ধ্রুবতারা পর্ব_৩১ পুষ্পিতা_প্রিমা

ধ্রুবতারা
পর্ব_৩১
পুষ্পিতা_প্রিমা

তিনদিনের মাথায় রূপসা গ্রাম থেকে শহরে ফেরার কথা ছিল রোয়েন আর রাহার। কিন্তু রাহাকে চমকে দিয়ে রোয়েন কদমতলী স্টেশন থেকে পাড়ি দিল খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পার হতেই শুরু হয়েছে আঁকাবাঁকা ও উঁচুনিচু রাস্তা। রাহার বুঝতে বাকি রইল না, পার্বত্যাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে তারা। ডাক্তার তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। রোয়েন রাহার কৌতূহল দেখে বলল
‘ বেশি প্রশ্ন করলে গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেব একদম।
রাহা বোকাসোকা গলায় বলল
‘ তো আপনি আবার বিয়ে করবেন।
‘ জাস্ট শাটআপ রাহা। এমন পাগল বউয়ের কথা শুনলে আমার বন্ধুরা হাসাহাসি করবে।
রাহা বলল
‘ আপনার বন্ধুরা কারা? ওনারা কেন? আপনি হানিমুন করতে যাচ্ছেন সবাইকে জানিয়ে জানিয়ে।
রোয়েন মহাবিরক্ত হল। বলল
‘ হানিমুন আবার কি রাহা? আমি কোনো হানিমুন করতে যাচ্ছিনা। সাজেক যাচ্ছি। বন্ধুরা আসবে। চুপচাপ বসো একদম কথা বলবেনা। তোমাকে নিয়ে মহাজ্বালায় আছি।
রাহা বলল
‘ তো সোয়েভ ভাইয়া আসবে না? উনি ও তো আপনার বন্ধু।
রোয়েন বলল
‘ চুপ থাকো। দেখতে থাকো।
রাহা গাল ফুলিয়ে বসো রইলো। তারপর বলল
‘ আপনি ভালো না।
রোয়েন জবাব দিল না।
তবে মনে মনে ভাবলো পাগল বউ তার।
খাগড়াছড়ির প্রবেশদ্বার দিয়ে গাড়ি ঢুকতেই দোকা গেল পর্বতের পর পর্বত। শৈল জেলা। রাহা উত্তেজিত৷ সাজেক যাবে যাবে করে যাওয়া হয়নি তার। তবে এইবার কি মেঘের দেশ কি এবার নিজ চোখে দেখবে? রাহা ভাবতেই পারেনি ডাক্তার তাকে এত্ত বড় চমক দেবে। বিয়ে করবে বলে এক চমক দিল, এখন আবার সাজেক। এমন জামাই কে না চায়?

খাগড়াছড়ির সিস্টেম রিসোর্টের সামনে এসে গাড়ি থামলো। রাহা বলল
‘ এখন কোথায় যাব?
রোয়েন বলল
‘ আলু তুলতে যাব।
রাহা বলল
‘ আলু? কেন?
হাসলো রোয়েন। বলল
‘ আলুটিলা গুহায় যাব। পাহাড়ের রানী খ্যাত পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার পর্যটন স্পট আলুটিলা। রহস্যময় গুহার কারণে ‘আলুটিলা’ বেশ পরিচিত। খাগড়াছড়ি শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে মাটিরাঙা উপজেলার আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে রয়েছে একটি রহস্যময় গুহা। স্থানীয়রা একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা।
এটি খাগড়াছড়ির একটি নামকরা পর্যটন কেন্দ্র। অনেকে ঘুরতে যায় ওখানে। বেশ ভীড় থাকে।

