অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ২৪

0
1968

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ২৪
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

সুখ ও স্বস্তির মধ্যে সম্পর্ক কী??দুটোই মনের ব্যাপার যা অন্যকে বোঝানোর ক্ষমতা নেই।তা শুধু অনুভব করা যায়।কেউ দিয়ে সুখ পায় আর কেউ পেয়ে।আত্নত্যাগ মানুষকে মহীয়ান করে।অন্যের সুখে নিজেকে উৎসর্গ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়।

“ত্যাগের মাঝে মহীয়ান মানুষের সম্মান
মানুষ চলে যায় রেখে যায় তার কীর্তমান।”

“আমার পক্ষে এইসব সুযোগ নেওয়া সম্ভব নয়,স্যার।”

“কেনো নয়??

“আমি মাত্রই তো কয়েকমাস হলো জয়েন করলাম।আর এ কয়েকদিনে আমি এমন কিছুই করি নি যাতে করে আমার প্রমোশন হতে পারে।”

“এইটা একদম ই আমাদর অফিশিয়াল বিষয়।একজন বাধ্য ইমপ্লয়ী হিসেবে তোমাকে মেনে নেওয়া উচিত।”

আজরাহান কে তার অফিস থেকে প্রমোশন দেওয়া হয় সাথে পার্সোনাল ইউজের জন্য গাড়ি উইথ ড্রাইভার।আজরাহান সবসময় আত্ননির্ভরশীল মানুষ।অন্যের প্রতিপত্তির উপর তার কোনো ঈর্ষা নেই।সেইমতে কোনো ক্ষেত্রে সে তোষামোদিও পছন্দ করে না।

“কিন্তু স্যার,এইসব কিছু যদি অফিস থেকে আমার জন্য প্রোভাইড করা হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য উপযুক্ত কারন প্রয়োজন।আর আমার জানামতে আমি এমন কিছুই করিনি।”

“উপর মহলের লোক তাদের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা নিশ্চয় আপনি জানেন??

“হ্যাঁ।কিন্তু আমার পক্ষে এইসব সুবিধা নেওয়া সম্ভব নয়।”

“তাহলে আপনাকে এই জব ছাড়তে হবে।”

“মানে??

“এক কাজ করুন।আপনি বরং এম ডি স্যার এর সাথে কথা বলুন।তিনি তার ক্যাবিনেই আছে।”

আজরাহান জি এম এর রুম থেকে বের হয়।ও কিছুতেই বুঝতে পারছে এইসব এর মানে কি।

“তা বলুন,কি জানতে চান আপনি ইয়াং ম্যান।”

“স্যার, আমি এই কোম্পানি তে একদম ই নতুন।সে হিসেবে এই ধরনের সার্ভিস আমাকে প্রোভাইড করা একদম ই বেমানান।”

“ফার্স্ট টাইম কাউকে তার উন্নতি দেখে এতোটা চিন্তিত হতে দেখলাম।”

আজরাহান হালকা করে হাসে।

“নো স্যার।উন্নতি সবাই চায়।কিন্তু তা একান্ত নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে হলে তা গৌরবের হয়।অন্যের সাহায্যে তো তিল কেও তাল করতে পারি।কিন্তু নিজের যোগ্যতায় তাল নয় তিল খাওয়াই যথেষ্ট।”

“বাহ!!চমৎকার বলেছো।আই লাইক ইট।
এখন বুঝতে পারছো তো কেনো তোমাকে সার্ভিস প্রোভাইড করা হয়েছে।ইউ আর আ জেমস।উই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লুজ ইউ,মাই বয়।”

“বাট স্যার,,,

“এই নিয়ে আর কথা হবে।কাল থেকে তুমি নিজ গাড়িতেই আসবে নো বাইক।গট ইট??

আজরাহান আর কিছু বলে না।লোকটার ব্যবহার এ আপনপান আছে।কিন্তু কেনো যেনো সংকোচ ওকে ঘিড়ে ধরেছে।শুধুই কি তার উপর খুশি হয়ে এতো কিছু করা হলো????
,
,
,
ডিভাইনের উপর বসে ভিডিও প্লেয়ার এ ক্রাইম সিরিজ দেখছে মারশিয়াদ।অনেকটা শখ বলা হলেও এইটা ওর নেশা।

ইনশিরাহ এর পায়ের মৃদু আওয়াজ এ মারশিয়াদ ঘাড় ঘুরায়।ওর পাশেই নীরব হয়ে বসে।

“এখন কি অবস্থা তোমার??

