#যে_শ্রাবণে_এলে_তুমি💕💕
#পর্ব_39
#লেখনিতে_মৌসুমী
সকাল থেকে খুব খুশিতে আছেন মাজেদা বেগম।তার একমাত্র ছেলে তাসিফ আজ বিদেশ থেকে আসছে,এই আনন্দে তিনি সকাল থেকে বিভিন্ন কিছুই রান্না করে যাচ্ছেন তাসিফের পছন্দের।এত আনন্দের মাঝেও কখনো কখনো মনে চাপা একটা চিন্তা এসেও ভর করছে।নিরার বিয়ের কথা তাসিফ এখুনো জানেনা।তাকে নানা কথাবার্তা দিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছেন মাজেদা বেগম।এসে যখন শুনবে তখন কি যে করবে সেটাই ভাবছে মাঝেমাঝে মাজেদা বেগম।তাসিফকে বোঝানোর জন্য অবশ্য তিনি তার দুই মেয়েকেও রেডি করে রেখেছেন।বড় মেয়ে কালকেই চলে এসেছে শ্বশুরবাড়ি থেকে।ছোট মেয়েকেও বলেছে যেনো তারা দুইবোন তার ভাইটাকে সামলায়।রান্নাবান্না শেষ করে তিনি এখন দুই মেয়েকে পাশে নিয়ে বসে বসে অপেক্ষা করছে ছেলের জন্য।এখন ঘড়িতে বাজে সকাল এগারোটা,এর মধ্যেইতো এসে যাওয়ার কথা তাসিফের।এখুনো আসছেনা কেনো।প্রায় পাঁচ মিনিট পড়ে মাজেদা বেগমের কানে কলিংবেলের আওয়াজ আসলো।কলিংবেলের আওয়াজ শুনেই লাফিয়ে উঠলো তনিমা,তিন্নি আর মাজেদা বেগম।তিন্নি প্রায় দৌড়ে দরজা খুলতে গেলো।মাজেদা বেগমের বুকের ভিতর ঢক ঢক করছে দুটো কারণে,এক ছেলেকে এতদিন পর দেখবেন সেই খুশিতে আর দুই নিরার বিয়ে কথা শুধলে তাসিফ কি করবে সেই কারণে।
”
”
”
পাক্কা একঘন্টা বকবক করে নাইয়া বের হয়েছে ফারদিনের ঘর থেকে।একঘন্টা ধরে ফারদিনের সাথে গল্প করছিলো,নিরার সাথে একটা কথাও বলেনি নাইমা।নিরা শুধু বসে বসে নাইমা আর ফারদিনের কথাগুলো শুনে গেছে।একসময় বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে বের ও হয়ে গেছে।ফারদিন অবশ্য চোখ দিয়ে ইশারা করছিলো যেনো নিরা ঘর থেকে না বের হয় কারণ ফারদিনো বিরক্ত হচ্ছিলো ।কি সুন্দর দুজনে ঘরের ভিতর একটু ছিলো,নিজেদের মত করে সময় কাটাচ্ছিলো সেটা এই নাইমার জন্য আর হলোনা।এখন নিরা দুপুরের রান্নার কাজে নিহাকে সহযোগিতা করছে।জামান সাহেব যোহরের নামাজ পড়েই খেতে বসেন দুপুরের খাবার তাই নিহাকে খুব দ্রুত ই রান্না সাড়া লাগে।
”
”
”
রান্নাঘরের সামনে ফয়েজ ঘুরঘুর করছে অনেকক্ষণ থেকেই।নিরা থাকার কারণে ভেতরে যেতে পারছেনা।বাইরে থেকেই বারবার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।ফয়েজের উঁকিঝুঁকি দেওয়া দেখে ফারদিন পেছন থেকে ফয়েজের ঘাড়ের উপর হাত রাখলো।ফারদিনের হাতের স্পর্শে ফয়েজ চমকে পেছনের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।ফারদিন ভ্রু নাচিয়ে ফয়েজকে বললো,
-কি ব্যাপার ভাইয়া,তুই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদিকে কি দেখিস?
