#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ০৯
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
–তো আপনি এখানে কি করছেন?(আমি)
.
–আমি কোথাও আসেনি। বরং তুমি এসেছো লিম্বো ডাইমেনশনে।(মাইকেল)
.
–লিম্বো ডাইমেনশন? এটা কোথায় আবার?(আমি)
.
–এই জায়গাটায় সময়ের কোনো চিহ্নই নেই। তুমি যখন এখানে আসবে তখন তোমার আসল দুনিয়ার সময় পুরো থেমে যাবে। আবার তুমি এখান থেকে গেলে তোমার আসল দুনিয়ার সময় শুরু হবে। এখানে সময় নিউটল থাকে।(মাইকেল)
.
–আমি নিশ্চয়ই এখানে আসি নি। আপনিই আমাকে এখানে এনেছেন। তো কিসের জন্য বলবেন?(আমি)
.
–তোমার মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অবশ্য ঘুরপাক খাওয়ারই কথা। তবে একটা প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো। জিজ্ঞেস করো আমায় আমি উত্তর দিচ্ছি।(মাইকেল)
.
–আচ্ছা বুঝলাম উত্তর দিবেন কিন্তু কিসের জন্য সেটা তো বলবেন আগে? আমি তো চিনিই না আপনাকে।(আমি)
.
–তোমার আম্মার কাছে আমি ঋনি তাই কিছুটা ঋন পরিশোধ করতে চাই। তবে একটা প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারবো আমি এর থেকে বেশী না।(মাইকেল)
.
–ওকে একটাই হবে। আমার একটা ডানা সাদা একটা ডানা কালো কেনো? ব্যাখ্যা করেন?(আমি)
.
–কারন তোমার মধ্যে ডেভিল আর এন্জেলের ব্লাড রয়েছে।(মাইকেল)
.
–ব্যাখ্যা করেন। আমার আম্মা নাহয় এন্জেল ছিলো। কিন্তু আমার বাবা একজন হাফ ডিম্যান। তাহলে আমার মধ্যে ডেভিলের ব্লাড আসবে কি করে?(আমি)
.
–এটা অনেক বড় কাহিনী। ছোট করে বলতে গেলে তোমার আম্মা ট্রিসা জেনিফারের পালিত সন্তান ছিলো। তোমার আম্মার আসল বাবা মার সঠিক পরিচয় অজানা সবার। তবে তার মা শেষ ডেভিল কিং এর বংশধর ছিলো। তোমার আম্মা জেনেটিক ভাবে এন্জেল ছিলো। ডেভিল রাজা মরার পূর্বে তার মেয়ের উপর একটা শক্তিশালী স্পেল পরে দিয়েছিলো। আর সেই স্পেল শেষ তোমার আম্মা বহন করেছিলো।(মাইকেল)
.
–কিসের স্পেল?(আমি)
.
–যদি কোনো সময় ডেভিল রাজার মেয়ের কোনো বংশধর যমজ দুই সন্তানকে জন্ম দেই তাহলে তার মধ্য থেকে একজন পরবর্তী ডেভিল কিং হবে। শুধু তাই নয়। তার শক্তি হবে অতুলনীয়। এই পুরো দুনিয়া ধ্বংসের কারন হবে সে।(মাইকেল)
.
–তাহলে আমিই ডেভিল কিং এর স্পেলের পরিনতি?(আমি)
.
–হ্যা। তোমার ব্যাপারে তোমার বাবা এবং আম্মা জানতো সবই। কিন্তু তারপর তোমার বাবার কি যেনো হয়ে গেলো। পুরো পাল্টে গেলো। তোমাকে মারার চেষ্টা করতে চাইলো।(মাইকেল)
.
–তো আমি বাকি দুনিয়ার জন্য ক্ষতিকর। তাহলে কি আমাকে মারতে আসছেন?(আমি)
.
