যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:৩৮

0
701

#যে_শ্রাবণে_এলে_তুমি💕💕
#পর্ব_38
#লেখনিতে_মৌসুমী

নাস্তার টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে বক্কর।জামান সাহেব পত্রিকা হাতে নিয়ে এসে ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে একটা চেয়ার টেনে বসলেন।বক্করকে দেখে বললেন,
-তুই নাস্তা সাজাচ্ছিস কেনো?এগুলোতো নিহা করে।নিহা কোথায়?
-বড় ভাবি রান্নাঘরে।আমাকে বললো এগুলো নিয়ে আসতে তাই এনে রাখছি।ফয়েজ একদম রেডি সেডি হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এসে বসলো জামান সাহেবের পাশে।তারপর এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে বললো,
-কি ব্যাপার বাসার সবাই কোথায়?নিরব হয়ে আছে একদম।নিহা কোথায়।আমাকে তাড়াতাড়ি বের হতে হবে একটা জরুরি কাজ আছে,বক্কর যা নিহাকে ডেকে নিয়ে আয়।
-আচ্ছা যাছি বলে বক্কর গেলো রান্নাঘরের দিকে।সাহেদা আর নাইমাও এসে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে পড়লো তাদের দেখে জামান সাহেব বললেন,
-ওখানে বসছিস কেনো?নাস্তা করে নে,বেলা হয়ে গেছে।নাইম কোথায়?নাইমকে ডেকে নিয়ে আয়।
-বড়ভাই আমি ভাবির সাথেই বসবো খাইতে ।নাইম মনে হয় ঘুমাছে ।পরে খাবেহেনি।
-আরে আয় একসাথেই বসে খায়,তোর ভাবির তো পাত্তা নাই,রুমেও নাই ,এখানেও নাই।
ভাইয়ের কথা আর না ফেলে সাহেদা বেগম এসে বসলেন ,সেই সাথে নাইমাও এসে বসলো ফয়েজের পাশে।ফয়েজ নাইমাকে একটা হাসি দিয়ে মোবাইল টিপায় মনোযোগ দিলো।নাইমা বললো,
-ফারদিন ভাইয়া কোথায়?খাবেনা ?
জামান সাহেব পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে বললো,
-তোমার ফারদিন ভাইয়া এখুনো ঘুমাচ্ছে হয়তো।


“ঘুম থেকে উঠে বিছানায় উঠে বসলো ফারদিন।এতক্ষণ ঘুমানোর কারণে কেমন যেনো লাগছে তার।ফজরের নামাজ পড়ার আগে একবার গোসল করেছে সে নাহলে এখন গোসল করতো কিন্তু একবার যেহেতু আগেই করেছে তাই এখন চুপচাপ একটু বসে থাকলো।কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো।চিরুনি দিয়ে চুলগুলো আচড়ালো তারপর রুম থেকে বের হয়ে সোজা আসলো ডাইনিংএ।এসে দেখে সবাই নাস্তা করতে শুরু করেছে।বক্কর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
-আম্মারা কোথায়?
বক্কর বললো,
-রান্নাঘরেই আছে,আসছে।বক্কর বলতে না বলতেই দেখে ফজিলা বেগম নীল রঙের একটা নতুন শাড়ি পড়ে রান্নাঘর থেকে আসছে।ফজিলা বেগমকে দেখে জামান সাহেব খেতে খেতেই বিষম খেলেন।তাড়াহুড়ো করে ফয়েজ পানির গ্লাস জামান সাহেবকে এগিয়ে দিলেন।সাহেদা বললেন,
-ভাবি কোথাও যাব্যা নাকি,সকালবেলায় নতুন শাড়ি?
-নাহ,এমনি পড়েছি।ফজিলা বেগম জামান সাহেবের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে রইলেন,মুখে তার দুষ্টু হাসি।জামান সাহেব একটু করে খাচ্ছেন তো আবার ফজিলা বেগমকে দেখছেন।ফয়েজ বললো,নিহা কোথায় তুমি ?আমি বের হবো আমার ওয়ালেটটা পাচ্ছিনা খুঁজে দিয়ে যাও।
নিহা হাতে তুলতুলের জন্য পাতলা খিচুরী রান্না করে নিয়ে এসে টেবিলের ওপর রাখলো।কেউই তাকে খেয়াল করেনি।সবাই খাচ্ছে মাথা নিচু করে।খিচুরী রাখার শব্দে সবাই নিহার দিকে তাকালো,সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।সবার মনেই প্রশ্ন,কি ব্যাপার এরা শ্বাশুরী বৌমা দুজনেই কেনো নীল শাড়ি পড়ে সেজেগুজে আছে?এত সকালে তাও আবার।ফয়েজ খাওয়া রেখে নিহাকে যতটুক দেখা যাই ততটুক দেখছে।মনে মনে ভাবছে এদের দুই জনের মতলব কি?সকাল সকাল দুজনেই নীল শাড়ি পড়ে সেজেছে।মনে হচ্ছে নতুন বৌ।মুগ্ধ ও হচ্ছে নিহাকে এ সাজে দেখেও।মনে মনে একটা সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেললো ফয়েজ,সে আজ আর অফিসে যাবেনা,যত ই কাজ থাকনা কেনো?নিহাকে এই রুপে দেখে সে কিছুতেই বের হতে পারবেনা।সাহেদা বললো,
-আজ দেখি শ্বাশুরী আর বৌমা সকালবেলাতেই সেজে বসে আছে,ব্যাপার কি বৌমা?
