এবং_তুমি পর্ব ১০

0
1112

গল্পের নাম— #এবং_তুমি♥
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব–১০

সেদিনের পর থেকে ইশান স্যারকে ইগনোর করা যেনো আমার প্রথম ও প্রধান ডিউটি হয়ে গিয়েছে। সে যতক্ষণ ঘরে থাকবে ততক্ষণ রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকি। তিনবেলা খাবার সময় ও রান্নাঘরে থাকি। তার সামনে পড়ার মতো কোনো স্কোপ ই রাখি নি। শুধুমাত্র রাতে ঘুমাতে গেলেই ও আমাকে দেখতে পায়। কিন্তু আমি তখন গভীর ঘুমে বিভর। বলতে গেলে কোনোরকম কথাবার্তা ই হয় না। আমার ইগনোরেন্স আদৌ ইশান বুঝতে পারছে কি না তা আমার জানা নেই। হয়তো পারছে। সে অনেকবার আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো। প্রতি সকালে নানা বাহানায় আমাকে ডেকেছে। আমি যাই নি। না শুনার ভান করে ছিলাম। আমার কেনো মনে হচ্ছিলো বাড়ীর বাকিদের চোখেও বিষয়গুলো পড়ছে।
এর মধ্যে খুব বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম। সেদিন দাদিমা ফোন দিয়ে বললেন,

—কি গো নাতবউ, তুমি নাকি নাতির প্রেমে ডুবে মধু খাচ্ছো?

আমি রসিকতার সহিত বললাম,
— আমার এত খারাপ দিন আসে নি আপনার বাঁদরমুখো নাতির প্রেমে পড়বো।

—ওহো,তাই নাকি? তাহলে আমার নাতির শার্ট টার্ট পরে কে হাটাহাটি করে? ভূত টুত হবে হয়তো, তাই না? কি বলো

—যান। কি সব বলেন আপনি?

— ইশশ, সেতি দেখি লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে।

দাদী খিল খিল করে হাসলেন। আমি তখন এত লজ্জা পেলাম যে মুখ দিয়ে কথাই বের হলো না। দাদী জানালেন, মেঝ ভাবীর বাদর দুটো আমাকে ইশানের কাপড় পরতে দেখেছে। আর তারাই এ কথা উনাকে বলেছে। আমার খুব রাগ উঠলো। এত দুষ্টু কেনো এ দুটো? না জানি আর কাকে কাকে বলেছে? ভয় পেয়ে দুটো ডেকে আনলাম। অবশেষে তাদেরকে দশ টাকা করে বিশ টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করালাম। বাপরে বাপ কি ভাব ওদের, দশটাকা মানছিলোই না। বিশ টাকা করে দিতে হবে। কত কষ্টে যে মানাতে পেরেছিলাম সেটা আমিই জানি। করুণ এই কাহিনী কাউকে বলাও যাচ্ছিলো না। দুঃখে কান্না পাচ্ছিলো।

আজ সকালে দারুণ কান্ড ঘটেছে। শাশুড়িমা আমাকে আর ইশানকে সাথে বসিয়ে নাস্তা খেতে বসেছেন। খাবার টেবিলে তিনি প্রথম যে কথাটি বললেন তা হলো,

—ইশান, তোমার সাথে খুবই জরুরী কথা আছে আমার। তোমাকে তো আজকাল পাওয়া ই যায় না।

— মা, আসলে অফিসে খুব কাজের চাপ। নতুন বিয়ের প্রজেক্ট এসেছে। এবার পঞ্চাশ লক্ষ টাকার প্রজেক্ট। অলরেডি চেক দিয়েও দিয়েছেন। সেজন্যই এত বেশি চাপ।

—সে কি, বলিস কি? এত টাকা! লোকটা নিশ্চই বড়লোক হবে।

— হু।

—একদিন নিয়ে আসিস। এত বড় কাজ দিয়েছে ডাকে তো দাওয়াত করানোই যায়। কি বলিস?

