ধ্রুবতারা পর্ব_৩০ পুষ্পিতা_প্রিমা

ধ্রুবতারা
পর্ব_৩০
পুষ্পিতা_প্রিমা

সপ্তাহ খানেক পার হলো বিয়ের। তাননা ফিরে গেল তার শ্বশুরবাড়ি। শ্বাশুড়ি ভীষণ ক্ষেপে আছে। বউটা একবার গেলে আর ফিরতে চায় না। ঈশান অবশেষে নিয়ে গেল তাননাকে। জিশানকে পেয়ে তার মায়ের পরাণ জুড়ালো। দাদুভাইটাকে না দেখলে কি ভালো লাগে?
নোহা ও চলে গেল। রাহার খালি খালি লাগলো চারপাশটা। তাদের চলে যেতে হলো কেন? তাদের কি খারাপ লাগে না আপনজনদের ছেড়ে থাকতে। রাহা দূরে না গিয়ে অনুভব করতে পারে। অবশ্য তাননা আপু আর নোহা যাওয়ার সময় দৃশ্যটা ঠিক একই কথা বলে। তারা কখনোই হাসিমুখে শ্বশুরবাড়ি ফিরে যায় না। কষ্ট হয় বোধহয় খুব। সবাই একসাথে থাকলে কি হয়? নিয়মগুলো এমন হয় কেন? একসাথে তিনজনের বড় হওয়া। আর এখন বড় হয়ে তিনজন তিন জায়গায়। কত খুনসুটি, দুষ্টুমিষ্টি হাসি-খুশির ছিল ছোটবেলা গুলো। একটা আচারের প্যাকেট তিনভাগ হতো। হেয়ার ব্যান্ড, কসমেটিক ওই একজনকেই কিনলেই হয়ে যেত। কাপড় একজনে কিনলে তিনজনই পড়তো। ইশশ দিনগুলো যদি আবার ফিরে আসতো।
রাহা বেশি মিস করল জিশুকে। সারাক্ষণ খালামুণি খালামুণি ডেকে ডেকে পিছু পিছু ঘুরতো। যাওয়ার আগেই তো বলেই গেল
‘ খালামুণি আমি আব্বার আসবো। তুমাকে মামি ডাকব। কেমন?
রাহা হেসেছিল তার কথায়। পরক্ষনেই তাননাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল অনেক্ক্ষণ। তাননা তাকে মুখে হাত বুলিয়ে বলেছিল
‘ এইখানে আসার আর তাড়া নেই আমার। এখন তুই আছিস তাকে সারাক্ষণ দেখে রাখার। তার রাগ, অভিমান, জেদ, রাগগুলোর আড়ালে থাকা সুপ্ত ভালোবাসাটা খুঁজে নিস। এইবার থেকে আমার ভাইয়ের দায়িত্ব তোর। তাকে ভালো রাখবি। ভালোবাসবি। আম্মা থাকলে তার ছেলের বউকে রাণীর মতো করে রাখতো। আর আব্বা! তার তো পাগলামির শেষ থাকতো না। কিন্তু আল্লাহ তাদের নিয়ে গিয়ে কেমন ভালো করলো জানিনা। শুধু এটুকু জানি আম্মা আব্বা থাকলে সবকিছু আর ও ভালো হতো। মুননু এমন রগচটা কখনো হতো না। সে যাইহোক আমার এই রগচটা ভাইটাকে দেখে রাখিস। ভালো রাখিস। তুই পারবি। আমরা তাদের কাছেই ভালো থাকি যাদের আমরা ভালোবাসি। যারা আমাদের ভালোবাসে। ভালো থাকিস বোনটা।
রাহা ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল সেসময়। কিছু একটা পেয়ে যাওয়ার কান্না। যেটা পাওয়ার স্বপ্ন সে দেখত খুব অল্পবয়স থেকে। যখন থেকে বুঝতে শিখেছে প্রিয়জন কাকে বলে? ঠিক তখন থেকে।
প্রিয়জনের ভালো রাখার দায়িত্ব ও কয়জনে পায়? পেলে ও কয়জনে পারে ভালো রাখতে? রাহা ও কি পারবে? সে ত্রুটি রাখবে না চেষ্টার। কিন্তু বড়মা আর বড়আব্বার অভাব কোনোদিন ও মুছবে না মানুষটার। সেদিন ও রাহা নিজ চোখে দেখেছিল রোয়েনের সেই ওয়ালেটের ভেতর থাকা ছবিতে বড়মা আর বড়আব্বার ছবি। ছবি দুটো বের করে রোয়েন একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল। ভুলক্রমে খুব বড় রকমের অসাবধানতায় রাহা দেখেছিল ছলছলে দুটো চোখ। রাহা ভুলতে পারে না দৃশ্যটা । মা বাবা না থাকলে খুব কষ্ট হয়। যাদের নেই তারা ছাড়া কে বুঝে? বাবা মায়ের মতো রহমত দুনিয়াতে আর একটি ও নেই। কিন্তু কতজন বুঝে বাবা মায়ের কদর? বুঝলে কি তৈরি হতো এত এত বৃদ্ধাশ্রম? হতো না। কেউ কেউ মা বাবা থেকে ও খাওয়াতে চায় না। আর কেউ কেউ বুকে আগলে রাখার জন্য ও খুঁজে পায় না। কেউ কেউ পা দিয়ে ঠেলে দূরে সরায়। কেউ কেউ মা বাবার কবরের কাছে গিয়ে গাছের ঝড়ে পড়া ফুলগুলো কুড়িয়ে বেড়ায়। কেন এমন হয়?

