নীল অপরাজিতা পার্টঃ১

0
2954

“দোস্ত তুই বিয়ে করছিস কবে? দিন দিন বুড়া হয়ে যাচ্ছিস তো ”

“আমার বিয়ে নিয়ে তোকে আর ভাবতে হবে না। আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। তোর তো হইছে। আঙ্কেলকে বল বিয়ে দিতে। তাহলে নিজের বিয়ে নিজেই খেতে পারবি ”

” তুই চুপ থাক। আমি এখনো পিচ্চি। নিজের তো চুল দাঁড়ি পেকে যাচ্ছে তার খবর কি আছে?? ”

” ঐ আমার বয়স কত জানিস ? এখন মাত্র পঁচিশ চলতেছে। এখনেই চুল পাকতেছে কেনো তা জানি না। বাট দাঁড়ি তো আর পাকছেনা। তোর চোখে কি সমস্যা আছে?? ”

” অতকিছু জানি না। শানাজ আপুর বিয়ে শেষ করে তোর বিয়ে খাবো। দ্যাটস ফাইনাল। ”

” তো বিয়েটা নিজেই করে নে না। ফালতু বকবক না করে চুপচাপ থাক। একদম সিলেট এ নেমে কথা বলবি। ”

” আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে দোস্ত। একটু ব্যাবস্তা করে দে না। ”

” ওই তোর সমস্যাটা কি বলতো। এটা কি ট্রেন পাইছিস যে শোয়ার জায়গা পাবি?? এটা বাস। বাসের মধ্যে সিটেই ঘুমাতে হয়।”

অভি আর কথা না বলে মিষ্টির জন্য একটু জায়গা ছেঁড়ে দিলো। বেচারি ঘুমে ঢুলছে। আজ সারাটা দিন আমার ধকল গেলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে কোচিং তারপর ভার্সিটি দেন বাসায় এসে আবার ফ্রি ফায়ারের স্ট্রিমিং। উফ। আজকাল গেমে বেশী সময় দিচ্ছিনা। কোথায় কথা ছিলো আজ বিকাল থেকে স্ট্রিমিং করবো। তা আর হলো না। এখন সিলেট যাচ্ছি বিয়েতে এটেন্ড করতে। মিষ্টির মামাতো বোন শানাজের বিয়ে। আরে ভাই তুই মামা বাসা যা, খালা বাসা যা, যেখানে খুশি যা। বাট আমাকে সেখানে টানিস কেন?? ১ ঘন্টা শান্তিতে স্ট্রিমিং করতেও দিলো না। ধুর
বিকালে….

ফোন বাজছে বারবার। স্ট্রিমিংয়ে থাকাকালীন ফোন পিক করতে অসুবিধা হয়। তবুও ফোন ইগনোর করা উচিত না। বাবা মা বর্তমানে গ্রামের বাসায়, যদি কোনো বিপদ আপদ হয়! তাতে আবার দাদি অসুস্থ। অভি স্ট্রিমিং রেখে ফোন চেক করলো। মিষ্টির দুইটা মিস কল। বলতে বলতে আবার ফোন করলো মিষ্টি। অভি ফোন পিক করবে না, করবে না করেও পিক করলো।

” হ্যালো দোস্ত তুই কই।?? ”

” আমি তোর পায়ের নিচে। আর আমি কোথায় এখন থাকি জানিস না?? ”

” আচ্ছা থাক আমি আসছি। ”

” আরে আরে আসছি মানে কি? আমি স্ট্রিমিং এ আছি কথা বলতে পারবো না তোর সাথে। ”

” কথা বলিস কি না দেখা যাবে। ”

মিষ্টি ফোন কেটে দিলো। এই বাসাটা অভি আর মিষ্টির বাবার। দুজন সেই ছোটবেলার ফ্রেন্ড। আজ এই বয়সেও বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে। দোতলা এই বাসাটার উপরের ফ্লাটে থাকে মিষ্টিরা। আর নিচের ফ্লাটে অভি। এখন অবশ্য অভির বাবা মা নেই এখানে। তারা চলে গেছে দাদিকে দেখতে। তিনি ভীষণ অসুস্থ। তাই এখন একাই থাকতে হচ্ছে এখানে। একা থাকতে অবশ্য সমস্যা হয় না। বরং শান্তিতে স্ট্রিমিং চালিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু মিষ্টির জন্য সেটা সম্ভব হয়না। যখনি আমাকে লাইভে দেখবে তখনি ফোন দিবে। ফোন অফ রাখলে সোজা নিচের ফ্লাটে চলে আসবে। এভাবে কি বাঁচা যায়। কতবার ওরে ব্লক করলাম অথচ দিব্যি ফেক আইডি খুলে লাইভে বাঁশ দিবে। দরজায় শব্দ হচ্ছে, নিশ্চই মিষ্টি এসেছে। এখন ওকে ঢুতে দেয়া যাবে না। ঢুতে দিলেই সব শেষ করবে।

