প্রিয়তমা পর্ব-১৭

0
1850

#উপন্যাস
#প্রিয়তমা (১৭তম পর্ব)
লেখা – শারমিন মিশু
আনাস দুপুরে ফিরেই টেবিলে খাবার লাগাতে বললো একঘন্টার মাঝে অফিসে আবার যেতে হবে। লামিয়া খাবার বেড়ে টেবিলে অপেক্ষা করছে। আনাস নামাজ পড়ে এসে চেয়ারে বসতে বসতে বললো,,, তাড়াতাড়ি করো সময় নেই।
-লামিয়া প্লেট বাড়িয়ে বললো নিন।
-আনাস ফোন টিপতে টিপতে বললো খাইয়ে দাও আমার সময় নেই।
-সময় নেই মানে?? দিব্যি তো ফোন টিপতে পারছেন আর খেতে বললে সময় নেই।
-আরে এমন করছো কেন? প্লিজ খাইয়ে দাওনা। তুমি সামনে থাকলে নিজের হাতে খেতে মন চাইনা। আম্মু আব্বুর সামনে তো মন চাইলে ও এই আবদার টা করতে পারিনা এখন তো সময় আছে।
-হুম পেয়েছেন এই একটা ছুতো। এই একটা কথা বলে বলে এই কয়দিন আমার হাতেই খাচ্ছেন।
-আনাস হাসতে হাসতে বললো,,,, আচ্ছা যাও আজ রাতে আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো চলবে তো?
-লাগবেনা বলে ভাত মাখিয়ে আনাসের মুখের দিকে বাড়িয়ে দিলো।
আনাস ভাত মুখে দিয়ে লামিয়ার আঙ্গুলে আস্তে করে কামড় দিলো।
-আহ!!! কি করছেন ব্যাথা পাচ্ছিতো!!
আনাস না শুনার ভান করে একনাগাড়ে ফোন টিপছে।
আচ্ছা খেতে বসেছেন ফোন নিয়ে এমন করছেন কেন? রাখেন এটা বলে ফোনটা আনাসের হাত থেকে নিয়ে নিলো।
-আরে… আরে… আমি অফিসের একটা কাজ করছিতো এদিকে দাও।
-কেন অফিসে বসে বসে কি সারাদিন ঘুমান নাকি যে বাসায় এসেও আপনার কাজ করতে হয়।
-করতে একটা চাকরি তখন বুঝতে অন্যের অধীনে কাজ করার কত জ্বালা।
-আমার কোন চাকরির দরকার নেই আর জ্বালা সহ্য করার ও দরকার নাই। এখন এত কথা না বলে একটু তাড়াতাড়ি খান তো।
-আনাস ফোন রেখে লামিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,,, কি ব্যাপার তুমি খাচ্ছোনা যে?
-আপনি খেয়ে নিন আমি রিপার সাথে খেয়ে নিবো।
-আচ্ছা ঠিকআছে।
আনাস যাওয়ার আগে বললো,, আচ্ছা শুনো আজ সন্ধ্যায় রেডি থেকো তোমাকে নিয়ে একটু বাহিরে যাবো।
-লামিয়া মাথা নেড়ে সায় দিলো। এখন যদি বলতো যাবেনা তাহলে কত কথা শুনা লাগতো তাই ইচ্ছে করেই কিছু বলেনি।
সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে লামিয়া চা বানিয়ে রাখলো। আনাস এসেই চা চাইবে তাই। আনাস অফিস থেকে বের হয়েই লামিয়াকে কল করলো রেডি হওয়ার জন্য। লামিয়া সবকিছু গুছিয়ে রেডি হয়ে বসে ছিলো। রিপাকে ডেকে বললো,,,রিপা বাসায় তুই একা একা থাকতে পারবিনা কিছু সময়?
-কই যাইবেন আম্নেরা?
-তোর ভাইয়া বলেছিলো একটু বাহিরে যাবে।
-ও না আমার কোন সমস্যা অইবোনা আম্নেরা যান। যাওয়ার সময় বাইরে থেইকা দরজা তালা লাগাই যাইয়েন তাইলে অইবো।
-দরজায় তালা দিলে তোর সমস্যা হবেনা।
-আরে না আমি কি এহন আর বাইরে যামু নাকি? আর তালা দিলে বাইরে থেকে কেউ আইলে তালা দেওখা চইলা যাইবো।
-আচ্ছা। আর শুন আমাদের ফিরতে দেরি হতে পারে। তুই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়িস কেমন?
