যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:২৬

0
666

#যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
#পর্ব:26
#লেখনিতে:মৌসুমী

বিছানায় এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছিলো নিরা।শেষরাতে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে যাই।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে বিছানায় ফারদিন নেই ,সারাঘরের কোথাও তার ছায়াও নেই।ডিম লাইটের মৃদু আলোয় ভরে আছে সারাঘর।বিছানা থেকে নিচে পা রাখলো নিরা তারপর অগোছালো পায়ে হেঁটে চললো বারান্দার দিকে।

বারান্দার মেঝেতে দুই পা মেলে বসে আছে ফারদিন।ঘাড়টা কাত করে।চোখদুটো বন্ধ,চারপাশে সিগারেটের না খাওয়া টুকরোগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।নিরা গিয়ে ফারদিনের পাশে বসলো।বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে টিপটিপ করে।বৃষ্টির ছোটা এদিকে আসছেনা তাই হয়তো ফারদিন একটুও ভিজেনি।ফারদিনের মুখের কাছে মুখ নিয়ে খুব কাছ থেকে ফারদিনকে দেখছে নিরা।ফারদিনের মুখ,চোখ,ঠোঁট,ভ্রু,কপাল,গলা,গাল,মাথার চুল কোনকিছুই বাদ রাখছেনা।ফারদিনের মুখটার দিকে তাকিয়ে নিরা ভাবতে বসলো তার অতীতের কথাগুলো,

নিরা ছোটবেলা থেকেই খুব দুষ্টু ছিলো,তিনভাইবোনদের মধ্যে নিরাকে তার মা কখনোই সেভাবে সহ্য করতো না সেটা নিরা খুব ভালোভাবেই বুঝতো,তার একটাই কারণ নিরা মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছে।মাহফুজা বেগমের ইচ্ছা ছিলো একটা মেয়ের আর একটা ছেলের,নিহার জন্মের পর নিহা একটু বড় হতেই তারপর মাহফুজা বেগম আবার প্রেগন্যান্ট হলেন।তিনি অনেক আশায় ছিলেন একটা ছেলের তাহলে তার ইচ্ছাটা পূরণ হয়ে যাবে,এক মেয়ে আর এক ছেলে সুখী সংসার।কিন্তু তা আর হলোনা,আবার তিনি জন্ম দিলেন মেয়ে সন্তানের।এতে মাহফুজা বেগম খুশি না হলেও নেওয়াজ সাহেব খুব খুশি ছিলেন,তিনি নিরার জন্মের পর বললেন যাক আমার আরো একটা মা এলো আমার ঘরে।বড় মেয়ে নিহার সাথে মিলিয়ে ছোটমেয়ের নাম রাখলেন তিনি নিরা।নিরা তেমন মাহফুজা বেগমের ভালোবাসা সেভাবে পেতোনা।এরপর নিরা একটু বড় হতেই মাহফুজা বেগমের কোল আলো করে জন্ম হলো উৎসর ,মাহফুজা বেগমের আনন্দ দেখে কে।এভাবেই আস্তে আস্তে তিন ভাইবোন বড় হতে থাকলো।নিরা বাড়িতেও যেমন দুষ্টুমি করতো তেমনি স্কুলেও।স্কুল থেকে যখন নিরার নামে নালিশ আসতো তখন মাহফুজা বেগম খুব মারতেন।এতে অবশ্য নিরার কোন যাই আসতোনা।

নিরা যখন ক্লাস এইট এর ছাত্রি তখন নেওয়াজ সাহেবের কাছে বায়না ধরলেন তার একটা মোবাইল চাই।নেওয়াজ সাহেব মেয়ের কথা ফেলতে পারলেননা।দুই মেয়েকে দুটো ফোন কিনে দিলো।এতে অবশ্য মাহফুজা বেগম খুব রাগারাগি করেছিলো।