নাহিলের কাছে ছোট্ট একটা আবদার করে বসলো রাহা। ডাক্তার তাকে যেন কোথাও বেড়াতে নিয়ে যায়। কিন্তু তার ভয় লাগছে। ডাক্তার যদি তাকে বকে?
নাহিল হাসলো মেয়ের কথায়। রাহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
‘ ঠিক আছে।
নাহিল প্রস্তুতি নিয়ে রাখলো। সোরা টেবিল গুছাতে গুছাতে বলল
‘ আপনারা বাপ মেয়ের ফিসিরফাসুর শুনলে খাওয়ার টেবিলে তো তুলকালাম চলবে। দয়া করে খাওয়ার পরে বলবেন।
নাহিল বলল
‘ সোরা মুননা এখন তোমার মেয়ের জামাই। কেউ মেয়ের জামাইকে ভয় পায়? আমি এখন শ্বশুর। হুহ।
সোরা হাসলো। রাহা বলল ঠিক।
রিহান বলল
‘ তাহলে রোয়েন ভাইয়াকে কি এখন দুলাভাই ডাকবো?
সবাই হেসে ফেললো। সোরা বলল
‘ পাকনামি করিয়েন না। দুলাভাই ডেকে দেখান তো সাহস থাকলে।
রিহান মাথা নামিয়ে বলল
‘ নো নো। ভয় লাগে।
রাহা বলল
‘ ভীতুর ডিম।
রিহান গাল ফুলালো। বলল
‘ উফফ আপু তুমি শ্বশুর বাড়ি যাওনি কেন? বিয়ে দিয়ে দিয়েছি নাহ?
রাহা রিহানের পাত থেকে চিংড়ি তুলে গালে দিয়ে খেতে খেতে বলল
‘ উমম কি মজা? তোমার চিংড়ি কেড়ে নিয়ে খাওয়ার জন্য যায়নি।
রিহান চেঁচালো। আম্মা আমাকে এখন ডাবল ডাবল দেবে। সোরা বলল
‘ আচ্ছা আচ্ছা। ঠিকাছে। রাহা তুমি কি ছোট?
নাহিল বলল
‘ কোনো কথা নাহ। সাহেব আসছেন। উনি খাওয়ার টেবিলে কথা পছন্দ করেন না। সো সাইলেন্ট।
সবাই চুপ করে থাকলো। রাহা ইশারা করলো নাহিলকে। নাহিল মাথা নাড়ালো। রোয়েন এলো। চেয়ার টেনে বসলো। পাশের চেয়ার টেনে বলল
‘ আসো বাবাই। নাহিল বলল
‘ নাহহ।
রোয়েন মাথা তুললো। কেন?
নাহিল বলল
‘ নাহ এমনি। তুমি খাও। আমি বসবো।
রোয়েন বলল
‘ আসো তো।
নাহিল গেল। পাশে বসে গলা খাঁকারি দিল। ধীরে ধীরে বলল
‘ মানুষ এক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকলে একগেঁয়েমি চলে আসে। তাই না?
রোয়েন জবাব দিল।
‘ হ্যা। এক্ষেত্রে জায়গা বদল করা দরকার। কেন বলছো?
নাহিল ঢোক গিললো। রাহা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে লাগলো। নাহিল বলল
‘ নাহ এমনি।
রোয়েন মাথা নাড়ালো। রাহাকে বলল
‘ দাদুকে ডেকে নিয়ে এসো। তুমি আর মামুনি ও বসো।
রাহা বলল
‘ দাদু তো রাতে ভাত খায় না।
রোয়েন বলল
‘ ওহ সরি ভুলে গেছি। মামুনিকে ডাকো। সোরা লবণের বাটি নিয়ে এসে বলল
‘ আমি আর রাহা পরে খাব। তোমরা,,
রোয়েন কথা বলতে দিল না।
‘ বসো। জায়গা আছে নাহ। রাহা বসো তো।
রাহা উপয়ান্তর না দেখে বসলো। সোরাকে ও বসতে হলো।