-আইচ্ছা।
আনাস বাসায় এসে নিজেও ফ্রেশ হয়ে নিলো। লামিয়া চা নিয়ে রুমে আসলো। আনাস চা খেতে খেতে বললো,,,তুমি এখনো রেডি হওনি?
-এইতো শুধু বোরখাটা পড়বো।
-আচ্ছা তাড়াতাড়ি করো।
-লামিয়া বোরখা পরতে পরতে বললো আচ্ছা আমরা কোথায় যাবো?
-গেলেই দেখবে। প্রশ্ন না করে বোরখাটা পড়ো আগে।
রেডি হয়ে লামিয়া রিপাকে বলে বেরিয়ে গেলো।
আনাস একটা রেষ্টুরেন্ট এর সামনে গিয়ে গাড়ী থামালো।
লামিয়া উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো,,, এখানে কেন এসেছেন?
-একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে আসছি আমরা।
-বিয়ে!!! কার বিয়ে?
-আনাস দুষ্টুমি করে বললো কেন তোমার আর আমার।
-ফাযলামি করবেন নাতো!!! সত্যি করে বলেন না??
-আমার দুঃসম্পর্কেএক চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে।
-তো আমাকে বাড়ি থেকে আসতে একথা বলবেন না?
-কেন বললে কি হতো?? সুন্দর করে সেজেগুজে আসতে নাকি??
-আপনার সব কথা হেয়ালীপনা!!! সুন্দর করে সেজেগুজে আসতে হবে কেন? তবুও একটা প্রস্তুতি থাকেনা। আর বিয়েতে দেওয়ার জন্য গিফট নিয়েছেন?
-জী ম্যাডাম গিফট কিনে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি। আর বিশেষ করে আমার তোমাকে নিয়ে এসব অনুষ্ঠানে আসার কোন ইচ্ছেই ছিলনা সেই জন্য আগে কিছু বলিনি।
কিন্তু আঙ্কেল খুব করে বলেছে তোমাকে নিয়ে আসার জন্য। আর তোমার পর্দার ও কোন খেলাফ হবেনা এখানে মহিলাদের জন্য আলাদা জায়গা আছে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে আসলাম।
রাত এগারোটায় অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই ওরা ফিরে আসলো৷ অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে আরো দু তিন ঘন্টা লাগবে এতক্ষণ এখানে থাকার মানে হয়না। আর মেয়ে মানুষ নিয়ে এতো রাতে বাহরে থাকাও ঠিকনা। বলা তো যায়না বিপদ তো আর বলে কয়ে আসেনা।
বাড়ি আসার পর দেখলো রিপা ঘুমিয়ে পড়েছে। আনাস লামিয়াকে বললো,,, এক কাপ কফি বানাতে পারবে? যদি পারো তো….
-হুম দিচ্ছি একটু অপেক্ষা করেন।
লামিয়া চেন্জ করে ফ্রেশ হয়ে আনাসের জন্য কফি বানাতে কিচেনে যায়।
আনাস বারান্দায় বসে ছিল,, লামিয়া এসে বললো,,,, এই নিন বলে কফি মগটা বাড়িয়ে ধরলো। আনাস মগ হাতে নিতেই লামিয়া চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। আনাস বললো,,, যাচ্ছো কোথায়?
-রুমে
-ঘুম আসছে?
-হুম
-এখানে একটু বসবে আমি কফিটা শেষ করা পর্যন্ত?
-কেন???
-না এমনি একটু গল্প করবো।
লামিয়া এসে আনাসের পাশেই বসলো।
-কি হয়েছে তোমার??
-আ,, আ,, আমার কি হবে?
-না আমার কেন জানি মনে হলো তুমি ভালো নেই। যদিও আমার সামনে ভালো থাকার চেষ্টা করছো তারপরও আমার মনে হচ্ছে তুমি কিছু আমার থেকে আড়াল করছো।
-না কি হবে কিছুই হয়নি আমার। এমনি কেন জানি একরকম অস্থির লাগছে।
-কেন অস্থির লাগছে?
-না তেমন কিছুনা বাসায় সারাদিন একা থাকিতো তাই একটু নার্ভাস নার্ভাস লাগে সবসময় ।
-সত্যি করে বলোতো কিছু হয়েছে?
