এবং_তুমি পর্ব ১৩

0
878
  • গল্পের নাম— #এবং_তুমি❤️
    লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
    পর্ব– ১৩

    —আমি কি জানতে পারি কেনো যাবে না?

    আমি নিরব রইলাম। এ মুহূর্তে আমার মাথা একদম ফাঁকা। শুধু কোনো বাক্য নয়,শব্দও আসছে না। আমার মাথায় চলছে অন্য চিন্তা। যার কারণে আমার হাত পা ও কাঁপছিলো। অতিরিক্ত চিন্তায় ডুবে গেলাম। অন্যমনস্ক হয়ে বললাম,

    — কেনো যাবো?

    —মানে?

    আমি নড়চড়ে দাড়ালাম। কথার টোন বদলে বললাম,

    — মানে টানে বলছেন কেনো?আপনি তো জানেন ই কেনো যেতে চাইছি না।

    — লিসেন, আমি সত্যি জানি না তুমি কেনো যেতে চাইছো না। কোনো কারণ ও থাকার কথা নয়। একচুয়েলী তোমার কাছে কোনো রিজন ই নেই।

    —কে বলেছে রিজন নেই? আমাদের সম্পর্ক কি স্বাভাবিক? আমরা কি একসাথে থাকি? আমরা কি অন্যসব ম্যারিড কাপলদের মতো নরমাল? আপনার জানার জন্য জানিয়ে দেই, আমাকে এক বিছানায় পর্যন্ত ঘুমাতে দেওয়া হয় না। এর পরেও বলছেন কারণ নেই?

    — ফার্স্টলি, তোমাকে বিছানায় কে ঘুমাতে দেয় না- আমি কি জানতে পারি?

    আমি নিরব রইলাম। তিনি তো সরাসরি বলেন নি যে বিছানায় ঘুমাতে পারবো না। তো কি হয়েছে। এটাই তো বলতে চাইছিলেন। আমাকে নিরব দেখে,

    ইশান বললেন,

    —উত্তরটা আমি দিচ্ছি, তোমাকে কেউ ই বিছানায় না ঘুমানোর কথা বলে নি। তুমি নিজেই নিচে ঘুমাও। আমি প্রথম দিন ই বলেছিলাম,আমার সাথে ঘুমাতে চাইলে বিছানায় ঘুমাতে পারো।কিন্তু তুমি ঘুমাও নি। কি আমি বলি নি?

    আমি ফট করে বললাম,

    — আপনি এভাবে বলেন নি। আপনার কথার অন্য অর্থ ছিলো।

    —আমি কীভাবে বলেছি? আর আমার কথার কি অর্থ ছিলো?

    আমি ইতস্ত কন্ঠে বললাম,

    — আপনি অন্যভাবে বলেছিলেন।যার অর্থ ছিলো আপনার সাথে শ্ শোয়ার জন্যই আমি বিয়ে করেছি। তাই যেনো….

    ইশান দৃঢ়কণ্ঠে বললেন,

    — আমি কি একবারও বলেছি যে আমার কথার সারমর্ম এসব ছিলো?

    —কিন্তু আপনার কথার অর্থ এমনই ছিলো।

    ইশান চোখ বন্ধ করে দাঁত চেপে বললো,

    — হ্যা অথবা না বলো।

    আমি বললাম, না বলেন নি।

    ইশান বললো,

    –তার মানে তোমার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এবার তোমার দ্বিতীয় অভিযোগ, আমাদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই তাই তো? ওকে তুমি বলো তোমার সাথে অস্বাভাবিক কি করি? তোমার সাথে কথা বলি না,মার ধর করি, তোমাকে অপমান করি, তোমার সাথে জোর-জবরদস্তি করি? বলো কোনটা করি আমি? জবাব দাও।

    —এসব করেন না কিন্তু….

    —কিন্তু কি? তোমার কাছে নরমাল সম্পর্ক মানে কি? সেক্স? সেক্স বা শারীরিক মিলন মানেই কি নরমাল সম্পর্ক?

    আমি দুই হাত দিয়ে কান চেপে বললাম,

    —ছিঃ! চুপ করুন।

    —–ওকে, আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি এতেও রাজি। এবার নিশ্চই তুমি আসবে?

    ইশান আমার খুব নিকটে চলে আসলেন। রাগে কপালের রগ ফুলে উঠেছে। তার গা থেকে খুব বিশ্রি গন্ধ আসছে। আমার গা গুলিয়ে উঠছে। আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম। বাজে গন্ধটার তীব্র ঝাঁঝ নাকে লাগছে।

    —দূরে সরুন, কি বিশ্রি গন্ধ আসছে। গোসল করেন নি?

    —করেছি তো।

    —তাহলে গা থেকে এত গন্ধ আসছে কেনো?

    —কারণ শার্ট টি আ-ধোয়া।

    আমি সরে গিয়ে বললাম,— তো ধুয়ে দেন নি কেনো? কাজের চাকর ছিলাম না বলেই কি?এজন্যই কি আমাকে নিতে আসা।

    ইশান নির্লিপ্ত গলায় বললো,

    —না। ধুয়ে দিলে তোমার শরীরের ঘ্রাণ চলে যাবে তাই ধুই নি।

    আমি চমকে উঠলাম। ঢোক গিলে তার দিকে তাকালাম। কি বলতে চাইছেন? উনি কি জেনে গেছেন আমি উনার শার্ট পরেছিলাম? তবে কি বাদর দুইটা বলে দিছে।

    আমি বললাম,

    —কিসব আজেবাজে বকছেন?

