অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:32
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
.
.
🍁
.
কি হলো?আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়েই থাকবেন?নাকি আমায় তুলবেন?ব্যাথা পেয়েছি তো কোলে নেন না…(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
.
তুমি এখানে কি করছো রিয়া?(অবাক হয়ে)
.
নাগিন ডান্স করছি।। দেখছেন না…মাটিতে বসে কাঁদছি….(মুখ গোমড়া করে)
.
ফাহিম এগিয়ে যেতেই দু’হাত উঁচিয়ে দিলো রিয়া।।মিষ্টি হেসে বলে উঠলো সে-” কোলে” ফাহিম নিরুপায় হয়ে কোলে তুলে নিলো তাকে।তারপর ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো-
.
এই রুমে এসেছো কেন?তাও আবার জানালা দিয়ে।কোনো বিয়ের কনেকে এমন করতে দেখেছো?সবসময় পাগলামো? বিয়ের দিন পায়ে ব্যাথা পেয়ে গেলে তো?
.
কথাটা বলে রিয়াকে বিছানায় বসাতে গেলেই রিয়া আরো শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরলো…ফাহিম অবাক হয়ে ওর দিকে তাকে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো…”কি সমস্যা?” রিয়া অমায়িক হাসি দিয়ে বলে উঠলো- “নামবো না।”
.
নামবে না মানে কি?
.
নামবো না মানে নামবো না।।আমার একটুও নামতে ইচ্ছে করছে না।এভাবেই থাকবো….একদম নামাবেন না বলে দিচ্ছি।
.
রিয়ার কথায় ফাহিমের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম… এই মেয়ে বলে কি?নামবে না?ফাহিম কি ওকে এভাবে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি?অদ্ভুত!!
.
নামবে না বললেই হলো?আরে আজ আমার বিয়ে রে বাবা!!
.
তো?বিয়ে তো আমার সাথেই নাকি?এই?শুনুন না? চলুন না পালিয়ে যাই….আমাদের বিয়ে তো হয়েই গেছে…আবার নতুন করে বিয়ে করার মানে কি?আমার একদম বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে না।তার থেকে চলুন পালিয়ে যাই….আপনি আমায় কোলে নিয়ে দৌঁড়াচ্ছেন…ওয়াও…কি সিন!! চলুন না পালায়…প্লিজ প্লিজ!!
.
রিয়ার কথায় বিষম খেলো ফাহিম।উফফ…এই মেয়ের মাথায় বুদ্ধি বলতে কি কিছু নেই??কি সব অদ্ভুত কথা বলে অলওয়েজ।। নিজেকে কোনো রকম সামলে নিয়ে রিয়াকে জোড় করেই বিছানায় বসালো সে।।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হতে হতে বলে উঠলো-
.
ওকে রিয়া বেবি…আমরা পালাবো বাট আজ নয়…
.
তাহলে??(অবাক হয়ে)
.
আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকিতে বর বউ সেজে পালাবো…দারুন না?বিয়ের প্রথম বছরেই নতুন এক্সপিরিয়েন্স!!(চোখ টিপে)
.
হুম…নট বেড!!তখন কিন্তু মানা করতে পারবেন না…
.
একদম না….
.
রিয়া আয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।কি সুন্দর লাগছে ফাহিমকে।ইশশ…এই ছেলেটাই তার বর?ভাবলেই শরীর যেনো কেঁপে কেঁপে উঠে তার।।লোমগুলো কেমন দাঁড়িয়ে যায় মুহূর্তেই…হৃৎস্পন্দনের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে করে ভালোবাসি ভালোবাসি।।অবশেষে ভালোবাসি!!
.
🍁
.
নিজের সৌন্দর্যটা প্রকাশ করার জন্য জামার চেইন খুলে রাখতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই মিস অদিতি!!
.