নিরা যখন নাইনের ছাত্রী সেসময় একদিন তার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে একটা কল আসলো।নিরার ফোনে অবশ্য পরিচিতোরাই কল করতো,বাইরের কোন মানুষের সাথেই সে ফোনে কথা বলতোনা।যেদিন কলটা আসলো সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো,ঝুম বৃষ্টি।শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ।বর্ষার ভরা যৌবণ একদম।সেই বর্ষার যৌবনের সাথে সাথে নিরার যৌবনটাও হঠাৎ লাফিয়ে উঠলো।কি মনে করে ফোনটা রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে একটা ছেলেকন্ঠ ভেসে আসতেই নিরার বুকটা কেঁপে উঠলো,ছেলেটার কন্ঠতে কি জানি একটা ছিলো যা নিরাকে বশ করে নিলো।নিরা চাইলেও ফোনটা রাখতে পারলোনা।এভাবেই আস্তে আস্তে তাদের কথা হতে থাকে ফোনের মাধ্যমে।ছেলেটা কথা বলতো ঢাকা থেকে।ঢাকা মেডিকেল কলেজে কয়েকমাস আগে ভর্তি হয়েছিলো।প্রতিদিন কথা বলতে বলতে ছেলেটার প্রতি নিরার মনে অন্যরকম অনূভুতির একটা জন্ম হয়।যা নিরা বুঝতে পারে।একদিন কথা না বললে তার ভালো লাগতোনা এতোটাই আসক্ত হয়েছিলো সে ছেলেটার প্রতি,অথচ ছেলেটার নাম সে জানতোনা,শুধু জানতো সে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ে ।ছেলেটা বলতো একদিন সামনা-সামনি দেখা করে তার সম্পর্কে সব বলবে সে।ছেলেটা মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ায় বেশি কথা অবশ্য বলতে পারতোনা কারণ সবসময় ই তার পড়ার চাপ থাকতো।নিরাও কিছু মনে করতোনা আর এতটাই নিরা আবেগে ভেসে গিয়েছিলো যে ছেলেটার নাম ধাম ও জোর করে জানতে চাইতোনা কখনো।
এভাবেই একবছর তারা কথা বলেছিলো,দুজন দুজনকে তাদের মনের অনুভূতির কথাগুলোও প্রকাশ করেছিলো।দুজনের প্রেম ছিলো খুব গাঢ়।এবছর পর দুই তিন মাস এমনি হবে এসময় নিরার বোন নিহার বিয়ে হয়ে গেছে কিছুদিন আগে তার কয়দিন পর থেকেই নিরার ফোনে আর ওই ছেলের কোন কল আসতোনা,নিরা কল দিলে বন্ধ দেখাতো।কতশত বার যে নিরা ওই নাম্বারে কল করেছে তা নিরাও গুনে শেষ করতছ পারবেনা।এ দিকে নিরার এস এস সি পরিক্ষাও এগিয়ে আসছে।আর নিরার মন ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছে সেই নাম না জানা ছেলের কারণে ।কাউকে বলতেও পারতোনা।একা একা ঘরের মধ্যে দরজা লাগিয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদতঝ সে বালিশে মুখ গুজে।ফোনটা যখনি বেজে উঠতো নিরা ছুটে আসতো ফোনের কাছে,এভাবেই সে অনেকদিন অপেক্ষা করেছে এখুনো করে যাচ্ছিলো কিন্তু মাঝখানে কি হয়ে গেলো,ফারদিন নামের মানুষটা তার জিবনে হঠাৎ করে জড়িয়ে পড়লো।ফারদিনের মুখের দিকে তাকিয়ে এতক্ষণ পুরোনো স্মৃতির পাতা থেকে ঘুরে আসলো নিরা।
চারিদিকে হালকা আলো ফুটতে শুরু করেছে,ফজরের আজান অনেক আগেই হয়ে গেছে।নিরা ফারদিনকে ডাকছে নামাজ পড়ার জন্য,
-শুনছেন? এই যে উঠুন,,আজান হয়ে গেছে অনেকক্ষণ হলো।উঠুন বলে ফারদিন একটু ঝাঁকালো নিরা।
এবার চোখ মেলে তাকালো ফারদিন।নিরার মুখটা তার মুখের খুব কাছে।কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে থাকলো নিরার দিকে তারপর উঠে দাঁড়ালো।নিরাও উঠে রুমের ভিতর গেলো পেছনে ফারদিনো হাঁটতে শুরু করেছে।