“ভালো।”

“ব্যথা কমেছে??

“শরীরের ব্যথা সেতো সময়ের অপেক্ষা।”

মারশিয়াদ এর নিরুত্তাপ কন্ঠ জানান দেয় ওর মনের নিশ্চল অবস্থা।

“তোমার দাদু কবে আসবে??

“কেনো??

“বিয়ের জন্য।পাপা তোমাকে খুব পছন্দ করেছে।”

“আমার ছেলেদের প্রতি ইন্টারেস্ট নেই।”

“ছিঃ,এইসব কি বলছো??
আমি আমার কথা বলেছি।”

“তুমি কি করে ভাবলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো??

“বিকজ আই লাভ ইউ।”

“বাট আই ডোন্ট লাভ ইউ।”

“মারশিয়াদ,,,

“তুমি এখন আসতে পারো।”

“কি আছে ওই মেয়ের মধ্যে? কেনো এতো পাগল তুমি ওর জন্য??

“শি ইজ মাই লাভ,মাই লাইফ।”

“ওর বিয়ে হয়েছে মারশিয়াদ।ও কখনো তোমার হবে না।”

“জানি।কিন্তু তার জায়গা আমি কাউকে দিতে পারবো না।”

“আমি তোমাকে ভালোবাসি মারশিয়াদ।একবার আমাক সুযোগ দাও।আমি তোমার সব কষ্ট দুর করে দিবো।”

ইনশিরাহ তার চিরাচরিত কাজের মতো মারশিয়াদ এর হৃৎপিন্ডের উপর হাত রাখে।মারশিয়াদ বাম হাত দিয়ে ওর হাত সরিয়ে ডান হাত দিয়ে ডিভাইনের পাশের সাইড টেবিলের উপরের রাখা সফ্ট ড্রিংসের বোতল টা ভেঙে ইনশিরাহ এর গলায় ধরে।

“তোমাকে না বলেছি,,আমার এখানে হাত দিবে না।”

দাঁতের সাথে দাঁত নিষ্পেষণ করে আবার বলে—

“এখানে শুধু আমার কাজলচোখীর অধিকার।আর কারো জায়গা নেই।কারো না।”

ইনশিরাহ এর চোখের কোনে পানি জমেছে।দু ফোটা গড়িয়েও পড়লো।

“মারশিয়াদ,আমার লেগে যাবে।”

মারশিয়াদ নিজেকে শান্ত করে।হাতের কাচের টুকরা টা ছুড়ে ফেলে দেয়।সামনেই সেন্টার টেবিলে এ লাথি মেরে বলে—

“গেট আউট।গেট আউট ফ্রম মাই হাউজ।আর কখনো আসবে না এখানে।
আমার কাউকে চাই না।কাউকে না।”
,
,
,
আকাশের বিশলতা আমাদের শিখায় কি করে নিজেকে উজাড় করে ভালোবাসতে হয়।ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপ করা যায় না।গভীর সমুদ্রের তলাদেশ খুজে পাওয়া যেমন দুঃসাধ্য তেমনই ভালোবাসার গভীরতা নির্নয় অবোধ্য।

“ভালোবাসা নলকূপের মতো।নলকূপের যত গভীরে যাওয়া যায় ততই বিশুদ্ধ জলপ্রান মিলে।ঠিক তেমনই ভালোবাসার যত গভীরে যাওয়া যায় তার বিশুদ্ধতা তত বেশি হয়।”

ছাদের রেলিং এর পাশে দাড়িয়ে আজরাহান তাকিয়ে আছে নীল আকাশের পানে।প্রহর ধীর পায়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে।

“কি করছেন রাহান ভাইয়া??

“ডাংগুলি খেলছি।”

আজরাহান ওকে সামনে এনে দাড় করায়।প্রহর ভ্রু কুচকে বলে—

“কোথায় ডাংগুলি??

“তোর মাথায়।
খেয়েছিস??

“হুম।”

“তাহলে গিয়ে শুয়ে পড়।এখানে এলি কেনো??

প্রহর কিছু না বলে আজরাহান এর পকেটে হাত দেয়।ওর ওয়ালেট বের করে সেখান থেকে দু হাজার টাকা নিয়ে নেয়।

“টাকা দিয়ে কি করবি??
আর তোর সাহস কি করে হলো আমার পকেটে হাত দেওয়ার??