— হু।

— হু হু কি করছিস? তোর কাজের চাপ বেড়েছে যখন তোর বউকে নে।

ইশান খাবার বন্ধ করে দিলেন। থমথমে মুখে শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে রইলেন। শাশুড়িমা বললেন,

—এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো? তুই কি আমাকে ওল্ড মাদার-ইন-লো, ভেবেছিস যে বিয়ে হয়েছে দেখে বউদের কাজ করতে দেওয়া যাবে না? তাদের ঘরের কাজ করতে হবে। শুন এমন ভেবে থাকলে মাথা থেকে ঝেড়ে দূরে ফেলে দে। আমি নিউ জেনেরেশনের শাশুড়ি, আমার বড় দুই বউ এর একটা মাস্টার্স পাস, একটা অনার্স। সেখানে ছোট ছেলের বউ শুধু ম্যাট্রিক পাস এমন তো হবে না। তোর বউকে বল, সে যদি পড়ালেখা করে অনার্স পাস না করে তাহলে তাকে আমার ঘরের বউ মানা হবে না। আর তার নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেকেই চালাতে হবে।

— ও নিজেরে খরচ কীভাবে চালাবে?

—-কেনো? আগে কীভাবে চালাতো?

—আগে তো আমার অফিসে চাকরী করতো। কিন্তু এখন,,

—এখন তখন কিছুই না। সে আবার তোর ওখানেই কাজ করে পড়ালেখা চালাবে। সাথে সংসার। ক্ষতি কি?

—কিন্তু মা ও একসাথে সব পারবে? অফিস টা নাহয় বাদ দিয়ে দিক। তাছাড়া আমি নতুন কর্মচারীর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দিয়েছি।

ইশানের মা পানির গ্লাস টা টেবিলে রেখে দিলেন। শান্ত ভঙ্গিতে বললেন,

—তুই জানিস তোর বাবা যখন আমাকে ম্যাট্রিক পাস করিয়েছে। তখন মোশারফ(বড় ছেলে) চার বছরের ছিলো আর সোহাগ( মেঝো ছেলে) সাত মাসের। তোর এই মা তখন সংসার পড়ালেখা বাচ্চা সব এক হাতে সামলিয়েছে। তাহলে সে কেনো পারবে না?

— কিন্তু মা…

—-কোনো কিন্তু ফিন্তু নেই। আমি মানুষের কথা শুনতে পারবো না যে আমার ছোট বউ ইন্টারও পাস করে নি। আমার প্রেস্টিজ ফেস্টিজ ফুশ হয়ে যাবে। তাছাড়া তুই বলার কে? এই যে নতুন বউ গোমটা সরাও। শুধু ঘোমটা দিলেই কাজ হয় না। আজকাল মেয়েদের সব কিছু জানতে হয়। আমাকে দেখেও তো কিছু শিখতে পারো তাই না? দেখো এ বয়সেও কত সুন্দর ফিটফাট ফিগারের। সেখানে যদি তুমি আমার থেকে বেটার না হতে পারো তাহলে তো আমার ছেলের বউ হওয়ার যোগ্যতা ই নেই।

আমি চুপ রইলাম। অথচ আমার তখন চেচিয়ে বলা উচিত ছিলো যে হ্যা আমি কাজ করতে চাই,পড়ালেখা করতে চাই। শাশুড়ি মা বললেন,

— আমি যা বলে দিয়েছি। এটাই ফাইনাল। তোর বউকে বলবি আজ থেকে কাজে যায়, আর কাল থেকে যেনো কলেজে যায়। নাহলে যেনো আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

আমি ভীষণ খুশি হলাম। খুশিতে মনে হচ্ছিলো ডানা মেলে উড়ছিলাম। ইচ্ছা করলো শাশুড়িমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাই। কিন্তু হলো না, তিনি রাগে গজগজ করতে চলে গেলেন। তার রাগ টা আমার উপর ছিলো। পড়ালেেখার প্রতি আগ্রহ নেই দেখে। অথচ তখন আমি খুশিতে কথাই বলতে পারছিলাম না। ইশান সকাল সকাল চলে গিয়েছেন। আমার ডিউটি সবসময় ২ টা থেকে শুরু হতো। কারণ নয়টা থেকে ১ টা পর্যন্ত কলেজ করতাম। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। ১ টা ৩০ এ রেডি হয়ে শাশুড়িমার রুমে গেলাম। বেশ খানিক সময় পর ইতস্ত গলায় বললাম,

— মাদার-ইন-লো আমি কি যাবো?

শাশুড়িমা আমার দিকে ঘুরলেন। ঘুরেই চিৎকার দিয়ে উঠলেন। আমি চমকে গেলাম। কি হলো কি হলো? আমি আবার উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলেছি?