ফজরের নামাজ পড়ে ঠান্ডা চোখে নিরার দিকে তাকালো ফারদিন।নিরাও তাকালো।
-আর কখনো তুমি তাসিফের সাথে কথা বলবানা আমি বলেদিলাম।
-কেনো?সে আমার খালাতো ভাই,তার সাথে কথা বলতে সমস্যা কি।
-অনেক সমস্যা।তুমি এখন বিবাহিত,আমার স্ত্রী তাই আমি যা বলবো তা শুনতে তুমি বাধ্য।বলেই বিছানায় শুয়ে পড়লো ফারদিন।নিরা আর কিছু না বলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।বৃষ্টি এখন মনে হচ্ছে একটু জোরেই হচ্ছে।বৃষ্টির এক একটা ফোঁটা নিরার চোখে মুখে এসে পড়ছে।হাত দুটো সামনে বাড়িয়ে বৃষ্টিটাকে ছুঁতে শুরু করলো নিরা।আর ভাবতে শুরু করলো তার সেই নাম না জানা প্রেমিকের কথা।তার ও বৃষ্টি ছিলো খুব পছন্দের।নিরাকে বলতো ,বিয়ের পর দুজনে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টি উপভোগ করবে।বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে দুজন দুজনের চোখে হারিয়ে যাবে বহুক্ষণের জন্য।আরো কত কথা বলতো সে আর নিরা লজ্জায় লাল হয়ে যেতো।সেসব কথা ভাবলে নিরার চোখে মুখে এখুনো লজ্জাগুলো ভিড় জমিয়ে বসে।



বৌমা আমাকে আর ফাহমিদাকে চা দাওতো।তোমার শ্বশুরকে এক গ্লাস পানি দাও।সে নাকি এখন চা খাবেনা।

মামি আমাকে নুডলস করে দাও আমি নুডলস খাবো।

আহ পিহু নিহাকে এখন জ্বালাস না।বিকালের দিকে করে দিবেনি নুডলস।মেয়েকে ধমকে বললেন ফাহমিদা।পিহু মায়ের ধমক শুনে সোফা ছেড়ে রুমে চলে গেলো মন ভারি করে।

আপা আমি করে দিচ্ছি নুডলস তুমি অযথায় ধমকালে মেয়েটাকে।

নিহা তুই যা নাস্তা বানাচ্ছিস সেগুলো দিয়েই ওরা নাস্তা করবে ,তোকে এখন নুডলস করতে হবেনা।বাড়িতে দুই ভাইবোন আমাকে জ্বালিয়ে খায় আর এখানে আসলে তোকে।তুই আর মাথায় তুলিসনা ওকে।

নিহা ঠোঁটে একটু মৃদু হাসি নিয়ে একটা চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে দিলো,চা হলে নুডলসের জন্য পানি দিবে।