    ইশান উত্তর দিলেন না। বিনিময়ে হাসলেন। দেখতে একদম শয়তান মার্কা হাসি।

    —হাসছেন কেনো?হাসার মতো তো কিছু হয় নি। আমার ঘ্রাণ চলে যাবে মানে কি?

    ইশান আমার দিকে ঝুকলেন। আমি গলা উঠিয়ে তার চোখের দিকে তাকালাম। সে বললো,

    — এত ইনোসেন্ট সাজার তো দরকার নেই। আমার কাপড় পরে যে চলাফেরা করো সেটা আমি জানি। এখন একদম অস্বীকার করার চেষ্টা করবা না। কারণ আমি নিজের চোখে দেখেছি।

    আমি শুকনো ঢোক গিললাম। তিনি যে এ বিষয় সম্পর্কে অবগত তা আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো। এ মুহূর্তে আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে। কিন্তু লজ্জাকে পাত্তা দিলাম না। উনাকে হালকা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলাম। কিঞ্চিৎ আওয়াজ করে বললাম,

    — তো দেখলে কি হয়েছে? এটা কোনো বিষয় হইলো?

    ইশান বললো,– একদম না। এগুলো কোনো ব্যাপার ই নয়। আমার কাপড় তো পরতেই পারো, ঘুমের মধ্যে কন্ঠনালিতে চুমু খেতেই পারো। এগুলো কোনো ব্যাপার হলো?

    আমি চোখ বড়বড় করে ফেললাম। ইশান কীভাবে জানেন যে আমি উনার কন্ঠনালিতে চুমু খাই? উনি তো তখন ঘুমে থাকেন। আমি ছাড়া এ বিষয়ে তো কেউ ই অবগত নয়। তাহলে কি তিনি কি জেগে ছিলেন? আমি উনার দিকে তাকালাম। ইশান হাসছেন। আমার রাগ উঠলো। ভীষণ রাগ। দূর, কেনো যে এমন করলাম? আমার ই বা কি দোষ। উনার কন্ঠনালিতে মারাত্মক সুন্দর একটা তিল আছে। যেটা দেখলে আমার চুমু খাওয়ার লোভ হয়। নিজেকে সংবরণ করতেই পারি না। তাই তো এত রিস্ক নিয়ে সাবধানে চুমু খেয়েছি। বেশি না, মাত্র সাতবার।

    ইশান আমার কাছে আসলেন। শান্ত কন্ঠে বললেন,

    — তুমি কেনো আসতো চাইছো না। আমি জানি না। তবে এটুকু জানি এর পেছনে নিশ্চই কারণ আছে। আমাকে বলতে চাইছো না। ভালো কথা। আমি জোর করবো না। যখন ইচ্ছা হবে বলো। কিন্তু এখন চলে আসো প্লিজ।

    —-কেনো নিতে চাইছেন? আপনি তো আমাকে মানেন না।

    ইশান অন্যমনস্ক হয়ে বললেন,

    — মা আমার উপর রেগে আছেন। তিনি মনে করছেন আমাদের মধ্যে নাকি কোনো ঝামেলা হয়েছে তাই তুমি বাড়ী থেকে চলে এসেছো।

    আমি বললাম,

    –ওহ্। তো আপনার মায়ের কাছে নিয়ে সাফাই দেওয়ানোর জন্য এসেছেন। কিন্তু আমি গেলে তো আপনার অসুবিধা। আবার পরিবারের সামনে ভদ্র স্বামী-স্ত্রী সাজতে হবে। তার থেকে বরং আপনি আমাকে ডিবোর্স দিন। বাড়ীতে যেয়ে বলবেন। মেয়ের চরিত্র ঠিক নেই। অন্য ছেলের সাথে চলে গেছে। জারজ মেয়ে তো, তাই মায়ের নকশা কদম অনুসরণ করেছে। দেখবেন ইজিলি আপনার ফ্যামিলি মেনে নিবে। আপনার ও সমস্যা হবে না।

    আমার কথা বারবার আটকে যাচ্ছিলো। আমি ঠিকমতো উচ্চারণও করতে পারছিলাম না। গলায় বারবার ঝট পাকিয়ে যাচ্ছিলো। অজানা খারাপ লাগায় বুক ধুকপুক করছিলো। ইশান তার মায়ের জন্য আমাকে নিতে এসেছেন বিষয়টা আমি মানতে পারলাম না। এক মুহূর্তে জন্য মনে হয়েছিলো সে বোধহয় আমার প্রতি কিছু ফিল করে। তাই আমাকে নিতে এসেছে। কিন্তু নাহ, আমি ভুল। আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছিলো। ইশান নিজ থেকে আমায় নিতে আসেন নি, এটা আমি একদম মানতে পারি নি। একদম না।

    #চলবে….

    ®সোনালী আহমেদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here