-আমার কিচ্ছু হয়নি আপনি অযথা ভাবছেন।। কিছু হলে তো আপনাকে অবশ্যই জানাবো।
-আনাস লামিয়ার হাত ধরে বললো,,, কিছু হলেজানাবে কিন্তু?? আমার তোমাকে নিয়ে অনেক ভয় হয়। মাঝে মাঝে আমি তোমাকে বুঝতে পারিনা। যেমন এই মুহুর্তে তোমাকে আমি একটু ও বুঝতে পারছিনা। কেমন যেন রহস্যময়ী লাগছে এখন তোমাকে।
– লামিয়ার বুকের ভিতর ধ্বক করে উঠলো। উনি এমন কেন আমার কোন বিপদ হলে উনি যেভাবে হোক টের পেয়ে যায়। এটা কেমন করে হয়? কিসের টানে?? লামিয়া আনাসের বাহুতে মাথা রাখলো। লামিয়া ভাবছে,,,এতো ভালোবাসা সইবে তো আমার ভাগ্যে? নাকি কোন ঠুনকো মিথ্যের কারণে হারিয়ে যাবে সব?
লামিয়া মাথা নেড়ে আনাসের বাহুতে মাথা রাখলো এ জায়গাটাই এখন ওর সবচেয়ে ভরসার একটা জায়গা।
-আনাস লামিয়ার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।
-লামিয়া বললো আমার ভালো লাগছেনা,,, ঘুমাবো আপনি কি আর কিছু বলবেন?
-ঘুমাবে? আচ্ছা চলো বলে আনাস লামিয়ার হাত ধরে রুমে আসলো। রুমে আসার পর লামিয়াকে খাটে শুইতে বলে আনাস বললো,,, তুমি ঘুমাও,,, আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
-না লাগবেনা আপনি শুয়ে পড়ুন এমনি ঘুম এসে যাবে।
-কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে থাকো বলে আনাস লামিয়ার মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলো। আনাসের হাতের স্পর্শে লামিয়ার চোখে ঘুম নেমে এলো। আজ অনেকদিন থেকে এতো শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি লামিয়া।
এ ঘটনার ঠিক চারদিন পর আরেকটা এনভেলাপ এলো লামিয়ার নামে। লামিয়া তখন শুয়ে ছিলো। রিপা এসে বললো,,, ভাবি আম্নের নামে চিডি আইছে।
-চিঠি????? লামিয়া বিছানা থেকে ধড় পড় করে উঠে বসলো কিসের চিঠি???? কে দিলো???
-জানিনা কে দিছে। দারোয়ান আইসা দিয়ে গেছে বললো একটা লোক আইসা কইছে আম্নেরে দিতে এই বলে হাতে থাকা খামটা লামিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
লামিয়া হাতে নিয়ে বললো আচ্ছা তুই যা। লামিয়া খামটা নিয়ে দেখলো সেই দিনের মতো একি রঙের খামে আটকানো আর প্রেরকের জায়গায় সেই একই নাম। লামিয়া আজ আর খামটা খুলার সাহস পাচ্ছেনা। এই ঠান্ডায় ও গা দিয়ে ঘাম ঝরতে লাগলো। নড়ার শক্তি যেন হারিয়ে ফেললো। কেন এমন করছে সে???
এতোটা খারাপ মানুষ কি করে হয়??
আল্লাহ আমি তো জেনেবুঝে কখনো আপনার নাফরমানি করিনি তাহলে কেন আমার সাথে এতোবড় অন্যায় হচ্ছে???
সবসময় তো আপনার রাসূলের দেখানো পথে চলার চেষ্টা করেছি তাহলে কেন আপনি আমার সাহায্য করছেন না??
এবার আমি কি করবো?? বেঁচে থাকার ইচ্ছেই তো মরে যাচ্ছে। জানি মৃত্যু কামনা করা পাপ কিন্তু বেঁচে থেকেও কি আমি কখনো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবো?
লামিয়া খাট থেকে কোনরকমে নেমে আলমারির গোপন ড্রয়ার থেকে সেদিনের সেই খামটা বের করে দরজা আটকে আবারো খাটে এসে বসলো। সারা শরীর ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে। আজকের খামটা খুলতে ওর সাহসে দিচ্ছেনা। যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে তো….
কিছুক্ষণ ওভাবে বসে থেকে কাঁপা কাঁপা হাতে খামটা খুললো। সেদিনের মতই আজো সেই জিনিসগুলো পাঠানো হয়েছে।
আমায় কেন এতো খারাপভাবে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে?
এতো অপদস্থ কেন করা হচ্ছে আমাকে ? কোন অন্যায় না সত্ত্বেও। তুমি কি কিছুই দেখোনা আল্লাহ!!!
আমার সন্মানটাকে রক্ষা করো…….
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here