” অভি দরজা খোল। কথা আছে তোর সাথে “।

অভি চুপ করে থাকলো। এখন কথা না বলে গেম চালিয়ে যাওয়া বেটার। মাইক অবশ্য অফ আছে তাই ভিউয়ার আমার এখানকার কোনো শব্দ পাবে না।

” কিরে খুলবি না তাইনা? আচ্ছা থাক আমি বাবাকে বলছি অভি সুইসাইড করেছে। তখন তোর গেমে বারোটা বাজবে নিশ্চই। তাই ভালোই ভালোই বলছি দরজা খোল তাহলে বেঁচে যাবি। আর তোর গেমেও ডিস্টার্ব করবো না। ”

অভির এই মহুর্তে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। রাগটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার।
গেমটা শেষ করে চুপচাপ স্ট্রিমিং অফ করলো। আস্তে আস্তে উঠে দরজা খুললো।


” কি বলবি বল। ”

মিষ্টির মুখে রাজ্য জয়ের হাসি ফুটলো। পরক্ষণেই মুখটা আবার ক্লান্ত ভঙ্গি করে বললো —

” ভীতরে ঢুকে বলতেছি। সরে দাড়া। ”

মিষ্টি রুমের ভীতর ঢুকে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। অভি চুপচাপ রাগ কন্ট্রোল করছে। রাগ করে কি হবে?? এই মেয়ে উল্টা আমাকে বাঁশ দিবে। অভি দরজাটা সামান্য ভিজিয়ে দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো।

” কি রে কিছু বলছিস না যে?? ”

” দুইটা খুশির খবর আনলাম তোর জন্য। বল কোনটা আগে শুনতে চাস?? ”

মহুর্তে অভির রাগটা কমতে শুরু করলো। তবে খারাপ খবরও আছে শুনে টেনশন হচ্ছে। এই মেয়ে যখন বলেছে খারাপ খবর আছে। তারমানে খারাপ খবর ভালো হবার চান্স নেই।

“ভালো খবরটাই আগে বল। ”

মিষ্টি মুখের হাসিটা প্রসারিত করলো। মিষ্টিকে হাসলে অনেক সুন্দর দেখায়। তবে কখনো বলা হয়নি, এ জীবনে কখনো বলা হবে বলেও মনে হয় না। যদিও এমনিতেও যথেষ্ট সুন্দর। আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি বলে হয়তো এত ভালো লাগে না বাট যদি খারাপই হতো তাহলে এত প্রোপোজাল আসতো না। রাস্তায় ওর জন্য ছেলেরা একপ্রকার লাইন লাগায় থাকে।

” শানাজ আপুর বিয়ে শনিবার। ইয়েএএ! কতদিনপর বিয়ে খাবো বলতো। ”

অভি হাসলো। আসলেই খবরটা ভালো। মনটা একদম ভালো হয়ে গেলো । তবে এখন আবার খারাপ খবর শুনতে হবে। ধুর!!

” আর খারাপ খবরটা হলো আমি আজকেই যা…”

কথার মাঝপথেই মিষ্টিকে থামিয়ে দিয়ে হালকা চিল্লিয়ে বললো…

” ওয়াও তাই নাকি?? আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ বাঁচাইছে। কখন যাবি?? এটা আবার খারাপ খবর নাকি?? ”

” কথা শেষ করতে দিবি তো। শুধু আমি যাচ্ছি না। সাথে তুইও যাচ্ছিস। সেটা আজকে রাতেই ”

অভির হাসি হাসি মুখটা মহুর্তেই কালো হয়ে গেলো। এটা খারাপ খবর। এই বছরের সব থেকে বড় খারাপ খবর। আমাকে যেতে হবে সিলেট?? তাও আবার পাগলি মেয়েটাকে নিয়ে??
এই মেয়ে তো আমার লাইফ এই কদিনেই হেল করে দিবে।
মিষ্টি ঠোটে হাসি রেখে বললো-

” বাবা তোকে আমার সাথে যেতে বলেছে। ”

” আঙ্কেল বললেই হবে নাকি?? ”

– ” ওকে। আমি বাবাকে গিয়ে বলছি, অভি বলেছে ” আমি তোর বাপের চাকর না যে তিনি যা বলবেন আমাকে তাই করতে হবে। আমার একটা স্বাধীনতা আছে। ” কি এই ঔষধে কাজ হবে তো?? ”

অভি চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো। মিষ্টি যেহেতু ব্লাকমেইল করছে তাই ওর কথাই মানা শ্রেও। এই মেয়ে পারে না এমন কোনো কাজ নেই। এই মহুর্তে মেয়েটাকে তুলে ড্রেনে চুবাতে ইচ্ছা করছে। তা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে বললো –

” কোনদিন ফিরবো?? ”

” আমি কি জানি?? এখনো যাইলাম না। আর তুই ফেরার কথা বলছিস?? ”

” ফেরার কথা বলছি কারণ আমার গেমিং আছে। ভার্সিটি আছে। ”

