যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:23
লেখনিতে:মৌসুমী
রাত একটা বেজে পনের মিনিট।সারা বাড়ি নিরব।ঘড়ির টিকটক শব্দে মুখরিত চারপাশ।টেবিলের ওপরে একটা গ্লাস আর জগ রাখা আছে।জগ থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে গিলে ফেললো ফারদিন।বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে তাই আর কিছু খেলোনা।পকেট থেকে একগুচ্ছ চাবি বের করে মুখের ওপরে তুললো,তারপর চাবির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে গেস্টরুমের দিকে পা বাড়ালো।
হঠাৎ করে ঝড়ো বাতাসে জানালার পর্দাগুলো উড়তে শুরু করলো।কারেন্টটাও চলে গেলো ,ইস।পকেট থেকে ফোনটা বের কর ফোনের ফ্ল্যাশলাইটটা জ্বালালো তারপর গেস্টরুমের দরজা খুলে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।
বেডের ওপর আলুথালু হয়ে শুয়ে আছে নিরা।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে বিছানার ওপর,মাথার নিচে বালিশ নাই,বালিশ আরেক দিকে পড়ে আছে।জানালা দিয়ে ঝড়ো বাতাস ঢুকে পর্দাগুলো কেমন ঝাইঝপ্পা খেলছে।নিরার মাথার পাশে গিয়ে বসে পড়লো ফারদিন।এক আকাশ ভালোবাসা তার দু চোখে খেলছে ।নিজের হাতটা নিরার মাথার ওপর রেখে একটু হাসলো তারপর উঠে দাঁড়িয়ে নিরাকে কোলে তুলে নিলো আস্তে করে।নিরা এতটাই ঘুমের মধ্যে যে একটা মানুষ তাকে কোলে তুলে নিলো সে বুঝতেই পারলোনা।
কি ভেবেছিলে ?আমার কাছ থেকে পালিয়ে এই ঘরে ঘুমাবে,দরজা বন্ধ করে?আরে পাগলি এতদিন এইবাড়ির প্রত্যেক রুমের চাবি আছে আমার কাছে।তাই দরজা বন্ধ করে কোন লাভ নাই।
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,,
ফারদিন বাড়িতে এসে দেখে সবাই ঘুমিয়ে গেছে,সে নিজের রুমে গিয়ে দেখে রুমে নিরা নাই।তার মনে ভয় ঢুকে গেলো,সে বাথরুম,বারান্দা চেক করে দেখে কোথাও নিরা নাই।তারপর দৌঁড়ে গেস্টরুমে আসে আর তখনি দেখে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ।তার মানে এই রুমেই নিরা আছে।একটা স্বত্বির নিশ্বাস ফেলে আবার নিজের রুমে ফিরে যাই সে তারপর ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে একগ্লাস পানি খেয়ে এই রুমে আসে।
বর্তমান।
তোমাকে দেখে তো পাটখড়ি মনে হয় কিন্তু তা তো তুমি না,কত ভারি তুমি,বাবাহ।নিরাকে নিজের রুমে কোলে করে আনতে আনতে ঘুমন্ত নিরার সাথে কথা বলছে ফারদিন।রুমে নিয়ে এসে ধপ করে খাটের ওপর ফেলে দিলো ফারদিন।আচমকা এমন অবস্থায় ঘুম ভেঙে নিরা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।ঘুমের মধ্যে এমন কখনোই ঘটেনি তার সাথে,সে কি বিছানা থেকে পড়ে গেছে।না না বিছানায় তো আছি ,তাহলে কি কোন ভূত টুত আমাকে এভাবে ওপরে তুলে বিছানার ওপর আছাড় দিলো।চারদিকে এত অন্ধকার কেনো?ঝড় ও হচ্ছে মনে হচ্ছে।ও মাগো ..ও মাগো..আম্মু তুমি কোথায়,বাঁচাও আম্মু,আমাকে বাঁচাও।বিরবির করতে করতে এবার কেঁদেই দিলো নিরা।তারপর ভূতের উদ্দেশ্যে বললো,ও ভূত ভাই তুমি আমার ধর্মের ভাই,না না তুমি আমার আপন ভাই।ফারদিন অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিরার কথা শুনছে আর মিটিমিটি হাসছে।
ভূত ভাই আমাকে ছেড়ে দাও।এমনিতেই যেই আছাড় দিয়েছো তাতে আমার কোমরের অবস্থা মনে হয় বেশি ভালোনা,মনে হয় এক্সরে টেক্সরে করা লাগবে।আরেকবার যদি তুমি আছাড় দাও গো ভূত ভাই তাহলে মনে হয় কোমরের হাড় হুড্ডিগুলা খসেই পড়ে যাবে,তখন আর এক্সরে করেও কোন লাভ হবেনা।
ফারদিন নিরার কথা শুনে এবার হো হো করে হেসেই দিলো।
ও ভূত ভাই হাসছো কেনো গো,আমাকে মাফ করো,আমি ভালো মেয়ে জানোতো ভূত ভাই,আমি কারো কোন ক্ষতি করিনা বিশ্বাস করো ভূত ভাই।ও আপন ভূত ভাই মাফ করো গো ওওওও বলেই নিরার ভ্যাবানি আরো বেড়ে গেলো।
ওই চুপ,কিসের আপন ভূত ভাই হ্যাঁ দিবো এক চড়,তখন থেকে ভাই ভাই করেই যাচ্ছে।আমি তোমার কোন জন্মের ভাই শুনি,আমি তোমার একমাত্র স্বামী বুঝেছো।
ভূত ভাই আপনি আমার আপুর দেবরের গলা নকল করছেন কেন?