তোমাকে ওখানে ফেলে আমি বন্ধুদের সাথে সাজেক ঘুরতে যাব।
রাহা হেসে ফেলল। বলল
‘ ভয় পাই না। ডাক্তারের বউ কি ভয় পায় নাকি?
রোয়েন ব্যঙ্গ করে বলল
‘ বাবাহ কি সাহসী!
রাহা হাসলো। বলল
‘ মুননু বউ বলে কথা।
রোয়েন রাগ করে ফেলল। বলল
‘ কি ডেকেছ?
রাহা জিভে কামড় কেটে বলল
‘ নাহ নাহ কিচ্ছু বলিনি।
রোয়েনের রাগ তারপর ও কমলো না। সে চলে গেল হনহনিয়ে। রাহাকে এখানে রেখে চলে যাবে সে। রোয়েনের সাথে থেকে থেকে কোথায় সভ্য হবে। তা না!
দিনকেদিন অসভ্য হচ্ছে রাহা।
মিনি বাসে করে আলুটিলা গুহার সামনে এসে পৌঁছালো তারা। কিছুদূর হেঁটে পাড়ি দিতে হলো। রাহা বলল
‘ আপনার বন্ধুরা কোথায়?
রোয়েন কথা বলল না। রাহা বলল
‘ এই ডাক্তার?
রোয়েন জবাব করল না। সে খুব রেগে আছে। রাহার লজ্জা নেই? যেচেপড়ে কথা বলতে আসে কেন?
রাহা মিটিমিটি হাসলো রোয়েনের চেহারা দেখে। রোয়েনের হাতের মুঠোয় নিজের বন্দী হাতটার দিকে তাকিয়ে বলল
‘ কথা বলেনা, আবার হাত ধরে রাখে।
রোয়েন হাতটা ছাড়লো না। সে রাহাকে বুঝাতে চাইছে রাহার কথাকে সে পাত্তা দিচ্ছে না। তাই হাতটা আর ও শক্ত করে ধরে রেখেছে। রাহা মজা নিল ভালো করে। বেশিকিছুদূর এগোতেই একটা ছোট্ট বাচ্চাকে দেখতে পেল রাহা। একদম জিশুর মতো। দৌড়ে গেল রাহা। বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল রাহার। এটা তো সত্যি সত্যি জিশু। কি করে সম্ভব?
রাহা রোয়েনের দিকে তাকালো। রোয়েন চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। রাহা বাচ্চাটিকে বলল
‘ তোমার নাম কি?
‘ জিছান।
রাহা হাসলো। বলল
‘ ওমা এটা তো আমার জিশু। তুমি এখানে কেন? আম্মা কই? আব্বা কই?
জিশান আঙুল দিয়ে কিছুটা দূরে দেখিয়ে দিল। সবুজ ঘাসের উপর মশাল হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে তাননা। ঈশান তার পেছনে। রাহা খুশিতে বাকুম বাকুম হয়ে দৌড়ে গেল। জিশানকে নামিয়ে দিয়ে তাননাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ আমি খুব খুব খুশি হয়েছি। কখন এসেছ?
তাননা কপট রাগ দেখিয়ে বলল
‘ কখন এসে বসে আছি। তোরা আসতে এত দেরী করলি কেন?
রাহা বলল
‘ আমি তো জানতামই না তোমরা আসবে।
তাননা বলল
‘ কেন? তোর বর বলেনি?
রাহা বলল
‘ নাহ। তোমার খিটখিটে মার্কা ভাই রেগে আছে আমার উপর।
তাননা বলল
‘ ঝগড়া শুরু হয়েছে তোদের আবার?
রাহা মাথা নামিয়ে মিটমিটিয়ে হাসলো।
যাহহ, ঝগড়া হয় আবার ভাব ও হয়। ভাবের কথা বলা যায় নাকি? শরম করে।

তাননা কাকে যেন ফোন করল। সে আবার রাগ দেখিয়ে বলল
‘ আর আসার দরকার নেই। তোর বরকে ফোন দে। শালা কি বসে বসে সিমেন্ট গিলছে নাকি?
রাহা চোখ ছোট্ট ছোট্ট করে রাখলো। বলল
‘ ওহ আপু নোহা ও আসছে।
তাননা জবাব দিল না। রাহা বলল
‘ ঈশান ভাই?
ঈশান মাথা নাড়িয়ে বলল
‘ হ্যা।
রাহা খুশিতে কি করবে ভেবে পেল না। রোয়েনের দিকে ফিরতেই দেখলো রোয়েন নেই। কোথায় গেল? রাহা সবুজ ঘাসের উপর পা ফেলে গুহার সামনের দিকে চলে গেল। ইতোমধ্যে অনেকে গুহায় ঢুকে পড়েছে। ডাক্তার ও? রাহাকে রেখে চলে গেল?