-তেমন কিছুই না ফুপু,এমনিতেই ।জামান সাহেব ফয়েজকে বললেন,
-বৌমা তো এলো,যা ওয়ালেট নিয়ে অফিস যা,বসে আছিস কেনো?তোর না দেরি হয়ে যাচ্ছে।ফয়েজ নিহার উপরে নজর রেখেই বললো,
-আজ আর যাবোনা আব্বা।
-কিহ,তোর বলে জরুরী কাজ আছে,তাহলে সেটার কি হবে?
-যা খুশি হোক,আজ আমি বের হবো না।মানে বের হতে পারবোনা।ফয়েজের কথা শুনে উপস্থিত সবাই ঠোঁট টিপে হাসছে।এমন সময় নিরা বাবাই ,বাবাই বলে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসছে।সবাই এবার রান্নাঘরের দরজার দিকে নজর দিলো।নীল শাড়ি পড়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে হাতে একটা বাটি নিয়ে বেরিয়ে আসছে নিরা।ফারদিন অবশ্য তাকাইনি।সে নিরার দিকে তাকাবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।নিরার দিকে চোখ পড়লেই তার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাই,নিজেকে বেসামাল,বেসামাল লাগে তাই সে নিজেকে সামাল দেওয়ার জন্য তাকাবেনা নিরার দিকে।নিরা আসলো ডাইনিং টেবিলের কাছে তারপর জামান সাহেবকে বললো,
-বাবাই তোমার জন্য আমি নিজের হাতে পায়েস রেঁধেছি দেখো।
জামান সাহেব মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
-সত্যি,পায়েস আমার কি যে পছন্দের তোকে কি বলবোরে মা।দে দে তাড়াতাড়ি দে,খেয়ে তৃপ্তি মেটায়।কিন্তু তার আগে এটা বল?তোরা তিনজন আজ সকাল সকাল শাড়ি পড়ে সেজেগুজে আছিস কেনো?জামান সাহেবের কথা শুনে এবার ফারদিন আর নিরার দিকে না তাকিয়ে থাকতে পারলোনা।সে ঝট করে মাথা তুলে নিরার দিকে তাকালো।নিরাকে এভাবে দেখে ফারদিন ভিষণ অবাক হয়ে গেলো,সাথে সাথে এটাও টের পেলো সে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে,কেমন বেসামাল হয়ে যাচ্ছে তার মন ।একটা বিশাল ঢোক গিললো ফারদিন।তার গলা শুকিয়ে গেছে।চারদিকে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে ,ফুলের সুবাস তার নাকে এসে বাড়ি খাচ্ছে এমন মনে হচ্ছে।নিরার গলার আওয়াজে ফারদিনের হুশ আসলো,নিরা জামান সাহেবকে বললো,
-চমকে দিতে।
জামান সাহেব বললেন,
-সত্যিই চমকালাম,বিশেষ করে তোর মামনিকে দেখে।এই বয়সে ছেলের বৌদের সাথে সাথে সেও কচি হয়ার চেষ্টা করছে।যাইহোক ,আমি পায়েশটা নিয়ে রুমে গেলাম,কেউ যদি আসতে চাই ,আসতে পারে সে রুমে।কথাটা যে জামান সাহেব ফজিলা বেগমকে বলেছেন সবাই তা বুঝতে পেরেছেন।সাহেদা বেগম হাসি সামলিয়ে ফজিলা বেগমকে বললেন,
-ভাবি তোমার ডাক পড়েছে।ফজিলা বেগম লজ্জা পাওয়ার ভান করে ছেলেদের দিকে তাকালেন তারপর সুড়সুড় করে রুমে চলে গেলেন।নিহা বললো,
-আমি দেখি তুলতুল উঠলো কিনা বলেই সে রুমের দিকে পা বাড়ালো।একটু পর ফয়েজ ও উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-আমার খাওয়া শেষ,যাই একটু বিশ্রাম নিই।
সাহেদা বেগম নিরাকে বললেন,
-খেয়ে নাও ছোট বৌমা।
-হ্যাঁ ফুপু খাবো,আপনারা খেয়ে নিন।নাইমা এতক্ষণ আগুন চোখে নিরাকে দেখে যাচ্ছে,নিরার এই সাজ ওর সহ্য হচ্ছেনা।রাগে ওর পেটের ভিতর কুরকুর করছে।রাগের ঠ্যালায় বেশি না খেয়ে সে উঠে চলে গেলো।সাহেদা বেগম নাইমাকে উঠে যেতে দেখে বললেন,
-কিরে খাবিনা আর?