ফয়েজ তুতলাতে তুতলাতে বললো,
-কি…কিছুনা,দে…দেখছি রা…রান্না হলো কিনা।
-তো উঁকি দিয়ে দেখছিস কেনো?রান্নাঘরের ভিতরে গিয়ে দেখ।
-ক.. কৈ উঁকি দি..দিচ্ছি?
-তো কি করছিস? আমি তো দেখলাম তুই উঁকি দিয়েই দেখছিলি,আর তাছাড়া তুই হঠাৎ তুতলাচ্ছিস ক্যান বলতো?
-কৈ..কৈ তু..তুতলাচ্ছি?
-আবার তুই তুতলাচ্ছিস,তুতলাতে হবেনা ,নির্ভয়ে বল তুই কেনো উঁকি দিচ্ছিলি?
-ইয়ে,আসলে,
-কি ইয়ে,আসলে?
-আসলে,
-বল?থাক বলতে হবেনা,আমি বলছি,তুই ভাবির জন্য এসেছিস তাইতো কিন্তু নিরা থাকার কারণে যেতে পারছিসনা?
-হুম,
-থাক লজ্জা পেতে হবেনা।তোর রান্নাঘরের রোমান্সের ব্যবস্থা আমি করে দিচ্ছি।চোখ বন্ধ কর।
-কেনো?
-করতে বলেছি করবি,
-আচ্ছা,
-আমি যখন বলবো চোখ খুলতে তখন খুলবি তারপর রান্নাঘরে সোজা হেঁটে যাবি কোন দিকে না তাকিয়ে।
-কি বলছিস এসব?
-যা বলছি তাই কর,তাহলে ভাবিকে পাবি এক্ষুণি।
ফয়েজ চোখ বন্ধ করলো,ফারদিন পা টিপে টিপে রান্নাঘরের দরজার কাছে গেলো,নিহা চামচ দিয়ে কি যেনো নাড়াচাড়া করছে,নিরা নিহার একটু পেছনে দাঁড়িয়ে তা দেখছে।ফারদিনকে দেখতেই নিরা কথা বলতে যাবে তার আগেই ফারদিন ইশারা করে বললো কথা না বলতে তারপর নিরাকে হাত ধরে টান দিয়ে দরজার কাছে এনেই কোলে তুলে নিলো,নিরা অবাক হয়ে ফারদিনের কাজ দেখছে শুধু।কোলে নিয়েই চলে এসে ফারদিন ফয়েজকে বললো,চোখ খুলে এবার যা।ফয়েজ চোখ খুলেই কোনদিকে না তাকিয়েই চলে এলো রান্নাঘরে এরপর আচমকা নিহাকে জড়িয়ে ধরলো পেছন থেকে।ফারদিনো এদিকে নিরাকে কোলে নিয়ে দ্রুত রুমে এসে দরজা দিয়েছে।
”
”
নাইমার আজ মনটা খুব খুশি খুশি লাগছে,ফারদিনকে সে আজ অনেকক্ষণ মন ভরে দেখেছে সেই সাথে ফারদিনের সাথে মন খুলে অনেকক্ষণ কথাও বলেছে।গোসল সেড়ে নতুন একটা থ্রিপিছ পড়ে আয়নার সামনে বসে বসে সাজুগুজু করছে সে এখন।মাঝেমাঝেএকটু করে হাসছে।এমন সময় নাইমার ফোনটা বেজে উঠলো,ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আরিফ কল করেছে।আরিফ নাইমার গ্রামের ই ছেলে,নাইমাকে খুব পছন্দ করে।শুধু পছন্দ না ভালোওবাসে খুব।নাইমার সাথে নিয়মিত ফোনে কথাও বলে।এককথায় বলতে গেলে প্রেমের সম্পর্কয় তাদের মাঝে।নাইমা অবশ্য টাইম পাস করার জন্যয় আরিফের সাথে কথা বলে ভালো টালো বাসেনা।তবে আরিফ খুব সিরিয়াস নাইমাকে নিয়ে।