রাহার ভুল ভাঙলো পরে। রোয়েন ওই জঙ্গলের মতো জায়গাটার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কি গাছগুলো যেন পরখ করছে। রাহা দৌড়ে গেল। রোয়েন তাকে আসতে দেখে সরে দাঁড়ালো। আসার কি দরকার? এখন আর রোয়েনকে প্রয়োজন নেই। নোহা আসলে তো ডাক্তার বেঁচে আছে নাকি সেটা খোঁজ নেওয়ার সময় ও হবে না রাহার। রোয়েন গটগট করে হাঁটলো। রাহা কপাল চাপড়ে বলল
‘ আল্লাহ গো তুমি আমায় কার জালে ফাঁসালে? এই ব্যাটা ভালো কথায় ফুলে বসে থাকে।
নোহা দৌড়ে দৌড়ে আসলো তাননাকে দেখে। তাননা আঙুল দেখিয়ে বলল
‘ জড়িয়ে টড়িয়ে ধরবিনা। আমরা চলে গেলেে আসতি।
সোয়েভ বলল
‘ তুননু সোনা রাগিস কেন ভাই? আজকের রাত এখানেই কাটাবো। কাল সকাল সকাল রওনা দেব।
তাননা বলল
‘ ধুরর হ। আমার একটা বাচ্চা আছে নাহ? ওকে নিয়ে আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। রাত নামলে আমার ছেলেকে বাইরে নিয়ে ঘুরতে পারব না আমি। ওর ঠান্ডা লেগে যাবে।
ঈশান বলল
‘ আচ্ছা ঠিক আছে। এখন ঝগড়া রাখুন। চলুন। রোয়েন কোথায়?
নোহা বলল
‘ রোয়েন ভাইয়ারা চলে এসেছে?
ঈশান বলল
‘ হ্যা। ওইদিকে আছে। যাও।
নোহা ওইদিকে দৌড়ে গেল। রাহাকে দেখে চিল্লিয়ে ডাকল
‘ রাহাপু কাম কাম বেবি।
রাহা বলল
‘ তুই আয় বেয়াদব। আমি তোর বড়।
নোহা দৌড়ে গেল। রাহাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ কত্ত মিস করেছি জানো?
রাহা বলল
‘ ছাড়। জুনিত আর রিহান ও আসছে। একা একা আসতে পারবে? তোদের সাথে নিয়ে আসলি না কেন?
নোহা বলল
‘ ওদের আসার কথা ছিল না। কিন্তু সবাই যাচ্ছি শুনে রাগ করে ফেলল দুজন। পরে রোয়েন ভাইয়া ওদের চলে আসতে বলল। ওরা এসে পড়বে এক্ষুণি। সে যাইহোক ওদের দুজনের জন্য দুইটা পাহাড়ি মেয়ে খুঁজে নেব কি বলো?
রাহা বলল
‘ যাহ বেয়াদব। আমার ভাইরা এখনো ছোট।
রাহা বলল’ ছোট্ট হলে কি হবে? সব বুঝে।
রাহা হাসলো। বলল
‘ ইউনিভার্সিটিতে উঠেছে, বুঝবে না? ছোট আছে এখনো?
রোয়েনের ডাক পড়লো। নোহা আসবে কি আসবে না?
নোহা রাহাকে বলল
‘ কি হয়েছে? তোমাকে ডাকছে না কেন?
রাহা হেসে বলল
‘ ধুরর ঢিলা ভাই তোর। হুটহাট কারণে অকারণে রাগ করে।
রোয়েন পা ফেলে ফেলে যেতে যেতে বিড়বিড় করল
‘ বলেছি না নোহাকে ফেলে আর কিছু লাগবে না। হলো তো?

জুনিত আর রিহান এসে পৌঁছালো বেশ খানিকক্ষণের মধ্যে।
সবাই পা বাড়ালো গুহার দিকে।

আলুটিলা গুহা বেশ পরিচিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। আকাশ, পাহাড় আর মেঘের মিতালি এখানে মায়াবী আবহ তৈরি করে। আলুটিলা রহস্যময় সুড়ঙ্গে যেতে হলে পর্যটন কেন্দ্রের টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। ঈশান টিকেট কেটে নিল সবার জন্য।

গুহার ভিতর সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। তাই যাওয়ার আগে অবশ্যই মশাল নিয়ে যেতে হয় । তাই আগে থেকে সব রেডি করে রেখেছিল তাননা আর ঈশান।