— সর্বনাশ! এসব কি পরে বাহিরে যাচ্ছো? আর মুখের এ অবস্থা কেনো? চুলের কি হয়েছে? এই তোমাকে কি বিয়ের সময় মেক আপ টেক আপ দেওয়া হয় নি? আমি নিজে এত ব্রান্ডেড কসমেটিক্স কিনে দিয়েছিলাম। সেগুলার কি হয়েছে? এই মেয়ে কি হলো কথা বলো না কেনো?

আসলে হয়েছে কি, আমি কি পরবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই সুতির শাড়ী আর কোনোরকম পেচিয়ে খোপা করে নিয়েছিলাম। বিয়ে হয়েছে এখন তো শাড়ী ই পরতে হবে তাই না। শাশুড়িমা এসব দেখেই রেগে গেলেন। আমাকে নানান কথা শুনিয়ে মিস সুইটিকে ফোন দিলেন। মিস সুইটি হলেন পার্লারের মহিলা। আমার শাশুড়ির খাস মেক আর্টিস্ট। শাশুড়ির সাজগোজ এর পেছনে এ মহিলার লম্বাচওড়া হাত রয়েছে। তিনি ই এসব শিখিয়েছেন। কিন্তু আমার শশুড় এ মহিলাকে একদম সহ্য করতে পারেন না। তিনি বলেন তার সিধাসাদা বউকে নাকি এই কুটনি মহিলা নষ্ট করেছেন। এসব আবার তিনি আড়ালেই বলেছিলেন। শাশুড়ির সামনে আবার খুব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছিলেন মিস সুইটিকে। অথচ আমাকে ফিসফিস করে বলেছিলেন, বুঝেছো বউ এই মহিলা কোনদিন মরবে সে দিনের অপেক্ষায় আছি। কত ভালো ভালো মানুষ মরে যায় আর এদিকে দেখো এর মরার কোনো খবর ই নেই। ।আমার তখন এত হাসি পাচ্ছিলো। বসে বসে শুধু উনাদের কান্ড ই দেখেছিলাম।

.

— আয়না দেখো এবার! দেখো তখন কেমন লাগছিলো আর এখন কেমন লাগছে।

আমি আয়নার দিকে তাকালাম। পরপর দুবার চোখ বন্ধ করে চোখ খুললাম। আমি কি সত্যি এত সুন্দর? এ আমার ভ্রম নয় তো? নিশ্চই স্বপ্ন দেখছি। শাশুড়ি মা বললেন,

— শুনো মেয়ে, আমার ছেলের বউ হয়ে থাকতে হলে তোমাকে আমার মতো হতে হবে। এসব গাইয়া,ক্ষ্যাত সেজে থাকলে চলবে না। তুমি দেখো না, বড়বউ আর মেঝোবউ রোজ আমার সাথে রুপচর্চা করে। কাল থেকে তুমিও করবে। কাল নয় বরং আজ থেকেই করবে। মনে থাকবে তো?

আমি মাথা নাড়ালাম। ভীষণ লজ্জা লাগছে। আবার কেমন অজানা ভয় ও হচ্ছে। ভয়,সংকোচ,লজ্জা নানারকম মিশ্র অনুভূতি নিয়ে বের হলাম। পথে নানারকম কল্পনা-ঝল্পনা করে নিলাম। কিন্তু তখন সব অনুভূতি ঠুস হয়ে হাওয়া হয়ে গিয়েছিলো যখন সেখানে যেয়ে দেখলাম মাধবি আপা ইশান স্যারের হাতের উপর মাথা রেখে কাঁদছেন। দুজনে মুখোমুখি চেয়ারে বসে ছিলেন। স্যারের হাত ছিলো টেবিলের উপর। আপা সেই হাতের উপর মাথা রেখে কাঁদছেন। আমার বুক মুচড়ে উঠলো। শরীর অটোমেটিক কাঁপতে লাগলো।

#চলবে….

[সরি ফর লেইট,গাইজ। এতগুলো সরি।এসাইনমেন্টের চাপে গল্প ই লেখা হচ্ছিলো না। রিচেক করিনি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। সকালে বোনাস পর্ব♥ কার কার চাই? যারা চান কমেন্টে জানান। আপনারা চাইলেই দেওয়া হবে। গঠন মূলক মন্তব্য অবশ্যই জানাবেন।]

®সোনালী আহমেদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here