নাহিল তাকাতেই রাহা ভ্রু নাচালো। নাহিল চোখবন্ধ করে আশ্বস্ত করলো। রাহা মাথা নাড়ালো। রাহা খেতে খেতে রোয়েনের দিকে তাকালো। চিংড়ির বাটিতে চামচ নাড়তে নাড়তে যখন নিতে গেল। রোয়েন চোখতুলে তাকালো। বলল
‘ চামচটা রাখো। রাখো বলছি। তোমার না এলার্জি আছে। তারপরও চিংড়ি খাচ্ছ? রাখো।
রাহা নাকমুখ থমথমে করে চামচ রেখে দিল। নাহিল বলল
‘ একটা খেলে তো কিচ্ছু হবে না মনে হয়। সোরা বলল
‘ আপনি কি ডাক্তার নাকি? ওর যে হাতে এলার্জি হয়েছে দেখেননি? ও খেয়ে খেয়ে তারপর শেষে ভুগে।
রোয়েন রাহার কালো থমথমে মুখ দেখে ভাবলো
‘ তার বাচ্চাকাচ্চার যদি এইরকম এলার্জি হয় খবর আছে রাহার। সেইরকম হলে ও তার বাচ্চাগুলো চিংড়ি খেতে পারবে না। না না রাহার মতো হবে না।
রাহা নাহিলের দিকে আবার তাকালো। নাহিল মেয়ের মলিন মুখ দেখে ফটাফট বলল
‘ মুননা রাহাকে নিয়ে কোথাও ঘুরে এসো। বিয়ের পর এক-আধটু ঘুরতে টুরতে যেতে হয়। রিফ্রেশমেন্টের ও একটা ব্যাপার আছে।
রোয়েন চুপ করে শুনলো। রাহা মাথা নামিয়ে খেতে লাগলো। সোরা আড়ঁচোখে রোয়েনের প্রতিক্রিয়া দেখার চেষ্টা করলো। খেয়ে রোয়েন ঘরে চলে গেল। রাহা খেয়ে উঠে বলল
‘ আব্বা আমাকে যদি বকে?
নাহিল বলল
‘ বকবে না।
রাহা বলল
‘ এখনও তো বকলো।
সোরা বলল
‘ বকছে। মেরে তো ফেলছে না। এক আধটু বকা শুনতে হয়।
নাহিল বলল
‘ হ্যা হ্যা তুমি তো মুননাকেই সাপোর্ট করবে। তুমি ও তো একই দলে।
সোরা হাসলো। বলল
‘ আপনাদের বকার উপরে রাখতে হয়। নাহলে বেশি উড়েন তাই।
নাহিল কপাল ভাঁজ করে তাকালো।

