#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ২০
লিখাঃসামিয়া খান
হিমাদ্রি একটা গ্রোসারী শপে কাজ করে।স্কলারশিপে এইডের পরিমাণটা ভালো কিন্তু তাও শুধু শুধু বসে থাকা আমেরিকার মানুষদের মধ্যে পরেনা।মানুষের উচিত সে যখন যে পরিবেশে আছে সে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া।বর্তমানে হিমাদ্রি ক্যালিফোর্নিয়ার শহরে বসবাস করে।তাই সে শহরের মানুষদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ট্রাই করছে।
বাহিরে তুষারপাতের পরিমাণটা আজকে অন্যান্য দিনের থেকে বেশী।কাজ শেষে গায়ে ব্লেজার জরিয়ে শপ থেকে বেরিয়ে আসলো হিমাদ্রি।ছাতা আনতে ভুলে গিয়েছে সে।হিমাদ্রী যে ডরমেটরীতে থাকে সেখানে মেট্রোরেল দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।মাঝেমধ্যে উবারেও যাওয়া আসা হয় কিন্তু তাতে খরচ একটু বেশীই হয়।
রাস্তারধার দিয়ে বরফ মাদুড়ের মতো বিছানো রয়েছে।সেখান দিয়ে পা টিপে টিপে কদম ফেলছে হিমাদ্রি।বরফটা বেশ পিচ্ছিল।হুট করে হিমাদ্রি বরফের স্লিপ কেঁটে পরে যাচ্ছিলো কিন্তু একটা শক্ত বলিষ্ঠ হাত তাকে আগেই ধরে নেয়।হিমাদ্রি মুখ তুলে সামলে তাঁকিয়ে দেখে এক জোড়া ধূসর চোখ তার দিকে তাঁকিয়ে আছে।এই চোখগুলোকে চিনে হিমাদ্রি।
“থ্যাংকস প্রফেসর। ”
মৃদু হেঁসে ভৌমিক জবাব দিলো,
“ইউ ওকে মিস.হিমাদ্রি?”
” ইয়াহ আই এম ফাইন।”
“আই থিংক দিস ইজ নট ক্লাস রুম।সো উই ক্যান টক ইন বাংলা।”
“ইয়েস প্রফেসর।”
“লেটস ওয়াক টুগেদার।”
“আফটার ইউ।”
ভৌমিক হাঁটা শুরু করলে হিমাদ্রিও তার পিছন পিছন হাঁটা শুরু করলো।আজকে রাস্তায় গাড়ীর পরিমাণ কম।হয়তো ঠান্ডায় কেও বের হয়নি।
“তো মিস.হিমাদ্রি আপনার স্টাডী কেমন চলছে?”
“চলছে কোনরকম।”
“পিএইচডির কোর্স শুরু হতে চলেছে কয়দিন পর। মাইন্ডের প্রিপারেশন কেমন? ”
“আই এম এফ্রেড।”
“এফ্রেড!আমি এটা আাশা করিনি।”
“সব মানুষই ভয় পায় প্রফেসর।কেও প্রকাশ করে আর কেও তা করেন।”
“ইউ আর রাইট।ডরমিটরি পর্যন্ত কী আমি লিফট দিতে পারি?”
“ইট উইল বি মাই প্লেজার।”
“সামনে আমার গাড়ী পার্ক করা আছে।ফলো মি।”
,
,
,
বাড়ী তে ঢুকতে না ঢুকতেই নরম দুটো হাঁত জাপটে ধরলো মৃদুলকে।মৃদুল একটু নিচে ঝুঁকে কোলে তুলে নিলো মাদিহাকে।গালে একটা চুমো দিয়ে বুকে জরিয়ে নিলো।
“আমার মা টা কী করছিলো।”
ভাঙা ভাঙা গলায় মাদিহা জবাব দিলো,
“আমি খেলা করছিলাম।আব্বু মামা কখন আসবে?মার সাথে কথা বলবো।”
“এইতো এসে পরবে।চলো সে পর্যন্ত আমরা ডোরেমন দেখি।”
মাদিহাকে কোলে নিয়েই মৃদুল ড্রয়িং রুমের টিভিটা অন করে দিলো।আগের বাড়ীটা ছেড়ে দিয়েছে ওরা।এখন প্রায় রাজপ্রাসাদ এর মতো একটা বাড়ীতে থাকে।আর এই রাজপ্রাসাদের সাথে মৃদুলকে যেনো বড্ড মানায়।শারীরিক গঠন থেকে শুরু করে পোশাক আশাক সব ঠিক একটা রাজার মতো।আর মাদিহাকে সবসময় টিপটপ করে পুতুলের মতো সাজিয়ে রাখে।একদম পরিপূর্ণ লাগে বাহিরে থেকে।কিন্তু ভেতরে উঁকি দিলে দেখা যায় ভেতর শুধু ধু ধু করছে।
“মৃদ পুডিং খাবি।তোর জন্য বানিয়েছি।আনবো?”
অয়েত্রীর কথায় কোন জবাব দিলো না মৃদ।চুপচাপ মাদিহাকে নিয়ে টিভির স্ক্রিনে তাঁকিয়ে রইলো।মৃদুলের থেকে কোন জবাব না পেয়ে অয়েত্রী আবার জিজ্ঞেস করলো।এবার মৃদুল মুখ খুললো।
“আমি পুডিং খাইনা অয়েত্রী।”
“কিন্তু তো তোর ফেভারেট,,
” ছিলো আগে।এখন আর নেই।”
অয়েত্রী কথাটা শুনে কিছু বললো না।চুপ করে থাকলো।একটু পরে মিনমিনিয়ে বলা শুরু করলো,,
“আমার কী দোষ মৃদ?আমার সাথে কেনো এমন করিস?”