আয়ানের বলা “অদিতি” নামটাই কেঁপে উঠলো সে।আজকাল আয়ান আর “মিস ঝগড়ুটে ” নামটা ইউজই করে না….তার মুখে অদিতি নামটা যে বড্ড বেমানান লাগে এখন…অদিতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো..
.
মানে?কি বলতে চাইছেন আপনি?
.
আপনার জামার চেইনটা খোলা মিস!!এমন একটা ভাব করছেন যেনো জানেনই না।মেয়েদের বেশ ভালো করেই চেনা আছে আমার।।নিজেরা দেখাবে তাতে কিছু নয় ছেলেরা দেখলেই দোষ!!.
.
কথাটা বলেই অদিতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়ে এক টানে চেইন টা লাগিয়ে দিয়েই উল্টো পথে হাঁটা দিলো আয়ান…অদিতি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে…কিছু বলার সুযোগই দেওয়া হলো না তাকে!!আয়ান হাঁটতে হাটঁতেই সামনে থাকা ফুলের বাজটা লাথি দিয়ে উল্টে দিলো।রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার।ডানপাশের ছেলেটা কি অসভ্যর মতো তাকিয়ে ছিলো অদিতির পিঠে…এই মুহূর্তে ছেলেটাকে মেরে লাল করে দিতে পারলে শান্তি পেতো সে…সাহস কি করে হয় তার অদিতির দিকে তাকানোর??অদিতিকেও চড় লাগাতে ইচ্ছে করছে তার…..নিজের পোশাক ঠিক আছে কি না সেটাও কি আয়ানকে দেখে দিতে হবে নাকি??নিজের প্রতিও রাগ লাগছে তার।কেনো ভাবছে সে অদিতি কে নিয়ে…এতো চিন্তা কেনো??যার ইচ্ছে দেখুক ওকে…তাতে তার রাগ লাগছে কেন??নাহ্ যায় আসে না…একটুকুও যায় আসে না তার!! কালই এই দেশ ছাড়বে সে…যেভাবেই হোক..
.
🍁
.
আদ্রিতা আর শাড়ি দুটো একসাথে সামলাতে গিয়ে বেসামাল হয়ে…. পড়তে পড়তে বেঁচেছে সাদিয়া…মেয়ের জন্যই আত্মা কেঁপে উঠেছিলো তার…পাশে ধারালো কিছু একটা ছিলো হয়তো হাতটা কেটে একাকার।।কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই সাদিয়ার…ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠেও মেয়ে কোনোরকম ব্যাথা পেয়েছে কি না তা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে সে।।মা হয়ে যাওয়ার পর হয়তো নিজের কষ্টগুলো চোখে পড়ে না আর।।যে ব্যাথাটুকুর জন্য বিয়ের পরও চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করতো সাদিয়া আজ তা নিতান্তই তুচ্ছ মনে হচ্ছে তার।হঠাৎ বেসামাল হওয়ায় চমকে গিয়েই কান্না জুড়ে দিয়েছে আদ্রিতা।মেয়েকে সামলাতেই ব্যস্ত সে… নিজেরটা দেখার সময় কই?আদ্রিতাকে শান্ত করে রুমে গিয়ে বসলো সাদিয়া….মেয়েটা বড্ড জ্বালাচ্ছে।কোল থেকে নামাতেই চেঁচিয়ে উঠছে।এদিকে হাত থেকে রক্ত পড়ে ভেসে যাচ্ছে শাড়ি।রিয়াদের দেখা নেই…বোনের বিয়ে বলে কথা কতো কাজ!!এই মুহূর্তে মাকে মনে পড়ছে খুব।।মনটা বলে উঠছে বার বার ভালোবাসি মা!এতোটা ভালোবাসা দেওয়ার জন্য খুব বেশি ভালোবাসি তোমায়।।চোখ বন্ধ করে মেয়েকে চুপ করানোর চেষ্টা করছে সে…হাতটাও ব্যাথা করেই চলেছে…বন্ধ চোখ দিয়ে পানি পড়ে চলেছে অনবরত।।ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠলো সাদিয়ার… স্ক্রিনে রিয়াদের হাসিমাখা মুখ…কাঁটা হাতেই ফোনটা রিসিভ করে লাউডে দিলো সে… ইশশ স্ক্রিনটাই রক্ত লেগে কি বিশ্রী অবস্থা!!
