অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:5

#অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:5
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤



বিকাল পাচঁটা, সবাই ছাদে বসে আছে।।পিচ্চির আকিকা যেহেতু পরশো সো সবাই মিলে কোথাও ঘুরে আসার ইচ্ছে সবার কিন্তু বাধ সাধলো অদিতি আর আয়ান।।দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া চলছে…আর বাকি সবাই গালে হাত দিয়ে বসে আছে…এদের থামানো যে দুষ্কর তা এতোক্ষণে বুঝা হয়ে গেছে তাদের…

আমি বলছি তো আমি ঝরনা দেখবো সো আমি হিমছড়ি তে যাবো, ব্যস।

আরে ঝরনা দেখার জন্য চট্টগ্রাম থেকে অতদূর কক্সবাজার যাওয়ার কোনো মানে আছে নাকি??এই সীতাকুন্ডেই তো ঝরনা আছে।

আজিব তো,, আপনার সমস্যা কি বলুন তো??কথায় কথায় ঝগড়া করেন কেন মেয়েদের মতো??(ভ্রু কুচকে)

আমি ঝগড়া করছি না যুক্তি দিচ্ছি।।আমরা চট্টগ্রামের বাইরে যাচ্ছি না ইটস ফাইনাল।।

অবশ্যই যাচ্ছি….এখানে দেখার মতো কি আছে শুনি??কক্সবাজারে হিমছড়ি আছে,,ইনানী বিচ আছে,,বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক আছে,,আর….

স্টপ…একেই বলে মেয়ে মানুষের বুদ্ধি হাঁটুর তলায়।।আরে…পরশো পিচ্চির অনুষ্ঠান।।কক্সবাজার যেতে গেলে তো আমাদের কালকের সারাটাদিন গাড়িতেই কেটে যাবে…. ঘুরবো কখন??আর আসবোই বা কখন??কিছু না ভেবেই…কক্সবাজার যাবো,, কক্সবাজার যাবো(মুখ ভেঙিয়ে)যত্তসব।।

আয়ানের কথায় যে যুক্তি আছে অদিতি বেশ বুঝতে পারছে কিন্তু সে এই কানা ঢেড়শের কাছে হার মেনে যাবে তা হতেই পারে না কিছুতেই না।।

না আমি কিছু জানি না…আমি কক্সবাজার যাবো ব্যস….আর এই হনুমানের সাথে সীতাকুণ্ড তো কিছুতেই যাবো না…নো নেভার।

কি আমি হনুমান??তো তুমি কি??আস্ত পেতনী একটা..

ইউ????

স্টপ গাইস।।কি শুরু করলি তোরা।।অদিতি তুই ও দেখি আমার মতো বেশি কথা বলা শিখে গেছিস।।এবার একটু চুপ কর।।মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যাচ্ছে…

আরে সাদি…তুই শুধু আমাকেই দেখছিস??এই বলদটাকে কিছু বলছিস না কেন??(মুখ ফুলিয়ে)

আচ্ছা আমরা একটা কাজ করতে পারি,,,কাল না হয় সীতাকুণ্ড যাই…তারপ..

নো রিয়াদ…আমি যাবো না..তোমরা এই বাদরটার সাথে শুধু সীতাকুণ্ড কেন গীতাকুন্ড গিয়েও ঘুরে আসো,, আই হেভ নো প্রবলেম…

আরে কথাটা তো কমপ্লিট করতে দাও….আমি বলছিলাম বাবুর আকিকার পর সময় নিয়ে কক্সবাজার যাওয়া যাবে।।আর সব ঘুরে দেখাও হবে…কাল গেলে তো হাতে সময় পাবে না তেমন,,,কি বল??