–একদম সেটা নয়। তুমি হয়তো জানো না তোমার আম্মার ক্ষমতার ব্যাপারে। সে তার সন্তানকে কখনো খারাপের দিকে ফেলে দিতে পারে না। তোমার আম্মা ভবিষ্যৎ দেখতে এবং সেটাকে পাল্টানোর ক্ষমতা রাখতো। কিন্তু তার জীবনে দুইবারই ভবিষ্যত পাল্টানোর চেষ্টা করেছে। চাইলে সে নিজের জীবন বাচাতে পারতো। কিন্তু সে তা করে নি।(মাইকেল)
.
–একটু খুলে বলবেন এই ব্যাপারে?(আমি)
.
–না বললাম একটা প্রশ্নের উত্তরই আমি দিতে পারবো আজকের মতো। যদি কখনো আবার দেখা হয় তাহলে আরেকটা প্রশ্নের উত্তর দিবো।(মাইকেল)
.
–কিন্তু আপনি আমার মায়ের কি হন সেটা বলবেন না?(আমি)
.
–হ্যা। আমি তোমার মায়ের বড় ভাই।(মাইকেল আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো)
.
–বড় ভাই। তারমানে আপনি আমার মামা হন।(আমি)
.
–হ্যা। যা বল্লাম সেটা নিয়ে কোনো চিন্তা করো না। তোমার মাথার কথা মতো চইলো না। সব সময় মনের কথা মতো চইলো। আর হ্যা এই জিনিসটা তোমার যাত্রা পথে কাজে দিবে।(মাইকেল)
।।।।
।।।।
আমার হাতে একটা তলোয়ার ধরিয়ে দিলো। অনেক লম্বা একটা তলোয়ার।
.
–এটার নাম এক্সোনিয়া। এটা একটি পবিত্র তলোয়ার। মনস্টারদের বিরুদ্ধে কাজে দিবে এটা।(মাইকেল)
।।।
।।।
তলোয়ারটাকে আমি দেখতে লাগলাম। তলোয়ারের ব্লেডটা অনেক ধারালো। আয়নার মতো রিফ্লেক্ট করে আলো। নিজের মুখ খুব পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। ব্লেড দিয়ে কেমন সাদা ধোয়া বের হচ্ছে। আস্তে আস্তে আমার আশে পাশের সাদা জায়গা গুলো পরিস্কার হলে লাগলো। আমি দাড়িয়ে আছি আমার রুমের মধ্যে। মনে হচ্ছে লিম্বো ডাইমেনশন থেকে বেরিয়ে আসছি। সে যাইহোক আমার বাম হাতে তলোয়ারটার কোষ আর ডান হাতে তলোয়ারটা ধরা। আমি তলোয়ারটাকে কোষবদ্ধ করে টেবিলের রাখার সাথে সাথে সেটা আস্তে আস্তে উধাও হয়ে গেলো। বুঝলাম না কোথায় গেলো। আমি হালকা স্বরে এক্সেনিয়া বল্লাম, সাথে সাথে তলোয়ারটা আমার ডান হাতে চলে আসলো। আবারো কোষ খুলে বন্ধ করলাম সেটা আবার উধাও হয়ে গেলো। বুঝতে পারলাম ভারি কাজের জিনিস। আমি গোসল করতে চলে গেলাম। গোসল সেরে এসে বিছানায় শুয়ে পরলাম। মাইকেলের বলা কথা গুলো এখনো আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আচ্ছা আম্মার শেষ সময়ে কি তিনি পারতো না আম্মার সাহায্য করতে? নাকি সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো? আমি সব কিছু চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম। এক ঘুমে বিকাল হয়ে গেলো। দুপুরের খাবার খাওয়া হয় নি এখনো। ক্যান্টিনের দিকে যেতে লাগলাম ফ্রেস হয়ে।
।।
।।
ক্যান্টিনে গিয়ে আমি চিকেন কারি নিয়ে বসলাম খেতে। এমন সময় আমাকে খুজতে খুজতে এনা আসলো,
.
–তুমি এখানে আর আমি তোমাকে পুরো একাডেমী খুজতেছি।(এনা)
.