.
হ্যালো?সাদিয়া তুমি কোথায় আছো?কখন থেকে দেখছি না তোমায়…
.
আছি… রুমে আছি।(কাঁপা কন্ঠে)
.
রুমে আছো?কিন্তু কেনো?বিয়ে বাড়ি কি রুমে বসে থাকার জন্য? আর তোমার কন্ঠ এমন লাগছে কেন বলো তো?ঠিক আছো তুমি?
.
হ্যা..ঠিকই আছি।একটু হাত কেটে গেছে বুঝলে…তুমি বরং আদুকে নিয়ে যাও..
.
এতোটুকু বলতেই বুঝতে পারলো ফোনটা কেটে দেওয়া হয়েছে।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনের দিক থেকে চোখ সড়াতেই হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলো রিয়াদ।।চোখে মুখে চিন্তার ছাপ…ভেতরে ঢুকে সাদিয়ার রক্ত মাখা হাত দেখেই কেঁপে উঠলো সে…বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো যেনো।তাড়াতাড়ি সাদিয়ার কাছে গিয়েই রাগী চোখে তাকালো…
.
কি সমস্যা তোমার?ফোন দিতে পারো নি আমায়?ইশশ কতোটুকু কেটে গেছে…ব্যাথা লাগছে না?দাঁড়াও ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি..
.
কথাটা বলেই হন্তদন্ত হয়ে আলমারি থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এলো সে…সাদিয়ার হাতটা পরিষ্কার করতে করতে অনুযোগের স্বরে বলে উঠলো –
.
সবসময় এমন করো তুমি…নিজের খেয়াল রাখতে পারো না কেনো তুমি?সবসময় কি আমি তোমার পাশে থাকবো বলো?কতোটুকু রক্ত পড়ে গেছে…তোমার শরীরে তো রক্তই নেই…(সাদিয়া আহ্ করে উঠতেই)ব্যাথা লাগলো?সরি সরি!! চলো তো ডক্টরের কাছে যাবো।যদি ইনফেকশন হয়ে যায় তো??
.
রিয়াদের অস্থিরতা দেখে হেসে ফেললো সাদিয়া…কোনোরকম হাসি চেপেই বলে উঠলো-
.
রিদ?বিয়ে রেখে ডক্টরের কাছে যাবো?পাগল হয়েছো তুমি? এটা তেমন কিছুই না…তুমি বরং আদুর জামাটা চেঞ্জ করে দাও তো…দেখো না রক্ত লেগে গেছে..
.
ওই জামা টামা পরে চেঞ্জ করা যাবে…তুমি চলো তো আগে ডক্টর তারপর সবকিছু…. বিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে না।।মাত্র তো একঘন্টার ব্যাপার চলো না প্লিজ….
.
রিয়াদের কথায় হেসেই চলেছে সাদিয়া।।এক বাচ্চার বাপ হয়েও এইটুকু রক্তেই কপোকাত??
.
🍁
.
ঢাকার পথে রৌওনা দিয়েছে আয়ান-ফাহিমরা।নতুন বউ নিয়ে বাড়ি ফেরার পালা আজ। আজ রাত ৮ টায় ফ্লাইট আয়ানের।।তারপরই উড়াল দিবে আমেরিকার একটা শহর কেলিফোর্নিয়ায়….অদিতি থেকে অনেক দূরে….তার অনুভূতি গুলো থেকেও দূরে….এভাবেই কি শেষ হবে দুটো জীবনের গল্প?ভালোবাসা নামক শব্দটা কি ওদের আপন করে নিবে না??অসম্পূর্ণই থেকে যাবো ভালোবাসার কাহিনী!!!
.
#চলবে…