#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ১৮
লিখাঃসামিয়া খান
চোখ না খুলেই বিছানা হাতরে কিছু একটা খুঁজে চলেছে হিমাদ্রি। জিনিসটা না পেয়ে হুট করে চোখগুলো খুলে উঠে বসলো।প্রচন্ড ভয় পেয়েছে মনে হয়।হঠাৎ কিছু একটা মনে পরাতে ফোস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো।
“কীরে হিম এতো হাঁপাচ্ছিস কেনো?কোন বাজে স্বপ্ন দেখলি নাকী?”
মাদিহাকে কোলে নিয়েই ভিতরে প্রবেশ করলো মেহেলতা।মাদিহা কাঁদছে।হিমাদ্রিকে দেখে হাত দুটো বাড়িয়ে দিলো ওর দিকে।হিমাদ্রিও হাত বাড়িয়ে মাদিহাকে কোলে নিয়ে গালে একটা চুমো দিয়ে জরিয়ে ধরলো।
“বাজে স্বপ্ন দেখেনি ভাবী।সবসময় তো মাদিহা আমার কাছে ঘুমায় কিন্তু আজকে মনে ছিলোনা যে ও ওর বাবার কাছে ঘুমিয়েছে। তাই ভয় পেয়েছি।”
“বুঝতে পারছি।এখন রাখ তোর মেয়েকে। আমি রান্না করছি।অয়েত্রী ম্যাডামের ওর্ডার আছে।যেনো তার জন্য আলু পুরি বানাই।”
অয়েত্রীর কথাগুলো বলার সময় মেহেলতা মুখটা প্রচন্ডরকম বিরক্তিভাব ফুটিয়ে তুললো।হিমাদ্রি ভেবে পায় না মানুষটা এমন কেনো?এই একজনকে দেখতে পারেনা আবার একটু পরেই তার জন্য জান প্রাণ দিতে প্রস্তুত।
“মৃদ কোথায় ভাবী?”
“বাহিরে।আমি গেলাম রান্না করতে।”
মাদিহাকে বিছানায় শুয়িয়ে তার দুপাশে কোলবালিশ রেখে দিলে হিমাদ্রি। তা নয় মেয়েটা বড্ড চঞ্চল হয়েছে।বিছানা থেকে পরে যাবে।চটপট ফ্রেশ হয়ে এসে মাদিহাকে নিয়ে রুমের বাহিরে আসলো হিমাদ্রি।ড্রয়িংরুমে কাওকে না পেয়ে বাড়ির বাহিরে আসলো হিমাদ্রি।
বাহিরে এসে তো হিমাদ্রি তাজ্জব বনে গেলো।মৃদুল পুশ আপস করছে।আর পাশে অয়েত্রী বসে বসে তা গুণছে।এবং একটু দূরে আহনাফ আর সৃষ্টি বসে আছে।আহনাফ সৃষ্টিকে পড়াচ্ছে।যেহেতু আহনাফ সায়েন্সের স্টুডেন্ট তাই সৃষ্টিকে ওই পড়ায়।কারণ এ টাইমে সৃষ্টির বাহিরে কোথাও পড়তে যাওয়া বেশ রিস্কের ব্যাপার।
কচকচে একটা আপেলে কামড় বসিয়ে হিমাদ্রিকে নিজের কাছে ডেকে নিজের পাশে বসালো অয়েত্রী।
“তা হিমাদ্রি তোর পড়ালেখার কী খবর?অর্নাস তো শেষ হলো এখন কী করবি?”
“এখনোও ঠিক করিনি কিছু আপু।কেবল তো রেজাল্ট দিলো।”
“তোর রেজাল্ট কী?”
“ফার্স্ট ক্লাস এসেছে।”
“আর সিজিপিএ কতো?”
“৩.৪। ”
“বাহ।বেশ ভালো মার্ক তো।তাহলে কোথাও স্কলারশিপের জন্য ট্রাই করছিস না কেনো?ফার্দার স্টাডির জন্য?”
হিমাদ্রি কিছু বলার আগেই মুখ খুললো মৃদুল।বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে অয়েত্রীকে জবাব দিলো,,
“স্কলারশিপের মায়রে বাপ।এমনিতেই কয়দিন আগে ওর মাথায় স্কলারশিপের ভূত চাঁপছিলো।ধমকাধামকি করে সেই ভূত নামিয়েছি।এখন আবার তুই ওর মাথায় স্কলারশিপের ভূত আবার উঠাচ্ছিস?”
