#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ২২
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আমি ডিভাইসটার মধ্যে শুয়ে আছি। ডিভাইসটার মুখ একটা গ্লাস দিয়ে ঢেকে গেলো। এরপর ভিতর দিয়ে একটা গ্যাস বের হলো। যেটা আমাকে ঘুমের দেশে চলে যেতে বাধ্য করলো। এরপর ডিভাইসের মধ্য দিয়ে পানি ভরতে শুরু করলো। আমার চোখ আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেলো। এই প্রক্রিয়ায় আমার পাওয়ার গুলো খুব তারাতারি ফিরে আসবে এবং আমি সেই সময় পর্যন্ত চিন্তা ছাড়া থাকতে পারবো। কিন্তু সব জিনিস চিন্তা ছাড়া হয় না। আমি ঘুমানোর কিছুক্ষন পরই আমার চোখ খুলে যায়। আমি সম্পূর্ন আলাদা একটা জায়গায় এসে পৌছালাম। পুরাতন কোনো মেমোরীই আমার মনে নেই। আমি কিছুই মনে করতে পারছি না। এবং আমি সম্পূর্ন অন্য একটা জায়গায় যেটা আমি কখনো দেখি না। জায়গাটা দেখতে অনেকটা একটা মেয়েদের সাজানো রুমের মতো। আমি এই রুমের মধ্যে হাত পা বাধা অবস্থায় একটা চেয়ারে বসে আছি। মুখ ও আঠালো কাগজ দিয়ে আটকানো তাই কথা বলতে পারবো না। জায়গাটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম। পুরো রুমটা পিংক কালারের। সারা রুমের মধ্যে ছোট বড় পান্ডা পুতুল সাজানো রয়েছে। আমার কেমন জানি মনে হচ্ছে সেগুলো জীবিত এবং আমার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করছে তারা। কিন্তু মনে হচ্ছে এটা আমার ভুল ধারনা শুধু। যায় হোক আমি এখানে কেনো সেটাই আমার মাথায় আসছে না। আর আমার আগের মেমোরী কি হয়েছে সেটাই বুঝতে পারতেছি না। মাথা এক দিক দিয়ে আমার ঘুরছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। যায়হোক হঠাৎ রুমের মধ্যে একটা মেয়ে ঢুকলো। পুরো পিংক কালারের হাটু পর্যন্ত চুল ওয়ালা মেয়ে। আমি মনে হয় না আমার লাইফে পিংক কালারের চুল ওয়ালা মেয়ে দেখেছি। যদিও আমার লাইফ সম্পর্কে আমি এখন কিছুই জানিনা, মেমোরী লস হয়ে গেছে আমার একদম। তারপর ও বলতে পারি পিংক কালারের চুল সহজে পাওয়া যায় না। হয়তো কোথাও পাওয়া যাবে না যদি না সেটা কালার করা হয়। যাইহোক, মেয়েটা এসে একটা চেয়ার নিয়ে আমার সামনে বসলো। আমার মুখের আঠালো কাগজটা খুলে দিলো এবং বলতে লাগলো,
.
–ওয়েলকাম টু মাই ওয়ার্ল্ড।(মেয়েটা)
.
–মাই ওয়ার্ল্ড নামে তো কোনো ওয়ার্ল্ডই আমি শুনি নাই।(আমি)
.
–একদম চুপ। আমি কথা বলছি এর মাঝে কোনো কথা হবে না।(মেয়েটা)
.
–ওকে ম্যাম।(আমি)
.
–তুমি এখন আছো? দ্যা ওয়ার্ল্ড অফ ড্রিমস এ। এটা ১১ realms এর মধ্যে একটা। যেটাকে বলা হয় স্বপ্নের দুনিয়া।(মেয়েটা)
.
–কি স্বপ্নের দুনিয়া সত্যি আছে?(আমি)
.
–হ্যা। স্বপ্নের দুনিয়া সত্যিই আছে। আমার নাম লুসি দ্যা ফেইরী। আমি এই পুরো স্বপ্নের দুনিয়ার কুইন।(লুসি)
.
–কি তোমার মতো একটা মেয়ে একটা দুনিয়ার কুইন?(আমি)
.
–সাইলেন্স। সম্মান দিয়ে কথা বলো আমার সামনে। আমি একজন কুইন। আমার আদেশে তোমার জীবন যেতে পারে।(লুসি)
.