-কি বললে তুমি?
– আমার আপুর দেবরের গলাটা সেইম এরকম।
-মাইর মনে হচ্ছে তোমাকে দিতেই হবে,আরে আমিই তো তোমার আপুর দেবর,মানে তোমার বর এই বলতেই কারেন্ট চলে আসলো।ঝমমলিয়ে উঠলো সাথে সাথে সারাঘর।নিরা বিছানার ওপর জড়োথরো হয়ে বসে আছে তার সামনে ফারদিন চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।
আরে আপনি এখানে কিভাবে আসলেন?আমি যে দরজা লক করেছিলাম।চারদিক একবার তাকিয়ে ,ওমা , এই রুমে কেনো আমি এটাতো আপনার রুম,আমি এখানে কিভাবে আসলাম।আর আমাকে তখন আছাড় মারলো কে?আপনি,হুম,হুম আপনি,আপনি ছাড়া এ কাজ কে করবে,ভূতেরো সাহস নাই আমাকে আছাড় মারার,
আচ্ছা,ভূতেরো সাহস নাই,তাহলে এতোক্ষণ ভূতের কাছে কে ক্ষমা চাচ্ছিলো আর কাঁদছিলো ?
নিরা কোন কথা না পেয়ে বললো,
-আপনি একটা জল্লাদ,একটা খাটাস নাহলে গভীর রাতে এক গভীরভাবে ঘুমন্ত অসহায় মেয়েকে কেউ আছাড় মারেনা।
-তাই না?তুমি এই ঘর ছেড়ে আরেক ঘরে গিয়ে আরামের ঘুম ঘুমাবে আর আমি একা একটা নিরীহ ছেলে এখানে একা একা ঘুমাবো,এটা কখনো হয়,চেহারা নিরীহ করে কাঁদো কাঁদো সড়ে বললো ফারদিন তারপর জোরে ধমকে বললো,সেজন্য তোমাকে শাস্তি হিসেবে আছাড় দিলাম।এখন সরো,আমি ঘুমাবো,খুব ক্লান্ত আমি।এরপর ফারদিন শুয়ে পড়ে নিরাকে টান দিয়ে শুয়িয়ে দিলো পাশে তারপর কোলবালিশের মত জাপটে ধরলো ।
”
”
ফজরের আজান হচ্ছে চারিদিকে।নিরা একটু নড়ে উঠতেই ঘুমটা ছুটে গেলো।আজান হচ্ছে দেখে উঠার চেষ্টা করলো বিছানা থেকে কিন্তু পারলোনা ফারদিন এই ভাবে ধরে আছে নড়ার উপায় নাই।
-এই যে মিস্টার খাটাস আমাকে একটু ছাড়েন,আমি উঠবো।আজান হচ্ছে ,নামাজ পড়বো।
-কেবল তো আজান হচ্ছে,আরেকটু থাকো তারপর দুজনেই একসাথে উঠে নামাজ পড়বো।
-না ছাড়েন,আমার আরো কাজ আছে।
-কি কাজ?
-বলা যাবেনা ছাড়েন।
-আরে বলো?
-ওয়াশরুমে যাবো ছাড়েন।
-ওয়াশরুমে কি করতে?
-কি করতে যাই মানুষ?
-তাইতো কি করতে যাই?
-আপনার মাথা করতে যাই বলে জোরে গাঁয়ের সব জোর দিয়ে ফারদিনকে ধাক্কা দিয়ে সরালো নিরা।
এতক্ষণ ফারদিন ঘুমের ঘোরেই বকবক করছিলো এবার ঘুমটা পুরোপুরি ছুটলো।নিরার দিকে তাকিয়ে বললো,
-এভাবে কেউ ধাক্কা দেয়?
-তো কি করবো ছাড়ছিলেন না তো।
অসহায় মুখ করে ফারদিন বললো,
-যদি নিচে পড়ে যেতাম তখন কি হতো?
-বেশ হতো বলেই আর কোন কথা না বলে বেড থেকে নেমেই ওয়াসরুমে চলে গেলো নিরা।ফারদিন হা করে নিরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
চলবে…