সুপার্প আইডিয়া,,,অদিতি রাজি হয়ে যাও তো বোন।।আর আয়ান তুইও রাজি হয়ে যা প্লিজজজ

ওকে,,,আমি রাজি….এখন এই ঝগরুটে কে দেখ রাজি হয় কি না…

আমিও রাজি..হুহ(মুখ ভেঙিয়ে)শুধু মাত্র ফাহিম ভাই বলেছে বলে…

ওয়াহ গ্রেট…এবার তাহলে শুরু করা যাক??(এক্সাইটেড হয়ে)

সাদিয়ার কথায় সবাই অবাক কি শুরু করার কথা বলছে সাদিয়া??এখনই সীতাকুণ্ডের পথে হাঁটা দিতে বলছে না তো??সবাই জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে… সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে সাদিয়া থতমত খেয়ে গেলো….আজিব তো এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে??

কি হলো?সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?(কনফিউজড হয়ে)

কি শুরু করার কথা বলছিস তুই অদিতি??এখনি হাঁটা দিবো নাকি??

নো ওয়ে সাদিয়া,,জান মাফ করো…কিছুক্ষণ আগে অফিস থেকে আসছি এখন পসিবল নয়,,

রিয়াদের মুখে “জান” কথাটা শুনেই অদিতির বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো।।কষ্টে যেন কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে।।কেন যে এমন হচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না।।না সে আর রিয়াদকে ভালোবাসে না তবু তাকে অন্যকারো পাশে দেখলে নিজের অজান্তেই বুকটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় বারবার।।এতোটা কষ্ট বুকে চেপে রাখা দায় তবু নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে সাদিয়ার দিকে ফিরে তাকালো অদিতি….

আরে রিদ চুপ করো তো…আর আপু তুই ও না, কিসব বলিস যত্তোসব ফালতু কথা।।আমি তো গেমের কথা বলছিলাম।।চল গেইম খেলি…

কি গেইম,মিস সুইট ইন্জেল?ওহ সরি এখন তো মিসেস হয়ে গেছেন আপনি…তারসাথে আরেক ইন্জিলের মাম্মাম(দুষ্টু হাসি দিয়ে)

আয়ান ভাই,,আপনার সুইট ইন্জেল এখন আর সুইট নাই….টোটালি তিতা করলা হয়ে গেছে(দাঁত কেলিয়ে)

রিদদ??কি বললা তুমি??আমি করলা??(রাগী চোখে)

হ্যা…আরে রাগ করছো কেন??জানটুস তুমি জানো না করলা কতো পুষ্টিকর।।আর মিস্টি স্বাস্থের জন্য খারাপ তাই না??তাহলে তো তোমার খুশি হওয়ার কথা…তোমাকে আমি আমার জন্য হেল্থি বললাম….

ওহ…সো সুইট অফ ইউ…আমি তো বিরাট খুশি।।এতো খুশি যে খুশির ঠেলায় আমি দারুন একটা ডিসিশান নিয়ে নিয়েছি।।

কি ডিসিশান??(ভ্রু কুচকে)

এটা শুনে তুমি তো খুশিতে রীতিমতো নাচানাচি শুরু করে দিবা ।।ডিসিশানটা হলো…আজ থেকে তুমি করলার জোস,,করলার সালাত,,করলা ভাজি,,করলার তরকারি….আই মিন টু সে আজ থেকে তোমার জীবন হবে করলাময়…খুশির কথা না এটা??(দাঁতে দাঁত চেপে)

নো ওয়ে(সাদিয়া ভ্রু কুচঁকে তাকাতেই)ইয়াহ ইয়াহ বহুত আনন্দ হচ্চে আমার….(মুখ গোমরা করে)

রিয়াদের কথায় সবাই হেসে উঠলো…বেচারা নিজের জালে নিজেই ফেঁসে গেছে।।অবশেষে খেলা শুরু হলো…ফারহান বোতল ঘোরাচ্ছে….আর বোতল বাবাজি ঘুরে গিয়ে পড়লো অদিতির দিকে….সাথে সাথেই চেঁচিয়ে উঠলো সবাই….

অদিতি??ট্রুথ অর ডেয়ার??(ভ্রু নাচিয়ে)

আম ব্রেভ গার্ল সো ডেয়ার।।

ওকে ওকে…দেন একটা গান কর।।অনেকদিন শোনা হয় না তোর গান,,, মনে আছে??আগে একসাথে গলা খোলে কতো গান করে বেড়াতাম??