–সেটা কিভাবে সম্ভব? আপনিই তো বললেন আমি স্বপ্নের দুনিয়াতে। আমার রিয়েল বডি তো এখানে নেই তাই আমাকে মারতে পারবেন না।(আমি)
.
–মেমোরী চলে গেলেও লজিক যায় নি তাহলে। ঠিক আছে মানতে হবে পরের ডেভিল কিং হবে তুমি। এইটুকু জ্ঞান খারাপ না। কিন্তু বালক তুমি হয়তো এটা জানো না স্বপ্নের দুনিয়া কিভাবে কাজ করে। আমরা শুধু মানুষের স্বপ্নই নিয়ন্ত্রন করি না। বরং আমরা এখানে তাদেরকেও আটকিয়ে রাখতে পারি।(লুসি)
.
–আমি ডেভিল কিং? মজা করছেন নিশ্চয়। আমি তো সাধারন একটা মানুষ।(আমি)
.
–হ্যা তুমি নিজেকে সাধারন একজন মানুষ ভাবছো তাই তো আমার কাজটা খুব সহজ হবে, আমি তোমাকে একটা মনস্টার ভাবার সুযোগ দিতে চাই না।(লুসি)
.
–কিছু বললেন?(আমি)
.
–না। কিছু না। তোমাকে এখানে আনা হয়েছে একটা কারনেই, সেটা হলো তোমার ভবিষ্যত বেশী ভালো আমি দেখছি না। সব ডেভিল কিং এর থেকে বেশী শক্তিশালী তুমি। তোমার মতো শক্তির কাউকে আমি খোলা ছেড়ে দিতে পারি না। তাতে মানুষেরা শুধু খারাপ স্বপ্ন দেখবে।(লুসি)
.
–ডেভিল কিং, খারাপ স্বপ্ন এগুলো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার মাথায় তে কাজ করছে না।(আমি)
.
–এতো কিছু জানতে হবে না। মূলত আমি বলে দি স্বপ্নের দুনিয়াতে আমাদের কাজ হলো আমরা মানুষদের স্বপ্ন নিয়ন্ত্রন করে থাকি। যদি কোনো মানুষ খারাপ, ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তাহলে আমাদের কাজ হলো তাদের সেই খারাপ, ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দূর করে ভালো স্বপ্ন দেখানো তাদের।(লুসি)
.
–ওওও। তাহলে আমাকে এখানে বেধে রাখা হয়েছে কেনো?(আমি)
.
–কারন তোমার শক্তির কারনে ইতিমধ্যেই অনেক মানুষেরা খারাপ, ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছে। বিষয়টা আমাদের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে এখনি। আর তোমার পুরো ক্ষমতা ফিরে আসলে কি হবে আমি সেটার চিন্তায় আছি। তখন তো মনে হয় আমার ক্ষমতা দিয়ে ও আমি মানুষদের ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখা থেকে আটকাতে পারবো না।(লুসি)
.
–এসবের কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না। মনে হচ্ছে কিছু ফেইরী টেইল(গল্প কাহিনী) বলা হচ্ছে আমাকে। শুধু বুঝতে পারছি আমার জন্য অনেক মানুষের সমস্যা হচ্ছে ঘুমে। আর সামনে আরো সমস্যা হবে।(আমি)
.
–ঘুমে নয়। যদি মানুষ প্রতি নিয়ত খারাপ, ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখা শুরু করে তাহলে সেই মানুষটা কিছুদিনের মধ্যেই আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারন স্বপ্ন ভয়ঙ্কর হলে সেটা মৃত্যুর মতোই হয়।(লুসি)
.
–ওওও। তাহলে আমাকে এখন কি করতে হবে? এখানে আটকে রাখা হবে? নাকি মেরে ফেলা হবে?(আমি)
.
–আমরা স্বপ্নের দুনিয়ার যেসব ফেইরী আছি আমরা কারো হত্যা করি না। বরং তাদের আমরা এখানে নিয়ে আসি তাদের সারাজীবন এখানেই রাখি।(লুসি)
.
–ওওও মানে আমার সারা জীবন এখানেই থাকতে হবে?(আমি)
.
–হ্যা। হ্যা এই বিষয়ে নিজ ইচ্ছায় রাজি হলে আমি স্বপ্নের দুনিয়ার রানী তোমার যেকোনো একটা ইচ্ছা পূরন করবো।(লুসি)
.
