#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ১৬
লিখাঃসামিয়া খান
“তোমার ঠোঁট এতো লাল কেনো রোদসী?”
মৃদুলের এতো ঠান্ডা স্বরে করা প্রশ্নতে অনেকটা হকচকিয়ে গেলো রোদসী।মৃদুলের কণ্ঠটা বড্ড অচেনা লাগছে এখন।আমতা আমতা করে রোদসী জবাব দিলো,,
“ঠোঁটে রেড কালারের লিপস্টিক দিয়েছি তাই।”
গলার স্বরটা স্বাভাবিক রেখেই মৃদুল আবার জিজ্ঞেস করলো,
“তাহলে তোমার লিপস্টিক এতোটা ছড়ে গেলো কীভাবে?
মৃদুলের এসব কড়া প্রশ্নে অনেকটা অবাক হলো রোদসী।মৃদুলকে এখন বড্ড অচেনা লাগছে।তারপরও রোদসী এসব বিষয় আমলে নিলো না।কোন জবাব না দিয়ে কাজের লোককে ডেকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি আনিয়ে ঢকঢক করে পান করে গ্লাসটা দিয়ে দিলো।মাথাটা সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজলো।অথচ মৃদুলের করার প্রশ্নের জবাব দিলো না।রোদসীকে পুরোটা সময় এক দৃষ্টিতে অবলোকন করে গিয়েছে মৃদুল।
“বাহিরে নষ্টামী করে আসতে খুব ভালো লাগলো তাইনা রোদসী?”
“মৃদ তোমার মাথা খারাপ হয়েছে কী বলছো এগুলো?”
আর ধৈর্য্য রাখতে পারলো না মৃদুল।হঠাৎ করে রোদসীকে সোফা থেকে উঠিয়ে গালে টাস টাস করে চার পাঁচটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
“আমার মাথা খারাপ হয়েছে তাইনা?আর তোর?বাহিরে অন্য পুরুষকে শরীর বিলিয়ে দিয়ে আসাতে নিজের ওপর গর্ব হচ্ছে তোর?”
“মৃদ মুখ সামলিয়ে কথা বলো।”
“আমি মুখ সামলিয়ে কথা বলবো তাইনা?আর তুই তোর শরীর বিলিয়ে আসবি”।
কথাগুলো বলে মৃদুল রোদসীকে আরো কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।টাল সামলাতে না পেরে রোদসী মেঝেতে পরে কাতরাতে লাগলো।ইতিমধ্যে সেখানে বাড়ীর সকলে উপস্থিত হয়ে গিয়েছে।হিম আর মেহেলতা রোদসীকে ধরতে গেলে মৃদুল এক ধমক দিয়ে তাদের থামিয়ে দেয়।
“মৃদ কী হয়েছে? রোদসীকে মারছিস কেনো?নিজের বউকে এভাবে যারা মারে তারা জানোয়ার।”
“হ্যাঁ আমি জানোয়ার ভাবী।আর রোদসী খুব ভালো।ওকে জিজ্ঞেস করো ও বাহিরে কী করে এসেছে?”
“কী করেছিস তুই রোদসী?মৃদ এভাবে রেগে আছে কেনো?”
মেহেলতার করা প্রশ্নে কোন জবাব দিলোনা রোদসী।চুপচাপ গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো।রোদসীর বুঝতে বাকী নেই যে মৃদুল ওর আর আহাদের এক্সট্রা ম্যারিটিয়াল এফিয়ার সম্পর্কে জেনে গিয়েছে।
হুট করে কে যেনো রোদসীর বাহু ধরে তাকে টেনে তুললো। চোখতুলে রোদসী দেখতে পেলো ব্যাক্তিটা আর কেও না আহাদ।রোদসী আরো অবাক হয়ে গেলো যখন আহাদের পাশে রোদসীর বাবা,আর মাকে দেখতে পেলো।নিজের কান্না আর ধরে রাখতে পারলো না রোদসী।বেশ উচ্চস্বরে কান্না করে দিলো।রোদসীর বাবা এগিয়ে এসে রোদসীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,,
“কাঁদিসনা মা।তুই কেনো কাঁদছিস?”
“বাবা দেখো মৃদুল কীভাবে আমাকে মারছে আমার কোন দোষ নেই।”
“নাহ।তোকে মারবো না?তোকে আদর করবো।আর এইযে মি.আহাদ তা বলেন তো আমার বউয়ের ঠোঁটের স্বাদ কেমন লাগলো?”
“ছিঃ মৃদ। এগুলো তুমি কী বলছো?”
“তুই চুপ থাক হিম।এখানে তোর কোন কথা নেই।কী হলো বলেন মি.আহাদ।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আহাদ খুব ঠান্ডা স্বরে বললো,
“দেখ মৃদ তুই আজকে রেস্ট্রুরেন্টে যা দেখেছিস আমি বলবো না তা মিথ্যা ছিলো।আমি আর রোদসী একে অপরকে ভালোবাসি।”
“বাহ চমৎকার। এই রোদসী তোর কয়টা জামাই লাগে রে?তুই না আমাকে ভালোবাসতি?”
“মুখ সামলে কথা বল মৃদুল।রোদসী আমার ভালোবাসা।ওর সম্পর্কে বাজে কথা বলবিনা।”
“রোদসী তোর ভালোবাসা হওয়ার আগে আমার স্ত্রী এবং আমার বাচ্চার মা।”
“তাতে কী মৃদ।তুমি কোনদিনও ঠিকমতো ভরণপোষণ করতে পারোনি আমার।তো স্বামী হওয়ার যোগ্য না তুমি?”