হুমম,,,মনে আছে।।আসলে কিছু কথা ইচ্চে করলেও ভুলা যায় না মনের ভিতর দাগ কেটে যায় সারাটা জীবনের জন্য….(মুচকি হেসে)এনিওয়ে শুরু করি??

হ্যা তুমি শুরু করো….রিয়া যা তো আয়ানের গিটার টা নিয়ে আয়…ফাস্ট…

আয়ান গিটার বাজাচ্ছে আর একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে অদিতির দিকে….আর অদিতি চোখ বন্ধ করে গান গেয়ে চলেছে….

এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে সকাল বিকাল বেলা
কতো পুরোনো নতুন পরিচিত গান গাইতাম খুলে গলা
কতো এলোমেলো পথ হেঁটেছি দুজন হাত ছিলো না তো হাতে
ছিলো যে যার জীবনে দুটো মন ছিলো জড়াজড়ি একসাথে
কতো ঝগড়াবিবাদ সুখের স্মৃতিতে ভরে আছে শৈশব
তোকে স্মৃতিতে স্মৃতিতে এখনো তো ভালোবাসছি অসম্ভব
কেনো বাড়লে বয়স, ছোট্ট বেলার বন্ধু হারিয়ে যায়
কেনো বাড়লে বয়স, ছোট্ট বেলার বন্ধু হারিয়ে যায়
কেনো হারাচ্ছে সব বাড়াচ্ছে ভীর হারানোর তালিকায়।।
….
বন্ধ চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল।।নিজের মনের মধ্যে দমিয়ে রাখা চাপা কষ্টগুলোকে যেনো বের করে দিতে চাইছে অদিতি।।হ্যা,,ও হারিয়েছে…নিজের ভালোবাসা আর বন্ধুত্ব দুটোই হারিয়েছে সে।।এই কষ্টটা কি খুব কম??নিজের সবটুকু দিয়ে দিয়েছে সে তবু তাদের বন্ধুত্বটাতে আচড়ের দাগ যেন রয়েই গেছে।।সাদিয়ার চোখও টলমলে…নিজেকে তার প্রচন্ডরকম দোষী মনে হচ্ছে।।কিন্তু কি করতো সে??কি করার ছিলো??সাদিয়া রিয়াদকে ছেড়ে দিলেও কি রিয়াদ অদিতিকে নিয়ে ভালো থাকতো??একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের জলগুলো সবার অগোচরেই মুছে ফেলে সাদিয়া।।রিয়া অদিতির একপাশে বসেছে তাই ওর চোখের পানিটা রিয়ার চোখ এড়ায়নি,,,অদিতিকে রিয়ার খুবই ভালো লাগে তাই ওর চোখে পানি দেখে ওর মনটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে….নিজের অজান্তেই তার হাতটা অদিতির ডানহাতের উপর আলতো করে রাখলো।।সাথে সাথেই চোখ মেলে তাকালো অদিতি।।রিয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আবারো গাইতে লাগলো…..

আজ অবেলার অবসরে কেনো লাগছে ভীষন একা
কতো হাজার বছর তোর হাতটিকে হয় নি তো ছুঁয়ে দেখা
আমি কতো কতোবার আঁকি তোর ছবি ও মোর কল্পনাতে
আজো জ্বলে যায়,, আজো পুড়ে যায় তোর দু’চোখের অবসাদে।।
দেখ নীল নীল নীল আকাশের মতো অনন্ত হাহাকার
দেখ নীল নীল নীল আকাশের মতো অনন্ত হাহাকার
আজ বুকের ভেতর ভাঙছে ভাঙছে ভেঙে সব চুরমার
কোনো শত্রুরও যেনো প্রানের বন্ধু এমন দূরে না যায়……

অদিতির গান গাওয়া শেষ তবু সবাই নিশ্চুপ।।অদিতির গানে সবাই ভাষাহারা।।এমন নয় যে অদিতির গানের গলা আহামরি কিছু কিন্তু ওর গলায় গানের সাথে যে ইমোশনটা লেগেছিলো সেটা যেনো সবার হৃদয়ে ধাক্কা দিয়ে গেছে।।অবশেষে এই অস্বস্তিকর নীরবতার ইতি টানলো ফাহিম….