______

রোয়েন হসপিটালের কিসব ফাইলপত্র ঘাঁটছিল। রাহা আসায় চোখতুলে একবার তাকালো। আবার মনোযোগ দিল। রাহা বলল
‘ দরজা বন্ধ করে দিই?
‘ নাহ খোলা রাখো। পারলে জানালা গুলো ও খুলে দাও।
রাহা মুখ ফুলিয়ে বলল
‘ আচ্ছা।
রাহা জানালা খুলতে গেল। রোয়েন উঠে আসলো। ধমকে বলল
‘ তুমি এতটা বোকা রাহা?
রাহা বলল
‘ আপনার কথাই তো শুনছিলাম।
রোয়েন বলল
‘ উদ্ধার করে ফেলছো। বাবাইকে কি বলেছ? হ্যা?
রাহা কেঁপে উঠলো। বলল
‘ ধমকাচ্ছেন কেন? ভয় পাচ্ছিনা।
রোয়েন একহাত দিয়ে মুখ মুছলো। বলল
‘ যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটার উত্তর দাও রাহা।
রাহা বলল
‘ ভুল বলেছি নাকি? আমার বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করেনা? ভুল কি বলেছি?
রোয়েন রাগে কথা বলতে পারলো না। হনহনিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে সেটা তাকে বললে কি হয়? বাবাইকে দিয়ে বলাতে হলো কেন? কত বড় একটা লজ্জার কথা।

রাহা গিয়ে তার পাশে শুয়ে বলল
‘ আপনি রাগেন কেন?
রোয়েন বলল
‘ বিয়ে দেব তোমাকে। শ্বশুর বাড়ি পাঠাবো। বেড়ানো হয়ে যাবে।
রাহা হাসলো। একহাত দিয়ে রোয়েনকে ধরে বলল
‘ আচ্ছা। বরের নাম কি মুননু?
রোয়েন গর্জে উঠলো। বলল
‘ কি বলেছ?
রাহা কাঁথা টেনে নিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে বলল
‘ নাহ নাহ কিছু বলিনি মুননু।
রোয়েন ধপ করে শুয়ে পড়লো। বলল
‘ জীবনে ও আর আমার কাছে আসিও তুমি। আসিও। ধাক্কা মেরে ফেলে দেব একদম বেয়াদব মেয়ে।
রাহা কাঁথা সরালো। রোয়েনের বুকের উপর উঠে গিয়ে কাঁচুমাচু করে বলল
‘ এসেছি। দেখি ধাক্কা মারেন।
রোয়েন বলল
‘ নাহ তোমাকে আমি ছুঁই না। সরো সরো।
রাহা সরলো না। মুখ তুলে বলল
‘ সরব না।
রোয়েন ভীত চোখে তাকালো। বলল
‘ ইয়াক রাহা তুমি দিনদিন বেয়াদব হচ্ছো। সরো বলছি। রাহা সরলো না।
নাকের উপর টুপ করে চুমু খেয়ে বসে বলল
‘ আহা পুরুষ মানুষের নাকের ডগায় এত রাগ ক্যামনে থাকে ভাই?
রোয়েন নাকঢলে বলল
‘ বেয়াদব।
রাহা বলল
‘ আপনি বেয়াদব।
রোয়েনকে রাহাকে সরিয়ে দিয়ে বলল
‘ তুমি। আমি নই। আমি কি তোমাকে ছুঁই?
রাহা হাসলো। বলল
‘ না ছুঁন না। ধরেন।
রোয়েন নাকমুখ কুঁচকে বলল
‘ বেয়াদব রাহা।
রাহা হো হো করে হাসলো।

পরেরদিন বিকেলবেলা রূপসা গ্রামের যাওয়ার জন্য টিকেট কাটলো রোয়েন। রাহা বলেছিল সে নৌকায় চড়বে। সমুদ্র সৈকত দেখার চাইতে রূপসা নদীর মাঝবুকে গিয়ে একটুখানি সুন্দর মুহূর্ত জমা হোক। ক্ষতি কি? রাহা ভাবেইনি এত তাড়াতাড়ি রোয়েন তার স্বপ্ন পূরণ করে দেবে। ওটাতো কথার ছলে বলেছিল। খুশিতে তার পাখিদের মতো আকাশে উড়তে ইচ্ছে করছে।
রূপসা গ্রামে পৌঁছালো রাত বারোটার দিকে হবে হয়তো। সালমা বেগম নাতি আর নাতজামাইকে দাওয়াত খাওয়াবে বেশ আয়োজন করে। একঢিলে অবশ্য দু পাখি মরলো। রোয়েনের বুদ্ধির প্রসংশা করতে হয়। দাওয়াত ও খেয়ে গেল। ঘুরাঘুরি ও হলো। রাহা তো বেজায় খুশি। কিন্তু রোয়েনের সামনে অত খুশি দেখানো যাবে না। নাহলে রেগে বলবে
‘ তোমাকে এখানে আনাটাই ভুল হয়েছে রাহা।