নিরা রান্নাঘরে এসে নিহাকে বললো,আপু কি করতে হবে বল তোকে সাহায্য করি।
নিহা বোনের কথা শুনে হাসলো তারপর বললো,
-পেঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ কাটতে পারবি?
-দাও চেষ্টা করে দেখি।
নিহা নিরাকে পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচ দিলো।মরিচগুলো কেটে পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে নিরার অবস্থা নাজেহাল।চোখের পানি আর নাকের পানিতে অবস্থা খারাপ।মরিচ কাটা হাত দিয়ে যেইনা চোখে হাত দিয়েছে নিরা ওমনি আরো জ্বলতে শুরু করলো নিরার চোখ।বেচারি জ্বালা সহ্য করতে না পেরে কাঁদতে শুরু করলো ।নিরার কাঁন্না শুনে নিরার দিকে তাকিয়ে নিহা হাসবে না কাঁদবে বোনের গলা ধরে বুঝতে পারছেনা।
-কিরে কাঁদছিস ক্যান ওত বড় মেয়ে?
-আপু আমার চোখ জ্বলছে খুব।চোখদুটো বন্ধ করেই কাঁদছে নিরা।
-পেঁয়াজ কাটলে একটু জ্বলে চোখ,কাঁদিসনা বাড়িতে সবাই আছে,কি ভাববে সবাই চুপ চুপ।
ফজিলা বেগম আর ফাহমিদা নিরার কান্না শুনে দৌড়ে এসেছে রান্নাঘরে,কি হলো কি হলো বলে।
নিরা চোখ বন্ধ করেই ফজিলা বেগমকে বললো,
-মামনি আমার চোখ খুব জ্বলছে বলেই আরো কাঁদতে শুরু করলো নিরা।
নিহা জানে নিরা একটু প্যানপেনি টাইপের।মনে মনে বলছে,কি করতে যে এই মেয়েকে পেঁয়াজ,মরিচ কাটতে দিলাম আল্লাহ,মান-সম্মান কিছু রাখলোনা এই মেয়ে।ফজিলা বেগম রান্নাঘর থেকে নিরাকে এনে সোফায় বসালেন।নিরা কেঁদেয় যাচ্ছে।পিহু,পাভেল আর তুলতুল পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ফাহমিদা নিরার চোখে অনবরত ফু দিচ্ছে।তুলতুল হঠাৎ দৌড় দিলো ফারদিনের ঘরে,ফারদিন ঘুমিয়ে আছে।সে গিয়ে ফারদিনকে ডাকতে শুরু করলো,
-চাচ্চু,চাচ্চু ও চাচ্চু,ওঠনা ,খালামণি খুব কাঁদছে,
ফারদিন চোখ পিটপিট করে তাকালো,ঘুমের ঘুম ঘুমিয়েছিলো সে,মাথাটা কেমন করছে।সে ঘুম ঘুম গলায় তুলতুলকে বললো,
-কি হয়েছে তুলারানি,ডাকছো কেনো?
-চাচ্চু খালামণি কাঁদছে খুব,দেকো গিয়ে।
ফারদিন এবার ধরপড়িয়ে উঠে বসলো তারপর বললো,
-কেনো,কি হয়েছে?কাঁদছে কেনো?
-তুমি আসো বলে ফারদিনের হাত ধরে টানছে তুলতুল।
ফারদিন তুলতুলকে কোলে নিয়ে বাইরে এসে দেখলো সত্যি নিরা কাঁদছে।সে সামনে এগিয়ে এসে তুলতুলকে কোল থেকে নামিয়ে বললো,
-কি হয়েছে এখানে,কাঁন্নাকাটি কিসের?
নিহা রান্নাঘর থেকে গামলাতে করে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসতে আসতে বললো,
-আর বলোনা ভাই,তোমার বৌকে দিয়েছিলাম পেঁয়াজ,মরিচ কাটতে।কাটতে গিয়ে পেঁয়াজের ঝাঝে চোখ জ্বলছিলো তারপর আবার মরিচ কাটা হাত চোখে দিয়েছিলো তাই এখুন কেঁদে বাড়ি ভাসাচ্ছে।আর আম্মার আদরে দেখোনা কেমন ভ্যা ভ্যা করছে।
-এমন করে বলোনা বৌমা,মেয়েটা কোন কাজ আগে করেনি তাই এই অবস্থা,আস্তে ঠিক হয়ে যাবে বলে নিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন ফজিলা বেগম।
নিহা গামলাটা নিরার মুখের সামনে দিয়ে বললো,
-নে মুখ রাখ গামলায়,চোখ বড় বড় করে তাকাবি পানির মধ্যে তাহলে আস্তে আস্তে জ্বলন কমে যাবে।
ফারদিন এসব দেখে বিরক্তে মুখ ঘুরিয়ে আবার রুমে এসে শুয়ে পড়লো।

চলবে….

আমার লেখা গল্পটাকি কারোরি পছন্দ হচ্ছেনা।কিছুই বলেননা গল্পটা সম্পর্কে।কেউ কি পড়েননা নাকি?এক লাইন লিখে গল্প সম্পর্কে কিছু বললে ভালো লাগতো।আমি কি গল্পটা দেওয়া বন্ধ করে দিবো?আপনাদের কি একটুও ভালো লাগেনা এই গল্প?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here