এই আলুটিলার সুউচ্চ পর্বতের সর্পিল আকারে আঁকা-বাঁকা রাস্তার দুই ধারে সবুজ বনাঞ্চল, সারি সারি উঁচু-নিচু পাহাড় আর লুকিয়ে থাকা মেঘ যে কারো মনকে চুরি করবে। রাস্তা দিয়ে মিনিটখানে হাঁটলেই চোখে পড়বে একটি সরু পাহাড়ি পথ। সে পথ দিয়ে হাঁটা ধরলো সবাই। রাহা দৌড়ে গিয়ে রোয়েনের পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করলো। পেছনে তাননা ঈশান থাকায় হাত ধরতে পারলো না। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নেমে গেছে একটি পথ।
এই পথটি বেয়ে নিচে নামলেই চোখে পড়বে একটি ছোট ঝরনা। ঝরনার পানি নেমে যাচ্ছে নিচের দিকে ঝিরি বরাবর। তবে এখানে পাহাড়ি লোকজন ঝরনার পানি আটকে রাখার জন্য একটি বাঁধ দিয়েছে। তারা এই পানি খাবার ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে। বেশ পরিষ্কার পানি। অবশ্য খাওয়ার আগে আবার ও পরিশোধন করে নিতে হয়।
প্রায় ৩৫০টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে পরে পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত সেই আলুটিলা গুহা। আলুটিলা গুহায় যাওয়ার জন্য আগে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে হতো গুহামুখে। কিন্তু এখন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন একটি পাকা রাস্তা করে দিয়েছে। যার ফলে খুব সহজেই হেঁটে যাওয়া যায় গুহামুখে।
হাঁটতে একসময় পা ব্যাথা করে উঠলো তাননার। ঈশান বলল
‘ কষ্ট হচ্ছে?
তাননা বলল
‘ নাহ। জিশুকে কিছুক্ষণ হাঁটতে দিন। কোল থেকে নামিয়ে দিন।
ঈশান বলল
‘ না। ওর পা ব্যাথা করবে। আপনাকে রাতে ঘুমাতে দেবে না। চলুন। পা ব্যাথা করলে বলবেন।
তাননা বলল
‘ আচ্ছা।

আলুটিলা একেবারেই পাথুরে গুহা, তাই খুব সাবধানে পা ফেলে সামনে এগুতে হয়। কারণ সুড়ঙ্গের ভিতরে কোনো আলো নেই। সুড়ঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল এবং পাথুরে। এর তলদেশে একটি ঝরনা প্রবাহমান। তাই খুব সাবধানে মশাল বা আলো নিয়ে গুহা পাড়ি দিতে হবে। পা ফসকে গেলেই আহত হতে হবে। তবে অন্য কোনো ভয় নেই। গুহাটি একেবারেই নিরাপদ। দেখতে অনেকটা ভূগর্ভস্থ টানেলের মতো, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহার ভিতরে জায়গায় জায়গায় পানি জমে আছে, রয়েছে বড় বড় পাথর। গুহাটির এ পাশ দিয়ে ঢুকে ও পাশ দিয়ে বের হতে সময় লাগবে প্রায় ১৫ মিনিট।
তাননা আর জিশানকে ভেতরে যেতে দিল না রোয়েন। ওখানে বাচ্চাদের জন্য সতর্কতা আছে। ঈশান ও সমর্থন করলো। তাননা জিশানের কথা ভেবে গেল না। তবে জিশানের কান্না থামলো না।

রাহা আর নোহাকে বারণ করায় ওদের চেহারা দেখার মতো হলো। পরে ঈশান নিয়ে গেল ওদের। জুনিত আর রিহানের হাতে ও মশাল। পাথুরে পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিল সবাই। অন্ধকারাচ্ছন্ন আদিম যুগের গুহার মতো ভেজাক্ত মেঝে গুহার মধ্যে। মাঝখানে সুরঙ্গটি দেখলেই গায়ে কাঁটা দেয়। কিন্তু কি মজার!
রাহা কিছু অদ্ভুত রকমের গাছ দেখতে পেল। সেগুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখল। নোহা টের ও পেল না। রাহা গাছগুলো ছুঁয়ে দেখতে দেখতে ধমকালো গলা ভেসে আসলো। মশাল হাতে কেউ একজন তার দিকে তেড়ে এসে বলল
‘ রাহা আমরা সবাই চলে যাচ্ছি।
রাহা ঘাড় ঘুরিয়ে রোয়েনকে দেখে হাসলো। বলল
‘ যান। আমি যাব না। রোয়েন বলল’ আচ্ছা।
রাহা দৌড়ে গেল রোয়েন পা বাড়ানোর আগে। দ্রুতগতিতে দৌড়ে গিয়ে পিঠ জড়িয়ে ধরে নাক ঢলে দিয়ে বলল
‘ ডাক্তার যেখানে, ডাক্তারের বউ ও সেখানে।
রোয়েন কোনো কথা বলল না। শুধু একটু করে রাগটা কমালো। রাহা উল্টাপাল্টা কিছু করলে সে আবার রাগ করে ফেলবে ভেবে রাখলো।
এত লম্বা পথ হেঁটে গুহা ভ্রমণ করতে গিয়ে সবার দেখা মিললো বাঁদুড়ের সাথে । কিছু নাম না জানা অদ্ভুত পাখির। জুনিত আর রোয়েন ছবি তুলায় মগ্ন। রোয়েন ক্যামেরা ঝুলিয়ে রেখেছে গলার সাথে। ছবি তুলায় মনোযোগ নেই তার। চারপাশটা উপভোগ করতে ব্যস্ত সে।
জমে থাকা পানির মাঝখানে বিশাল আকৃতির পাথরটার উপর দিয়ে হাটলো রাহা আর নোহা।
রোয়েন দুজনকেই বলল
‘ যদি হাত পা ভাঙে আমি নেই।
রাহা বলল
‘ মিথ্যে বলেন কেন? আপনি তো আমাদের সামনেই।
রাহার কথা শুনে হাসলো সবাই। রোয়েন ভারী রকমের রাগ করলো। কি পেয়েছেটা কি রাহা? আর কথা বলতে আসুক?
অন্ধকারাচ্ছন্ন পিচ্ছিল পাথুরে গুহার ভেতর ঘুরাঘুরি শেষে সবাই চলে আসলো।
ঈশান তাননার কাছে এসে বলল
‘ আপনাকে ছাড়া শুধু একটা জায়গা ঘুরলাম। আর ঘুরব না। আপনাকে ও নিয়ে যাব। কথা দিলাম।
তাননা হাসলো। সবাই থাকায় লজ্জা পেয়ে গেল। নোহা আর রাহা বলে উঠলো
‘ কেয়া বাত হ্যা জিজু।
ঈশান হেসে ফেলল।