“কেনো রে।ওর জীবন ও যা মনে করে তাই করবে।হিম যদি স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে চায় তাহলে তুই কে বলার?”
“আমিই সব বুঝেছিস।সো অফ যা।”
“আমি কেনো অফ যাবো?তুই অফ যা।আর হিম কী তোর বউ লাগে যে শুধু তোর কথা শুনবে?”
অয়েত্রীর মুখ থেকে বউ কথাটা শুনে মৃদুল কিছু সময় এর জন্য থেমে গেলো।
“কী হলো জবাব দিস না কেনো?”
পুশ আপ দিতে দিতে মৃদুল জবাব দিলো,,
“জানিনা আমি।”
“আচ্ছা বাদ দে।এখন চল। প্রথম দিন এতোগুলো দেওয়া যাবেনা।”
“হুম জানি।”
মাটি থেকে উঠে মৃদুল হিমাদ্রির হাত ধরে বাড়ির ভিতর চলে গেলো।সেদিকে তাঁকিয়ে থেকে মনে মনে একটা খিস্তি দিলো অয়েত্রী।
“শালা পুরুষজাতটা বড্ড ত্যারা।আগে থাকতে নিজের জিনিস নিজের করে নিবেনা।”
,
,
,
“এদিকে তাঁকাও সৃষ্টি। ওদিকে মধু নেই যে এতো গভীরভাবে তাঁকিয়ে থাকতে হবে।খাতার দিকে তাঁকাও।”
“তাঁকাবো না।”
“আমার সাথে তর্ক করা আমি পছন্দ করিনা সৃষ্টি। ”
“আমি তর্ক করছিনা।আপনি কে যে আপনার কথা শুনে চলতে হবে এবং আপনার পছন্দ, অপছন্দ মেনে চলতে হবে।”
সৃষ্টির কথাগুলো শুনে আহনাফের মুখের রেখাগুলো কঠিন আকার ধারণ করলো।সে এতোটা আশা করেনি সৃষ্টির থেকে।নিজের রাগ আর সামলাতে পারলো না।
“নিজেকে কী মনে করো তুমি সৃষ্টি? অনেক সুন্দরী? নাকী কোটিপতির মেয়ে?তোমার আছেটা কী?এতিম তো তুমি।এতিম হয়ে বড়লোকের ছেলেকে ফাঁসিয়ে তার সাথে প্রেম করে, বিয়ে করেছো।এখন তার বাচ্চার মা হবে।ভেবেছো পেয়েছি ছাগল একটা।আর দুর্জয় একটা ছাগলও।তোমার মতো জন্মপরিচয়বিহীন মেয়েকে বিয়ে করছে।মূলত তোমার জন্যই দুর্জয় আত্নহত্যা করেছে।বামুন হয়ে চাঁদ ছুতে গিয়ে চাঁদটাকে চিরজীবনের জন্য অমাবস্যার চাঁদে রুপান্তরিত করে দিয়েছো।তুমি তো রোদসীর থেকে অধম।যতোসব। আর তোমার আশেপাশেও পাবেনা আমাকে।
কথাগুলো বলে হাতে থাকা কলমটা সৃষ্টির মুখের দিকে ছুঁড়ে মারলো আহনাফ। কলমটা গিয়ে সৃষ্টির মুখে লাগলো।আহনাফ একবার ফিরেও দেখলো না সৃষ্টির দিকে।গটগট করে বাড়ীর গেটের দিকে এগিয়ে চললো।গেট পার করে যাওয়ার পরে সৃষ্টি কান্নায় ভেঙে পরলো।দুচোখ দিয়ে সমানে পানি পরছে যা হাত দিয়ে মুছে চলেছে।কাঁদতে কাঁদতে কোলে থাকা একটা ফাইল বের করলো সৃষ্টি। মূলত ফাইলটা সৃষ্টির আল্ট্রাসনোগ্রাফির।রিপোর্ট বলছে সৃষ্টির দুটো ছেলে হবে।আহনাফকে তা দেখানোর জন্যই পড়ার সময় সাথে করে নিয়ে বসেছিলো।আহনাফকে ওই কথাগুলো শুধু মজার ছলেই বলেছে। কিন্তু আহনাফ যে এভাবে নিবে তা কল্পনাও করেনি সৃষ্টি। রিপোর্টটাকে নিজের বুকের সাথে চেঁপে ধরে চোখ বুজে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে সৃষ্টি।
“এতোভাব দেখাতে হবেনা এখন।আমি তেমন কিছু বলিনি যে কান্না করতে হবে।”
আহনাফের কণ্ঠস্বর শুনে বেশ সচকিত ভঙিতে মাথা তুললো সৃষ্টি। হাতে অনেকগুলো কোকা কোলার ক্যান নিয়ে দাড়িয়ে আছে আহনাফ। আহনাফকে দেখে আরো যেনো কান্না করে দিলো সৃষ্টি। বিরক্তিমাখা মুখে সৃষ্টির পাশে গিয়ে বসলো আহনাফ।
“তুমি কী জানো সৃষ্টি তোমার আর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
সৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে সস্মতিপ্রকাশ করলো।
“তাহলে তুমি কোন সাহসে অধিকারের কথা বলো?”
