার ফুপুরা আমাদের ওপর খুব হিংসা করে।আব্বা তখন আরো কষ্ট পাবে।এমনিতেও পেয়েছে।ফয়েজ এবার নিহার মুখটা সামনে এনে বললো,
-আমার ভাই তোমার বোনকে খুব সুখে রাখবে আর আমি বুঝি তোমাকে সুখে রাখিনা?বলো?
-তুমি তো একটা বজ্জাত ,ঠোঁট কামড়ে হাসছে নিহা।
-কি বললে,আমি বজ্জাত,থামো তোমার হচ্ছে আজ,আমি খেয়ে নিই আগে,তারপর তোমার আদর খাবো আজ সারারাত।
-নাহ বলে হেসে মুখটা লুকালো নিহা ফয়েজের বুকে।
-লজ্জাবতির লজ্জা এতদিনেও ভাঙলোনা।একটা বাচ্চার মা বানিয়ে দিলাম তারপরো।লজ্জাবতি এবার আমাকে খেতে দিবেন কি?আমার খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু।
-হ্যাঁ হ্যাঁ চলো বলেই ফয়েজকে ছেড়ে দাঁড়াতে গেলো নিহা কিন্তু পারলোনা ফয়েজ তাকে কোলে তুলে নিয়েছে।
-এই কি করছো নামাও,বাড়িতে সবাই আছে।
-থাকুক,আমার বৌকে আমি কোলে নিয়েছি,তা তে কার বাপের কি?
-আহা নামাও তো।
-না নামাবোনা চলো বলেই ফয়েজ নিহাকে কোলে নিয়েই বের হলো রুম থেকে।

ফয়েজের কোলে বসে থেকে ফয়েজকে খাইয়ে দিচ্ছে নিহা।ফয়েজ আজ বায়না ধরেছে নিহার হাতেই খাবে আর তার কোলে বসেই তাকে যত্ন করে খাইয়ে দিতে হবে।নিহা খাইয়ে দিচ্ছে ঠিকি তবে বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।কেউ আসছে কি না তা দেখছে।এভাবেই দেখতে দেখতে ফয়েজের খাওয়া শেষ হলো।সবকিছু গুছিয়ে নিহা ঘরে আসবে তাই ফয়েজকে বললো,
-তুমি যাও রুমে আমি আসছি।
-তাড়াতাড়িই আসবা কিন্তু।
-আচ্ছা তাড়াতাড়িই।

সব ঠিকঠাক করে আলো নিভিয়ে ঘরের দরজা খুলে ঢুকবে এমন সময় ফয়েজ নিহাকে কোলে তুলে নিলো,নিহা চিৎকার করতে যাবে তখনি হাত দিয়ে নিহার মুখটা বন্ধ করে দিলো ফয়েজ।তারপর দরজা লাগিয়ে লাইট নিভিয়ে নিহাকে নিয়ে রঙিন দুনিয়ায় পা বাড়ালো ফয়েজ।



রাত বাজে তিনটা।ফারদিন নিরার গলায় মুখ ডুবিয়ে শুয়ে আছে।ঘুমের মধ্যে নিরার গলাটা কেমন কুটকুট করছে।হাত দিয়ে চুলকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।না পেরে এক পাশ থেকে আরেক পাশে ঘুরতে যাচ্ছে তখন ফারদিন তার শক্ত হাত দিয়ে নিরাকে আরো শক্ত করে ধরলো।নিরা ঘুমের মধ্যেই ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,বার বার নড়ছে তাতে ফারদিন খুব বিরক্ত হচ্ছে।ঘুম ঘুম গলায় ফারদিন নিরাকে বললো,
-এতো নড়ছো কেনো?আমার ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে।
-নিরা এবার ফারদিনের চুল খামচে ধরলো,তারপর বললো,
-আমাকে কি মারার প্ল্যান করছেন।এভাবে সবসময় ধরে রাখলে আমার তো দম বন্ধ হয়ে যাবে।
-হলে হোক,আমি আবার দম দিয়ে দম নিয়ে আসবো।তবু ছাড়বোনা,এতোদিন ছেড়েই রেখেছিলাম।
-ভালো হবেনা কিন্তু ।
-কি ভালো হবেনা।ফারদিন মুখটা তুলে নিরার মুখের দিকে তাকালো।দেখলো নিহা চোখ বন্ধ করেই কথা বলছে।আহা ফারদিনের চোখটা জুড়িয়ে গেলো সেই প্রথম যেদিন দেখেছিলো নিরাকে সেদিনের মত।ডিম লাইটের আলোতে নিরার মুখটা দেখে ফারদিনের খুব লোভ হচ্ছে কামড় দেওয়ার।নাকের ওপর একটা কামড় দিয়েই দিলো।
ওমনি নিরা উহ করে উঠলো তারপর নাক ঢলতে ঢলতে চোখগুলো কুচকিয়ে তাকিয়ে বললো,
আপনি মানুষ? যখন তখন খালি কামড় দিচ্ছেন।কিছু বলছিনা বলে বার বেরেছে না?মনে হচ্ছে আমি একটা আপেল আর আপেলের ওপর ইচ্ছে হলেই কামড় দিচ্ছে।নিরার কথা শুনে ফারদিন দাঁত মেল করে হাসছে,তারপর নিরাকে বললো,
-তুমি তো আপেল ই,আমার জিবন্ত আপেল।আমার যখন খেতে ইচ্ছে করবে তখন একটা করে কামড় দিবো বুঝেছো বলে নিরার নাকটা টেনে দিলো ফারদিন।
-যান তো সরেন আমার উপর থেকে।হাতির মত শরীর নিয়ে সবসময় আমার ওপর পড়ে থাকছে।শোনেন কিছু বলছিনা বলে এটা ভাববেন না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি হু।আমার দেহ পাবেন কিন্তু মন পাবেননা বলে দিলাম।
-তাতেই চলবে।
-কি বললেন?
-বললাম তাতেই চলবে।আপাতত দেহ পেলেই হবে ।দেহ পাওয়া গেলে আস্তে আস্তে তোমার মনটাও আপনমণি সুড় সুড় করতে করতে আমার কাছে চলে আসবে বুঝেছো পাগলিটা বলে এবার নিরার গালটা টিপে দিলো ফারদিন।
-কত খারাপ,কত খারাপ।এমন মানুষ আমার এই জিবনে দেখিনি।
-হুম গো বৌ।খুব খারাপ আমি,তোমার ভাগ্যটা কত খারাপ, এই খারাপ মানুষটাই তোমার স্বামি।