–বিষয়টা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। এমনিতেও আমার মেমোরী আমার সাথে আর নেই। পুরাতন জীবন মনে হচ্ছে অনেক খারাপ ছিলো। আর এখানে একটা রানী আমাকে আমার যেকোনো ইচ্ছার কথা বলতেছে। কি চাইবো আমি? কিছু কি চাওয়ার আছে আমার?(আমি)
.
–যা চাওয়ার শুধু বলে দেখো। চাওয়া মাত্রই জিনিসটা তোমার হবে।(লুসি)
.
–ওকে, তাহলে আমি চাই আপনি আমাকে আরো ১০ টা জিনিস চাইতে দিবেন আপনার থেকে।(আমি)
.
–কি? এইটা কোনো ইচ্ছা হলো? এটা তো চিটিং।(লুসি)
.
–আপনিই বলেছেন যেকোনো জিনিস।(আমি)
.
–না না। এইটা পারবো না।(লুসি)
.
–ঠিক আছে তাহলে আমার মেমোরীটা শুধু ফেরত দিন।(আমি)
.
–সেটাও পারবো না।(লুসি)
.
–তাহলে আপনি আমার কোনো ইচ্ছায় পূরন করতে পারবেন না।(আমি)
.
–না তুমি অন্য কোনো জিনিস চেয়ে দেখো?(লুসি)
.
–ঠিক আছে রানী আমার ঠোটে একটা চুমু দিন তাহলে।(আমি হেসে বললাম)
.
–কি? এতবড় সাহস আমার সামনে এই জিনিস চাওয়া হচ্ছে।(লুসি)
.
–বলছি তো পারবেন না আমার ইচ্ছা পূরন করতে।(আমি)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে খারাপ কোনো ইচ্ছা চাইবে না। আরেকটা চাও সেইটা সিওর দিবো কথা দিচ্ছি।(লুসি)
.
–ঠিক আছে দ্যা কুইন অফ ড্রিম ওয়ার্ল্ড। বিয়ে করুন আমাকে। আমি আপনার স্বামী হয়ে চিরকাল এই আপনার স্বপ্নের দুনিয়ায় আপনার সাথে থাকতে চাই।(আমি)
.
–কি?(লুসি)
.
–জানি এটাও পারবেন না।(আমি)
.
–না এটা খারাপ বুদ্ধি না। ডেভিল কিং কে যদি আমি এখানে রাখতে পারি তাহলে মানুষেরা ভালো স্বপ্ন দেখবে। রানী হয়ে তো এটা করার দায়িত্ব আমার। আর ডেভিল কিং কে এখানে রাখা মানে তাকে পুরো যত্নে রাখা। যদি কোনো রকমে তার মেমোরী ফিরে আসে তাহলে এখান থেকে খুব সহজেই বের হতে পারবে। আর তখন সেটা আমাদের জন্য খারাপ হবে। তাই আমার বেস্ট চয়েজ তার কথায় রাজি হয়ে যাওয়া। এতে করে আমি অনেকটা জোর করতে পারবো তাকে এখানে থাকার জন্য।(লুসি ফিসফিসিয়ে বললো)
.
–তো আপনি কি রাজি?(আমি)
.
–হ্যা একটা শর্তে শুধু। সেটা হলো এখান থেকে বের হওয়ার চিন্তা কখনো মাথায় আনা যাবে না।(লুসি)
.
–এতো সুন্দর রানী যদি আমার বউ হয়। তাহলে তো আমি কখনো এখান থেকে যাবো না।(আমি)
।।।
।।।
লুসি আমার কথায় অনেকটা বুঝতে পারলো আমি এখান থেকে বের হবো না। যদিও রানীকে দেখে আমি প্রেমে পরে গেছি। তারপরও একটা লিমিট আছে। আমার মেমোরী হারিয়ে গেছে। যদি আমার জীবনে সুন্দর একটা গফ বা বউ থাকে তাহলে কি হবে। আমি এখানে আটকা থাকতে চাই না। এখান থেকে সোজাসোজি চলে যেতে চাইলে তো আমাকে আটকিয়ে রাখবে। তাই সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা হলো রানীর মন জয় করো আর স্বপ্নের দুনিয়া ত্যাগ করো। এখান থেকে একবার বের হতে পারলে আমি আর কখনো ঘুমাবো না।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন পরবর্তী পর্বের জন্য। আশা করি ছোট হয়েছে বলে রাগ করবেন না। সেই আড়াই ঘন্টা ধরে লেখা আজকে। একটু নতুনত্ব দিতে গিয়ে সময় শেষ। আগামী পার্ট কালকে/পরশু পাবেন।