“আমাকে মাফ করে দেন।”
“তোমার উপর আমার থেকে বেশী আর কারো অধিকার বর্তমানে নেই।”
“হুম জানি।”
সৃষ্টির দিকে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে থেকে আহনাফ একটা নিশ্বাস ছাড়লো।
“আমাকে মাফ করো সৃষ্টি। আমার তখন রাগ উঠেছিলো।আমি আর কোনদিন বলবো না।তুমি বুঝোনা কেনো আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি।”
“আমার দুটো ছেলে বাবু হবে।”
“জানি আমি।”
“কে বললো একথা?”
“তা তোমার শুনতে হবেনা।এখন চলো খাবে।”
,
,
,
মৃদুল স্যুটকেস গুচাচ্ছে আর পাশে হিমাদ্রি মাদিহাকে কোলে নিয়ে মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
“মুখ ওরকম প্যাঁচার মতো কেনো করে রেখেছিস?”
“না তো। কই?”
“আয়নায় গিয়ে দেখ।”
“দেখতে হবেনা।”
“এমন করছিস কেনো হিম?আমি তো তিনমাস পরেই এসে পরবো।”
“আমি জানি।”
“জানিস হিম দুর্জয় নিসন্দেহ একটা বুদ্ধিমান ছেলে ছিলো।ও জানতো কখন কোথায় কী করলে সঠিক হবে।তাইতো ওর লক্ষ টাকার ইনভেস্ট বর্তমানে কোটি টাকায় রুপান্তরিত হয়েছে।
“তুমি ভারতে গিয়ে কীভাবে থাকবে?”
“আমি কী একা যাচ্ছি রে পাগলী?অয়েত্রীও তো আমার সাথে যাবে।”
“তুমি নিজের খেয়াল রাখবে কিন্তু।”
“রাখবো।জানিস সেদিন আহাদ আমাকে বলেছিলো যে আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নেই।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি যদি এখন ভারত যাই এবং ঠিকভাবে কাজটা শেষ করতে পারি। তাহলে কতো টাকা যে ইনকাম করতে পারবো তার হিসাব নেই।”
“টাকা পিছনে বেশী মজে যেয়ো না মৃদ।”
“আমি যাবো না।”
হুট করে মৃদুল হিমাদ্রির পায়ের কাছে বসে পরলো।ওর হাতদুটো নিজের হাতে গুঁজে নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ হিমাদ্রির দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো।
“হিম আমি জানি আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি কষ্টও কম পায়নি।আমি এখন শান্তি পেতে চাই। আমার সন্তানকে নিয়ে ঠিকভাবে বাঁচতে চাই। আর তার জন্য আমার তোকে চাই।আমি তোকে সত্যিকারের হিমাদ্রির মা বানাতে চাই।আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চাই।”
কথাগুলো বলার সময় মৃদুলের চোখগুলো অশ্রু দিয়ে চকচক করে উঠলো।মৃদুলের চোখের দিকে তাঁকিয়ে হিমাদ্রি আর না করতে পারলো না মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।হিমাদ্রির সস্মতি পেয়ে মৃদুল পুরো উদ্যমে ব্যাগ গুছাতে লাগলো।
“বেশী না হিম।আর মাত্র তিনমাস।একবার আমাকে ইন্ডিয়া থেকে ফেরত আসতে দে তারপর পার্মানেন্টলি আমি তোকে নিজের করে নিবো।”
হিমাদ্রি কোন জবাব দিলো না।তখন হুট করে তার পাশে ফোন ভাইভ্রেট করে উঠলো।ফোনে একটা ম্যাসেজ এসেছে।ম্যাসেজটা এরকম।
“You are selected for tha next level of scholarship exam.We will inform you about the second level,, Very soon. ”
চলবে,,,