“তোর আমার লাইফে ইন্টারফিয়ার করাটা দোষ।যা দুইবছর আগেও ছিলো।এখনো আছে।”
কথাটা বলে মৃদুল মাদিহাকে সোফায় বসিয়ে উঠে গেলো।কলার থেকে টাইটা ঢিলা করতে করতে সিড়ি দিয়ে উঠে যাচ্ছিলো।কিন্তু মায়ের আওয়াজে থেমে গেলো।
“কিছু বলবে মা?”
“অয়েত্রীর সাথে সবসময় এমন না করলে চলে না তোর?”
“ও কে মা? আমার কিছুনা।আর আমি পুডিং খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।”
“অয়েত্রী যদি কেও না হয় তোর।তাহলে হিম কে?”
প্রশ্নটা শুনে মায়ের দিকে শান্ত চোখে তাঁকালো মৃদুল।
“হিম আমার মাদিহার মা।”
“মুখে বললে হয় না।মাদিহার মা হওয়ার যোগ্য অয়েত্রীর আছে।হিমের না।”
“হিমের কী আছে না আছে তা আমি জানিনা।আমি শুধু জানি হিম আমার মেয়ের মা।”
“হ্যাঁ।ওই সব তোর এখন।যে মেয়েটা আমাকে পুড়াতে চেয়েছিলো তাকে মাদিহার মা বলিস।”
“মা জীবনটা সিরিয়াল না।সামান্য গরম পুডিং এ কেও পুড়ে মরেনা।আর সেদিন পুড়েছিলো হিম।আর আমি যতোটুকু জানি যে পুড়ায় সে পুড়েনা। যাকে পুড়ানো হয় সে পুড়ে।”
এমন সময় একটা গাড়ীর হর্ন শুনা গেলো।মৃদুল জানে আহনাফ এসেছে।এখন সে আহনাফের সামনে পরতে চায়না।ওর চোখে চোখ তুলে তাঁকাতে বড্ড লজ্জা হয়।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।মাদিহা মামা বলে চিকিৎকার করে দৌড়ে আহনাফের কোলে উঠলো।
“মামা মার সাথে কথা বলবো।”
“মার সাথে কথা বলবে তাইতো এসেছি আমি পুচকি।”
মৃদুল উপর থেকে আহনাফ আর মাদিহার কথা শুনছিলো।একটু পরে সেই বহু প্রতিক্ষিত সুর শুনতে পেলো মৃদুল।যা সারাদিন ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুনকে মূহুর্তে নিভিয়ে দিলো।
,
,
,
“মিস.হিমাদ্রি আপনার মেয়েটাতো বড্ড কথা বলতে পারে।”
ভৌমিকের কথায় হেঁসে দিলো হিমাদ্রি।
“হ্যাঁ বলতে পারে ঠিক ওর বাবার মতো।”
“ওর বাবার সাথে আপনার একবার কথা বলা উচিত।”
“হোয়েন ইউ আর ড্রাইভিং ইউ সুড নট টক সো মাচ।”
“ক্লেভার ওমেন।”
“হুম।আপনি আমাকে হিম বলে ডাকতে পারেন।সবাই তা বলে ডাকে।”
“বাট আই লাইক হিমাদ্রি।”
“দুর্জয় আমাকে হিমাদ্রি বলে ডাকতো।”
“জানেন মিস.হিমাদ্রি যখুনি আমি দুর্জয়ের কথা চিন্তা করি তখন শুধু একটা কথাই মাথায় আসে,, তার ফাইট করা উচিত ছিলো।”
“ফাইট করা বলা সহজ কিন্তু করাটা খুব কঠিন।”
“হয়তো।বাই দ্যা ওয়ে মি.মৃদুলের সাথে কথা বলা উচিত আপনার।একটা কথা মনে রাখবেন সময় গেলে সাধন হবে না।তাই আপনার উচিত তার সাথে কথা বলা।”
“সে আমাকে বাড়ী থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলো।আমি না।”
“আপনার বুঝার ভুলও তো হতে পারে। ”
“বুঝার ভুল হলে এতোদিনে কী একবারোও খবর নিতে পারিনি?আবার নিবেই বা কেনো আমার জন্য কী তার সময় হবে।”
“আমরা এসে গিয়েছি মিস.হিমাদ্রি।”
গাড়ী থেকে নামে দাড়ালো হিমাদ্রি।
“থ্যাংক ইউ সো মাচ প্রফেসর।”
“ইটস মাই প্লেজার লেডী।টেক কেয়ার। ”
“ইউ অলসো।”
ভৌমিক গাড়ী স্টার্ট করে চলে গেলো।সেদিকে তাঁকিয়ে হিমাদ্রি একটা নিশ্বাস নিলো।আহনাফ বলেছিলো প্রফেসর ভৌমিক মেয়েদের দেখতে পারেনা।কিন্তু হিমাদ্রি দেখেছে সে যথেষ্ট রেসপেক্ট করে মেয়েদের।
ডরমেটরীর দিকে এগিয়ে চলছে হিমাদ্রী।বরফ পরছে। মানুষের অনুভূতির উপর আবহাওয়া প্রভাব পরে।তাইতো এই শীতে মৃদুলকে আরো বেশী মনে পরে হিমাদ্রির।হয়তো মৃদুলের একটু উষ্ণ ছোঁয়ার জন্য মনটা বড্ড ব্যাকুল হয়ে আছে তার।
চলবে,,