-না।
সাহেদা বেগম খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তিনিও চলে গেলেন।নিরা বক্করকে বললো,
-তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো,বসে পড়ো খেতে।
বক্কর একটা চেয়ারে বসে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করলো।ফারদিন তো আড়চোখে নিরাকে দেখছে আর পড়োটা মুখে নিয়ে চিবাচ্ছে।নিরাও আড়চোখে ফারদিনকে দেখে যাচ্ছে।এরপর ফারদিনের সামনের চেয়ারে বসে সেও খেতে শুরু করলো,দুজনে পড়োটা চিবাচ্ছে আর একে অপরকে আড়চোখে দেখছে।
বক্করের খাওয়া শেষ সে উঠে চলে যেতেই ফারদিন হাত ধুয়ে ফেললো তারপর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো,কিছুক্ষণ পায়চারি করলো,এদিক ওদিক দেখলো,এরপর সোজা নিরার চেয়ারের পাশে গিয়ে নিরাকে টপ করে কোলে নিয়েই হাঁটা ধরলো।নিরা আজ কিছুই বললোনা সে আরো ফারদিনের গলা জড়িয়ে ধরলো,রুমে এসেই দরজা এক হাতে লাগিয়েই নিরাকে ধপ করে বিছানার ওপরে ফেলে দিলো তারপর সেও নিরার দিকে ঝুঁকে গেলো।নিরা রাগে ফারদিনের দিকে চোখ গরম করে তাকালো,আজ দিয়ে দু বার ফারদিন তাকে এভাবে খাটের ওপর আছাড় দিলো তাই মুহূর্তেই নিরার মুখটা লাল হয়ে গেলো।নিরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারদিন নিরার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রাখলো,তারপর নিরার কাজল কালো ডাগর ডাগর চোখে চোখ রেখে ফিসফিস করে বললো,
-আমাকে কি পাগল করার জন্য এভাবে সেজেছো।কাছেও আসতে দিচ্ছোনা আবার জ্বালাতেও কম করছোনা।শাড়ী টারি পড়তে কে বলেছে তোমাকে?এভাবে চোখে কাজল দিতে কে বলেছে তোমাকে?আমি আজ হসপিটালে যাবো কি করে?বলো?আমি তো এখন তোমাকে রেখে কোথাও যেতে পারবোনা।আমার মন ই বসবেনা অন্য কোথাও,তাহলে এখন আমি কি করবো?
নিরা ফারদিনের আঙ্গুলটা হাত দিয়ে সড়িয়ে সেও ফিসফিসিয়ে বললো,
-যা ইচ্ছে করুন।
-যা ইচ্ছে?
-হুম,
-ভেবে বলছোতো?
-হুম,
-কি হুম?
-ভেবে বলছি বলেই লজ্জায় মাথা নিচু করলো নিরা।ফারদিন নিরার লজ্জামাখা মুখটা দুচোখ ভোরে দেখছে,এমনি তো কথা ছিলো,নিরা হ লজ্জা পাবে আর ফারদিন তাকে লজ্জা দিবে।অনেক্ষণ এভাবেই ফারদিন নিরার লজ্জামাখা মুখটা দেখলো তারপর সোজা হয়ে দাঁড়ালো।নিরার পা দুটো মেলিয়ে দিয়ে সেখানে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।নিরা ফারদিনের মুখের দিকে তাকিয়ে ফারদিনের মাথায় হাত রাখলো।হঠাৎ করে ফারদিন চুপ হয়ে গেলো,মুখে কিছু বলছেনা চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে নিরার কোলে মাথা দিয়ে।
নিরা ফারদিনের চুখে খুব যত্ন করে বিলি কেটে দিচ্ছে আর ফারদিনের চোখ ,মুখ,নাক,কপাল,গাল,থুতনি,চুল সব খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।দেখতে দেখতে একসময় নিরার একটা আঙ্গুল ফারদিনের সারা মুখে খেলে বেড়াতে শুরু করলো।ঠোঁটের কাছে আঙ্গুলটা আসতেই দরজায় ঠক ঠক শব্দ হতে শুরু করলো।ফারদিনের চোখটা লেগে গেছিলো নিরার বিলি কাটার কারণে ,ঠক ঠক শব্দে ঘুমটা কেটে গেলো।ফারদিন নিরাকে দেখলো,সেও ফারদিনের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারদিন নিরার দিকে চোখটা রেখেই বললো,
-কে?
-আমি।
-আমি কে?
-আমি নাইমা।
-ওহ নাইমা,কিছু বলবে?
-দরজা খুলেন,তারপর বলি।
ইচ্ছা না থাকা সত্বেও ফারদিন গিয়ে দরজা খুললো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here