“এখানে সাহসের কি আছে??
ছোট আব্বু কি বলেছ মনে নেই।আমার সব দায়িত্ব আপনার।”

“কি করবি টাকা দিয়ে??

“বলবো না।”

“তাহলে দে আমার টাকা।”

“না,না,না।”
বলেই দৌড়ে নিচে চলে যায়।

“পাগলি একটা।”

আজরাহান আবারও আকাশ দেখায় মগ্ন হয়।আজকাল আকাশ ভীষন পছন্দ ওর।কেনো যেনো মনে হয় একবার হারিয়ে যাওয়া যায় ওই নীলিমায়।
ধোয়া উড়ানো এক মগ কফি সামনে ধরে নুরাইসা।
আজরাহান তা হাতে নেয়।দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ায় দুজন।

“কফিটা কেমন হয়েছে??

“ভালো।”

“মন খারাপ??

“না।”

“তা তোমার প্রহরিনী ওভাবে দৌড়ালো কেনো??

আজরাহান হালকা হাসে।

“টাকা নিয়েছে তাই।”

“কেনো??

“জানি না।”

“আপুর কথা কিছু ভেবেছো??
সত্যিই কি ডিবোর্স হবে??

“নাহ।আমি অরিধার সাথে কথা বলবো।”

“ও কি মানবে??

“জানি না।
মেয়েরা মায়ের জাত।মানতেও পারে।আরেকবার চেষ্টা করে দেখি।”

“যদি না মানে??

“তাহলে আর কি।বেনামি সম্পর্কের কোনো মূল্য নেই।তা শুধু দীর্ঘশ্বাস বাড়ায়।দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মানুষ বেশিদিন বাঁচতে পারে না।শরীর কে বাঁচিয়ে রাখলেও চিত্তের মৃত্যু ঘটায়।”

“আমার কথা ভাববে না??

“আমি তোমাকে আগেই বলেছি নুরাজান।ভুলে যাও সব।অতীত শুধু কষ্ট দেয় আমাদের।মায়া এক মিথ্যে ছায়া।তার মৃত্যুই আমাদের মুক্তি।”

“আমি তোমাকে ভুলতে পারবো না।”

“আমি প্রহর কে ছাড়া কাউকে নিয়ে কখনো ভাবি নি।”

“তাহলে কেনো এলে এতো কাছে আমার?আমার অস্তিত্ব কেনো তোমার স্পর্শে রাঙালে??

“তার সবটাই ভুল ছিলো।আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি।”

“কিন্তু তুমি ইচ্ছে করলে আমাকে আপন করে নিতে পারতে।”

“তুমি তো আমার পর নও।শুধু কি শরীরের সম্পর্ক ই সব??

“সেদিন যদি তুমি ঘুমিয়ে না পড়তে তাহলে আজ হয়তো তুমি আমাকে অস্বীকার করতে পারতে না।”

“সেটা আমার জীবনের মস্তবড় ভুল হতো।”

“কিন্তু আমার কী দোষ?আমি তো সবটা অনুভব করেছি।পারি নি এক মুহূর্তের জন্যও তোমার থেকে চোখ সরাতে।”

“এক জাগ্রত দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও সব।”

“ভালোবাসার স্পর্শ অবিশ্বাস্য সত্য।প্রহর তোমার এতো কাছে থেকেও কখনো তোমার ভালোবাসার স্পর্শ বুঝতে পারে না।আর আমি,তোমার দেওয়া সেই স্পর্শ গত সাত বছরেও ভুলতে পারি নি।তোমার উষ্ণ ছোঁয়া আমার হৃদয়ের সমস্ত শীতলতা কে হার মানিয়েছে।”

“শরীরের উর্ধ্বে ভালোবাসতে হয় নুরাজান।”

“আমি কখনো তোমাকে ভুলতে পারবো না আজরাহান।কখনো না।
আমার প্রথম অনুভুতি তুমি।তোমার স্পর্শেই আমার পূর্নতা।”

একরাশ যন্ত্রণা আর নেত্রভরা জল নিয়ে চলে যায় নুরাইসা।

এক নিস্তব্ধ দীর্ঘশ্বাস গ্রাস করে আজরাহান কে।

“আমি যে তোমাদের সবার কাছে ঋনী।কি করে শোধ করবো আমি তোমাদের ঋন।এতো ভালোবাসার প্রতিদান আমি কিভাবে দিবো????

আজরাহান আবার আকাশ দেখে।বিষন্নতার আকাশ।তারার লুকোচুরি।এক ফালি চাঁদ।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here