” ওরে আমার পড়ুয়া রে। সবকিছু গোছগাছ কর। রাতে রওনা দেবো। ”

” তোকে এসব ভাবতে হবে না। বিদেয় হ রুম থেকে। ”

” যাচ্ছি যাচ্ছি। এত রাগ দেখানোর কিছু নাই!।

মিষ্টি বেড়িয়ে গেলো। অভির মনে পড়লো নিশাত নামের মেয়েটার সামনে পরীক্ষা। ও ভীষণ কাঁচা। এই লকডাউনে আরো অবনতি হয়েছে। এই অযুহাতে যদি সিলেট যাওয়া থেকে বেঁচে যেতে পারি তাহলে খারাপ কি?? ”

অভি সন্ধ্যা ৭ টার দিকে রেডি হলো টিউশনিতে যাবে বলে। দরজাটা লক করে নিচে নামলো। বাইকটা বের কর স্টার্ট করবে এমন সময় মাহিন কোথা থেকে দৌড়ে এসে বাইকের সামনে দাড়ালো। মাহিন হলো মিষ্টির ছোট ভাই। তবে সে মিষ্টির মতো এতটা অভদ্র হয়নি। এই ছেলে অভি বলতে পাগল। যদিও তার কারণ আছে..

” ভাইয়া কোথায় যাচ্ছো?? এই সময় না তোমার স্ট্রিমিং করার কথা। ”

” টিউশনিতে যাচ্ছি ভাইরে। আজকাল গেমে টাইম দিতে পারছি না। ”

” ধুর! আমি কোথায় ভাবলাম তোমাট কাছ থেকে হেটশটের টেকনিকটা শিখে নেবো। ”

” হেটশটের কোনো টেকনিক নাই রে। তুই খেল পাবি। বাট এই সময় না তোর পড়ার টাইম। মাস্টার আসেনি?? ”

মাহিন হেসে হেসে উত্তর দিলো…

” না ভাইয়া। ”

এমন সময় মাহবুব সাহেব উপর তলা থেকে নিচে কথা বলার আওয়াজ পাচ্ছিলেন। তিনি বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে আসলেন।

” অভি নাকি বাবা?? ”

অভি হালকা হেসে বললো..

” হ্যা আঙ্কেল। আপনার শরীরটা ভালো আছে??

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে বাবা। তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো বাবা। একটু উপরে আসো তো।!”

অভি বুঝে গেলো তাকে ঠিক কি বলা হবে। সে বাইক থেকে নেমে উপরে উঠে আসলো। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ঘরের ভীতর পা বাড়ালো।

” আঙ্কেল কিছু বলবেন?? ”

” হ্যা বাবা। মিষ্টি তোমাকে বলেছে নিশ্চই যে তোমাকে সিলেট যেতে হবে। আমি তোমার বাবা মায়ের সাথেও কথা বলেছি। তারা রাজি হয়েছেন। মাহিনকেও সঙ্গে নিও। ”

” আচ্ছা আঙ্কেল ঠিক আছে। আমি যাবো। ”

মাহবুব সাহেব অত্যন্ত সুপুরুষ ছিলেন তা বোঝা যায়। কন্ঠে তার অসম্ভব দাম্ভিকতা। বয়স হয়ে গেলেও বোঝা যায় একসময় তিনি অনেক সুন্দর ছিলেন। মারাত্নক ধরনের সুন্দর।

” দেখো বাবা। আমার অফিসে অনেক চাপ। তোমার বাবা গ্রামে চলে যাওয়ায় আরো ঝামেলায় ফেসেছি। অফিসে একায় কাজ সামলাতে হয়। এই অবস্থায় বিয়েতে এটেন্ড করা পসিবল না। আর আশেপাশে বিশ্বস্ত কেউ নাই যাকে ভরসা করা যায়। আর মাহিন তো থাকবেই, তোমাকে মিষ্টি বেশী জ্বালাতন করবে না। বাসের টিকেট কেটে নিয়েছি। আজ রাত ১০ টায় তোমাদের বাস। ”

” আচ্ছা আঙ্কেল সমস্যা নেই। আমি টিউশনিটা পড়িয়ে সব গুছিয়ে নেবো। ”

“আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যেও। ”

সেখান থেকে সালাম দিয়ে বেড়িয়ে আসলো অভি। বড় মানুষের মুখের উপর না বলতে পারিনা। হয়তো খারাপ ভাববে আমায়।

——-
হঠাৎ বাসের ঝাঁকুনিতে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা ভাঙলো অভির। চোখ খুলে যা দেখলো তাতে অবাকের চুড়ান্ত সীমায় পৌছে গেলো অভি….
চলবে??
#নীল_অপরাজিতা
#পার্টঃ১
#Rifat_Amin
( আসসালামু আলাইকুম 🖤 গল্পের জগতে এই পর্বেই অভিষেক হলো আমার। যদি আপনাদের সামান্য ভালো লেগেও থাকে তাহলে আমাকে সাপোর্ট করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here