সকালে খুব তাড়াতাড়ি করেই বের হয়ে গেছে ফারদিন।যাওয়ার আগে নিরাকে ধাক্কিয়ে তুলেছে ঘুম থেকে তারপর রান্নাঘরে পাঠিয়েছে নিরাকে ,নিহার হাতে হাতে যেনো একটু কাজ করে দেই।নিহা অবশ্য কোন কাজ ই নিরাকে করতে বলেনি।বলেছে আগে কাজ শিখে নে তারপর করবি।

ফজিলা বেগম চা খাচ্ছে।নিহা আর নিরা তার পাশে বসে আছে।জামান সাহেব বের হয়েছেন কি একটা কাজে।ফয়েজ এখুনো বাড়ি থেকে বের হয়নি ,বিছানায় শুয়ে শুয়ে তুলতুলের সাথে খেলছে।নিরা ফজিলা বেগমকে নিরীহ মুখ করে বললো,
-মামনি আমার ওপরে এতো রেগে থেকোনা প্লিজ।আমি না তোমার মেয়ে তাহলে ,কথা বলো?
-নিহা আমাকে একটু তেল গরম করে দাও তো।
-আচ্ছা আম্মা,এখুনি করে আনছি বলে নিহা বসে থেকে উঠে তেল গরম করার জন্য চলে গেলো।
-মামনি ,,,ওওও মামনি,,,বলে ফজিলা বেগমকে ঝাকাতে শুরু করলো নিরা।
-ফজিলা বেগম এবার হেসে ফেললেন,তারপর বললেন,তোর ওপর রাগ করবো কেনো?রাগ করিনি।আমি খুশিই হয়েছি তোকে ছেলের বৌ হিসেবে পেয়ে।আমার মনে মনে ইচ্ছে ছিলো,বেয়ানকে বলে আমার ফারদিনের সাথে তোর বিয়ে দেওয়ার কিন্তু তার আগেই আল্লাহ আমার কাজটা আরো এগিয়ে দিলো।শুধু একটাই সমস্যা তোর বাবাই এর মুখটা গ্রামে ছোট হয়ে গেলো।
-নিরার মনটা খারাপ হয়ে গেলো ফজিলা বেগমের কথায়।নিরা কখনোই ফারদিনের বৌ হতেই চাইনি সেতো এক অপরিচিতো নাম না জানা ছেলেকে না দেখেই ভালোবেসেছে।তার সাথেই সংসার করার লক্ষ ,কোটি স্বপ্ন দেখেছিলো কিন্তু সেই নাম না জানা মানুষটা কোথায় যে হারিয়ে গেলো,এতো বছরেও আসলোনা।আর এখন তো সে অন্য কারো দখলে।নাম না জানা,না দেখা মানুষটি এখন ফিরে এলেও তার কাছে যাওয়ার রাস্তাটা বন্ধ।ফারদিন যেভাবে তাকে নিজের দখলে নিয়ে নিচ্ছে।নাম না জানা মানুষটির কাছে সে কি নিয়ে দাঁড়াবে সেটাই ভাবনার বিষয় নিরার কাছে এখন।
যেভাবে ফারদিন তার সবটা লুট করতে শুরু করেছে।
-ওই কি ভাবছিস,ফজিলা বেগম নিরাকে ঠ্যালা দিলো।
-কিছুনা মামনি।মামনি, বাবাই আমার সাথে কথা বলবেতো আগের মত?
-কেনো বলবেনা,একটু সময় দে, আসতে আসতে সব ঠিক হয়ে যাবে।
-তাই যেনো হয় মামনি।

রাত বারোটা বাজতে চললো এখুনো ফারদিন ফিরেনি।নিরা আজ শুয়েছে গেস্ট রুমে।ভেতর থেকে দরজা লক করে খাটের ওপর আরাম করে শুয়ে আছে।মনে মনে বলছে,
আহা ,আজ কত শান্তি লাগছে,নিজেকে কেমন পাতলা পাতলা ফিল করছি,যেদিক ইচ্ছা ঘুরে শুতেও পারছি।এর থেকে শান্তির আর কি আছে।কালকের রাতটা খুব বাজে ছিলো ।ছ্যা।বলেই ঠোঁটে হাত দিলো নিরা।ওই বেদ্দপ ছেলে কাল আমার ঠোঁটটাকে খেয়েই ফেলছিলো মনে হচ্ছিলো ছ্যা।কি বিচ্ছিরি।কি বিচ্ছিরি।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here