“কী বলতে চাও তুমি?”
“তোমার আছেটা কী মৃদ।না আছে বংশ পরিচয়। না আছে চেহারা।না আছে কোন পার্সোনালিটি।এবং টাকা পয়সা যা আছে সব অন্যের ভাড়া করা।”
“এতোদিন ধরে এই ভাবনা তোমার আমার প্রতি?”
“আগে ছিলো না।কিন্তু আহাদকে দেখার পরে হয়েছে।”
“মানে কী বলতে চাও তুমি?”
“আমি বলি মৃদ।আমার যে টাকা পয়সা আছে তাতে তোকে সাত হাঁটে বেঁচে আবার কিনে নিতে পারবো।আমি যে স্যুট গুলো পড়ি সেগুলো তুই কোনদিন চোখেই দেখিসনি।আমার চলেফেরার যা স্টাইল তা তুই কোন জনমে রপ্ত করতে পারবিনা।দেখ আমার সিক্স প্যাক আছে।আর নিজের দিকে তাঁকিয়ে দেখ, ভুড়ি বের হয়ে আসছে।নিজের দিকে তাঁকা আর একবার আমার দিকে।রোদসীর মতো মেয়েকে তুই কখনো ডিজার্ভ করিস না।”
কথাগুলো শুনে মৃদুল কিছুই বললো না আহাদকে। শুধু শান্ত ভঙিতে রোদসীর কাছে এগিয়ে গিয়ে রোদসীকে জিজ্ঞেস করলো,
“আহাদের সাথে সহমত তুমি?”
“আমি সহমত মৃদ।আমি ডিভোর্স চাই!”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মৃদুল বললো,
“ঠিক আছে আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো।কিন্তু বাবু হতে দেও তারপর।আমি জানি তুমি মা হতে চলেছো।
” নাহ।মৃদ আমি হবো না।আমি এবোর্শন করে ফেলেছি।”
,
,
,
মাদিহাকে কোনভাবেই চুপ করাতে পারছেনা হিমাদ্রি। কখন থেকে কেঁদে যাচ্ছে।বেশ চেঁচামেচির পরে অবশেষে পরিবেশটা ঠান্ডা হয়েছে।মৃদুলের বাবা,বড় ভাই বিজয় এবং আহনাফ পারলে ওখানেই খুন করে দিতো রোদসী আর আহাদকে।কিন্তু আহাদ পুলিশকে ফোন করে দেওয়ায় কিছু করতে পারিনি।তখুনি আহাদ লোক লাগিয়ে একদম রোদসী আর মৃদুলের মিউচুয়াল ডিভোর্সড করিয়ে নিয়েছে।সেই ঘটনার এখন দুই ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে।বাড়ীর পরিবেশটা ভীষণ নিস্তব্দ।শুধু মাদিহার কান্নার স্বর ভেসে আসছে।হিমাদ্রি মাদিহাকে শান্ত করতে চেয়েও পারছেনা।মূলত রোদসী যাওয়ার সময় মাদিহা রোদসীর কোলে যাওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আহাদ কোলে নিতে দেয়নি।মাদিহার ও মৃদুলের চোখের সামনে দিয়ে রোদসী আহাদের হাত ধরে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
“মা আমার কান্না থামাও।এতো কাঁদলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।”
অবশেষে অনেক কষ্টের পরে মাদিহার কান্না থামিয়েছে হিমাদ্রি। তাও ফুপাচ্ছে মেয়েটা।মার জায়গা কেও নিতে পারেনা।এখন মাদিহার তার মায়ের প্রয়োজন কিন্তু নেই।
“মাদিহাকে আমার কাছে দে হিমাদ্রি। ”
বেশ অনেকক্ষণ পরে মৃদুল মুখ খুললো।হিমাদ্রি মাদিহাকে নিয়ে মৃদুলের কোলে দিলে মৃদুল বুকে জরিয়ে নিলো।হিমাদ্রি খেয়াল করলো মৃদুল কাঁদছে।মৃদুলের চোখের পানিগুলো তার গাল বেয়ে মাদিহার শরীরে পরছে।
“হিম মাদিহা যেনো কোনদিন জানতে না পারে ওর মায়ের নাম রোদসী।যে নারী নিজের সন্তান রেখে নিজের সুখ খোঁজে সে মা না, জল্লাদ।”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে হিমাদ্রি অকপটে জবাব দিলো,
“মৃদ আমি তোমার স্ত্রী না হতে পারি।কিন্তু আজ থেকে আমি মাদিহার মা। তুমি বিয়ে করলেও মাদিহা আমাকে মা বলবে সারাজীবন।অন্য কাওকে না।”
চলবে,,,
বিঃদ্রঃএই একটা পর্ব আমি কোনভাবেই গুছাতে পারছিলাম না।কারণ এমনভাবে করতে চায়নি যাতে জিনিসটা সিরিয়ালের মেলোড্রামা লাগে।অবশেষে সফল হয়েছি।লিখতে গেলেই আমার সব গুলিয়ে যেতো।আর আমার পরীক্ষার রুটিন হয়ে গিয়েছে।এখন গল্প দিতে লেট হবে আমার।তাও ট্রাই করবো তাড়াতাড়ি দেওয়ার।