সকাল, দুপুর পার হতে না হতেই সন্ধ্যা নামলো। আকাশের বুকে ফুটে উঠছে মস্ত থালার মতো একটা চাঁদ। ঝলমল করছে নদীর পানি। কি সুন্দর গ্রামের পরিবেশ! এমন এক জ্যোৎস্না মাখা রাতে নদীর মাঝবুকে এক নৌকায় বসে রাহা দেখবে তার প্রাণপুরুষকে। ইশশ কি সুন্দর দৃশ্য। গায়ে শিহরণ জাগলো রাহার। ভারী লজ্জায় ভারী হতে লাগলো তার মুখ। যখন রোয়েন তার হাত শক্ত করে ধরে টেনে তুললো নৌকায়। আর মাঝিকে বলল
‘ মাঝনদীতে নিয়ে যান। নৌকা আবার ডুবে যাবে না তো?
মাঝি বললেন
‘ নাহ।

রোয়েন নৌকায় উঠে বসলো। মাঝি নৌকা চালালো। নৌকায় বসা দুজন মানব মানবী তখন প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ। কি মনোরম চারপাশটা? আসলে কি এমন সুন্দর? নাকি দুজন প্রিয়মানুষ খুব কাছাকাছি পাশাপাশি থাকায় সবকিছু এতটা সুন্দর লাগছে। রাহা নদীর পানি ছুঁতে চাইলো। রোয়েন বারণ করলো। রাহা ছুঁলোনা তাই। আকাশের ওই চাঁদটার দিকে খানিক্ষন তাকিয়ে থাকলো। আজ ও ধ্রুবতারা উঠলো আকাশে। যাকে শুভাশিস মনে হতো না রোয়েনের। আজ কেন যেন মনে হলো এই ধ্রুবতারা তার জীবনের সবচাইতে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী।
রাহা ও তাকালো রোয়েনের দেখাদেখি। হারিকেন জ্বালানো আছে কিছুটা দূরে। ওপাশে ততক্ষণে মাঝি গান ধরেছে। দুজনই মন দিয়ে শুনলো।

‘ নদী ভাঙে একূল ওকূল ভাঙে বাড়িঘর।
প্রেম শিখাইয়া ভাঙলো শেষে আমারি অন্তর বন্ধু, আমারি অন্তর।

রাহা খেয়াল ও করল না চাঁদের উপর থেকে দৃষ্টি সরে খুব মোহনীয় দুটি চোখ কখন তার দিকে দৃষ্টি ফেললো। কিন্তু যখনই টের পেল তখন শিরদাঁড়া বেয়ে অদ্ভুত এক শীতল হাওয়া বয়ে গেল। হাত পা অসার হওয়ার পালা যেন। নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে সংঘর্ষ।

রাহার পড়নে লাল টকটকে শাড়ির আঁচল টেনে মাথা ঢেকে দিল রোয়েন। একদম নতুন বধূর মতো ঘোমটা টেনে দিয়ে নাকে নাক ঘষে গালে ব্যাক্তিগত অঙ্কনের রেখা এঁকে বলল
‘ শতঅবহেলা, তুচ্ছতাচ্ছিল্যর পরে ও যে আমায় ভালোবাসে। সে রোজ রোজ আমার হোক। প্রতিটা মুহূর্তে মুহূর্তে আমার হোক। যুগে যুগে শতাব্দীতে শতাব্দীতে আমার হোক।
আলো মিশেল আবছা আবছা অন্ধকারে টলটলে দীঘির মতো রাহার চক্ষুজোড়া দেখে হাসলো রোয়েন। কানের নিচে হাত গলিয়ে দিয়ে দূরত্ব কমিয়ে আনলো। শ্বাস প্রশ্বাসে দৃঢ়তা এনে খুব ব্যাক্তিগত মুহূর্তখানি দীর্ঘায়িত করে মশগুল হলো একটুখানি ভালোবাসার নেশায়।

চলবে
আগামী পর্বে গল্প শেষ। আর দীর্ঘায়িত করব না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here