খাগড়াছড়িতে একদিন কাটিয়ে তারপরের দিন সকাল সকাল সবাই পাড়ি জমালো রুইলুই পাড়া বা সাজেকের উদ্দেশ্যে। সেখানের রুইলুই রিসোর্টে তারা বুকিং করে রেখেছে। রুইলুই পৌঁছাতে হলে স্থানীয় চান্দের গাড়িতে যেতে হবে। দূরত্ব প্রায় ৫০ কিমি.। খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ডে চান্দের গাড়ি পাওয়া গেল। এক গাড়িতে দশ পনের জন করে। হয়ে ও গেল। তারা মোট নয়জন। আর দুইজন আপনাআপনি যোগাড় হলো। তারা ও সাজেক যাবে, তবে তারা কলাংক পাড়ার রিসোর্টে উঠবে সবার আগে।

সকাল ১১টার আর্মি এস্করটে ওদের জিপ সহ অন্যান্য যাত্রীবাহী গাড়ি সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। অনেকে জিপের ছাদে বসতে চায়। কিন্তু আর্মিরা নিষেধ করে। রুইলুই পাড়ায় পৌঁছে বিপুল মুগ্ধতায় বাকহারা হয়ো পড়লো রাহা।
সূর্যের ঝলমলে আলো। মেঘের প্রতিফলিত আলো এক চমৎকার দৃশ্যের অবতারণা করে। লাল-সাদা নানা ফুল ফুটে আছে পুরো রুইলুই পাড়ায়। রিসোর্ট আর মেইন রোডের সঙ্গেই। এসবের মধ্যেই শুভ্রসাদা মেঘের সারি! এক মোহনীয় দৃশ্য! চম্বুকময়তার আবেশীয় পরিবেশ কখনও ভুলে যাওয়ার নয়! রিসোর্টে উঠে ঘরে ঢুকতেই মনো হলো এক ভিন্ন জগতে পা রেখেছে তারা। কি মোহনীয় রূপে ভরা চারপাশ। রোয়েনকে দেখে হুশ ফিরলো রাহার। রোয়েনকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। অনেক জার্নি করেছে তাই হয়ত। রাহার সামনাসামনি এসে ক্লান্ত গলায় সে বলল
‘ রাহা তোমাকে একটু ধরি।
রাহা হেসে ফেলল হঠাৎ।
রোয়েন চোখবন্ধ করে গলা কাত করে বলল
‘ ধরিনা? নাহলে বলো, চলে যাচ্ছি।
রাহা আবারও হাসলো। অতঃপর নীরবে সম্মতি পেয়ে রোয়েন রাহাকে জড়িয়ে ধরল। বিড়বিড় করে বলল
‘ ক্লান্তি তুই রাহার কাছে চলে যাহ ভাই।

চলবে
সাজেক৷ সাজেক, এবার শান্তি পাঠক? ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here