–কি হলো এতো খুশি লাগতেছে কেনো তোমাকে?(আমি)
.
–আমি তো সব সময়ই খুশি থাকি।(এনা)
.
–না এখন বেশী খুশি মনে হচ্ছে।(আমি)
.
–হুমমম সামনে সপ্তাহে তো আমাদের summer vacation এর বন্ধ হয়ে যাবে।(এনা)
.
–হ্যা।(আমি)
.
–তো তোমরা কোথাও যাবে বলে ঠিক করেছো?(এনা)
.
–এই মনস্টার দুনিয়ায় আমাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। জেসি হয়তো কিছু চিনে এখানের। তাই ও যেখানে আমি সেখানে।(আমি)
.
–তাহলে তো ভালোই হলো। কারন তোমরা দুজন তাহলে আমার সাথে যাচ্ছো আমাদের রাজ্যে।(এনা)
.
–তোমাদের রাজ্যে?(আমি)
.
–হ্যা। ব্লাক লোটাস আমাদের রাজ্যের নাম।(এনা)
.
–তৃতীয় বৃহৎ রাজ্য তোমাদেরটা?(আমি)
.
–হ্যা।(এনা)
.
–আচ্ছা এনা তোমাকে তো জিজ্ঞেস করা হয় নি এখনো? তোমার বাবা মা কি করেন?(আমি)
.
–এই তেমন কিছু না। বাবা মা দুজনেই বসে বসে নিজেদের টুকটাক কাজ করেন।(এনা)
.
–টুকটাক কাজ?(আমি)
.
–আরে তুমি খাওয়া বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়েই থাকবে নাকি শুধু?(এনা)
.
–তোমার সৌন্দর্য্য যেভাবে আমাকে আকৃষ্ট করে না তাকিয়ে কি পারি?(আমি)
.
–জ্যাক তুমি ও না। একদম দুষ্ট।(এনা)
.
–দুষ্টমির কি করলাম আমি।(আমি)
.
–কিছু না।(এনা)
।।।
।।।
এনা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো। আমও আসে পাশে দেখতে রইলাম। আমরা এখনো লায়লা মজনুর মতো বলি নি দুজন দুজনকে ভালোবাসি। কিন্তু দুজন দুজনকে যে কতটা ভালোবাসি সেটা আমরা দুজনই জানি। ঔযে বলে না কিছু ভালোবাসা বলতে হয় না এমনেই বোঝা যায়। এমনিতেই কারি খেয়ে আমার ঝাল লেগে আছে। আর আশে পাশে কেউ নেই ভাবলাম একটু মিষ্টি লাগিয়ে নি ঠোটে। এনা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কখন ওর ডান হাত দিয়ে আমার বাম হাত ধরেছে আমি নিজেই জানি না। আমি ওর ঠোটের দিকে আমার ঠোট আস্তে করে এগিয়ে নিতে গেলাম। কিন্তু তার আগেই জেসির কন্ঠ শুনলাম। দুজনেই আলাদা হয়ে গেলাম।
.
–গোপনে গোপনে তো অনেকদূর চলে গেছিস দুজন। এনা তুই তো আমার পিচ্চি ভাইতাকে পাকিয়ে দিয়েছিস। যে হাত ধরতে ভয় পেতো সে তোর ঠোট ধরতে যাচ্ছিলো।(জেসি)
.
–…..(আমরা দুজনেই লজ্জা পেয়ে গেলাম)
.
–রোমিও জুলিয়েটের প্রেমের সময়ে আমিই এসে পরেছি। তোরা প্রেম কর আমি চলে যাচ্ছি।(জেসি)
.
–আরে যাস না। শোন তোর সাথে কথা আছে।(এনা)
.
–হ্যা বল।(জেসি আমার পাশে বসে বললো)
.
–সামনে সপ্তাহে আমি বাসায় যাচ্ছি।(এনা)
.
–আমিও ভাবছিলাম জ্যাককে নিয়ে লংস্টারে যাবো।(জেসি)
.