আরে সবাই হ্যাং মারছিস নাকি??গেইম কন্টিনিউ করবি না??এখনো তো আমার পালা এলোই না….

হ্যা,,লেটস স্টার্ট দা গেইম।।ফারহান তুমি বোতল নিয়ে বলদের মতো বসে না থেকে ঘুরাও তো…এই সবাই কনসেন্ট্রট কর প্লিজজ…

এবার রিয়াদের দিকে এসে বোতলটা থেমে গেলো।।সে ট্রুথ,, ডেয়ার নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে রাজি নয় সে…

ওকে,,, আমার বোন জামাই কে তাহলে প্রশ্নটা আমিই করি।।তো রিয়াদ…বল তো আমার বোন ছাড়া আর কয়টা মেয়ের পিছনে ঘুরেছিস??

কি যে বলো আপু…..তোমার বোনের পিছে ঘুরতে ঘুরতেই তো ছোট থেকে বুড়ো হয়ে গেলাম।।অন্য কারো পিছে ঘুরার সময়টা দিলো কই তোমার বোন??

রিয়াদের কথায় অদিতি হালকা হাসলো,,যাকে বলে তাচ্ছিল্য মাখা হাসি।।সাদিয়া আসলেই বড্ড লাকি,, কোনো ছেলে তারজন্য বারোটা বছর ওয়েট করেছে।।আর অদিতি তো জলে ভাসা পদ্ম,, ঢেউ আসার আগেই যে ডুবে গেছে অতলে।।সাথে ধুয়ে নিয়ে গেছে বিশ্বাস।।ভালোবাসার উপর বিশ্বাস,,আবেগ,,অনুভূতি সব কিছু।।।

শেষমেষ এলো ফাহিমের পালা।।সে আগেবাগেই ট্রুথ।।এই আয়ান যেখানে আছে সেখানে আর যায় হোক সে ডেয়ার নিয়ে বিপদে পড়তে চায় না।।।পরে দেখা যাবে এতোগুলো মেয়ের মধ্যে পেন্ট খুলে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে,,অত্যন্ত ভয়ানক একটা পোলা।।কি দরকার রিস্ক নেওয়ার??খেলতে খেলতে কখন যে আকাশে চাঁদ উঠে এসেছে আর ঘড়ির কাঁটা আটটার ঘরে পৌঁছে গেছে কেউ খেয়ালই করে নি।।সাদিয়া-রিয়াদের বাবা মা চলে আসায় বাচ্চা নিয়েও আজ তারা টেনশন ফ্রী।।সবাই মিলে এবার আয়ানকে ধরলো গান গাওয়ার জন্য তার গান দিয়েই শেষ হবে আজকের আসর….আয়ানও ধীর পরিকর কাউকে অবশ্যই তার সাথে গলা মেলাতে হবে নয়তো সে গান গায়বে না।।তার ইশারা অদিতির দিকে থাকলেও অদিতি তাকে পাত্তা না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো তারমানে এই যে, সে আয়ানের সাথে গান গাইবে না,,,শেষমেষ রিয়াকেই রাজি হতে হলো রিয়াদের একচোট ধমকে,,,, আয়ান গিটার বাজাচ্ছে।।তার গিটারের আওয়াজে অদিতি যেনো কেঁপে উঠলো…. অসম্ভব সুন্দর একটা টোন…গানটা নয় গিটারের আওয়াজটাই যেনো তার মাথায় ঘুরাফেরা করতে লাগলো ক্রমাগত……


ভেজা শরীরে নাক মুখ ফুলিয়ে বসে আছে অদিতি….তার একটু দূরে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে, দাঁত কেলিয়ে হাসছে আয়ান।।অদিতির ইচ্ছে হচ্ছে এই ছেলেটার মাথার সব চুল টেনে টেনে ছিঁড়ে ব্যাটাকে একদম টাক করে দিতে।।ফাজিল ছেলে…ছেলে কিসের??এ তো রীতিমতো বুইড়া..ফাজিল বুইড়া….

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here