আরিফের নামটা ফোনের স্ক্রিনে দেখে নাইমার কপালে বিরক্তির ভাজ পড়লো।তার মোটেও ইচ্ছা করছেনা এখন আরিফের সাথে কথা বলতে।ফোনটা পাশে রেখে আবার সাজতে শুরু করলো নাইমা,সে এখন কিছুতেই আরিফের সাথে কথা বলবেনা।এদিকে আরিফ একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে তো দিয়েই যাচ্ছে।একসময় চার্জ শেষ হয়ে ফোনটাই বন্ধ হয়ে গেলো নাইমার।
”
”
”
মাজেদা বেগমের চোখটা খুশিতে ছলছল করছে,কতদিন পর তার ছেলেটাকে চোখের সামনে দেখছে।প্রতিদিন ভিডিও কলে কথা বললেও আজ একদম সরাসরি তার কাছে বসে আছে তার ছেলে।তাসিফ ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে তার মায়ের কাছে বসে আছি।সবাই নিরব।মাজেদা বেগম দুই হাত দিয়ে তাসিফের মুখটা নাড়ছে আর চুমু খাচ্ছে।তনিমা আর তিন্নি পাশে বসে দেখছে ।তিন্নি হঠাৎ বলে উঠলো,
-আম্মা তুমি শুধু ভাইয়াকেই আদর করো,আমরা তো আর তোমার কেউ না।তনিমা সাথে সাথে তিন্নির কথায় শায় দিলো।মাজেদা বেগম মেয়েদের কথা শুনে হাসলো তারপর বললো,তোরা তো আর এতদিন দূরে ছিলিনা ,আমার ছেলেটা কতদিন আমার থেকে দূরে ছিলো তো একটু আদর করবোনা ।তাসিফ হাসতে হাসতে বললো,
-আম্মা জানোইতো এরা দুজন ই আমাকূ আগে থেকেই কত হিংসে করে ,তাইতো তুমি আমাকে আদর করছো সেটা ওদের সহ্য হচ্ছেনা।তিন্নি ভেংচি দিয়ে বললো,
-হিংসে আমরা না তুই করিস আমাদের হুম।
-কখনোই না।তোরাই করিস।
-না তুই করিস।
মাজেদা বেগম মুখে খানিক রাগ ফুটিয়ে বললো,
-কি হচ্ছেকি এসব,ভাইটা কতদিন পর আসলো আর ওমনি ঝগড়া লাগাচ্ছিস।
তনিমা বললো,
-আম্মা এগুলো ঝগড়া না,এগুলোই আমাদের ভালোবাসা,কি বলিস ভাই?
-হুম আপু ঠিক বলেছিস বলে তাসিফ মাজেদা বেগমকে বললো,
-আম্মা খালারা কেউ আসলোনা যে,আমি আজ আসবো শুনেও?নিরাও তো আসেনি।
মাজেদা বেগম একটা ঢক গিলে বললেন,
-ব্যস্ত আছে মনে হয় তোর খালারা।
-নিরা মহারানিতো আসতে পারতো,তাইনা?আবার ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে।আজকে যাবো সন্ধ্যের পর তারপর ওর কি হাল করি ।
মাজেদা বেগম দুই মেয়ের দিকে তাকাচ্ছে কিছু বলছেনা।তনিমা আর তিন্নি ওদের মায়ের অবস্থা বুঝতে পেরে চোখ দিয়ে ইশারা করে শান্ত হতে বললো।
চলবে।
আমি খুব দুঃখিত গতকাল না দেওয়ার জন্য।আসলে খুব ব্যস্ত ছিলাম।