–কোনো লংস্টার ফংস্টারে যাওয়া নেই। তোরা দুজন আমার সাথে যাবি।(এনা)
.
–কিন্তু?(জেসি)
.
–কোনো কিন্তু নয়। আমি বাসায় বলে দিয়েছি। এমনিতেও আমার বড় বোনের বিয়ে। আপু বলেছে জ্যাক আর তোকে নিয়ে যেতে।(এনা)
.
–কিন্তু এনা?(জেসি বলতে গেলো)
.
–থাক জেসি? ও এতো করে বলছে লংস্টারে তো আমরা পরেও যেতে পারবো।(আমি)
।।।।
।।।।
আমার কথাটা বলার সাথে সাথে জেসি আমাদের আশে পাশের সময় আটকে দিলো,
.
–আমি লংস্টার রাজ্যে চিঠি পাঠিয়েছিলাম তোর বলা মতো। ঔখান থেকে উত্তর এসেছে।(জেসি)
.
–কি বলেছে?(আমি)
.
–সামনে সপ্তাহে লংস্টারে যেতে বলেছে আমাদের।(জেসি)
.
–আচ্ছা সমস্যা নেই আস্তে ধীরে যাওয়া যাবে।(আমি)
.
–কিন্তু?(জেসি)
.
–চিন্তা করিস না। প্রথমে লোটাস থেকে ঘুরে আসি। দেখে আসি ব্লাক লোটাস কেমন।(আমি)
.
–আচ্ছা তুই যেটা ভালো মনে করিস।(জেসি)
।।।।
।।।।
জেসি আবার সব স্বাভাবিক করে দিলো।
.
–আচ্ছা তাহলে তো শপিং স্টোর থেকে কিছু কেনাকাটা করার দরকার জেসি তাইনা?(আমি)
.
–তোমাদের কিছুই নিতে হবে না। আমাদের ঔখানে সবই পাবে।(এনা)
.
–আচ্ছা এনা তুমি তো তোমার বোনের কথা কখনো উল্লেখ করো নি। আমার জানা মতে তোমার একটা ভাই ছিলো।(আমি)
.
–আসলে আমি একাই। আমার বাবার দুটি স্ত্রী। তার মধ্যে আমার আম্মা একজন মানুষ ছিলেন। আমার আম্মা মারা যাবার পর থেকে আমার সৎ আম্মা নিজের মেয়ের মতোই আদর করতেন। তখন আমার বড় সৎ বোনের (এলিশা কোয়াডার্ট) সাথে বেশী বুনতো না। আমাকে সব সময় মারতো। একদিন আমার দুটো দাঁত উঠিয়ে নিয়েছিলো। তারপর আট বছরের মতো বাবা আমাকে মানুষের দুনিয়ায় আমার আম্মার পরিবারের কাছে রেখে এসেছিলেন। যখন আমি আমার পরিবারের কাছে আবার গেলাম আমার বড় বোন তখন পুরো আলাদা মানুষ। আমাকে তখন থেকে নিজের বোন নয় বরং নিজের মেয়ের মতো আদর করে।(এনা)
.
–অনেক হ্যাপি ফ্যামিলি।(আমি)
.
–হ্যা সেটা তো বলতে হবে। আমাদের পরিবারে কড়া নিয়ম মানতে হয় সবাইকে। কিন্তু আম্মা মারা যাবার পর থেকে আমার কোনো নিয়ম মানতে হয় না।(এনা)
.
–আচ্ছা তোর বোনের বিয়েই আমাদের নিয়ে কি করবি?(জেসি)
.
–তোদের ঘুরিয়ে দেখাবো।(এনা)
.
–আমার তো তা মনে হচ্ছে না। আমার তো মনে হচ্ছে তোর নিজের বিয়ের ব্যবস্থাও করে ফেলবি।(জেসি)
.
–দূর তুই ও না।(এনা আমার দিকে একবার তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে মুচকি হেসে দিলো)
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ১০ম পর্বের জন্য, আর বেশী বেশী শেয়ার করুন,